রাজশাহীতে হেযবুত তওহীদের মুক্ত আলোচনা সভা হতে দেয়নি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। সোমবার (২৫ আগস্ট) বিকেল ৪টায় নগরের সিঅ্যান্ডবি মোড়ের দরবার হলে এই সভার আয়োজন করা হয়। তবে হেফাজতের বাধার কারণে শেষ পর্যন্ত সভাটি হয়নি। 

হেযবুতের এই সভা বন্ধ করার জন্য কয়েক দিন আগে থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি চলছিল। হেফাজতের নেতারা জেলা প্রশাসক ও রাজশাহী নগর পুলিশের কমিশনারকে স্মারকলিপিও দেন হেযবুতের সভা বন্ধ করার জন্য। তারপরও সভার প্রস্তুতি চলতে থাকলে সোমবার (২৫ আগস্ট) বিকাল ৩টা থেকে সিঅ্যান্ডবি এলাকায় অবস্থান নেন হেফাজতের নেতাকর্মীরা।

আরো পড়ুন:

পিআর ছাড়া বেকার পুনর্বাসন উচ্চকক্ষ চাই না: মামুনুল হক

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে হেফাজত নেতাদের বৈঠক

তারা সেখানে হেফাজতে ইসলামের জেলা ও মহানগরের ব্যানারে মানববন্ধনও করেন। ফলে হেযবুত তওহীদের নেতাকর্মীরা সভা করতে পারেননি। তবে আশপাশে হেযবুত তওহীদের নেতাকর্মীরাও ছিলেন। একই স্থানে দুই সংগঠনের নেতাকর্মীদের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে এলাকায় উত্তেজনাও দেখা দেয়। এ অবস্থায় পুলিশ সতর্ক অবস্থানে ছিল। 

সভা করতে না পেরে হেযবুত তওহীদের রাজশাহী জেলা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সেখানে হেযবুত তওহীদের রাজশাহী বিভাগীয় সভাপতি মশিউর রহমান ও সহ-সভাপতি আশেক মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলার সভাপতি আরিফুজ্জামান গালিব।

আরিফুজ্জামান গালিব বলেন, ‘‘হেযবুত তওহীদ আইন মান্যকারী অরাজনৈতিক আন্দোলন। রাজশাহীতে সুশীল সমাজের ব্যক্তিদের নিয়ে মুক্ত আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু  আমাদের শান্তিপূর্ণ এই আয়োজন বন্ধে চিহ্নিত মহল আদাজল খেয়ে নামে।’’ 

গালিব বলেন, ‘‘অনুষ্ঠান বানচাল করতে হেফাজত ইসলামের ব্যানারে নানা অপতৎপরতা দেখা যায়। ষড়যন্ত্রকারীরা জুমার দিনে পরিকল্পিতভাবে মসজিদে মসজিদে উস্কানিমূলক মিথ্যা প্রচারণা চালায়। স্মারকলিপি দিয়ে প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। এ অবস্থায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে প্রশাসনের অনুরোধে আমরা অনুষ্ঠান স্থগিত করতে বাধ্য হই।’’ 

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। এখানে একজন আইন মান্যকারী নাগরিক হিসেবে আমার কথা বলার অধিকার, সংগঠন করার অধিকার, আদর্শ প্রচার করার অধিকার, সভা-সমাবেশ করার অধিকার আইনসম্মত। এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করা চরম বৈষম্যের প্রমাণ এবং স্পষ্টত মানবাধিকার লঙ্ঘন। উস্কানিদাতাদের সুনির্দিষ্ট নাম, ঠিকানা উল্লেখ করে তথ্য প্রমাণসহ আমরা মতিহার থানায় জিডি করেছি। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার এড়ানোর অযুহাতে উগ্রবাদীদের কাছে নতি স্বীকার না করে প্রশাসনের তাদের বিরুদ্ধে শক্ত ও কার্যকরী আইনি পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।’’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হেফাজতে ইসলামের রাজশাহী জেলার সভাপতি মাওলানা শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘‘হেযবুত তওহীদ ইসলামের নামে তাদের ভ্রান্ত আকীদা প্রচার করছে। ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে এগুলো ঠিক না। এ জন্য আমরা তাদের সভা বন্ধ করেছি।’’ 

নগর পুলিশের মুখপাত্র গাজিউর রহমান বলেন, ‘‘একই স্থানে দুই সংগঠনের নেতাকর্মীদের অবস্থানের কারণে উত্তেজনা ছিল। পুলিশও সতর্ক ছিল। তাই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। হেযবুত তওহীদ তাদের অনুষ্ঠান স্থগিত করেছে।’’

ঢাকা/কেয়া/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ন ত কর ম ইসল ম র অবস থ ন

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে বইমেলায় বিক্রি কম, এখনো আশায় আছেন প্রকাশকেরা

রাজশাহী বিভাগীয় বইমেলার প্রথম তিন দিনে লোকজনের ভিড় থাকলেও বেচাকেনা তেমন হয়নি। এতে অনেক প্রকাশকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তবে আগামী কয়েক দিনে বেচাকেনা বাড়বে বলে আশা করছেন প্রকাশকেরা ও আয়োজক কর্তৃপক্ষ।

গত শুক্রবার রাজশাহী জেলা কালেক্টরেট মাঠে ৯ দিনব্যাপী এই বইমেলার উদ্বোধন করা হয়। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায়, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের উদ্যোগে এবং রাজশাহী বিভাগীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত এ মেলা চলবে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত। মেলায় ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ৭০টি বেসরকারি প্রকাশনাসহ মোট ৮১টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদে মেলা চলছে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। আর ছুটির দিনে মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায়।

উদ্বোধনের আগের দিন বৃষ্টিতে মেলার মাঠ কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়। সেই কর্দমাক্ত পরিবেশেই মেলার উদ্বোধন হয়। দর্শনার্থীদের ভোগান্তি কমাতে পরে প্রতিটি স্টলের সামনে ইট বিছিয়ে দেওয়া হয়। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও বিক্রির খরা কাটেনি বলে জানালেন বিক্রেতারা।

গতকাল রোববার সন্ধ্যায় মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের বিভিন্ন অংশে তখনো পানি জমে আছে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত মঞ্চের সামনের প্যান্ডেলেও কাদা। সেখানেই কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ও সাহিত্য নিয়ে আলোচনা চলছিল, তবে দর্শক-শ্রোতার উপস্থিতি ছিল নগণ্য। স্টলের সামনে ইটের সলিংয়ের তৈরি রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন অনেকে। অনেকে বই দেখছেন।

সূর্যোদয় প্রকাশনীর বিক্রেতা রিপন আলী বলেন, প্রথম দিন তো কাদাপানির মধ্যেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। তখনো মানুষ ছিলেন। এখন ইট বিছানোর পর আরও বেশি মানুষ আসছেন, ভিড়ও করছেন, কিন্তু বই কিনছেন খুব কম।

ঐতিহ্য প্রকাশনীর স্টলে কাদার ওপর চেয়ার পেতে বসে থাকতে দেখা গেল বিক্রয়কর্মী ও চিত্রশিল্পী অর্ণব পাল সন্তুকে। তিনি বলেন, মানুষ আসছেন, ঘুরে দেখছেন, কিন্তু বিক্রি নেই বললেই চলে। মেলার ব্যবস্থাপনা আরও ভালো হতে পারত। আরেক বিক্রেতা আবদুল্লাহ হীল বাকি জানালেন, এমনও স্টল আছে, যেখানে সারা দিনে ২০০ থেকে ৩০০ টাকার বইও বিক্রি হচ্ছে না।

তবে হতাশার ভিড়ে আশার কথাও শোনালেন কেউ কেউ। চট্টগ্রাম থেকে আসা নন্দন বইঘর প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী সুব্রত কান্তি চৌধুরী বলেন, বেচাবিক্রি আজ না হোক কাল হবে। মানুষ যে মেলায় এসে বই হাতে নিয়ে দেখছেন, এটাই বড় পাওয়া। এতে তাঁদের মধ্যে বই কেনার আগ্রহ তৈরি হবে।

মেলায় আসা পাঠকদের মধ্যে অবশ্য ভিন্ন চিত্র। দুই সন্তানের জন্য শিশুতোষ বই কিনে এক অভিভাবক বলেন, বাচ্চাদের হাতে বই তুলে দেওয়ার আনন্দটাই অন্য রকম।
মেলা থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম ও তারাশঙ্কর বন্দ্যোপ্যাধ্যায়ের বই কিনেছেন মনির হোসেন। তিনি বলেন, মেলায় একসঙ্গে অনেক বই পাওয়া যায়, যা বই কেনার জন্য দারুণ সুযোগ।

রাজশাহী কালেক্টরেট মাঠে বইমেলা উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে আলোচনা সভা। গতকাল রোববার সন্ধ্যায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ