থাকা, না থাকা
ধরো, আমিও তো আছি।
কাল শুনবে, নাই।
তোমাদের প্রতিদিনের সংবাদের নিচে
চাপা পড়ব, ধুলায় মিশে
বড়জোর ছাইটাই হব।
হুট করে কারও যদি
মনে পড়ে খুব, সেটাও জানব না—
হেঁচকি পাবে না আর, থাকবে না তৃষ্ণা,
নিদ্রার কোনো দরকার, ডুব দেবার জন্য
প্রয়োজন হবে না কোনো নদী,
কিংবা কুমারীর প্রতিবাদী অবয়ব, অন্ধকার।
দেখো, তুমিও তো আছ,
কাল শুনব, নাই।
তোমার দিকে যাওয়াএকজন আমার জন্য অপেক্ষা করছে,
তার কাছে আমায় যেতে হবে সমস্ত পৃথিবী, সমস্ত মানুষ পার হয়ে। — বুদ্ধদেব বসু
কত যে আঁধার সাঁতার পারায়ে তোমার দিকে যাই
হাঙরের ঘাই, শিরদাঁড়া ভাঙে যেন হাওয়াই মিঠাই—
দিকহারা ঢেউ পাহাড় হয়ে আসে, ভাসায় সব ঠাঁই
বন্ধুর পথ ঠিকানা তোমার—নাই নাই নাই
কত যে আঁধার সাঁতার পারায়ে তোমার দিকে যাই
বাস্তবের চেয়ে ভারী জল—আমরণ সাঁতরাই
ধরে আসে গলা, মোচড়ায় সরল তলপেট
সমস্ত জগৎ যেন বাঁধ; বাঁধা—সামনে দাঁড়ায়
হড়কে যায় পা, পর্বতারোহীর, পপাত ধরণিতল
পিছলাই, উপত্যকায় পড়ি—ধপ্পাস্, যারপরনাই
কত যে আঁধার সাঁতার পারায়ে তোমার দিকে যাই
আশরীর যায় কেটে কেটে, বাতাসে বর্শার ফলা
গল গল করে গলা থেকে বেরোয় রক্তের ফুল
অনিচ্ছার কুম্ভ দাঁড় করায় তোমাকে দৃশ্যের আড়ালে
মাংসের খোঁড়ল ডেকে তোলে আত্মার অমিত চড়াই
কত যে আঁধার সাঁতার পারায়ে তোমার দিকে যাই!
বিপন্ন শব্দাবলিতে ভরে যায় সমস্ত পৃথিবী, এ দুনিয়া
নরক যেন, মনে হয় এ ভ্রমণ এক অশেষ বিশেষ
মানুষের সবুজ সম্ভ্রম খসে খসে পড়ে শূন্য হাওয়া
ধূসর জিব বুলিয়ে যায় সমস্ত রন্ধ্রে, মুষল বৃষ্টির—
যানহীন পথ, নিভু ল্যাম্পপোস্ট, আকাশ ফাটা বজ্র—বাজখাঁই
কত যে আঁধার সাঁতার পারায়ে তোমার দিকে যাই!
মরণ ছাড়া এ যাওয়া আসার কী নাম দেব রাই!
কত যে আঁধার সাঁতার পারায়ে তোমার দিকে যাই!
ক্রমাগতএই শহরেই ঘুরবে তুমি
এই শহরে আমার মতো
আমার শ্বাসের বিষণ্নতা
তোমার ত্বকে রচবে ক্ষত
ক্রমাগত
ক্রমাগত
ক্ষতের ফোঁড়ে নখ চালাবে
বাড়বে ক্ষত তোমার মতো
এমন ব্যথার ব্যথাভ্যাসে
অনারোগ্য তোমার ক্ষত
এই শহরে আমার মতো
কে আর এমন অবিরত!
মিটিয়ে নিজের সকল আশ
খুঁজবে তুমি কাহার শ্বাস!
ইতস্তত
ইতস্তত
এই শহরেই ঘুরবে তুমি
এই শহরে আমার মতো
আমার শ্বাসের বিষণ্নতা
তোমার ত্বকে করবে ক্ষত
ক্রমাগত
ক্রমাগত
দিন বাড়বে বছর যাবে
অমন তোমার রূপ নিটোলে
ক্ষত বাড়বে, কীটেরা খাবে
মিটিয়ে নিজের সকল আশ
পাচ্ছ না যে কাহার শ্বাস!
ক্রমাগত
ক্রমাগত.
ফ্রিদা কাহলোকে
আহত হরিণ
আমার এ বুক
ঋণে বিক্ষত
হৃদয় তোমার
হয়রান জানি
সেথা অবিরত
যে রক্ত ঝরে
রাঙা মাটি আরও
লাল হয়ে যায়
টকটকে লাল
ফসল ফলায়
জীবনকে দেয়
দম বাঁচবার
সেই রক্তের
শপথ আমার
আহত বিধুর
ক্ষুর তুলে বুকে
চুমু আর লালা
মলমের ওমে
পতঝড় এই
নিবিড় শালায়
শিশিরেরা ঝরে
ভোরের বেলায়
যা মাড়াতে এলে
আহত হরিণ
পাহাড়ের গায়
রক্তফলায়
আহত হরিণ
ক্ষুরের হরফ
দাগ থেকে যায়
ক্ষত অবিরত
আহত হরিণ
আমার এ বুক
দগদগে ঘায়
কোথায় কোথায়!
বিদায়‘যা লিখতে নেই, লেখকের একমাত্র কাজ কেবল সেটাই লেখা’ — একরাম আলি
গলির মোড়ে অপস্রিয়মাণ
এই যে তোমার একলা চলে যাওয়া
এই যে আমায় একলা করে যাওয়া
এই যে এসব মুহূর্ত প্রমাণ করছে,
বিষেই নীল হয়েছে নীল
মিলের সাথে আদতে নাই মিল
জগৎজোড়া যত্ত বেরং আছে
রঙিন তারা সকল ভালোর কাছে—
তবুও তুমি অপস্রিয়মাণ
এই আমারে একলা করে যাও
একলা তুমি রাতের ভাত খাও
একাই শোনো ভোরবেলার আজান
গলিগুলো শেষ হয় না তবু
শেষ হয় না গলির মোড়ের গান
শেষ হয় না তোমার চলে যাওয়া
গলির মুখে অপস্রিয়মাণ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এই শহর ম র মত ইকত য সমস ত
এছাড়াও পড়ুন:
কেরানীগঞ্জে যুবদল নেতার হাতের রগ কাটা লাশ উদ্ধার
ঢাকার কেরানীগঞ্জে ডান হাতের রগ কাটা অবস্থায় সাইদুল ইসলাম (২৫) নামের এক যুবদল নেতার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সাইদুল ইসলাম কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন রোহিতপুর ইউনিয়নের ধর্মসূর এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেনের ছেলে। তিনি পেশায় রাজমিস্ত্রি ছিলেন। তিনি রোহিতপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের প্রচার সম্পাদক ছিলেন।
আজ সোমবার সকালে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন তেঘরিয়া বাসস্ট্যান্ডের পাশের আলফা গলি সড়ক এলাকা থেকে সাইদুলের লাশ উদ্ধার করা হয়। সুরতহাল শেষে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
সাইদুলের মামা ইব্রাহিম হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার ভাগনে সাইদুল রাজমিস্ত্রির কাজ করত। বর্তমানে কাজ না থাকায় গত দুই দিন ধরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালাচ্ছিল। গতকাল সকালে সে অটোরিকশা নিয়ে বাসা থেকে বের হয়। এর পর থেকে সে নিখোঁজ ছিল। সারা দিন খোঁজাখুঁজি করে তার সন্ধান না পেয়ে রাতে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় একটি জিডি করেছি। আজ সকালে লোকমুখে শুনে সেখানে গিয়ে দেখি ভাগনের রগ কাটা লাশ পড়ে আছে। কে বা কারা তাকে হত্যা করেছে, জানি না। আমি হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।’
লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মহররম আলী। তিনি জানান, ডান হাতের রগ কাটা ছাড়া শরীরের আর কোনো জায়গায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ আকতার হোসেন বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। তবে তাঁর অটোরিকশাটি এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। কী কারণে কে বা কারা তাঁকে হত্যা করেছে, সেটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।