পবিত্র জশনে জুলুস শে‌ষে হাটহাজারীতে আশেকে রাসু‌লদের গাড়িবহরে সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট।

রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান আল্লামা এম এ মতিন ও মহাসচিব অধ্যক্ষ আল্লামা স উ ম আবদুস সামাদ এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেছেন, “পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী দিনক্ষণ আস‌লে ইসলামের নামধারী উগ্রবা‌দী ‌গোষ্ঠী মিলাদুন্নবী ও জশ‌নে জুল‌সের বি‌রোধিতা ক‌রে। চি‌হ্নিত এই মহল আগে জুলু‌সের বিরু‌দ্ধে হুম‌কি দেয়। তারই ধারাবা‌হিকতায় জুলুস শে‌ষে ফেরার প‌থে হাটহাজারী‌তে এই উগ্রবাদী গোষ্ঠী জুলু‌সের গা‌ড়ি‌তে হামলা ক‌রে। ভাঙচুর ক‌রে সুন্নীজনতা‌কে আহ‌ত ক‌রে‌ছে। তা‌দের এই হামলা প‌রিক‌ল্পিত।”

বিবৃ‌তি‌তে তারা ব‌লেন, “পূর্বপরিকল্পিতভাবে হাটহাজারি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা ইট, রড, লাঠি নিয়ে জুলুসের গাড়িতে হামলা করার অসংখ্য ভিডিও ফুটেজ সামা‌জিক যোগা‌যোগ মাধ‌্যমে রয়েছে। গত বছরেও জশনে জলুসের গাড়িতে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে হামলা করা হয়। তাই জনৈক আরিয়ানের অঙ্গ-ভঙ্গি বা ফেসবুক স্ট্যাটাস কেন্দ্র করে উক্ত ঘটনা ঘটেছে বলা একটি অপপ্রচার মাত্র।”

“শুধু তাই নয়, কওমি ঘরনার বক্তারা জশনে জুলুসে হামলার জন্য বিগত কয়েক দিন ধরে ঘোষণা দিয়ে আসছে, বি-বাড়িয়াতে লাঠি মিছিলও ক‌রে। তাই আমরা মনে করি এটি একটি পরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর চেষ্টা। আমরা এই ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জা‌নি‌য়ে জ‌ড়িত‌দের গ্রেপ্তারসহ শা‌স্তি দা‌বি কর‌ছি।”

নেতারা ব‌লেন, “যারা দেশজুড়ে তৌহিদি জনতার নামে ত্রাস ও মবের রাজত্ব কায়েম করেছে তা‌দের দমা‌নো না গে‌লে ভ‌বিষ‌্যতে ভয়াবহ প‌রিণ‌তি ভোগ কর‌তে হ‌বে। সরকার তাদের দমন না কর‌লে  সুন্নীজনতা প্রতি‌রোধ গ‌ড়ে তুল‌বে। আর এজন‌্য কো‌নো প‌রি‌স্থি‌তি সৃ‌ষ্টি হ‌লে সরকার‌কে দায় নি‌তে হ‌বে।”

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

সাদপন্থীদের ইজতেমা আয়োজন করতে না দেওয়ার দাবি

টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে মাওলানা সাদ কান্ধলভী অনুসারীদের (সাদপন্থী) ইজতেমা আয়োজন করতে না দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থী) অনুসারীরা। পাশাপাশি তাঁরা সরকারের প্রস্তাবে রাজি হয়ে আগামী বছরের মার্চ মাসে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা করার কথাও বলেছেন। গত আয়োজনে ইজতেমা মাঠে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও সাজা নিশ্চিতের দাবিও জানান তাঁরা।

আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। ‘হযরত ওলামায়ে কেরাম ও দাওয়াত ও তাবলিগের সাথীবৃন্দের’ উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।

এর আগে গত রোববার সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের পর বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তাবলিগের শুরায়ে নেজামের সাথী মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘কোরআন ও হাদিসের কথা যারা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে, তাদের ইসলামি দাওয়াতের এই ময়দানে জায়গা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। রাসুল (সা.)-এর তরিকা, সুন্নাহ ও হাদিসের অনুসরণে যারা তাবলিগি কার্যক্রম পরিচালনা করে, কেবল তারাই ইজতেমা করার অধিকার রাখে।’

মুফতি আমানুল হক আরও বলেন, ‘সরকারের ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে জারি করা প্রজ্ঞাপনে সাদপন্থীরা শেষবারের মতো টঙ্গী ময়দানে ইজতেমা করার অনুমতি পেয়েছিল। সেই প্রজ্ঞাপনে তাদের স্বাক্ষরও রয়েছে। সরকার তখনই বুঝেছিল—একই মাঠে দুই পক্ষের ইজতেমা আয়োজন দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।’

২০২৪ সালের ডিসেম্বরের ইজতেমা মাঠে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘গত বছরের ১৮ ডিসেম্বরের রাতে সাদপন্থীদের অনুসারীরা অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের বাংলাদেশি নেতা ওয়াসিফ সাহেবের চিঠিতে উল্লেখ ছিল, “যুগটা ব্যতিক্রমী, সবাই প্রস্তুতি নিয়ে আসবে”—এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই তারা হামলার পরিকল্পনা করেছিল। ঘুমন্ত মুসল্লিদের ওপর টর্চলাইট নিয়ে হামলা চালানো হয়, যা একতরফা সন্ত্রাসী কার্যক্রম ছিল।’ তিনি দাবি করেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকেও প্রমাণিত হয়েছে, ‘এ হামলা একতরফাভাবে সাদপন্থীদের পক্ষ থেকেই হয়েছিল।’

মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেন, কিছু স্বার্থান্বেষী ও ইসলামবিরোধী মহলের প্ররোচনায় তাবলিগ জামাতে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের মাওলানা সাদ সাহেবের অনুসারীরা বেআইনি পথে টঙ্গী ইজতেমা মাঠ ও কাকরাইল মসজিদে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এমনকি তাঁরা সরকারকে বিব্রত করতে ‘যমুনা ভবন ঘেরাও’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর বিশৃঙ্খলাকারীদের কাকরাইল মসজিদে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় এবং শুরায়ে নেজামপন্থীদের কাকরাইলে দাওয়াত কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেয় বলে জানান মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী। তিনি বলেন, ২০২৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারির ৬৩ নম্বর স্মারকে বলা হয়, সাদপন্থীরা শেষবারের মতো ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে টঙ্গীতে ইজতেমা করতে পারবে, এরপর আর নয়। তারা স্বাক্ষর দিয়ে সেই শর্ত মেনে নিয়েছিল।

শুরায়ে নেজামপন্থীরা বলেন, ‘আমরা সরকারের সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করছি। আগামী বছরের মার্চে ইজতেমা আয়োজনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করা হবে।’

সংবাদ সম্মেলন থেকে সরকারের কাছে ৪ দফা দাবি পেশ করেন তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থী) অনুসারীরা। তাঁদের দাবিগুলো হলো ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ইজতেমার তারিখ ঘোষণা, টঙ্গী ইজতেমা মাঠকে অস্থায়ীভাবে ‘কেপিআই’ হিসেবে ঘোষণা, বিদেশি মেহমানদের ভিসা সহজীকরণের পরিপত্র নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রকাশ ও গত বছরের ইজতেমা মাঠে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা শাহরিয়ার মাহমুদ, মতিন উদ্দিন আনোয়ার, রুহুল আমিন এবং তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের (শুরায়ে নেজাম) মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ