রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ভর্তি পরীক্ষায় পোষ্য কোটা পুনর্বহালসহ ৮ দফা দাবিতে একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘট পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ। অন্যদিকে, পুনরায় পোষ্য কোটা ফিরিয়ে আনা এবং শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ রাখার প্রতিবাদে পাল্টা বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) বেলা ১১টায় উপাচার্যের বাসভবনের সামনে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেন এবং শিক্ষক-কর্মকর্তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে কর্মবিরতি পালন করেন।
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের শিক্ষার্থী ফাহিম রেজা বলেন, “পোষ্য কোটা একটি মীমাংসিত বিষয়। এ নিয়ে বহু আগেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্বয়ং উপাচার্যেরও এখতিয়ার নেই এই কোটা পুনর্বহাল করার। যারা পোষ্য কোটাকে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা হিসেবে দেখাতে চাইছেন তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, পুরোনো বোতলে নতুন মদ বাজারজাত করার পায়তারা কোনোভাবেই সফল হবে না।”
আরো পড়ুন:
ঢাবিতে মব সৃষ্টির অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন
চবিতে ই-কার সেবা চালু
এসময় সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী সজিব বলেন, “পোষ্য কোটা নিয়ে বিতর্কের আর কোনো অবকাশ নেই। শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এই অন্যায় দাবি কী রাকসু নির্বাচন বানচালের পরিকল্পনার অংশ কিনা, তা ভেবে দেখার বিষয়। বহু আগেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়েছে। তাই যারা পোষ্য কোটার নামে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা নিতে চাইছেন, তাদের সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবেই। সামনে রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ নির্বাচনকে ঘিরে যদি কেউ কোনো ধরনের সহিংসতা করার চেষ্টা করে, তবে শিক্ষার্থীরা সেই চেষ্টা কখনো সফল হতে দেবে না।”
অপরদিকে, কর্মবিরতি অবস্থান নিয়ে অফিসার সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোক্তার হোসেন বলেন, “আজকের ধর্মঘট আমাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলন। বহু বছর ধরে পাওয়া প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অধিকার। এই দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আজ পূর্ণদিবস কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি। কেউ যদি মনে করে আমাদের ন্যায্য অধিকার হরণ করা যাবে, তবে তারা আসলে বোকার স্বর্গে বসবাস করছেন।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা দ্রুত ফিরিয়ে দিতে হবে, নইলে আমরা আরো কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।”
ঢাকা/ফাহিম/ইভা
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সাদপন্থীদের ইজতেমা আয়োজন করতে না দেওয়ার দাবি
টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে মাওলানা সাদ কান্ধলভী অনুসারীদের (সাদপন্থী) ইজতেমা আয়োজন করতে না দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থী) অনুসারীরা। পাশাপাশি তাঁরা সরকারের প্রস্তাবে রাজি হয়ে আগামী বছরের মার্চ মাসে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা করার কথাও বলেছেন। গত আয়োজনে ইজতেমা মাঠে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও সাজা নিশ্চিতের দাবিও জানান তাঁরা।
আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। ‘হযরত ওলামায়ে কেরাম ও দাওয়াত ও তাবলিগের সাথীবৃন্দের’ উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
এর আগে গত রোববার সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের পর বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তাবলিগের শুরায়ে নেজামের সাথী মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘কোরআন ও হাদিসের কথা যারা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে, তাদের ইসলামি দাওয়াতের এই ময়দানে জায়গা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। রাসুল (সা.)-এর তরিকা, সুন্নাহ ও হাদিসের অনুসরণে যারা তাবলিগি কার্যক্রম পরিচালনা করে, কেবল তারাই ইজতেমা করার অধিকার রাখে।’
মুফতি আমানুল হক আরও বলেন, ‘সরকারের ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে জারি করা প্রজ্ঞাপনে সাদপন্থীরা শেষবারের মতো টঙ্গী ময়দানে ইজতেমা করার অনুমতি পেয়েছিল। সেই প্রজ্ঞাপনে তাদের স্বাক্ষরও রয়েছে। সরকার তখনই বুঝেছিল—একই মাঠে দুই পক্ষের ইজতেমা আয়োজন দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।’
২০২৪ সালের ডিসেম্বরের ইজতেমা মাঠে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘গত বছরের ১৮ ডিসেম্বরের রাতে সাদপন্থীদের অনুসারীরা অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের বাংলাদেশি নেতা ওয়াসিফ সাহেবের চিঠিতে উল্লেখ ছিল, “যুগটা ব্যতিক্রমী, সবাই প্রস্তুতি নিয়ে আসবে”—এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই তারা হামলার পরিকল্পনা করেছিল। ঘুমন্ত মুসল্লিদের ওপর টর্চলাইট নিয়ে হামলা চালানো হয়, যা একতরফা সন্ত্রাসী কার্যক্রম ছিল।’ তিনি দাবি করেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকেও প্রমাণিত হয়েছে, ‘এ হামলা একতরফাভাবে সাদপন্থীদের পক্ষ থেকেই হয়েছিল।’
মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেন, কিছু স্বার্থান্বেষী ও ইসলামবিরোধী মহলের প্ররোচনায় তাবলিগ জামাতে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের মাওলানা সাদ সাহেবের অনুসারীরা বেআইনি পথে টঙ্গী ইজতেমা মাঠ ও কাকরাইল মসজিদে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এমনকি তাঁরা সরকারকে বিব্রত করতে ‘যমুনা ভবন ঘেরাও’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর বিশৃঙ্খলাকারীদের কাকরাইল মসজিদে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় এবং শুরায়ে নেজামপন্থীদের কাকরাইলে দাওয়াত কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেয় বলে জানান মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী। তিনি বলেন, ২০২৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারির ৬৩ নম্বর স্মারকে বলা হয়, সাদপন্থীরা শেষবারের মতো ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে টঙ্গীতে ইজতেমা করতে পারবে, এরপর আর নয়। তারা স্বাক্ষর দিয়ে সেই শর্ত মেনে নিয়েছিল।
শুরায়ে নেজামপন্থীরা বলেন, ‘আমরা সরকারের সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করছি। আগামী বছরের মার্চে ইজতেমা আয়োজনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করা হবে।’
সংবাদ সম্মেলন থেকে সরকারের কাছে ৪ দফা দাবি পেশ করেন তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থী) অনুসারীরা। তাঁদের দাবিগুলো হলো ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ইজতেমার তারিখ ঘোষণা, টঙ্গী ইজতেমা মাঠকে অস্থায়ীভাবে ‘কেপিআই’ হিসেবে ঘোষণা, বিদেশি মেহমানদের ভিসা সহজীকরণের পরিপত্র নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রকাশ ও গত বছরের ইজতেমা মাঠে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা শাহরিয়ার মাহমুদ, মতিন উদ্দিন আনোয়ার, রুহুল আমিন এবং তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের (শুরায়ে নেজাম) মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান।