ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত ইউরোপ
Published: 26th, July 2025 GMT
গাজার ভয়াবহ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকায়, ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে কিনা এই প্রশ্নে ইউরোপীয় দেশগুলো দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ছে। শনিবার দ্য গার্ডিয়ান এ তথ্য জানিয়েছে।
আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘের বৈঠকে প্রায় ২২১ জন সংসদ সদস্য ব্রিটিশ সরকারকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন। এরপরেও ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার অবিলম্বে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন। প্রধানমন্ত্রী ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র দেখতে চাওয়ার বিষয়ে ‘দ্ব্যর্থহীন’ হলেও, তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, এটি একটি ‘বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ হওয়া উচিত যা শেষ পর্যন্ত দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান এবং ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের জন্য স্থায়ী নিরাপত্তা’ নিশ্চিত করবে।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি শনিবার জানিয়েছেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগে এটিকে স্বীকৃতি দেওয়া বিপরীতমুখী হতে পারে।
তিনি বলেছেন, “আমি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে, কিন্তু প্রতিষ্ঠার আগে এটিকে স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে নই। যদি এমন কিছু যা বিদ্যমান নেই তা কাগজে স্বীকৃত হয়, তবে সমস্যাটি সমাধান হয়ে গেছে বলে মনে হতে পারে যখন এটি বিদ্যমান নেই।”
জার্মান সরকারের একজন মুখপাত্র শুক্রবার জানিয়েছেন, বার্লিন স্বল্পমেয়াদে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে না এবং এখন তাদের অগ্রাধিকার হলো দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের দিকে ‘দীর্ঘদিন ধরে অমীমাংসিত অগ্রগতি’ অর্জন করা।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফ্রান্স একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ম্যাক্রোঁ ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে পাঠানো একটি চিঠি এক্স-এ প্রকাশ করেছেন যেখানে ফ্রান্সের ফিলিস্তিনি স্বীকৃতির সাথে এগিয়ে যাওয়ার এবং অন্যান্য অংশীদারদের তা অনুসরণ করতে রাজি করার জন্য কাজ করার ইচ্ছা নিশ্চিত করা হয়েছে।
এএফপির একটি ডাটাবেস অনুসারে, ফ্রান্সসহ ১৯৩টি জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে কমপক্ষে ১৪২টি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
তিনজন কূটনীতিক রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে একাই কাজ করতে হবে। কারণ লন্ডন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রোষের মুখোমুখি হতে চায় না এবং অটোয়াও একই অবস্থান নিয়েছে।
একজন ফরাসি কূটনীতিক বলেছেন,“এটা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে আমরা অংশীদারদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে পারছি না।”
একজন ঊর্ধ্বতন ফরাসি কর্মকর্তা বলেছেন, “ইতিহাসে যদি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার কোনো মুহূর্ত থাকে, এমনকি যদি তা কেবল প্রতীকীও হয়, তাহলে আমি বলব যে সেই মুহূর্তটি সম্ভবত এসে গেছে।”
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ষ ট রক বল ছ ন র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ