ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের জন্য পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে বামপন্থি শিক্ষার্থীদের জোট ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’। 

মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত একটি সংবাদ সম্মেলন থেকে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করে এ জোট।

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, ছাত্র কাউন্সিল, ছাত্র যুব আন্দোলন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, গণতান্ত্রিক ছাত্র মঞ্চ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে এই প্যানেল করা হয়েছে।

গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের আহ্বায়ক ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ জুবেল প্যানেল ঘোষণা করেন।

প্যানেলের সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে নির্বাচনে অংশ নেবেন শামসুন নাহার হল ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি ও জিএস পদে ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবি সভাপতি মেঘমল্লার বসু। এছাড়া, সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে অংশ নেবেন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক মো.

জাবির আহমেদ জুবেল।

এছাড়া, কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে নূজিয়া হাসিন (রাশা), মানবাধিকার ও আইন বিষয়ক সম্পাদক পদে আকাশ আলী, ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক পদে লিটন ত্রিপুরা, সমাজসেবা সম্পাদক পদে আবু মুজাহিদ, পরিবহন সম্পাদক পদে নিনাদ খান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সম্পাদক পদে নাঈম উদ্দীন, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক পদে ফারিয়া মতিন (ইলা), ক্রীড়া সম্পাদক পদে মালিহা তাবাসসুম, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক পদে শেখ তাসনুভা সৃষ্টি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক পদে ফাতিন ইশরাক এবং গবেষণা ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক পদে লড়বেন আমানত ইমরান।


বাকি ১৩টি সদস্য পদে লড়বেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মো. তফসিরুল্লাহ, টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের রাজেকুজ্জামান জুয়েল, পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজের ওয়াকার রহমান সৌরভ, অর্থনীতি বিভাগের মোহাম্মদ মুস্তাকিম, ইন্সটিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারিবিলিটি স্টাডিজের মিশকাতুল মাশিয়াত (তানিশা), কারুশিল্প বিভাগের আতিকা আনজুম অর্থী, অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের পৃথিং মারমা,ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমসের ইসরাত জাহান ইমু, নৃবিজ্ঞান বিভাগের আনিয়া ফাহমিন, পদার্থ বিজ্ঞানের রাহনুমা আহমেদ নিরেট, প্রাচ্যকলা বিভাগের সাজিদ উল ইসলাম,স্বাস্থ্য ও অর্থনীতি বিভাগ হেমা চাকমা, এবং তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের আলমগীর হোসেন।

ডাকসুর তফসিল অনুযায়ী,  মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯ আগস্ট বেলা তিনটা। যাচাই-বাছাই শেষে ২১ আগস্ট বেলা একটায় চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। প্রতিটি মনোনয়ন ফরমের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০০ টাকা। ডাকসু নির্বাচন ৯ সেপ্টেম্বর।

ইতিমধ্যে ডাকসু এবং হল সংসদ নির্বাচনের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। খসড়া ভোটার তালিকা থেকে চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় বাদ পড়েছেন ১৫৭ জন। চূড়ান্ত তালিকায় মোট ভোটার ৩৯ হাজার ৭৭৫ জন। এর মধ্যে ছাত্র ভোটার ২০ হাজার ৮৭১ জন ও ছাত্রী ভোটার ১৮ হাজার ৯০২ জন।

ঢাকা/সৌরভ/ইভা 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।

জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।

পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।

মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ