ভারতীয় কর্তৃপক্ষ যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়াই শত শত মুসলিমকে বাংলাদেশে পুশ-ইন করছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বরাত দিয়ে শুক্রবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট এ তথ্য জানিয়েছে। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অধিকার গোষ্ঠীটি অভিযোগ করেছে, নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকার পূর্বাঞ্চলীয় দুটি রাজ্যে নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক লাভের জন্য পশ্চিমবঙ্গ এবং আসাম থেকে বাংলাভাষী মুসলমানদের লক্ষ্যবস্তু করছে।

বাংলাদেশী সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বরাত দিয়ে মানবাধিকার গোষ্ঠীটি জানিয়েছে, ভারত ৭ মে থেকে ১৫ জুনের মধ্যে ১ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি মুসলিম পুরুষ, মহিলা এবং শিশুকে বাংলাদেশে পুশ-ইন করেছে। তবে নয়াদিল্লি প্রতিবেশী দেশে পুশ-ইন করা মানুষের সংখ্যা প্রকাশ করেনি।

মে মাসে জম্মু ও কাশ্মীরে ২৬ জন সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হওয়ার পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাজ্যগুলোকে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের গ্রেপ্তারের জন্য ৩০ দিনের সময়সীমা ঘোষণা করেছে।

সমালোচকরা বলেছেন, উত্তর প্রদেশ, ওড়িশা, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা এবং দিল্লি - এই সব রাজ্যগুলোতে ক্ষমতাসীন দল মোদির বিজেপি পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম থেকে যাওয়া বেশিরভাগ বাংলাভাষী অভিবাসী শ্রমিকদের আটক করেছে। বাংলা ভারতের ২২টি সরকারি ভাষার মধ্যে একটি।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া পরিচালক এলেন পিয়ারসন বলেছেন, “ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি বাঙালি মুসলিমদের, যাদের মধ্যে ভারতীয় নাগরিকরাও রয়েছেন, নির্বিচারে দেশ থেকে বহিষ্কার করে বৈষম্যকে আরো বাড়িয়ে তুলছে। সরকার হাজার হাজার দুর্বল মানুষকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে- স্পষ্টতই অননুমোদিত অভিবাসীদের অনুসরণ করে। তাদের কর্মকাণ্ড মুসলিমদের বিরুদ্ধে বৃহত্তর বৈষম্যমূলক নীতির প্রতিফলন ঘটায়।”

৫১ বছর বয়সী এক ভারতীয় মুসলিম শ্রমিক হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে জানিয়েছেন, মধ্যরাতের পর ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী তাকে ধাক্কা দিয়ে পার করে দেওয়ার পর তিনি ‘লাশের মতো বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিলেন।’

তিনি বলেন, “আমি সীমান্ত অতিক্রম করতে অস্বীকৃতি জানালে বিএসএফ অফিসার আমাকে মারধর করেন এবং চারবার ফাঁকা রাবার বুলেট ছুড়েছিলেন।”

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, অভিবাসী শ্রমিকটিকে দুই সপ্তাহ পরে ভারতে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।

পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল জানিয়েছে, মোদি সরকারের মাধ্যমে জোরপূর্বক বাংলাদেশে পাঠানো কয়েক ডজন বাসিন্দাকে তারা ফিরিয়ে এনেছে।

বাংলাদেশে পুশ-ইন করা ব্যক্তিদের মধ্যে কমপক্ষে ৩০০ জন আসামের বাসিন্দা। সেখানে ২০১৯ সালে বিতর্কিত নাগরিকত্ব যাচাই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রায় ২০ লাখ লোককে নাগরিক তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।

পশ্চিমবঙ্গের ৩৪ বছর বয়সী একজন অভিবাসী শ্রমিক নাজিমুদ্দিন শেখকে মুম্বাইতে আটক করা হয়েছিল। জুন মাসে তার বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ‘তার পরিচয়পত্র ছিঁড়ে ফেলে।’ পরে তাকে বাংলাদেশে জোর করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

শেখ হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে জানান, যখন তিনি এবং তার সহকর্মীরা নিজেদের ভারতীয় দাবি করে প্রতিবাদ করেছিলেন, তখন বিএসএফ তাদের কথা শোনেনি। 

এই ভারতীয় নাগরিক বলেন, “আমরা বারবার কথা বললে তারা আমাদের মারধর করতো। তারা আমার পিঠে এবং হাতে লাঠি দিয়ে আঘাত করেছিল। তারা পেটানোর পর আমাদেরকে বাংলাদেশি বলে স্বীকার করতে বলেছিল।”

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতাসীন দলকে এই দমন-পীড়ন বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, “বাংলা বলা কি অপরাধ?”

মোদির উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনার লজ্জা হওয়া উচিত যে এর মাধ্যমে আপনি বাংলাভাষী সবাইকে বাংলাদেশি বলে দেখাচ্ছেন।”

ঢাকা/শাহেদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

১২ হাজার তরুণ–তরণীকে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ দেবে পিকেএসএফ

পেশাগত দক্ষতা বাড়াতে দেশের ১২ হাজার তরুণ-তরুণীকে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ দেবে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)। কারিগরি ও পেশাগত শিক্ষানির্ভর তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে স্কিলস ফর ইন্ডাস্ট্রিজ কম্পিটিটিভনেস অ্যান্ড ইনোভেশন প্রোগ্রামের (এসআইসিআইপি) আওতায়। এ প্রকল্পে সহায়তা করছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।

আজ সোমবার রাজধানীর পিকেএসএফ ভবনে এসআইসিআইপি ও পিকেএসএফের প্রকল্পের উদ্বোধন ও প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়।

প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণার্থী তরুণেরা ১২টি খাতের প্রশিক্ষণ পাবেন। প্রশিক্ষণ চলাকালে থাকা-খাওয়ার সব খরচ প্রকল্প থেকে বহন করা হবে। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৩০ শতাংশ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত। বাকি ৭০ শতাংশের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন নিম্ন আয়ের ও প্রান্তিক অঞ্চলের তরুণেরা। প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পর অংশগ্রহণকারীদের আত্মকর্মসংস্থান বা মজুরিভিত্তিক চাকরির ক্ষেত্রেও সহায়তা করা হবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, দেশে দক্ষ জনশক্তির চাহিদা রয়েছে, বিশেষ করে বিদেশে। এই প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে পিকেএসএফ ও এর সহযোগী সংস্থাগুলো সেই চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখতে পারবে।

পিকেএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল কাদের বলেন, ‘প্রতিবছর ২০ লাখের বেশি তরুণ শ্রমবাজারে প্রবেশ করছেন। এটি একই সঙ্গে আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা। প্রকল্পের আওতায় জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের স্বীকৃত কোর্স অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, যাতে প্রশিক্ষণ শেষে তাঁরা সহজেই কর্মসংস্থানে যুক্ত হতে পারেন।’

অনুষ্ঠানে পিকেএসএফের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জসীম উদ্দিন বলেন, বর্তমানে ১২ হাজার ছাড়াও আরও ৮ হাজার ৫০০ তরুণকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রস্তাব সরকারের কাছে দেওয়া হয়েছে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও তৃতীয় লিঙ্গের তরুণদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। পাশাপাশি ২ হাজার এতিম ও দুস্থ তরুণকেও প্রশিক্ষণের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে।

এ সময় অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ওয়ালিদ হোসেন ও পিকেএসএফের চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খান বক্তব্য দেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাংনী সীমান্ত দিয়ে ১৮ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ
  • চোরাচালানে গিয়ে বিএসএফের হাতে আটক, ফিরিয়ে এনে ব্যবস্থা নিচ্ছে বিজিবি
  • মেহেরপুর সীমান্ত দিয়ে ১৮ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ
  • বড়লেখা সীমান্ত দিয়ে ১০ রোহিঙ্গাকে ঠেলে দিয়েছে বিএসএফ
  • ১২ হাজার তরুণ–তরণীকে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ দেবে পিকেএসএফ
  • বাংলাদেশ সীমান্তে নজরদারি বাড়াতে বডি ক্যামেরা পাচ্ছে বিএসএফ
  • বাংলাদেশ সীমান্তের জন্য ৫ হাজার বডিক্যাম পাচ্ছে বিএসএফ