স্বামীর বাবা-মা ও খালাকে বিষাক্ত মাশরুম মিশিয়ে গরুর মাংসের ওয়েলিংটন খাইয়ে হত্যা করার মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন এক অস্ট্রেলীয় নারী। আজ সোমবার অস্ট্রেলিয়ার একটি আদালত এ রায় দিয়েছেন। এ মামলাটি সারা বিশ্বে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

এরিন প্যাটারসন নামের ওই গৃহবধূ ২০২৩ সালের জুলাইয়ে পারিবারিক আয়োজনে দুপুরের খাবার তৈরি করেন। খাওয়ার সময় ছিল হাসিঠাট্টা আর প্রার্থনা। কিন্তু এই খাবার খেয়ে কয়েক দিনের মধ্যে তিনজন অতিথি মারা যান।

দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলা মামলার অভিযোগে প্যাটারসন দাবি করে আসছিলেন, তিনি গরুর মাংস ও পেস্ট্রি দিয়ে বানানো খাবারে দুর্ঘটনাবশত ‘ডেথ ক্যাপ’ নামের বিষাক্ত মাশরুম মিশিয়ে ফেলেছিলেন। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে মারাত্মক মাশরুম হিসেবে পরিচিত।

তবে ১২ সদস্যের জুরি তিনজনকে হত্যার অভিযোগে আজ সোমবার ৫০ বছর বয়সী প্যাটারসনকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। এ ছাড়া তাঁকে আরেকজন অতিথিকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগেও দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। ওই অতিথি সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান।

আলোচিত এ মামলাটি অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্যের মরওয়েল এলাকায় পডকাস্টার, সাংবাদিক ও অপরাধের ঘটনা নিয়ে আগ্রহী মানুষকে টেনে এনেছে। বিশ্বের বহু গণমাধ্যম, নিউইয়র্ক থেকে নয়াদিল্লি—একে ‘মাশরুম খুন’ বলে আখ্যায়িত করেছে।

কে ছিলেন সেই দিনের খাওয়ায়

২০২৩ সালের ২৯ জুলাই প্যাটারসন নিজের গ্রামের বাড়িতে ছোট পরিসরে পারিবারিকভাবে দুপুরের খাবারের আয়োজন করেন। অতিথি ছিলেন তাঁর স্বামীর বাবা-মা ডন ও গেইল প্যাটারসন, স্বামীর খালা হিদার এবং খালু ইয়ান। এই ইয়ান আবার স্থানীয় ব্যাপটিস্ট গির্জার পাদরি ছিলেন।
প্যাটারসনের স্বামী সায়মনকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তিনি আসেননি। কারণ, তিনি অস্বস্তি বোধ করছিলেন।

প্যাটারসন ও সায়মন তখনো আইনগত দিক থেকে স্বামী-স্ত্রী ছিলেন। তবে তাঁদের সম্পর্ক খারাপের দিকে যাচ্ছিল। তাঁরা তাঁদের সন্তানের ভরণপোষণ নিয়ে বিবাদে জড়িয়েছিলেন।

কীভাবে বিষক্রিয়া ছড়ায়

প্যাটারসন দামি গরুর মাংস কিনে তাতে মাশরুমের পেস্ট মিশিয়ে পেস্ট্রিতে মোড়ানো খাবার তৈরি করেন—যা বিফ ওয়েলিংটন নামে পরিচিত। সবাই খাওয়ার আগে ও পরে প্রার্থনা করেন। পরে হিদার খাবারটি ‘সুস্বাদু ও দারুণ’ হয়েছে বলে প্রশংসাও করেন।
ডেথ ক্যাপ মাশরুম দেখতে সাধারণ খাওয়ার উপযোগী মাশরুমের মতো এবং স্বাদেও বেশ মিষ্টি। কিন্তু এতে থাকা অ্যামাটক্সিন নামের বিষ শরীরে ঢুকে কয়েক দিনের মধ্যেই শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল করে দেয়।

সেই আমন্ত্রণে খাবার খাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই ডন, গেইল ও হিদার মারা যান।
ইনটেনসিভ কেয়ার বিষয়ে এক বিশেষজ্ঞ বলেন, এটা স্পষ্ট যে কেউ এই অবস্থা থেকে বাঁচতে পারবেন না।

প্রমাণ কী

প্যাটারসন নিজে বলেছিলেন, তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত এবং সন্তানদের বিষয়ে পরামর্শ চান—এ কথা বলে তিনি স্বামীর পক্ষের আত্মীয়দের ডেকে এনেছিলেন। কিন্তু তদন্তে দেখা যায়, তিনি মোটেই ক্যানসারে আক্রান্ত নন। এটি ছিল তাঁর একটি সাজানো গল্প।

প্যাটারসনের বাড়িতে ফুড ডিহাইড্রেটর (খাবার শুকানোর যন্ত্র) ময়লার স্তূপ থেকে থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। পরীক্ষা করে তাতে বিষাক্ত মাশরুমের নমুনা পাওয়া গেছে। মনে হচ্ছে, তিনিই নিজেই যন্ত্রটি ময়লার স্তূপে ফেলে দিয়েছিলেন।
প্যাটারসন আদালতে বলেন, ‘আমি মিথ্যা বলেছিলাম। কারণ, আমার আশঙ্কা ছিল যে আমাকে দায়ী করা হতে পারে।’

প্যাটারসনের কম্পিউটার থেকে দেখা যায়, ঘটনার এক বছর আগে কাছাকাছি কোথায় ডেথ ক্যাপ মাশরুম পাওয়া যায়—সে সম্পর্কিত ওয়েবসাইটে তিনি খোঁজ করেছিলেন।

কে বেঁচে গেলেন

পাদরি ইয়ান উইলকিনসন এ ঘটনায় বেঁচে যান। তিনি দীর্ঘ সময় হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর সুস্থ হন।

উইলকিনসন বলেন, সবার খাবার পরিবেশন করা হয়েছিল ধূসর রঙের চারটি প্লেটে। আর প্যাটারসন নিজের জন্য নিয়েছিলেন ছোট একটি কমলা রঙের প্লেট।
তবে উইলকনসিন জানেন না, কেন প্যাটারসন তাঁকেও মারতে চেয়েছিলেন।
এরিন প্যাটারসন কে

এরিন প্যাটারসন দুই সন্তানের মা। তিনি গ্রামীণ এলাকায় বেশ সক্রিয় জীবন যাপন করতেন। গির্জার ভিডিও ধারণ থেকে শুরু করে গ্রামের নিউজলেটার সম্পাদনা পর্যন্ত করতেন। তিনি ছিলেন সত্যিকারের অপরাধবিষয়ক ঘটনার ভক্ত। অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে আলোচিত হত্যা মামলাগুলো নিয়ে একটি ফেসবুক গ্রুপেও ছিলেন তিনি।
এক বন্ধু প্যাটারসনকে ‘একটু গোয়েন্দা গোছের’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন।

প্যাটারসনের আইনজীবী বলেন, তাঁর মক্কেল ইচ্ছা করে ডেথ ক্যাপ মাশরুম মেখে কাউকে হত্যা করেননি। এটা ছিল মর্মান্তিক একটি দুর্ঘটনা।

এ মামলায় চিকিৎসক, পুলিশ, কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ এবং মাশরুম গবেষকদের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। সব শুনে জুরি বোর্ড এক সপ্তাহ ধরে বিস্তারিত বিশ্লেষণের পর প্যাটারসনকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন।

পরবর্তী সময়ে এই মামলায় প্যাটারসনের বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণা করা হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ছ ল ন প য ট রসন প য ট রসন র প য ট রসন ন

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বন্দ্বের অবসান, শুটিংয়ে গড়াচ্ছে শুভ-সোহিনীর ‘লহু’

২০২৩ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের অভিনেতা আরিফিন শুভ ও পশ্চিমবঙ্গের অভিনেত্রী সোহিনী সরকারকে নিয়ে ‘লহু’ ওয়েব সিরিজের ঘোষণা আসে। পরিচালনার দায়িত্ব পান পশ্চিমবঙ্গের নির্মাতা রাহুল মুখোপাধ্যায়। কিন্তু হঠাৎ থেমে যায় সিরিজটির শুটিং। তবে সমস্ত ঝামেলা কাটিয়ে ফের শুরু হচ্ছে ‘লহু’ সিরিজের শুটিং।

ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য ওয়েল-এর খবরে বলা হয়েছে, ডিরেক্টরস ফেডারেশনের নিয়ম না মেনে পরিচালক সিরিজটির শুটিং শুরু করেন। আর এর ফলে ফেডারেশনের পক্ষ থেকে সাসপেন্ড করা হয় পরিচালককে। এরপর এই ঘটনা রীতিমতো তোলপাড় ফেলে দেয় সমগ্র টালিউডে। অবশেষে সেসব জটিলতার অবসান ঘটেছে; মনোমালিন্য পেরিয়ে ফের পুরোনো ছন্দে ফিরছে ‘লহু’।

ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকির ভারতীয় কর্মকর্তা অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায় ও পরিচালক রাহুল জানিয়েছেন, ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের মধ্যস্থতায় সমস্যার মীমাংসা হয়েছে।

রাহুল বলেন, ‘স্বরূপদা না থাকলে এটা সম্ভব হতো না। আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ। তিনি সহযোগিতা করেছেন বলেই আমরা আবার কাজ শুরু করতে পারছি।’

অনিন্দ্য বলেন, ‘আমাদের দিক থেকেও কিছু ভুল ছিল, যা স্বরূপদা বুঝিয়ে দিয়েছেন। এখন ফের শুরু করছি ‘লহু’, পাশাপাশি চরকির আরও কিছু প্রজেক্টও পরিকল্পনায় রয়েছে।’

২০২৩ সালে শেষ দিকে ভারতে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশের ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকি। এরপর ‘লহু’ ওয়েব সিরিজ নির্মাণের ঘোষণা প্ল্যাটফর্মটি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের নির্মাতাদের ফেডারেশনের কিছু নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগে থমকে যায় প্রজেক্টটি। সেসব ঝামেলা কাটিয়ে ফের শুটিং গড়াচ্ছে সিনেমাটি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে কী আছে, এটা কি গাজায় যুদ্ধ থামাতে পারবে
  • ইয়েমেনের ৩ বন্দর ও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল
  • ইয়েমেনের তিনটি বন্দর ও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল
  • দ্বন্দ্বের অবসান, শুটিংয়ে গড়াচ্ছে শুভ-সোহিনীর ‘লহু’
  • মালয়েশিয়ার পুলিশপ্রধান যে পাঁচজনকে নিয়ে কথা বলেছেন, তাঁরা দেশে আসেননি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • দেশে কোনো ধরনের জঙ্গিবাদ নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • মালয়েশিয়া থেকে ফেরত পাঠানো ৩ জনের কেউ জঙ্গি নয়: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • স্থানীয় ইউপি সদস্যের পরিকল্পনায় মুরাদনগরে ‘মব’ সৃষ্টি করে তিনজনকে হত্যা
  • গাজায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনে ১৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত