বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, কোনো এলাকায় ব্রেটিও ইনডেক্স বা বিআই (বাড়িভিত্তিক এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব) ২০–এর বেশি হলে এলাকাটি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হবে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পাঁচটি ওয়ার্ডের বিভিন্ন স্থানে বিআই ৩৩ থেকে সর্বোচ্চ ১৩৪ দশমিক ৬২ পাওয়া যায়। এ ছাড়া প্রাপ্ত লার্ভার নমুনা বিশ্লেষণে এডিস মশার এজিপ্টা প্রজাতি পাওয়া গেছে ৬৫ শতাংশ। এই প্রজাতি জিকা, চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গুর জন্য উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ।

এ কারণে চট্টগ্রাম নগর এই তিন রোগের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে বলে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) আশঙ্কা করছে। চলতি মাসে চট্টগ্রামে এক জরিপ গবেষণা শেষে আইইডিসিআর প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সোমবার আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন চার পৃষ্ঠার গবেষণা প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করেন। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিন দফা সুপারিশসহ চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ে পাঠানো হয়।

সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর আলম প্রতিবেদন প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে বলেন, ‘গবেষণা প্রতিবেদন এবং সুপারিশ অনুযায়ী চিকুনগুনিয়া, জিকা ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে কাজ করে যাব।’

১২ থেকে ১৮ জুলাই পর্যন্ত আইইডিসিআরের রোগতত্ত্ববিদ ডা.

মো. ওমর কাইয়ুমের তত্ত্বাবধানে এই গবেষণা হয়। গবেষকেরা করপোরেশনের ৯, ১৩, ১৫, ২৬ ও ২৭ ওয়ার্ডের বিভিন্ন স্থানে এই কার্যক্রম চালান। বিভিন্ন স্থান থেকে মশার লার্ভা, রোগীর নমুনা সংগ্রহ করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন হাসপাতাল ও রোগ নির্ণয়কেন্দ্র থেকেও তাঁরা তথ্য সংগ্রহ করেন।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, চট্টেশ্বরী সড়ক, ওআর নিজাম রোড, পাহাড়তলী, হালিশহর ও ঝাউতলা এলাকার ১২৮টি বাড়ি পরিদর্শন করা হয়। এর মধ্যে ৬২টি বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এই বাড়িগুলোতে ব্রেটিও ইনডেক্স পাওয়া যায় ৭৫। হাউস ইনডেক্স ৪৩ ও কনটেইনার ইনডেক্স পাওয়া যায় ৫১।

ওয়ার্ডভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, চট্টেশ্বরীতে বিআই ৪৮ দশমিক ৩৯, ওআর নিজাম সড়কে ৪২ দশমিক ৮৬, আগ্রাবাদে ১৩৪ দশমিক ৬২, পাহাড়তলীতে ১১০, হালিশহরে ৬৬ দশমিক ৬৭ ও ঝাউতালায় ৩৩ দশমিক ৩৩ পাওয়া যায়। এ ছাড়া মশার লার্ভা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৬৫ শতাংশ ছিল এডিস এজিপ্টা। ৩২ দশমিক ৬৪ শতাংশ ছিল এডিস এলবোপিকটাস। ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ ছিল উভয় প্রজাতির। এ কারণে এলাকাগুলোকে জিকা রোগের উচ্চঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তবে গবেষকেরা জানান, জিকা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া তিন রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে এলাকগুলো। তাঁদের মতে, শুধু এই পাঁচ ওয়ার্ডে নয়, নগরের বেশির ভাগ এলাকায় একই ধরনের চিত্র হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

গবেষণায় তিনজন জিকা রোগী ও তিনজন চিকুনগুনিয়া রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তিনজনের জিকা রোগ নিশ্চিত করা হয়। উল্লেখ্য, জুলাই মাসে চট্টগ্রামে দুজন জিকা ভাইরাসের রোগী শনাক্তের পর গবেষণা দলটি চট্টগ্রাম আসে।

গবেষণার তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত কিউরেটর ওমর কাইয়ুম বলেন, এডসি এজিপ্টা মশার মাধ্যমে জিকা, ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়া হওয়ার বেশি ঝুঁকি থাকে। এলবোপিকটাস প্রজাতির মাধ্যমেও এগুলো হয়। এখন সুপারিশ অনুযায়ী স্থানীয় সংস্থাগুলো সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে কীভাবে মাত্রা কমিয়ে আনা যায়, সে চেষ্টা করতে হবে।

তিনটি সুপারিশে বলা হয়, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর লক্ষণ বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করতে বলা হয়। এ ছাড়া কীটতাত্ত্বিক জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে অনতিবিলম্বে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে জনগণের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা যায়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইনড ক স অন য য় দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

সত্য মিথ্যা যাচাই না করে শেয়ার করবেন না, মেসেজটা তৃণমূলে ছড়িয়ে দিন: সিইসি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, 'আমাদের একটা অভ্যাস হয়ে গেছে একটা নেতিবাচক সংবাদ দেখলেই যাচাই-বাছাই না করে শেয়ার করে দেওয়া হয়। অত্যন্ত ভিত্তিহীন সংবাদও আমরা শেয়ার করে দেই।'

সিইসি বলেন, 'দয়া করে সত্য মিথ্যা যাচাই না করে শেয়ার করবেন না। এই মেসেজটা তৃণমূলে ছড়িয়ে দিন। তথ্যটা যেন আগে যাচাই করে তারপরে শেয়ার করেন।'

আজ সোমবার রাজধানীর ভাটারায় আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নে (এজিবি) এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন সিইসি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ভুয়া সংবাদের প্রচার ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপপ্রয়োগ রোধে করণীয় সম্পর্কে তিনি এসব কথা বলেন।

থানা আনসার কোম্পানি/প্লাটুন সদস্যদের আনসার মৌলিক প্রশিক্ষণের (৪র্থ ধাপ) সমাপনী উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিইসি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো সংবাদ দেখা মাত্রই নাগরিকদের যাচাইবাছাই করতে আহ্বান জানান সিইসি। নিশ্চিত হওয়ার আগে শেয়ার না করতে বলেন তিনি।

জাতীয় নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে আনসার ভিডিপির ভূমিকাকে মূল শক্তি বলে উল্লেখ করেন সিইসি। তিনি বলেন, 'এনারাই অধিক সংখ্যায় নিয়োজিত থাকেন। এবং আমাদের হিসেব করতে গেলে প্রথম এদেরকেই হিসেব করতে হয় যে, কতজন আনসার ভিডিপি সদস্য আমরা মোতায়েন করতে পারব। মূল কাজটা আঞ্জাম (সম্পাদন) দিতে হয় কিন্তু আনসার এবং ভিডিপির সদস্যদের।'

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ। নির্বাচনকালীন জনগণের নিরাপত্তা, ভোট কেন্দ্রের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা এবং সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণে আনসার বাহিনী সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছে বলে জানান তিনি। নির্বাচনে দেশজুড়ে প্রায় ৬ লাখ আনসার ও ভিডিপি সদস্য দায়িত্বপালন করবেন বলেন মহাপরিচালক।

অনুষ্ঠানে মহড়ায় ঢাকা মহানগর আনসারের চারটি জোনের অধীন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৩২০ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্য অংশ নেন।  আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নের সদস্যরা টহল, দায়িত্ব বণ্টন ও জরুরি প্রতিক্রিয়া অনুশীলনে অংশ নেন।

মহড়ায় ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জামাদি নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া, ভোটারদের শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে ভোট প্রদানে সহায়তা, জাল ভোট প্রতিরোধ, প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা এবং সেনা, বিজিবি, র‍্যাব ও পুলিশের সঙ্গে দ্রুত সমন্বয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন জোনের অধিনায়ক এবং প্রশিক্ষণ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ