কয়েকদিন ধরে না খেয়ে আছে গাজার এক তৃতীয়াংশ মানুষ: ডব্লিউএফপি
Published: 26th, July 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার এক-তৃতীয়াংশ মানুষ অভুক্ত অবস্থায় দিন পার করছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। ইসরাইলের টানা অবরোধের কারণে পুরো গাজায় দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলেও সতর্ক করেছে সংস্থাটি।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
ডব্লিউএফপি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গাজায় অপুষ্টি বেড়েই চলেছে। ৯০ হাজার নারী ও শিশুর জরুরি চিকিৎসা দরকার।
আরো পড়ুন:
‘আমরা মরে যাচ্ছি’, গণঅনাহারে বৈশ্বিক নীরবতায় গাজার ধিক্কার
সংস্কৃতি উপদেষ্টার সঙ্গে মার্কিন চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্সের সাক্ষাৎ
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে অনাহারে ভুগে অপুষ্টিজনিত কারণে নতুন করে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যা ১২২ জনে পৌঁছেছে, যার মধ্যে অন্তত ৮৩ জনই শিশু।।
গাজার সব সরবরাহ প্রবেশ পথের নিয়ন্ত্রণে থাকা ইসরায়েল বলেছে, সাহায্য নেয়ার ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ নেই। তারা অপুষ্টির জন্য হামাসকে দায়ী করেছে।
শুক্রবার ইসরায়েলের একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, বিমান থেকে সাহায্য বিতরণের অনুমতি আগামী কয়েকদিনের মধ্যে দেয়া হতে পারে। এভাবে সাহায্য দেয়াকে যথেষ্ট নয় বলে সাহায্য সংস্থাগুলো আগে সতর্ক করেছিল। গাজার মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ বৃদ্ধির মধ্যে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
শুক্রবার জার্মানি, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্য ইসরায়েলকে ‘অবিলম্বে ত্রাণ প্রবাহের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার’ আহ্বান জানিয়েছে।
এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা গাজায় মানবিক বিপর্যয় প্রত্যক্ষ করছি এবং অবিলম্বে যুদ্ধ ও মানবিক বিপর্যয় অবসানের আহ্বান জানিয়েছি। তারা বলছে, ইসরায়েলকে ‘আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে হবে।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেকের মধ্যে যে পরিমাণ মতভিন্নতা, উদাসীনতা ও নিষ্ক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে-সহানুভূতি, সত্যতা ও মানবিকতার অভাব- তার মাত্রা তিনি ব্যাখ্যা করতে পারবেন না।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বৈশ্বিক সমাবেশে দেয়া বক্তৃতায় তিনি বলেন, “গত ২৭ মে থেকে খাদ্য পাওয়ার জন্য চেষ্টা করার সময় এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।”
জাতিসংঘের নেতৃত্ব খাদ্য বিতরণের বিকল্প হিসেবে যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন বা জিএইচএফ খাদ্য বিতরণ করতে শুরু করে, তখন থেকে এসব ঘটছে।
জিএইচএফ এর সঙ্গে কাজ করে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিষয়ক একজন ঠিকাদার অ্যান্থনি আগুইলার বিবিসিকে বলেছেন, “তিনি প্রশ্নহীনভাবেই যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হতে দেখেছেন।”
তিনি জানান, তিনি দেখেছেন যে আইডিএফ ও যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা কর্মকর্তারা গোলাবারুদ, মর্টার ব্যবহার করছে এবং খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে ট্যাংক থেকে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গুলি বর্ষণ করছে।
অবসরপ্রাপ্ত এই সৈনিক বলেন, “আমার পুরো ক্যারিয়ারে এমন মাত্রার নিষ্ঠুরতা দেখিনি। আইডিএফ ও মার্কিন ঠিকাদারদের হাতে বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে নির্বিচারে ও অপ্রয়োজনীয় বলপ্রয়োগ দেখেছি।”
জিএইচএফ দাবি করছে যে, এসব অভিযোগ একজন ক্ষুব্ধ সাবেক ঠিকাদারের কাছ থেকে এসেছে, যাকে অসদাচরণের অভিযোগে এক মাস আগে বাদ দেয়া হয়েছে।
এদিকে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস গাজায় যুদ্ধবিরতি চায় না বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, কারণ তারা ভয় পাচ্ছে-সব ইসরায়েলি জিম্মিকে ছেড়ে দিলে পরে তাদের কী পরিণতি হবে।
ট্রাম্প বলেন, “আমরা শেষ কয়েকজন জিম্মির মুক্তির ব্যাপারে আলোচনা করছি। কিন্তু হামাস বুঝতে পারছে-সবাইকে ছেড়ে দিলে তাদের ভাগ্যে কী ঘটতে পারে। এ কারণেই তারা যুদ্ধবিরতিতে যেতে চাচ্ছে না।”
মার্কিন প্রেসিডেন্ট যুদ্ধবিরতি আলোচনা ভেঙে পড়ার জন্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীকেই দায়ী করেছেন। হুমকি দিয়ে বলেছেন, এই গোষ্ঠীটিকে ‘শিকার’ বানানো হবে।
তবে হামাস যুক্তরাষ্ট্রের এমন অবস্থানে বিস্ময় প্রকাশ করেছে। গোষ্ঠীটি জানিয়েছে, তারা মধ্যস্থতাকারীদের চেষ্টা সফল করতে আন্তরিকভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল। তাদের গঠনমূলক ও ইতিবাচক অবস্থানকে কাতার ও মিশর স্বাগত জানিয়েছে বলেও দাবি করেছে হামাস।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল কাতার আলোচনা থেকে তাদের দল প্রত্যাহার করে নেয়ায় নতুন যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির আলোচনা এখনো অনিশ্চিত।
ইসরায়েলের ঐতিহ্যমন্ত্রী আমিচায় এলিয়াহু বলেছেন, ইসরায়েল দ্রুত গাজা ধ্বংসের কাজ করছে এবং এই উপত্যকাকে সম্পূর্ণরূপে ইহুদিদের জন্য করে গড়ে তোলা হবে। গত বৃহস্পতিবার হারেদি রেডিও স্টেশনে তিনি এ কথা বলেন।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র ইসর য় ল য ক তর ষ ট র য ব তরণ ইসর য় ল বল ছ ন ম নব ক র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’
তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’
ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।
ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’
পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।
গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।
তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।
দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫