শারীরিক সীমাবদ্ধতা জীবনকে থমকে দিতে পারে না, তার উজ্জ্বল উদাহরণ কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার চার কৃষক। ভিক্ষাবৃত্তির পথ এড়িয়ে তারা কর্ম ও আত্মনির্ভরতার দৃঢ় মনোবল নিয়ে কৃষি কাজকেই বেছে নিয়েছেন। উপজেলার প্রাগপুর ইউনিয়নের গোড়ারপাড়া গ্রামের এই চার কৃষকের অদম্য জীবনযাত্রা এখন সবার কাছে অনুপ্রেরণার।

সামেদুল ইসলাম (৪৫) শৈশবে পোলিওতে আক্রান্ত হয়ে দুই পায়ের শক্তি হারান। হামাগুড়ি দিয়ে চলাফেরা করলেও তিনি দমে যাননি। পৈত্রিক ও বর্গা জমিতে কৃষিকাজ করে সংসার চালান তিনি। তিন মেয়ের মধ্যে দুইজনকে বিয়েও দিয়েছেন।

আরো পড়ুন:

ডাকসু নির্বাচন: ব্রেইল পদ্ধতিতেও ব্যালট পেপার ছাপানো হবে

অভয়নগরে প্রতিবন্ধী ভ্যানচালক হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার ১

সামেদুল ইসলাম বলেন, ‍“বাপ দাদার পৈতৃক ও বর্গা জমিতে কৃষি কাজ করি। শারীরিক কারণে একটু কষ্ট সহ্য করতে হয়। নিজে কাজ করে সংসার চালানোর মধ্যে সব সময় আত্মতৃপ্তি কাজ করে।”

 সামেদুল ইসলাম নিজের কৃষি জমিতে ধান কাটছেন 

একই গ্রামের ৫৫ বছর বয়সী দৃষ্টিহীন টিপু নেওয়াজ। ছোটবেলায় এক চোখ এবং কৈশোরে আরেক চোখের আলো হারান তিনি। চিকিৎসা নিয়েও দৃষ্টি ফেরেনি তার। শৈশব থেকেই বাবার সঙ্গে কৃষিকাজে যুক্ত থাকায় এই পেশার প্রতি জন্ম নেয় ভালোবাসা। এখনো জমি চেনেন অভিজ্ঞতার জোরে। 

টিপু নেওয়াজ বলেন, “কৃষি অফিস আমাকে সব ধরনের সাহায্যে সহযোগিতা করে। মাঠে যেতে অনেক কষ্ট হয়। তারপরও যাতায়াত করতে করতে অভ্যাস  হয়ে গেছে। এখন আর মাঠে যেতে অসুবিধা হয় না। নিজে কাজ করে ভালোই আছি।”

জমিতে সার ছিটানো থেকে শুরু করে কীটনাশক প্রয়োগ সবকিছুই একাই সামলান নেওয়াজ। কৃষি বিভাগের প্রণোদনার সার ও বীজ পেয়ে উপকৃত হচ্ছেন বলে জানান এই কৃষক।

জামরুল ইসলাম গ্যাংগ্রিন রোগে একটি পা হারান। পরিবারের বোঝা হতে চাননি তিনি। নিজের জমিতে চাষাবাদ ও পানের বরজে কাজ করে চলেছেন জামরুল। তিনি বলেন, “ছোট বেলাই গ্যাংগ্রিন রোগে আক্রান্ত হয়ে পা হারাই। পরিবার ও সমাজের বোঝা হতে চাইনি। তাই নিজের শারীরিক অক্ষমতাকে আমলে না নিয়ে জমিতে চাষাবাদ করে চলেছি। কখনো কারো কাছে হাত পাতিনি।”

রইচ উদ্দিন 

একইভাবে ৬৫ বছর বয়সী রইচ উদ্দিন শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে অন্যের কাছে হাত না পেতে কৃষিকেই আঁকড়ে ধরে আছেন। রইচ উদ্দিন বলেন, “এলাকার মানুষ শারীরিক প্রতিবন্ধীদের সমাজের বোঝা মনে করেন। আমি সেই প্রতিবন্ধীকতা জয় করে নিজেই কাজ করে সংসারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছি।”

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, ‍“প্রতিবন্ধী কৃষকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রণোদনার সার ও বীজ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ ও কৃষি পরামর্শের ব্যবস্থাও আছে। যেসব প্রতিবন্ধী কৃষক প্রণোদনার আওতায় নেই, তাদের দ্রুত এর অন্তর্ভুক্ত করা হবে।”

uuজমিরুল 

 উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, “প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসনে সরকার কাজ করছে। আপনি যে চারজন প্রতিবন্ধীর কথা বলছেন, তাদের সরকারি সহায়তা করা হবে। প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিবন্ধীদের সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা করে ঋণ দেওয়া হচ্ছে, যাতে তারা ব্যবসা বা কৃষিকাজে যুক্ত হতে পারেন। ঋণ নিয়ে অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছেন। আমরা চাই, তারা কারও বোঝা না হয়ে আত্মনির্ভরশীল হোক।”

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা সমাজসেবা অফিসের উপ-পরিচালক আব্দুল লতিফ সেখ বলেন, ‘প্রতিবন্ধীরা চাইলে সমাজসেবা অফিসে যোগাযোগের মাধ্যমে সহজেই প্রতিবন্ধী কার্ড তৈরি করে ভাতার আওতায় আসতে পারেন।”

ঢাকা/কাঞ্চন/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ল ইসল ম ক জ কর উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ফুটবলার প্রতিমা এগিয়ে যাচ্ছেন, পাশে আছে কিশোর আলোসহ অনেকে

একটি পরিবারের ওপর নেমে আসা অপ্রত্যাশিত চাপ আর হতাশাকে দূর করেছে একটি সংবাদ। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৫ ও অনূর্ধ্ব-১৭ জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড় প্রতিমা মুন্ডার পড়াশোনা ও খেলাধুলা থমকে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল মাত্র ৪৭ হাজার টাকার জন্য। প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশের পর মিলেছে সহযোগিতা, পরিশোধ হয়ে গেছে বিকেএসপির বকেয়া।

এতে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন প্রতিমার মা সুনিতা মুন্ডা। তাঁদের ওপর থেকে নেমে গেছে বড় ধরনের আর্থিক চাপ।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেএসপি প্রতিমার অভিভাবককে পাঠানো চিঠিতে জানিয়েছিল, তাঁদের মেয়ের বকেয়া বেতন ৪৬ হাজার ৮৪০ টাকা। সেই চিঠিতেই সতর্ক করে বলা হয়, ছয় মাসের বেশি বেতন বকেয়া থাকলে চূড়ান্ত সতর্কীকরণ, আর ১২ মাসের বেশি বকেয়া থাকলে বহিষ্কারের বিধান আছে। অর্থাভাবে যখন অনিশ্চিত হয়ে উঠেছিল প্রতিমার ভবিষ্যৎ, ঠিক সেই সময় ১১ অক্টোবর প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয় তাঁদের পরিবারের সংগ্রামের গল্প।

আরও পড়ুনবকেয়া বেতন চেয়ে বিকেএসপির চিঠি, ফুটবলার প্রতিমার পড়াশোনা বন্ধের পথে ১১ অক্টোবর ২০২৫

প্রতিবেদনটি পাঠকের হৃদয়ে নাড়া দেয়। কিশোর আলোর পক্ষ থেকে প্রতিমার বকেয়া পরিশোধের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই দিনই বিকেলে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে গিয়ে প্রথম আলোর সাতক্ষীরার নিজস্ব প্রতিবেদক কল্যাণ ব্যানার্জি প্রতিমা ও তাঁর মা সুনিতা মুন্ডার হাতে ৫০ হাজার টাকা তুলে দেন। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগরের সৌজন্যে নেওয়া হয় এই উদ্যোগ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যবসায়ী সহায়তা করেন আরও ১০ হাজার টাকা। তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপা রানী সরকার দেন পাঁচ হাজার টাকা ও একটি ফুটবল।

সহায়তা পেয়ে স্বস্তি ফিরেছে পরিবারে। মুঠোফোনে প্রতিমা বলেন, ‘এখন আর কোনো অনিশ্চয়তা নেই। বিকেএসপির পাওনা ৪৬ হাজার ৮৪০ টাকা পরিশোধ করে দিয়েছি। আমি ভালো আছি, মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা আর অনুশীলন করছি।’

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার প্রতিমা মুন্ডা ও তাঁর মা সুনিতা মুন্ডার হাতে কিশোর আলোর পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগরের সৌজন্যে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ