কলকাতায় প্রবীণের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার, এনআরসি আতঙ্কে আত্মহত্যা বলছে পরিবার
Published: 4th, August 2025 GMT
ভারতের দক্ষিণ কলকাতার রিজেন্ট পার্ক এলাকায় রোববার সকালে এক প্রবীণ ব্যক্তির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার ঘিরে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। ওই ব্যক্তির নাম দিলীপ কুমার সাহা (৬৮)। তাঁর পরিবারের দাবি, তিনি গত এক সপ্তাহ ধরে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি তথা এনআরসি আতঙ্কে ভুগছিলেন এবং সেই কারণেই আত্মহত্যা করেছেন।
দিলীপ সাহা রিজেন্ট পার্কের আনন্দপল্লি পশ্চিমের বাসিন্দা ছিলেন। ঢাকুরিয়ার একটি স্কুলে কর্মচারী হিসেবে তিনি কাজ করতেন।
রোববার সকালে ঘুম থেকে না ওঠায় দিলীপ সাহার স্ত্রী আরতি সাহা তাঁকে ডাকতে থাকেন। পরে কোনো সাড়া না পেয়ে প্রতিবেশীর সহায়তায় দরজা ভেঙে ঝুলন্ত মরদেহ দেখে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ এসে দিলীপের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, দিলীপ সাহা ১৯৭২ সালে ঢাকার নবাবগঞ্জ থেকে কলকাতায় আসেন। পরিবারের দাবি, এনআরসি কার্যকর হতে পারে— এই আশঙ্কায় সম্প্রতি তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। তাঁর ভারতীয় ভোটার কার্ড, আধার ও প্যান কার্ড ছিল। তবুও তিনি ভাবতেন, তাঁকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে।
দিলীপ সাহা একটি ‘সুইসাইড নোট’ রেখে গেছেন বলে জানা গেলেও পুলিশ এখনও তা প্রকাশ করেনি। প্রতিবেশীদের অনেকে বলছেন, তিনি স্নায়ুজনিত সমস্যায় ভুগতেন এবং মানসিকভাবে দুর্বল ছিলেন।
ঘটনার পর পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না। ভোটার তালিকা সংশোধনের নাম করে তারা এনআরসির পথ প্রশস্ত করছে।
কলকাতা পুলিশ দিলীপ সাহার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনাকে ‘অস্বাভাবিক মৃত্যু’ হিসেবে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুদ্ধে জড়াবে না যুক্তরাষ্ট্র: ট্রাম্প
ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিকোলাস মাদুরোর দিন ফুরিয়ে এসেছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। খবর বিবিসির।
ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ করতে যাচ্ছে কিনা জানতে চাইলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সিবিএস নিউজের ৬০ মিনিটসকে বলেন, “আমার সন্দেহ রয়েছে। আমার মনে হয় না। কিন্তু তারা আমাদের সঙ্গে খুব খারাপ আচরণ করছে।”
আরো পড়ুন:
ক্যারিবীয় জাহাজে আবারো যুক্তরাষ্ট্রের হামলা, নিহত ৩
নাইজেরিয়ায় হামলার হুমকি ট্রাম্পের
ক্যারিবীয় অঞ্চলে মাদক চোরাচালানের অভিযোগে নৌযানগুলোতে মার্কিন হামলা অব্যাহত থাকার মধ্যে ট্রাম্পের এই মন্তব্য এলো। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রে মাদকের প্রবাহ বন্ধ করার জন্য এই হামলা প্রয়োজনীয়।
ট্রাম্প এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন যে, ক্যারিবীয় সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযান মাদক বন্ধ করার লক্ষ্যে নয়, বরং ট্রাম্প বিরোধী মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, এটি ‘অনেক কিছু’ সম্পর্কে।
বিবিসির মার্কিন নিউজ পার্টনার সিবিএস নিউজ জানিয়েছে, সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে ক্যারিবীয় ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন হামলায় কমপক্ষে ৬৪ জন নিহত হয়েছে।
সম্প্রতি ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোতে এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, “মার্কিন হামলায় আপনি যেসব নৌযানে বিস্ফোরণ হতে দেখেন, তার প্রতিটিতে অন্তত ২৫ হাজার মাদকদ্রব্য ধ্বংস হয়। এগুলো যুক্তরাষ্ট্রে মাদক সরবরাহের জন্য দায়ী।”
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্থলপথে ভেনেজুয়েলায় হামলার পরিকল্পনা করছে কিনা, এই প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প তা উড়িয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, “আমি এটা বলতে চাই না যে আমি এটা করব...আমি ভেনেজুয়েলার সাথে কী করব, আমি তা করব কিনা, তা আমি বলব না।”
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মাদুরো ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘অঘোষিত যুদ্ধ’ শুরু করার অভিযোগ তুলেছেন। অন্যদিকে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রোর অভিযোগ, নৌযানগুলোতে হামলা চালানোর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র লাতিন আমেরিকায় ‘আধিপত্য বিস্তার’ করার চেষ্টা করছে।
ট্রাম্প জানান, তার সরকার ‘সারা বিশ্ব থেকে’ সন্ত্রাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে ‘আসতে’ দেবে না।
তিনি বলেন, “তারা কঙ্গো থেকে আসে, তারা সারা বিশ্ব থেকে আসে, তারা আসছে, কেবল দক্ষিণ আমেরিকা থেকে নয়। তবে বিশেষ করে ভেনেজুয়েলা- খারাপ। তাদের গ্যাং আছে।”
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্দিষ্ট করে ভেনেজুয়েলার ‘ট্রেন দে আরাগুয়ার’ নাম উল্লেখ করেন। তিনি এটিকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ গ্যাং’ হিসেবে অভিহিত করেন।
জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউজে ফিরে আসার পর থেকে, ট্রাম্প প্রশাসন মেক্সিকো এবং ল্যাটিন আমেরিকার বেশ কয়েকটি মাদক পাচারকারী সংগঠন ও অপরাধী গোষ্ঠীকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ভেনেজুয়েলার ট্রেন দে আরাগুয়া এবং কার্টেল অব দ্য সানস, যেটি যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট মাদুরো ও তার ঘনিষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তারা পরিচালনা করে। তবে কারাকাস সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ঢাকা/ফিরোজ