বলিভিয়ার মানুষ কেন দীর্ঘ দুই দশকের বামপন্থী শাসন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে
Published: 19th, August 2025 GMT
দুই দশক ধরে লাতিন আমেরিকার দেশ বলিভিয়া শাসন করছে বামপন্থী মুভমেন্ট অব সোশ্যালিজম বা এমএএস পার্টির নেতৃত্বাধীন সরকার। তবে গত রোববার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রথম দফার ভোটে দেশটির ভোটাররা বামপন্থী দলটিকে শক্তভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। ভোটের ফলাফল সম্ভবত দেশটির সংকটাপন্ন অর্থনীতির জন্য আরও বেশি বাজারবান্ধব নীতির পথ প্রশস্ত করছে।
রোববার রাতে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল প্রকাশিত ভোটের প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে, বলিভিয়ার মধ্যপন্থী সিনেটর রদ্রিগো পাজ ভোটের প্রাথমিক ফলাফলে ৩২ দশমিক ১৮ শতাংশ ভোট পেয়ে এগিয়ে আছেন। সেখানে বামপন্থী এমএএস পার্টির প্রার্থী এডুয়ার্দো দেল কাস্তিলো পেয়েছেন মাত্র ৩ দশমিক ১৬ শতাংশ ভোট।
৯২ শতাংশ ভোট গণনা শেষে দেখা গেছে, ২৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন বলিভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট রক্ষণশীল রাজনীতিক হোর্হে ‘তুতো’ কুইরোগা রামিরেজ।
নির্বাচনের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো প্রার্থী ৪০ শতাংশের বেশি ভোট না পাওয়ায় এবং প্রথম স্থান অধিকারকারী প্রার্থীর সঙ্গে দ্বিতীয় স্থান অধিকারকারীর ভোটের ব্যবধান ১০ শতাংশের কম হওয়ায় নির্বাচন রানঅফ বা দ্বিতীয় দফায় গড়িয়েছে। আগামী ১৯ অক্টোবর দ্বিতীয় দফার ভোট অনুষ্ঠিত হবে। পূর্ণাঙ্গ আনুষ্ঠানিক ফলাফল প্রকাশিত হবে ভোটের সাত দিনের মধ্যে।
প্রথম দফা ভোটের ফলাফল বলিভিয়ার রাজনীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ২০০৬ সাল থেকে ইভো মোরালেসের নেতৃত্বে দেশটি শাসন করছে এমএএস পার্টি। একসময় বামপন্থী জোটের ওপর তাঁর দৃঢ় নিয়ন্ত্রণ থাকলেও এখন তা অনেকটাই কমে গেছে।
রোববার রাতে ভোটের প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশের পর টেলিভিশনে সম্প্রচারিত বক্তব্যে রদ্রিগো পাজ বলেন, ‘বলিভিয়ার মানুষ শুধু সরকারের পরিবর্তন চাইছে না, তারা রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন চাইছে। এটি একটি বড় জয়ের, বড় পরিবর্তনের সূচনা।’
ভোটের ফল প্রকাশের পর বলিভিয়ার বন্ডের দাম প্রায় ৩ সেন্ট বেড়ে চলতি বছরের সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন, দেশটি বামপন্থী দলের শাসন থেকে বেরিয়ে এলে অর্থনীতি আবার শক্তিশালী হয়ে উঠবে, দেউলিয়াত্ব এড়ানো যাবে এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণ পাওয়া সহজ হবে।
রোববার দিনের শুরুতে হোর্হে ‘তুতো’ কুইরোগা ভোটের প্রাথমিক ফলাফল মেনে নেন এবং রদ্রিগো পাজকে অভিনন্দন জানান। কুইরোগা দ্বিতীয় দফার ভোটে জায়গা করে নিয়েছে।
অন্যদিকে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট লুইস আরসে ভোটের ফলাফল মেনে নিয়ে বলেছেন, ‘গণতন্ত্র বিজয়ী হয়েছে।’
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের দক্ষিণ আন্দিজ অঞ্চলের বিশ্লেষক গ্লায়েলডিস গনসালেস কালাঞ্চে বলেন, এই নির্বাচনকে একটি মোড় পরিবর্তনকারী নির্বাচন হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, এবার ক্ষমতাসীন এমএএস দলের কোনো শক্তিশালী প্রার্থী ছিল না। এ ছাড়া এবার আটজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।
বলিভিয়ার বেশির ভাগ মানুষ এবারের নির্বাচনে সবার আগে দেশটির ভঙ্গুর অর্থনীতির কথা মাথায় রেখে ভোট দিয়েছেন। চলতি বছর বলিভিয়ায় দ্রব্যমূল্য লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি বেড়েছে। পাশাপাশি জ্বালানি এবং ডলারের সরবরাহও কমে গেছে।
গত জুনে বার্ষিক মূল্যস্ফীতি দ্বিগুণ হয়ে ২৩ শতাংশ পৌঁছায়, যা জানুয়ারি মাসের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি। দেশটির অনেক নাগরিক এখন ক্রিপ্টোকারেন্সিতে আপৎকালীন বিনিয়োগ করছেন।
বলিভিয়ার নির্বাচনের ফলাফল লাতিন আমেরিকার অন্যান্য বামপন্থী সরকারের জন্যও সতর্ক সংকেত হতে পারে। চিলিতে কয়েক মাসের মধ্যে এবং ২০২৬ সালের প্রথমার্ধে কলম্বিয়ায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
অর্থনীতিবিদ রজার লোপেজ বলেন, বলিভিয়ার অনেক মানুষ বিশেষ করে যাঁরা অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে কাজ করেন, তাঁরা জীবিকা নির্বাহে হিমশিম খাচ্ছেন।
ভোটের প্রাথমিক ফলাফল ঘোষণার পর মানুষের উল্লাস.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বল ভ য় র ল প রক শ ভ ট র ফল ব মপন থ র ফল ফল দ শট র র বব র প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
ম্যাচ রেফারি পাইক্রফ্ট ক্ষমা চাওয়ার পরই খেলতে রাজি হয়েছিল পাকিস্তান
সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচে টসের আগ পর্যন্ত দারুণ নাটকীয়তায় ঘেরা ছিল পাকিস্তানের ড্রেসিং রুম। ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফ্টকে দায়িত্ব থেকে সরানোর দাবি তোলে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। তবে আইসিসি সে দাবি আমলে নেয়নি। শেষ পর্যন্ত নিজের ভুল স্বীকার করে পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আলী আগা ও দলের ম্যানেজারের কাছে ক্ষমা চান পাইক্রফ্ট। এরপরই মাঠে নামতে রাজি হয় পাকিস্তান দল।
ঘটনার সূত্রপাত ১৪ সেপ্টেম্বরের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ থেকে। টসের সময় দুই অধিনায়কের করমর্দন হয়নি। আরও বড় বিতর্ক তৈরি হয় ম্যাচ শেষে। জয়ী ভারতের ক্রিকেটাররা করমর্দন এড়িয়ে দ্রুত ড্রেসিং রুমে ফিরে যান। সালমান আলী আগার নেতৃত্বে পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলেও সূর্যকুমার যাদব, শিভাম দুবেসহ পুরো ভারতীয় দল সেই শিষ্টাচার মানেনি।
আরো পড়ুন:
আজ মুখোমুখি শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান, যে ম্যাচে ঝুলছে বাংলাদেশের ভাগ্য
আমিরাতকে হারিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান
এমন ঘটনার প্রতিবাদে পাকিস্তান অধিনায়ক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান বর্জন করেন। পরে আইসিসির কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানায় পিসিবি। তাদের দাবি ছিল, ম্যাচ রেফারি পাইক্রফ্ট ইচ্ছাকৃতভাবেই দুই অধিনায়কের হাত মেলানো আটকান, যা আইসিসির আচরণবিধি ও ক্রিকেটের স্পিরিটের পরিপন্থী।
যদিও আইসিসির ব্যাখ্যা ছিল ভিন্ন। তারা জানায়, এসিসির কর্মকর্তাদের নির্দেশেই কাজ করেছেন পাইক্রফ্ট। কিন্তু পাকিস্তান নড়েচড়ে বসে। এমনকি জানিয়ে দেয়, পাইক্রফ্ট দায়িত্বে থাকলে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে মাঠে নামবে না তারা। এই হুমকির কারণে ম্যাচের শুরুর সময় এক ঘণ্টা পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয় আয়োজকরা।
লাহোরে রমিজ রাজা, নাজাম শেঠিসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন পিসিবি চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি। পরে সমঝোতার পথ খোঁজা হয়। অবশেষে পাইক্রফ্ট স্বীকার করেন, ভুল বোঝাবুঝির কারণেই পরিস্থিতি এতদূর গড়ায়, এবং তিনি পাকিস্তান অধিনায়ক ও ম্যানেজারের কাছে ক্ষমা চান। তাতেই সন্তুষ্ট হয়ে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তান দল।
বুধবার রাতে ‘এ’ গ্রুপে নিজেদের সেই শেষ ম্যাচে আরব আমিরাতকে ৪১ রানের ব্যবধানে হারিয়ে সুপার ফোরে ভারতের সঙ্গী হয় সালমান-শাহীনরা। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান সংগ্রহ করে ৯ উইকেটে ১৪৯ রান। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৭.৪ ওভারে ১০৫ রানেই গুটিয়ে যায় আরব আমিরাত।
ঢাকা/আমিনুল