একটি হামলার পর ফাঁকা হয়ে গেছে রাজশাহীর পবা উপজেলার বাগসারা গ্রামের একটি সাঁওতালপাড়া। পাড়াটিতে মোট ১২টি বাড়ি থাকলেও সোমবার (৪ আগস্ট) দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, কেবল এক বৃদ্ধা ছাড়া কোনো বাড়িতে আর কেউ নেই। বেশ কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর করা অবস্থায় পড়ে আছে। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ঘরের জিনিসপত্র।
বারনই নদীর তীরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পুলের ওপর প্রায় পাঁচ বছর আগে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ১২টি পরিবার এই পাড়ায় ঘর তৈরি করেন। এর মধ্যে সাতটি সাঁওতাল, চারটি ধাঙ্গড় (ওরাঁও) ও একটি রবিদাস সম্প্রদায়ের পরিবার। পাড়ার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বারনই নদী। নদীর পড়েই মো.
গত বুধবার (৩০ জুলাই) সকালে বাবলুর সঙ্গে পাড়াবাসীদের হাতাহাতি হয়। এরপর দুপুর ও সন্ধ্যায় দুই দফা হামলা হয় পাড়াটিতে। এর পরপরই লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়।
আরো পড়ুন:
যশোরে সাংবাদিকের ছেলে ছুরিকাহত
বগুড়া সদর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ককে কুপিয়ে আহত
সোমবার সকালে পাড়ায় গিয়ে শুধু হিমেন রবিদাসের বাড়িতে তাঁর শাশুড়ি অমলা দাসীকে পাওয়া যায়। তিনি জানান, নওগাঁর নিয়ামতপুর থেকে চিকিৎসার জন্য এখানে এসেছেন ১৫ দিন আগে। হাঁটতে পারেন না বলে এখানেই রয়েছেন। অমলা বলেন, ‘‘কয়দিন আগে গণ্ডগোল হয়েছে। তারপর তো কেউ বাড়ি নেই। আমি চলতে পারি না, তাই আছি।’’
পাড়ার পরবর্তী বাড়িগুলোতে কাউকে পাওয়া যায়নি। কোথাও বিদ্যুৎ বিল ঝুলছে, কোথাও দরজা তালাবদ্ধ, কোথাও দরজা খোলা, তবে কেউ নেই। কোনো ঘরে বিছানায় মশারি টানানো, মেঝেতে পচে যাওয়া ভাত, আবার কোথাও টিনের ঘরে হামলার চিহ্ন রয়েছে স্পষ্ট।
পুলের ওপর দিয়ে একজন ভ্যানচালক হেঁটে যাচ্ছিলেন। তিনি জানান, ঘটনার দিন সকালে কয়েকজন পাড়াবাসী মদ খাচ্ছিলেন। সেই সময় পাশের জমির মালিক বাবলু তাদের নিষেধ করলে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে এক নারী বাবলুর শার্টের কলার ধরে, এরপর বাবলুকে মারধর করা হয়। এরপর বাবলু লোকজন নিয়ে এসে দুই দফা হামলা করেন।
ওই এলাকায় পাওয়া যায় বিএনপিকর্মী বাবলুর স্ত্রী ডলি বেগমকে। তিনি জানালেন, তার স্বামী বাজারে গেছেন। তিনি শ্রমিকদের খাবার দিতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘ওরা আমাদের জমির সামনে বাড়ি করেছে, খুব অত্যাচার করে। মদ খেতে নিষেধ করায় আমার স্বামীকে মেরেছে। পরে আমার স্বামীও লোকজন নিয়ে আসে। কিন্তু কাউকে মারেনি। ওরাই ভয়ে পালিয়ে গেছে।’’ ঘরবাড়ি ভাঙচুরের বিষয়ে ডলি দাবি করেন, ‘‘ওরাই নিজেরাই ভেঙেছে।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘পুলিশ এসে বলেছে, সাঁওতালরা থাকবে, কেউ কিছু বলবে না। এতই যদি দরদ হয়, তাহলে এদের নিয়ে গিয়ে বাড়ি করে দিক।’’
মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয় এই পাড়ার সর্দার শ্যামল মুর্মুর সঙ্গে। তিনি জানান, আগে তারা রাজশাহীর গোদাগাড়ীর পাকড়ি এলাকায় থাকতেন। কৃষিকাজের জন্য বাগসারা এলাকায় আসতেন। দূরত্বের কারণে স্থানীয় তিন কাউন্সিলরের পরামর্শে তারা পাউবোর এই জায়গায় ঘর তোলেন। হামলার পর যে যেদিকে পেরেছেন চলে গেছেন।
শ্যামল বলেন, ‘‘ঘটনার দিন বাবলু পাড়ার এক নারীকে খারাপ ভাষায় গালি দিচ্ছিলেন। নিষেধ করায় তিনি ওই নারীকে মারেন। তখন আমাদের যুবকরাও তাকে একটু মারে। এরপর বিকেলে বাবলু লোকজন নিয়ে এসে আমাদের তিনজনকে মারে। পরে পুলিশ এসে সবাইকে শান্ত থাকার কথা বলে চলে যায়। কিন্তু সন্ধ্যার আগেই বাবলু আবার লোকজন নিয়ে এসে আমাদের ওপর হামলা করে। তাদের কাছে হাঁসুয়া, বল্লম, ছোরা ছিল।’’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘আমার নিজের বাড়ি থেকে ১০ হাজার টাকা, ২৫টি কবুতর লুট হয়েছে। কেউ কিছু নিয়ে পালাতে পারেনি। হরি আর তার বাড়িওয়ালি ১২ হাজার টাকাসহ বস্তায় জিনিসপত্র ভরে পালাতে গেলে পথ থেকে সেটাও কেড়ে নেয়া হয়েছে। আমরা এখনো ভয়ে আছি।’’
সাঁওতালদের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরাফাত আমান আজিজ বলেন, ‘‘বিষয়টি জানার পর থানার ওসিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’’
পবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘উভয় পক্ষই থানায় অভিযোগ দিয়েছে। সাঁওতালদের কয়েকজন আহত হয়েছেন। মামলা করতে বলা হয়েছে, কিন্তু কেউ এখনো মামলা করেনি। মামলা না করলে তো আমরা কিছু করতে পারি না।’’
ঢাকা/কেয়া/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ ল কজন ন য় আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
সংসার ভাঙার কারণ জানালেন শোলাঙ্কি
কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শোলাঙ্কি রায়। ছোট পর্দার মাধ্যমে শোবিজ অঙ্গনে পা রাখলেও এখন সিনেমা, ওয়েব সিরিজ—সব মাধ্যমেই তার সরব উপস্থিতি। ব্যক্তিগত জীবনে ছোটবেলার বন্ধু শাক্য বোসের সঙ্গে ঘর বেঁধেছিলেন এই অভিনেত্রী। কয়েক বছর আগে তার এ সংসার ভেঙে যায়। বিচ্ছেদের খবর জানালেও কেন তার সংসার ভেঙেছে তা এতদিন জানাননি।
কয়েক দিন আগে ‘স্টেট আপ উইথ শ্রী’ পডকাস্টে অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়েছিলেন শোলাঙ্কি রায়। এ আলাপচারিতায় এ অভিনেত্রী বলেন, “আমাদের সমস্যাটা হয়েছিল মূলত দূরত্ব নিয়ে। আমরা দুজন দুটো আলাদা টাইম জোনে থাকতাম। তারপর আমার কাজের যা সময় ছিল, তারপর আমাদের আর সেভাবে কথা হতো না। আমার যখন কাজ শেষ, ও তখন ঘুম থেকে উঠত আর অফিসের জন্য বেরিয়ে যেত। হ্যাঁ, আমাদের বিয়ে হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু আমরা বৈবাহিক জীবনযাপন করতাম না। একটা সময় আমরা একসঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিই, বিষয়টি খুব খারাপ দিকে যাচ্ছে।”
পরের ঘটনা বর্ণনা করে শোলাঙ্কি রায় বলেন, “পরিস্থিতি এমন তৈরি হয়েছিল যে কেউ না কেউ বিদ্রোহ ঘোষণা করবেই। তাছাড়া ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম, ওর পক্ষে সব ছেড়ে এখানে এসে থাকা সম্ভব নয়। আর আমার পক্ষেও সম্ভব হয়নি। অবশ্যই, প্রথম ছয় মাস চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। তাই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিলাম।”
আরো পড়ুন:
আবার প্রেমে পড়েছেন ‘ঝিলিক’
বিয়ে করলেন শ্রাবন্তীর প্রাক্তন স্বামী
বিয়েবিচ্ছেদ নিয়ে সামাজিক ট্যাবুর কথা স্মরণ করে শোলাঙ্কি বলেন, “মুশকিলটা হচ্ছে ডিভোর্স আমাদের দেশে এখনো একটা ট্যাবু। আর অনেকেই মনে করেন ডিভোর্স মানেই—হয় মেয়েটি ঠকাচ্ছে অথবা ছেলেটি।”
২০১৮ সালের শুরুর দিকে স্কুলজীবনের বন্ধু শাক্য বোসকে বিয়ে করেছিলেন অভিনেত্রী। ধুমধাম করে সাতপাকে বাঁধা পড়েছিলেন। এরপর বরের হাত ধরে নিউজিল্যান্ড পাড়ি জমান। বছর খানেক পর ভারতে ফিরেন শোলাঙ্কি। এরপর আস্তে আস্তে কমতে থাকে নিউজিল্যান্ডে যাতায়াত। তারপর জানা যায় তাদের ডিভোর্স হয়েছে। মাঝে সোহম মজুমদারের সঙ্গে শোলাঙ্কির প্রেমের গুঞ্জন চাউর হয়েছিল। যদিও গুঞ্জন উড়িয়ে দেন এই অভিনেত্রী।
ঢাকা/শান্ত