‘ভারতীয় মুসলিমদের জোর করে বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে মোদি সরকার’
Published: 25th, July 2025 GMT
ভারতীয় কর্তৃপক্ষ যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়াই শত শত মুসলিমকে বাংলাদেশে পুশ-ইন করছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বরাত দিয়ে শুক্রবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট এ তথ্য জানিয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অধিকার গোষ্ঠীটি অভিযোগ করেছে, নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকার পূর্বাঞ্চলীয় দুটি রাজ্যে নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক লাভের জন্য পশ্চিমবঙ্গ এবং আসাম থেকে বাংলাভাষী মুসলমানদের লক্ষ্যবস্তু করছে।
বাংলাদেশী সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বরাত দিয়ে মানবাধিকার গোষ্ঠীটি জানিয়েছে, ভারত ৭ মে থেকে ১৫ জুনের মধ্যে ১ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি মুসলিম পুরুষ, মহিলা এবং শিশুকে বাংলাদেশে পুশ-ইন করেছে। তবে নয়াদিল্লি প্রতিবেশী দেশে পুশ-ইন করা মানুষের সংখ্যা প্রকাশ করেনি।
মে মাসে জম্মু ও কাশ্মীরে ২৬ জন সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হওয়ার পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাজ্যগুলোকে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের গ্রেপ্তারের জন্য ৩০ দিনের সময়সীমা ঘোষণা করেছে।
সমালোচকরা বলেছেন, উত্তর প্রদেশ, ওড়িশা, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা এবং দিল্লি - এই সব রাজ্যগুলোতে ক্ষমতাসীন দল মোদির বিজেপি পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম থেকে যাওয়া বেশিরভাগ বাংলাভাষী অভিবাসী শ্রমিকদের আটক করেছে। বাংলা ভারতের ২২টি সরকারি ভাষার মধ্যে একটি।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া পরিচালক এলেন পিয়ারসন বলেছেন, “ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি বাঙালি মুসলিমদের, যাদের মধ্যে ভারতীয় নাগরিকরাও রয়েছেন, নির্বিচারে দেশ থেকে বহিষ্কার করে বৈষম্যকে আরো বাড়িয়ে তুলছে। সরকার হাজার হাজার দুর্বল মানুষকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে- স্পষ্টতই অননুমোদিত অভিবাসীদের অনুসরণ করে। তাদের কর্মকাণ্ড মুসলিমদের বিরুদ্ধে বৃহত্তর বৈষম্যমূলক নীতির প্রতিফলন ঘটায়।”
৫১ বছর বয়সী এক ভারতীয় মুসলিম শ্রমিক হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে জানিয়েছেন, মধ্যরাতের পর ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী তাকে ধাক্কা দিয়ে পার করে দেওয়ার পর তিনি ‘লাশের মতো বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিলেন।’
তিনি বলেন, “আমি সীমান্ত অতিক্রম করতে অস্বীকৃতি জানালে বিএসএফ অফিসার আমাকে মারধর করেন এবং চারবার ফাঁকা রাবার বুলেট ছুড়েছিলেন।”
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, অভিবাসী শ্রমিকটিকে দুই সপ্তাহ পরে ভারতে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।
পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল জানিয়েছে, মোদি সরকারের মাধ্যমে জোরপূর্বক বাংলাদেশে পাঠানো কয়েক ডজন বাসিন্দাকে তারা ফিরিয়ে এনেছে।
বাংলাদেশে পুশ-ইন করা ব্যক্তিদের মধ্যে কমপক্ষে ৩০০ জন আসামের বাসিন্দা। সেখানে ২০১৯ সালে বিতর্কিত নাগরিকত্ব যাচাই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রায় ২০ লাখ লোককে নাগরিক তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।
পশ্চিমবঙ্গের ৩৪ বছর বয়সী একজন অভিবাসী শ্রমিক নাজিমুদ্দিন শেখকে মুম্বাইতে আটক করা হয়েছিল। জুন মাসে তার বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ‘তার পরিচয়পত্র ছিঁড়ে ফেলে।’ পরে তাকে বাংলাদেশে জোর করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
শেখ হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে জানান, যখন তিনি এবং তার সহকর্মীরা নিজেদের ভারতীয় দাবি করে প্রতিবাদ করেছিলেন, তখন বিএসএফ তাদের কথা শোনেনি।
এই ভারতীয় নাগরিক বলেন, “আমরা বারবার কথা বললে তারা আমাদের মারধর করতো। তারা আমার পিঠে এবং হাতে লাঠি দিয়ে আঘাত করেছিল। তারা পেটানোর পর আমাদেরকে বাংলাদেশি বলে স্বীকার করতে বলেছিল।”
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতাসীন দলকে এই দমন-পীড়ন বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, “বাংলা বলা কি অপরাধ?”
মোদির উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনার লজ্জা হওয়া উচিত যে এর মাধ্যমে আপনি বাংলাভাষী সবাইকে বাংলাদেশি বলে দেখাচ্ছেন।”
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের বিএসএফের হাতে আটক ১৯ বাংলাদেশি মৎস্যজীবী
অবৈধভাবে ভারতীয় জলসীমায় প্রবেশের অভিযোগে ১৯ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।
বিএসএফ সূত্রে জানানো হয়েছে, সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের উত্তাল নদীতে দীর্ঘক্ষণ ধাওয়া করে তাদের আটক করা হয়। ধৃত মৎসজীবীরা বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের ভোলা জেলার পুরালিয়া গ্রামের বাসিন্দা। মাছ ধরার ট্রলার ও জালসহ তাদেরকে আটক করা হয়।
আরো পড়ুন:
কলকাতায় সম্মিলিত সেনা সম্মেলন উদ্বোধন নরেন্দ্র মোদির
অবৈধ অভিবাসীদের প্রতি নরম হওয়ার দিন শেষ: ট্রাম্প
বিএসএফ জানায়, রবিবার সীমান্তের সুন্দরবন অংশে রুটিন টহল দেয়ার সময় গোসাবা রেঞ্জের বাঘমারি জঙ্গল এলাকায় বাংলাদেশি অবৈধ ট্রলারের উপস্থিতি নজরে আসে বিএসএফ জওয়ানদের। বিএসএফ জওয়ানদের পেট্রোল বোট ট্রলারটির কাছে যাওয়ার চেষ্টা করতেই ট্রলারটি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। দ্রুততার সঙ্গে ট্রলারের পিছু ধাওয়া করা হয়। দীর্ঘক্ষণ ধাওয়া করে পরবর্তীতে পাকড়াও করা হয় বাংলাদেশি ট্রলারটিকে। অবৈধ অনুপ্রবেশ এর অভিযোগে আটক করা হয় এতে থাকা ১৯ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে। বাজেয়াপ্ত করা হয় ট্রলারটি।
বিএসএফ আরো জানায়, আটকের পর দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্তরা অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগের বিপরীতে কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখাতে পারেনি। ফলে জিজ্ঞাসাবাদের পরে তাদের স্থানীয় সুন্দরবন কোস্টাল থানার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আজ সোমবার তাদের আলিপুর আদালতে তোলা হবে।
ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ