গোপালগঞ্জে সহিংসতা ও কারাগারে ভাঙচুরের ঘটনায় আরো ২ মামলা
Published: 23rd, July 2025 GMT
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ‘মার্চ ফর গোপালগঞ্জ’কে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে টুঙ্গিপাড়া থানায় একটি এবং জেলা কারাগারে ভাঙচুরের ঘটনায় সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। নতুন এ দুই মামলায় আসামি করা হয়েছে ১ হাজার ৪৪২ জনকে।
এ নিয়ে গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় মোট ১০টি মামলা দায়ের হলো। এসব মামলায় মোট আসামি ৯ হাজার ৮৪৬ জন।
এদিকে, বিভিন্ন মামলায় আরো ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে মোট গ্রেপ্তার হলো ৩২২ জন।
টুঙ্গিপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খোরশেদ আলম বলেছেন, গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে বাধা সৃষ্টি করতে টুঙ্গিপাড়ায় মহাসড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ও জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। এ অভিযোগে মঙ্গলবার (২২ জুলাই) রাতে টুঙ্গিপাড়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনির হোসেন বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ৮২ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত আরো ২০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন।
এ মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলো—টুঙ্গিপাড়া পৌর যুবলীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম, পৌর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইফতি জামান পল্লব, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাবুল হাসান রিপন, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহিন বিশ্বাস কালু, কুশলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি জাকির মোল্লা, ডুমুরিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক মমিন মর্তুজা, বর্নি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি রোমান মোল্লা প্রমুখ।
মামলার এজাহার বলা হয়েছে, গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ নস্যাৎ করার লক্ষ্যে টুঙ্গিপাড়ায় পিরোজপুর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচলে বাধা ও জনগণের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের পক্ষে মিছিল করতে থাকে। এছাড়া, মহাসড়কের পাশে সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি করার চেষ্টা করে।
তিনি আরো বলেন, এ মামলার এজাহারনামীয় ২৩ জনসহ মোট ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে দায়ের করা মামলায় নতুন করে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
অপরদিকে, গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মির মো.
এ নিয়ে সংহিসতার ঘটনায় গোপালগঞ্জ সদর, কাশিয়ানী, কোটালীপাড়া ও টুঙ্গিপাড়ায় থানায় চারটি হত্যা মামলাসহ মোট ১০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় ৯ হাজার ৮৪৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।
গত বুধবার (১৬ জুলাই) গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রা ও পথসভা ভণ্ডুল করতে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের শত শত নেতাকর্মী হামলা চালায়। পরে তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। দিনভর চলা সংঘর্ষে ৫ যুবক নিহত ও পুলিশ-সাংবাদিকসহ শতাধিক মানুষ আহত হন।
ঢাকা/বাদল/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ প লগঞ জ দ য় র কর র ঘটন য় এনস প
এছাড়াও পড়ুন:
সাদপন্থীদের ইজতেমা আয়োজন করতে না দেওয়ার দাবি
টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে মাওলানা সাদ কান্ধলভী অনুসারীদের (সাদপন্থী) ইজতেমা আয়োজন করতে না দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থী) অনুসারীরা। পাশাপাশি তাঁরা সরকারের প্রস্তাবে রাজি হয়ে আগামী বছরের মার্চ মাসে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা করার কথাও বলেছেন। গত আয়োজনে ইজতেমা মাঠে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও সাজা নিশ্চিতের দাবিও জানান তাঁরা।
আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। ‘হযরত ওলামায়ে কেরাম ও দাওয়াত ও তাবলিগের সাথীবৃন্দের’ উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
এর আগে গত রোববার সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের পর বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তাবলিগের শুরায়ে নেজামের সাথী মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘কোরআন ও হাদিসের কথা যারা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে, তাদের ইসলামি দাওয়াতের এই ময়দানে জায়গা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। রাসুল (সা.)-এর তরিকা, সুন্নাহ ও হাদিসের অনুসরণে যারা তাবলিগি কার্যক্রম পরিচালনা করে, কেবল তারাই ইজতেমা করার অধিকার রাখে।’
মুফতি আমানুল হক আরও বলেন, ‘সরকারের ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে জারি করা প্রজ্ঞাপনে সাদপন্থীরা শেষবারের মতো টঙ্গী ময়দানে ইজতেমা করার অনুমতি পেয়েছিল। সেই প্রজ্ঞাপনে তাদের স্বাক্ষরও রয়েছে। সরকার তখনই বুঝেছিল—একই মাঠে দুই পক্ষের ইজতেমা আয়োজন দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।’
২০২৪ সালের ডিসেম্বরের ইজতেমা মাঠে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘গত বছরের ১৮ ডিসেম্বরের রাতে সাদপন্থীদের অনুসারীরা অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের বাংলাদেশি নেতা ওয়াসিফ সাহেবের চিঠিতে উল্লেখ ছিল, “যুগটা ব্যতিক্রমী, সবাই প্রস্তুতি নিয়ে আসবে”—এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই তারা হামলার পরিকল্পনা করেছিল। ঘুমন্ত মুসল্লিদের ওপর টর্চলাইট নিয়ে হামলা চালানো হয়, যা একতরফা সন্ত্রাসী কার্যক্রম ছিল।’ তিনি দাবি করেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকেও প্রমাণিত হয়েছে, ‘এ হামলা একতরফাভাবে সাদপন্থীদের পক্ষ থেকেই হয়েছিল।’
মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেন, কিছু স্বার্থান্বেষী ও ইসলামবিরোধী মহলের প্ররোচনায় তাবলিগ জামাতে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের মাওলানা সাদ সাহেবের অনুসারীরা বেআইনি পথে টঙ্গী ইজতেমা মাঠ ও কাকরাইল মসজিদে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এমনকি তাঁরা সরকারকে বিব্রত করতে ‘যমুনা ভবন ঘেরাও’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর বিশৃঙ্খলাকারীদের কাকরাইল মসজিদে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় এবং শুরায়ে নেজামপন্থীদের কাকরাইলে দাওয়াত কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেয় বলে জানান মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী। তিনি বলেন, ২০২৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারির ৬৩ নম্বর স্মারকে বলা হয়, সাদপন্থীরা শেষবারের মতো ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে টঙ্গীতে ইজতেমা করতে পারবে, এরপর আর নয়। তারা স্বাক্ষর দিয়ে সেই শর্ত মেনে নিয়েছিল।
শুরায়ে নেজামপন্থীরা বলেন, ‘আমরা সরকারের সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করছি। আগামী বছরের মার্চে ইজতেমা আয়োজনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করা হবে।’
সংবাদ সম্মেলন থেকে সরকারের কাছে ৪ দফা দাবি পেশ করেন তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থী) অনুসারীরা। তাঁদের দাবিগুলো হলো ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ইজতেমার তারিখ ঘোষণা, টঙ্গী ইজতেমা মাঠকে অস্থায়ীভাবে ‘কেপিআই’ হিসেবে ঘোষণা, বিদেশি মেহমানদের ভিসা সহজীকরণের পরিপত্র নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রকাশ ও গত বছরের ইজতেমা মাঠে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা শাহরিয়ার মাহমুদ, মতিন উদ্দিন আনোয়ার, রুহুল আমিন এবং তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের (শুরায়ে নেজাম) মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান।