বন্ধুকে মারধরের ঘটনাকে ‘গুজব’ বলে দাবি করেছেন ক্রিকেটার তাসকিন আহমেদ। গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছেন জাতীয় দলের এই ক্রিকেটার। প্রথম আলোকে মুঠোফোনে আজ তাসকিন বলেছেন, ‘এটা মিথ্যা কথা। আমি কাউকে মারিনি। যারা আমার নামে থানায় অভিযোগ করেছে, তারা এখন উল্টো আমাকে স্যরি বলছে।’

ফোনে ডেকে নিয়ে মারধর ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগে তাসকিনের বিরুদ্ধে কাল গভীর রাতে মিরপুর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন সিফাতুর রহমান সৌরভ নামে এক ব্যক্তি, যিনি তাঁর ছোট বেলার বন্ধু বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাদ রোমন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাসকিনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’

ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তাসকিন বলেন, ‘আমি কাউকে মারিনি। কাল সন্ধ্যায় আমার এক বন্ধু রসির সঙ্গে আমাদেরই আরেক বন্ধু সৌরভের হাতাহাতি হয়। ঘটনা শুনে আমি মোহাম্মদপুর থানার ওসিকে অনুরোধ করি বিষয়টি দেখতে। পরে ওসি সাহেব ঘটনার তদন্তে নামলে সৌরভরা ক্ষিপ্ত হয়ে আমার নামে কাল অনেক রাতে মিরপুর মডেল থানায় ডায়েরি করে।’

তাসকিনের দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে এখন উল্টো বিব্রত অভিযোগকারীরা, ‘ওদের সবার সঙ্গে আমার ছোটবেলার সম্পর্ক। আমি সৌরভকে জিজ্ঞেস করেছি, তুই এটা কেন করলি? আমার নামে অভিযোগ কেন দিলি? আমি তো সেখানে ছিলামই না! সে বলেছে, সে নাকি এটা ইমোশনালি করে ফেলেছে। সৌরভ আমার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছে, অভিযোগও প্রত্যাহার করেছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিযোগকারী সৌরভ আজ মৌখিকভাবে মিরপুর মডেল থানাকে জানিয়েছেন, তিনি অভিযোগ প্রত্যাহার করতে চান। তবে থানা থেকে তাঁকে জানানো হয়, যেহেতু তিনি লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন, তাঁকে অভিযোগ প্রত্যাহারও করতে হবে লিখিতভাবে। থানায় সশরীরে গিয়ে তাঁকে তা করতে বলা হয়েছে।

এদিকে মারামারির অভিযোগে বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানানোর ঘটনা নিজের জন্য অস্বস্তিকর এবং মর্যাদাহানির বলে মনে করেন তাসকিন, ‘বিষয়টা নিয়ে আজ সকাল থেকে অনেক কিচ্ছু হচ্ছে, আমি টায়ার্ড। এটা এখানেই শেষ হয়ে যাওয়া উচিত। তবে পুলিশ চাইলে তদন্ত করে দেখতে পারে আমি আসলেই এ রকম কিছু করেছি কিনা।’

এই ঘটনা নিয়ে এরই মধ্যে তাসকিনের বাবার একটি বক্তব্য সংবাদমাধ্যমে এসেছে, যাতে ছেলে তাসকিনের প্রতি তাঁর অসন্তুষ্টিই প্রকাশ পেয়েছে। যদিও তাসকিন বলেছেন, ‘সৌরভের খালা আমার বাবাকে ফোন করেছিলেন। বাবা তখন কথায় কথায় আমাদের সব বন্ধুদের নিয়েই হয়তো কিছু বলে থাকতে পারেন। সেটাকেই কেউ কেউ খণ্ডিত করে প্রচার করছে। এটা ঠিক নয়।’

বিকেল নিজের দেওয়া এক ফেসবুকে পোস্টেও তাসকিন লিখেছেন, ‘সবাইকে অনুরোধ, গুজবে বিভ্রান্ত হবেন না। আমি আমার ছোটবেলার বন্ধুর গায়ে হাত তুলেছি, এমন একটা ঘটনায় অনেক কিছুই ঘটে যাচ্ছে। আমার মনে হয় এমন গুজবে কান দিয়ে বিভ্রান্ত হবেন না এবং অন্যকেও বিভ্রান্ত করবেন না।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘এটা আমার, আমার পরিবার ও আমার বন্ধুর জন্য সম্মানজনক না। যা ঘটেছে সে জন্য, বন্ধু ও আমার মধ্যে কথা হয়েছে। এটা যে পর্যায়ে গেছে কোনো ভাবে এমনটা হওয়ার কথা নয়। শুধু একটা কথাই বলতে চাই বিষয়টা অন্য, বাস্তবতা ভিন্ন।’

ছড়িয়ে পড়া ঘটনাটিকে মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে তাসকিন পোস্টে আরও লিখেছেন, ‘আশা করি সত্যের সঙ্গেই থাকবেন, সত্য কখনো মিথ্যা হয় না।’

আরও পড়ুনতাসকিনের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ থানায়৪ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য ম রধর

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬০ দিন পর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা, উৎসবের আমেজ

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) দীর্ঘ ১৬০ দিন পর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসেছেন। সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে বইছে উৎসবের আমেজ।

সকালে কুয়েট ক্যাম্পাসে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস। ছাতা মাথায় দল বেঁধে ছুটছেন ক্লাসরুমের দিকে। কখনো এক ছাতার নিচে দু-তিনজন। কারও সঙ্গে অভিভাবকও এসেছেন। সকাল নয়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি শিক্ষাবর্ষের প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী ক্লাসে যোগ দেন। নতুন উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে শ্রেণি কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করেন।

ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) বিভাগের ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী দীপ্ত বলেন, ‘আমাদের প্রায় এক সেমিস্টার নষ্ট হয়ে গেছে। এই সময়টা খুব অস্বস্তিতে কেটেছে। ক্ষতি যা হওয়ার হয়েছে, তবে এখন আবার ক্লাস শুরু হওয়াটা ইতিবাচক দিক। আমরা আশাবাদী।’ একই ব্যাচের শিক্ষার্থী আম্মান বলেন, ‘অনেক দিন জীবনটা থেমে ছিল। আজকের দিনটা বিশেষ মনে হচ্ছে। ঠিক যেন স্কুলজীবনের প্রথম দিনের মতো। সব হতাশা কাটিয়ে আমরা অনেকটা নতুন করে শুরু করছি।’

হুমায়ুন কবির নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছেলে বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ে। পাঁচ মাস ধরে ক্লাস বন্ধ থাকায় ও মানসিকভাবে খুব চাপের মধ্যে ছিল। একসময় অসুস্থও হয়ে পড়ে। কুয়েটে এমন পরিস্থিতি আগে দেখিনি। কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে হয়তো আগেই খুলে যেত। তারপরও এখন অন্তত খুলেছে, এটা বড় স্বস্তি।’

কুয়েটের ছাত্র পরিচালক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার বলেন, আজ থেকে কুয়েটে ক্লাস শুরু হয়েছে। তবে এখনো সব শিক্ষার্থী আসেননি। যাঁদের কেবল ক্লাস রয়েছে, তাঁরা অংশ নিচ্ছেন। যাঁদের পরীক্ষা ছিল, তাঁরা প্রস্তুতির জন্য কিছুটা সময় চেয়েছে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন হবে ১৪ আগস্ট, ক্লাস শুরু ১৭ আগস্ট।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। ওই রাতেই তৎকালীন উপাচার্য ও কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২৬ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ ও সহ-উপাচার্য অধ্যাপক শরিফুল আলমকে অব্যাহতি দেয়। ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক হজরত আলীকে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার বিচার দাবিতে ৪ মে থেকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি। এরপর কোনো শিক্ষকই ক্লাসে ফেরেননি। শিক্ষক সমিতির বিরোধিতার মুখে হজরত আলী দায়িত্ব পালন করতে না পেরে ২২ মে পদত্যাগ করেন।

এরপর ১০ জুন নতুন উপাচার্য নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার কুয়েটের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী। পরদিন শুক্রবার তিনি খুলনায় এসে দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় আন্দোলন কর্মসূচি তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার ক্লাস শুরুর নোটিশ জারি করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ