নড়াইলে কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ ও হেনস্তার অভিযোগ, তদন্ত কমিটি
Published: 4th, August 2025 GMT
নড়াইলের কালিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইভা মল্লিকের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির অভিযোগ তদন্তে মাঠে নেমেছে তিন সদস্যের একটি দল। অভিযোগের প্রায় এক মাস পর গতকাল রোববার বিকেলে তাঁরা অভিযোগকারী বিএডিসির সার–ডিলার জামিল আহম্মেদের দোকান পরিদর্শন করেন। এ সময় তাঁরা স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন।
তদন্ত দল ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ জুন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দেন ডিলার জামিল আহম্মেদ। সেখানে তিনি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইভা মল্লিকের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবি, হেনস্তা ও ডিলারশিপ বাতিলের হুমকির অভিযোগ করেন।
এরপর ২২ জুলাই জেলা প্রশাসকের নির্দেশে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা সৌমিত্র সরকারকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। অন্য সদস্যরা হলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) ঋতুরাজ সরকার ও অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্যান) জাহিদুল ইসলাম বিশ্বাস।
তদন্ত কমিটির প্রধান সৌমিত্র সরকার বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১০ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা। আমরা তদন্তে গিয়েছিলাম, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।’
জামিল আহম্মেদের অভিযোগ, প্রতিবার সার গুদামে তোলার পর চালানে কৃষি কর্মকর্তার সই নিতে গেলে ইভা মল্লিক নানা টালবাহানা করেন এবং মোটা অঙ্কের ঘুষ দাবি করেন। ঘুষ না দেওয়ায় তাঁকে হেনস্তা করা হয় এবং ডিলারশিপ বাতিলের হুমকি দেওয়া হয়। প্রতিবাদ করায় তিনি প্রায়ই ডিলারদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইভা মল্লিক তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘জামিল মৌসুমি ব্যবসায়ী। মৌসুমে মাল তোলেন, চালানে সই করিয়ে নেন। সর্বশেষ ফেব্রুয়ারিতে সই নিয়েছেন। মার্চে মাল তোলেননি। এরপর এপ্রিল-মে মাসে মাল তুলে নড়াইলে বিক্রি করে দিয়েছেন। আমি তাঁকে নিয়মিত মাল তুলে নিজ এলাকার কৃষকদের কাছে বিক্রি করার পরামর্শ দিয়েছি। এতে তিনি বিরক্ত হয়ে এসব মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রেন থেকে পড়ে ৮ দিন ধরে হাসপাতালে ছেলে, ফেসবুকে ছবি দেখে ছুটে এলেন মা
প্রতিদিনের মতো কাজ শেষে গতকাল সোমবার বাসায় ফিরছিলেন নাজমা বেগম। ঢাকার টঙ্গী এলাকায় থাকেন তিনি। পরিচিত এক ব্যক্তি তাঁকে হঠাৎ ফোন করে জানান, তাঁর নিখোঁজ ছেলের সন্ধান পাওয়া গেছে। দ্রুত ওই ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করেন নাজমা। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা একটি ভিডিও দেখান নাজমাকে। সে ভিডিওতে দেখতে পান, তাঁর ১০ দিন ধরে নিখোঁজ ছেলে আবদুল্লাহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি।
ছেলের খোঁজ পেয়ে আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ছুটে আসেন তিনি। রেলস্টেশন থেকে সরাসরি চলে আসেন চমেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগে। এখানেই ৮ দিন ধরে ভর্তি আবদুল্লাহ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৮ সেপ্টেম্বর আহত অবস্থায় আবদুল্লাহকে হাসপাতালে আনা হয়। সে সময় তার নাম-ঠিকানা কিছুই জানা যায়নি। অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবেই হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে নেওয়া হয় তাকে। পরদিন তার অস্ত্রোপচার হয়। গত শনিবার আবদুল্লাহর জ্ঞান ফেরে। এরপর নিজের ও বাবা-মায়ের নাম আর বাসার ঠিকানা জানায় সে।
চিকিৎসকেরা সেই সূত্রে ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানাভাবে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেন। ফেসবুকে আবদুল্লাহর ছবি দিয়ে খোঁজ চাওয়া হয় বাবা-মায়ের। সেই ছবি পরিচিতদের মাধ্যমে দেখেন নাজমা বেগম। এরপর ছুটে আসেন চট্টগ্রামে। হাসপাতালে এসেই নার্সদের সহায়তায় যান নিউরোসার্জারি বিভাগে। সেখানে হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ)চিকিৎসাধীন আবদুল্লাহকে দেখেন।
আজ বিকেলে হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডের সামনে কথা হয় আবদুল্লাহর মা নাজমা বেগমের সঙ্গে। সকালেই চট্টগ্রাম পৌঁছেছেন তিনি। জানালেন, তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে ১০ বছর বয়সী আবদুল্লাহ সবার বড়। ছোট মেয়ের বয়স পাঁচ ও আরেক ছেলের বয়স দুই। আবদুল্লাহ সুস্থ আছে জেনে স্বস্তি পেলেও দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি। কারণ, এটিই প্রথমবার নয়, এর আগেও কয়েকবার ঘর থেকে কিছু না বলে বেরিয়ে যায় সে।
নাজমা বেগম বলেন, প্রায়ই আবদুল্লাহ ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। এদিক–সেদিক চলে যায়। পরে আবার ফিরে আসে। এর আগেও ঢাকার আশপাশে এদিক-সেদিক চলে গিয়েছিল সে। ৬ সেপ্টেম্বর সে ভাত খাওয়া থেকে উঠে হঠাৎ চলে যায়। সে ফিরে আসবে এই আশায় থানায় যাননি। কিন্তু ১০ দিন হয়ে যাওয়ায় এদিক–সেদিক খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। ঢাকায় বিভিন্ন স্টেশনে ছেলের খোঁজে গেছেন বলে জানান নাজমা।
চমেক হাসপাতালে চিকিৎসকেরা আবদুল্লাহর বরাত দিয়ে জানান, বাসা থেকে বেরিয়ে সে কক্সবাজার যাচ্ছিল। পথে চট্টগ্রামে ট্রেন থামলে সে ট্রেন থেকে পড়ে যায়। চিকিৎসার পর এখন সুস্থ হয়ে উঠছে সে।
চিকিৎসকেরা জানান, আবদুল্লাহকে যখন আনা হয় তার মাথায় গুরুতর আঘাত ছিল। তার মাথার এক পাশের হাড় ভেঙে গিয়েছিল। ট্রেন থেকে পড়ার কারণে মাথায় আঘাত লাগে। হাড়ের কিছু অংশ মস্তিষ্কের ভেতরে গেঁথে যায়। অস্ত্রোপচারও সফল হয়েছে। তবে জ্ঞান না ফেরায় তার পরিচয় জানা যায়নি। জ্ঞান ফেরার পর তার তথ্য নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করা হয়।
শুরু থেকে আবদুল্লাহর অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসা করেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিউরোসার্জারি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক মু. ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, ‘তার হাড় ভেঙে মস্তিষ্কের ভেতরে চলে গিয়েছিল। অস্ত্রোপচারের পর স্বাভাবিকভাবে সেটি জোড়া দেওয়া হয়েছে। এখন সে পুরোপুরি সুস্থ। তাকে আমরা আজ-কালের মধ্যে ডিসচার্জ করে দেব। শিশুকে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দিতে পেরে আমরাও আনন্দিত।’