মাশরুম খাইয়ে তিনজনকে হত্যার মামলায় অস্ট্রেলীয় নারী আদালতে দোষী সাব্যস্ত
Published: 7th, July 2025 GMT
স্বামীর বাবা-মা ও খালাকে বিষাক্ত মাশরুম মিশিয়ে গরুর মাংসের ওয়েলিংটন খাইয়ে হত্যা করার মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন এক অস্ট্রেলীয় নারী। আজ সোমবার অস্ট্রেলিয়ার একটি আদালত এ রায় দিয়েছেন। এ মামলাটি সারা বিশ্বে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
এরিন প্যাটারসন নামের ওই গৃহবধূ ২০২৩ সালের জুলাইয়ে পারিবারিক আয়োজনে দুপুরের খাবার তৈরি করেন। খাওয়ার সময় ছিল হাসিঠাট্টা আর প্রার্থনা। কিন্তু এই খাবার খেয়ে কয়েক দিনের মধ্যে তিনজন অতিথি মারা যান।
দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলা মামলার অভিযোগে প্যাটারসন দাবি করে আসছিলেন, তিনি গরুর মাংস ও পেস্ট্রি দিয়ে বানানো খাবারে দুর্ঘটনাবশত ‘ডেথ ক্যাপ’ নামের বিষাক্ত মাশরুম মিশিয়ে ফেলেছিলেন। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে মারাত্মক মাশরুম হিসেবে পরিচিত।
তবে ১২ সদস্যের জুরি তিনজনকে হত্যার অভিযোগে আজ সোমবার ৫০ বছর বয়সী প্যাটারসনকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। এ ছাড়া তাঁকে আরেকজন অতিথিকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগেও দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। ওই অতিথি সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান।
আলোচিত এ মামলাটি অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্যের মরওয়েল এলাকায় পডকাস্টার, সাংবাদিক ও অপরাধের ঘটনা নিয়ে আগ্রহী মানুষকে টেনে এনেছে। বিশ্বের বহু গণমাধ্যম, নিউইয়র্ক থেকে নয়াদিল্লি—একে ‘মাশরুম খুন’ বলে আখ্যায়িত করেছে।
কে ছিলেন সেই দিনের খাওয়ায়
২০২৩ সালের ২৯ জুলাই প্যাটারসন নিজের গ্রামের বাড়িতে ছোট পরিসরে পারিবারিকভাবে দুপুরের খাবারের আয়োজন করেন। অতিথি ছিলেন তাঁর স্বামীর বাবা-মা ডন ও গেইল প্যাটারসন, স্বামীর খালা হিদার এবং খালু ইয়ান। এই ইয়ান আবার স্থানীয় ব্যাপটিস্ট গির্জার পাদরি ছিলেন।
প্যাটারসনের স্বামী সায়মনকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তিনি আসেননি। কারণ, তিনি অস্বস্তি বোধ করছিলেন।
প্যাটারসন ও সায়মন তখনো আইনগত দিক থেকে স্বামী-স্ত্রী ছিলেন। তবে তাঁদের সম্পর্ক খারাপের দিকে যাচ্ছিল। তাঁরা তাঁদের সন্তানের ভরণপোষণ নিয়ে বিবাদে জড়িয়েছিলেন।
কীভাবে বিষক্রিয়া ছড়ায়
প্যাটারসন দামি গরুর মাংস কিনে তাতে মাশরুমের পেস্ট মিশিয়ে পেস্ট্রিতে মোড়ানো খাবার তৈরি করেন—যা বিফ ওয়েলিংটন নামে পরিচিত। সবাই খাওয়ার আগে ও পরে প্রার্থনা করেন। পরে হিদার খাবারটি ‘সুস্বাদু ও দারুণ’ হয়েছে বলে প্রশংসাও করেন।
ডেথ ক্যাপ মাশরুম দেখতে সাধারণ খাওয়ার উপযোগী মাশরুমের মতো এবং স্বাদেও বেশ মিষ্টি। কিন্তু এতে থাকা অ্যামাটক্সিন নামের বিষ শরীরে ঢুকে কয়েক দিনের মধ্যেই শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল করে দেয়।
সেই আমন্ত্রণে খাবার খাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই ডন, গেইল ও হিদার মারা যান।
ইনটেনসিভ কেয়ার বিষয়ে এক বিশেষজ্ঞ বলেন, এটা স্পষ্ট যে কেউ এই অবস্থা থেকে বাঁচতে পারবেন না।
প্রমাণ কী
প্যাটারসন নিজে বলেছিলেন, তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত এবং সন্তানদের বিষয়ে পরামর্শ চান—এ কথা বলে তিনি স্বামীর পক্ষের আত্মীয়দের ডেকে এনেছিলেন। কিন্তু তদন্তে দেখা যায়, তিনি মোটেই ক্যানসারে আক্রান্ত নন। এটি ছিল তাঁর একটি সাজানো গল্প।
প্যাটারসনের বাড়িতে ফুড ডিহাইড্রেটর (খাবার শুকানোর যন্ত্র) ময়লার স্তূপ থেকে থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। পরীক্ষা করে তাতে বিষাক্ত মাশরুমের নমুনা পাওয়া গেছে। মনে হচ্ছে, তিনিই নিজেই যন্ত্রটি ময়লার স্তূপে ফেলে দিয়েছিলেন।
প্যাটারসন আদালতে বলেন, ‘আমি মিথ্যা বলেছিলাম। কারণ, আমার আশঙ্কা ছিল যে আমাকে দায়ী করা হতে পারে।’
প্যাটারসনের কম্পিউটার থেকে দেখা যায়, ঘটনার এক বছর আগে কাছাকাছি কোথায় ডেথ ক্যাপ মাশরুম পাওয়া যায়—সে সম্পর্কিত ওয়েবসাইটে তিনি খোঁজ করেছিলেন।
কে বেঁচে গেলেন
পাদরি ইয়ান উইলকিনসন এ ঘটনায় বেঁচে যান। তিনি দীর্ঘ সময় হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর সুস্থ হন।
উইলকিনসন বলেন, সবার খাবার পরিবেশন করা হয়েছিল ধূসর রঙের চারটি প্লেটে। আর প্যাটারসন নিজের জন্য নিয়েছিলেন ছোট একটি কমলা রঙের প্লেট।
তবে উইলকনসিন জানেন না, কেন প্যাটারসন তাঁকেও মারতে চেয়েছিলেন।
এরিন প্যাটারসন কে
এরিন প্যাটারসন দুই সন্তানের মা। তিনি গ্রামীণ এলাকায় বেশ সক্রিয় জীবন যাপন করতেন। গির্জার ভিডিও ধারণ থেকে শুরু করে গ্রামের নিউজলেটার সম্পাদনা পর্যন্ত করতেন। তিনি ছিলেন সত্যিকারের অপরাধবিষয়ক ঘটনার ভক্ত। অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে আলোচিত হত্যা মামলাগুলো নিয়ে একটি ফেসবুক গ্রুপেও ছিলেন তিনি।
এক বন্ধু প্যাটারসনকে ‘একটু গোয়েন্দা গোছের’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন।
প্যাটারসনের আইনজীবী বলেন, তাঁর মক্কেল ইচ্ছা করে ডেথ ক্যাপ মাশরুম মেখে কাউকে হত্যা করেননি। এটা ছিল মর্মান্তিক একটি দুর্ঘটনা।
এ মামলায় চিকিৎসক, পুলিশ, কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ এবং মাশরুম গবেষকদের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। সব শুনে জুরি বোর্ড এক সপ্তাহ ধরে বিস্তারিত বিশ্লেষণের পর প্যাটারসনকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন।
পরবর্তী সময়ে এই মামলায় প্যাটারসনের বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণা করা হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ছ ল ন প য ট রসন প য ট রসন র প য ট রসন ন
এছাড়াও পড়ুন:
চোখে আলো ফেলা নিয়ে বাগ্বিতণ্ডার জেরে কৃষককে হত্যা
ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলায় চোখে টর্চলাইটের আলো পড়া নিয়ে বাগ্বিতণ্ডার জেরে ছুরিকাঘাতে এরশাদ আলী (৩৫) নামের এক কৃষক নিহত হয়েছেন। আজ শুক্রবার সকালে উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম সোহাগীপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত এরশাদ আলী উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম সোহাগীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। খবর পেয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পশ্চিম সোহাগীপাড়া গ্রামে মানিক মিয়ার মুদিদোকানে যান এরশাদ আলী। এ সময় এরশাদ আলীর চোখে টর্চলাইটের আলো ফেলে বিরক্ত করেন একই গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে সাকিব মিয়া। এ নিয়ে দুজন বাগ্বিতণ্ডায় জড়ালে স্থানীয় লোকজন মিটমাট করে দেন। পরে এরশাদ আলীসহ সবাই যে যার মতো বাড়িতে চলে যান।
স্থানীয় সূত্র জানায়, আজ শুক্রবার সকাল ছয়টার দিকে এরশাদ আলীকে ডেকে নিয়ে আবার কথা-কাটাকাটি ও মারামারিতে জড়ান সাকিব ও তাঁর সঙ্গে আসা কয়েকজন। একপর্যায়ে এরশাদ আলীকে ছুরিকাঘাত করা হয়। স্থানীয় লোকজন আহত এরশাদ আলীকে উদ্ধার করে ধোবাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে অভিযুক্ত সাকিব মিয়াসহ তিনজনকে আটক করে পুলিশ।
ধোবাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল মামুন সরকার বলেন, পুলিশ তিনজনকে আটক করেছে। নিহত এরশাদ আলীর শরীরে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন আছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।