জিকা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে চট্টগ্রাম নগরের বাসিন্দারা
Published: 23rd, July 2025 GMT
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, কোনো এলাকায় ব্রেটিও ইনডেক্স বা বিআই (বাড়িভিত্তিক এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব) ২০–এর বেশি হলে এলাকাটি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হবে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পাঁচটি ওয়ার্ডের বিভিন্ন স্থানে বিআই ৩৩ থেকে সর্বোচ্চ ১৩৪ দশমিক ৬২ পাওয়া যায়। এ ছাড়া প্রাপ্ত লার্ভার নমুনা বিশ্লেষণে এডিস মশার এজিপ্টা প্রজাতি পাওয়া গেছে ৬৫ শতাংশ। এই প্রজাতি জিকা, চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গুর জন্য উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ।
এ কারণে চট্টগ্রাম নগর এই তিন রোগের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে বলে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) আশঙ্কা করছে। চলতি মাসে চট্টগ্রামে এক জরিপ গবেষণা শেষে আইইডিসিআর প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সোমবার আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন চার পৃষ্ঠার গবেষণা প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করেন। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিন দফা সুপারিশসহ চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ে পাঠানো হয়।
সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর আলম প্রতিবেদন প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে বলেন, ‘গবেষণা প্রতিবেদন এবং সুপারিশ অনুযায়ী চিকুনগুনিয়া, জিকা ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে কাজ করে যাব।’
১২ থেকে ১৮ জুলাই পর্যন্ত আইইডিসিআরের রোগতত্ত্ববিদ ডা.
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, চট্টেশ্বরী সড়ক, ওআর নিজাম রোড, পাহাড়তলী, হালিশহর ও ঝাউতলা এলাকার ১২৮টি বাড়ি পরিদর্শন করা হয়। এর মধ্যে ৬২টি বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এই বাড়িগুলোতে ব্রেটিও ইনডেক্স পাওয়া যায় ৭৫। হাউস ইনডেক্স ৪৩ ও কনটেইনার ইনডেক্স পাওয়া যায় ৫১।
ওয়ার্ডভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, চট্টেশ্বরীতে বিআই ৪৮ দশমিক ৩৯, ওআর নিজাম সড়কে ৪২ দশমিক ৮৬, আগ্রাবাদে ১৩৪ দশমিক ৬২, পাহাড়তলীতে ১১০, হালিশহরে ৬৬ দশমিক ৬৭ ও ঝাউতালায় ৩৩ দশমিক ৩৩ পাওয়া যায়। এ ছাড়া মশার লার্ভা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৬৫ শতাংশ ছিল এডিস এজিপ্টা। ৩২ দশমিক ৬৪ শতাংশ ছিল এডিস এলবোপিকটাস। ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ ছিল উভয় প্রজাতির। এ কারণে এলাকাগুলোকে জিকা রোগের উচ্চঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তবে গবেষকেরা জানান, জিকা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া তিন রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে এলাকগুলো। তাঁদের মতে, শুধু এই পাঁচ ওয়ার্ডে নয়, নগরের বেশির ভাগ এলাকায় একই ধরনের চিত্র হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
গবেষণায় তিনজন জিকা রোগী ও তিনজন চিকুনগুনিয়া রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তিনজনের জিকা রোগ নিশ্চিত করা হয়। উল্লেখ্য, জুলাই মাসে চট্টগ্রামে দুজন জিকা ভাইরাসের রোগী শনাক্তের পর গবেষণা দলটি চট্টগ্রাম আসে।
গবেষণার তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত কিউরেটর ওমর কাইয়ুম বলেন, এডসি এজিপ্টা মশার মাধ্যমে জিকা, ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়া হওয়ার বেশি ঝুঁকি থাকে। এলবোপিকটাস প্রজাতির মাধ্যমেও এগুলো হয়। এখন সুপারিশ অনুযায়ী স্থানীয় সংস্থাগুলো সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে কীভাবে মাত্রা কমিয়ে আনা যায়, সে চেষ্টা করতে হবে।
তিনটি সুপারিশে বলা হয়, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর লক্ষণ বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করতে বলা হয়। এ ছাড়া কীটতাত্ত্বিক জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে অনতিবিলম্বে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে জনগণের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা যায়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইনড ক স অন য য় দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
নুরাল পাগলার দরবার থেকে চুরি হওয়া জেনারেটর উদ্ধার, যুবক গ্রেপ্তার
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরাল পাগলার দরবার থেকে চুরি হওয়া একটি জেনারেটর উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় মো. মিজানুর রহমান (২৪) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে মিজানুরকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও গোয়ালন্দ ঘাট থানা-পুলিশ। মিজানুরের বাড়ি রাজবাড়ী সদর উপজেলার লক্ষ্মীকোল সোনাকান্দর গ্রামে।
আরও পড়ুননিহতের বাবার মামলায় গ্রেপ্তার আরও ২, দেড় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির দাবি১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫এ নিয়ে দুই মামলায় মোট ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. শরীফ আল রাজীব।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ৫ সেপ্টেম্বর গোয়ালন্দের নুরাল পাগলার দরবারে বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এ সময় মিজানুর রহমান জেনারেটর চুরি করে নিয়ে যাচ্ছেন—এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে মিজানুরকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়। মিজানুরকে দরবারে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, লাশ পোড়ানো ও হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁকে রাজবাড়ীর আদালতে সোপর্দ করার প্রস্তুতি চলছে।
আরও পড়ুননুরাল পাগলার দরবারে হামলায় হত্যা মামলা, মসজিদের ইমামসহ চারজন গ্রেপ্তার০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ওই দিন পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় উপপরিদর্শক (এসআই) সেলিম মোল্লা বাদী হয়ে প্রায় তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করে ৬ সেপ্টেম্বর মামলা করেন। এই মামলায় মোট ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদিকে দরবারে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, হত্যা ও কবর থেকে লাশ তুলে মহাসড়কে পুড়িয়ে ফেলার ঘটনায় নিহত ভক্ত রাসেল মোল্লার বাবা আজাদ মোল্লা বাদী হয়ে ৮ সেপ্টেম্বর মামলা করেন। ওই মামলায় সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় এখন পর্যন্ত মিজানুরসহ নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।