থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সেনাবাহিনীর মধ্যে সীমান্তে তীব্র লড়াই, ৮ নাগরিক নিহত
Published: 24th, July 2025 GMT
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে বিরোধপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় তীব্র লড়াই চলছে। সংঘর্ষে থাইল্যান্ডে অন্তত আটজন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং দুই সেনা আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটি।
থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বিবিসি বলেছে, সংঘাতে থাইল্যান্ডে বেসামরিক নিহত মানুষের সংখ্যা বেড়ে ৮ এবং আহত হয়েছেন ১৩ জন।
থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনী আজ বৃহস্পতিবার বলেছে, কম্বোডিয়ার সেনারা উত্তর-পশ্চিম কম্বোডিয়ার অদ্দার মিনচেই প্রদেশের সীমান্তবর্তী বিরোধপূর্ণ তা মোয়ান থম মন্দিরের কাছে সীমান্ত এলাকায় প্রথমে গুলি চালায়। তার পর থেকে সেখানে তীব্র লড়াই চলছে।
সীমান্তবর্তী ৮৬টি গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার থাই বেসামরিক নাগরিককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।কম্বোডিয়া প্রথমে ওই এলাকায় একটি নজরদারি ড্রোন মোতায়েন করে, তারপর সেনা পাঠায়। কম্বোডিয়ার সেনারা সীমান্তে ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে গোলা ছুড়ছে, যার মধ্যে কামানের গোলা এবং দীর্ঘ পাল্লার বিএম২১ রকেটও আছে।
থাইল্যান্ডের সুরিন প্রদেশের জেলা প্রধান সুত্তিরোত চারোয়নথানাসাক আজ সকালে কম্বোডিয়ার গোলাবর্ষণে দুজন নিহত এবং আরও কয়েকজন আহত হওয়ার খবর দিয়েছিলেন।
সীমান্তবর্তী ৮৬টি গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার থাই বেসামরিক নাগরিককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলেও জানান সুত্তিরোত।
সীমান্তে এই সংঘাত নিয়ে কম্বোডিয়ার জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আজ একটি বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে তারা থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে আগে হামলা চালানোর অভিযোগ এনেছে।
পাল্টা লড়াই ও হামলা প্রতিহত করা ছাড়া কম্বোডিয়ার সেনাবাহিনীর কাছে অন্য কোনো উপায় নেই।হুন সেন, কম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রীবিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনীর হামলার পর কম্বোডিয়ার সেনারা পাল্টা জবাব দিয়েছেন। তাঁরা কেবল আত্মরক্ষার জন্য এটা করেছেন।
কম্বোডিয়ার দীর্ঘদিনের শাসক সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্টে লিখেছেন, থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনী কম্বোডিয়ার থাইল্যান্ড সীমান্তবর্তী দুটি প্রদেশ অদ্দার মিনচেই এবং প্রাহ ভিহেয়ারে গোলাবর্ষণ করেছে।
হুন সেন আরও বলেন, ‘পাল্টা লড়াই ও হামলা প্রতিহত করা ছাড়া কম্বোডিয়ার সেনাবাহিনীর কাছে অন্য কোনো উপায় নেই।’
হুন সেন সাধারণ মানুষকে শান্ত থাকার এবং আতঙ্কিত হয়ে চাল ও অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী না কেনার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সীমান্ত অঞ্চল ছাড়া অন্য সব জায়গায় এবং সব খাতে স্বাভাবিকভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধও করেছেন।
সর্বশেষ স্থলমাইন বিস্ফোরণের ঘটনার পর থাইল্যান্ডের ক্ষমতাসীন ফিউ থাই পার্টি জানিয়েছে, তারা কম্বোডিয়ায় নিযুক্ত থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রদূতকে দেশে ফিরিয়ে এনেছে এবং কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূতকে থাইল্যান্ড থেকে বহিষ্কার করা হবে। থাইল্যান্ড কম্বোডিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের স্তরও অবনমন করেছে।কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনে অবস্থিত থাইল্যান্ডের দূতাবাস বলেছে, সীমান্তে পরিস্থিতি ‘ক্রমাগত উত্তপ্ত হয়ে উঠছে’ এবং ‘সংঘাত দীর্ঘায়িত ও বিস্তৃত’ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই জরুরি কোনো কারণ না থাকলে থাই নাগরিকদের ‘যত দ্রুত সম্ভব’ কম্বোডিয়া ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
থাইল্যান্ডের দূতাবাস থেকে ঘোষণা আসার পরপরই দেশটির সেনাবাহিনী বলেছে, তারা সীমান্তে কম্বোডীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে।
থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনী ফেসবুকে এই ছবি পোস্ট করে বলেছে, কম্বোডিয়ার ছোড়া রকেটের আঘাতে সুরিন প্রদেশের কাপ চুয়েং জেলায় তিনজন আহত হয়েছেন.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কম ব ড য় র স ন স ম ন তবর ত
এছাড়াও পড়ুন:
বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস
রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।
‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।
এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।
সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।
বর্ষার ফুলের উৎসব
বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!
রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।
এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।