জাকসু নির্বাচন: ২১টির মধ্যে ২০টি হলের ভোট গোনা শেষ
Published: 12th, September 2025 GMT
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও হল সংসদ নির্বাচনে ২১টি হলের মধ্যে ২০টি ভোট গণনা শেষ হয়েছে।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা পর্যন্ত জসীমউদ্দিন হলের গণনা হয়নি। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এই হলের ভোট ২০ শতাংশের মতো গণনা হয়েছে, বাকি গণনার কাজ চলমান রয়েছে।
আরো পড়ুন:
জান্নাতুলের মৃত্যুর জন্য প্রশাসনের অব্যবস্থাপনাই দায়ী: রিটার্নিং কর্মকর্তা
ভোট গণনা চলবে, যেকোনো সহযোগিতা করতে প্রস্তুত: জাবি উপাচার্য
সন্ধ্যায় প্রেস ব্রিফিংয়ে জাকসু নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ২১টি হলের গণনার কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হলে তারপর শুরু হবে কেন্দ্রীয় সংসদ অর্থাৎ জাকসুর ভোট গণনা। আজ রাতের মধ্যেই গণনা শেষ করার চেষ্টা করছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বিরতিহীন ভোটগ্রহণ করা হয়। ৫ ঘণ্টারও বেশি সময় বাদে শুরু হয় গণনা। সেই গণনা চলছেই, এরই মধ্যে প্রায় ২২ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও হলেরই গণনা এখনো শেষ করতে পারেনি জাকসু নির্বাচন কমিশন।
জাকসু ও হল সংসদে ২১টি ভোটকেন্দ্রে ছাত্র-ছাত্রী মিলে এবার মোট ভোটার ১১ হাজার ৭৫৯ জন। নির্বাচন কমিশন কার্যালয় সূত্র বলছে, মোট ভোটারের মধ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন ৮ হাজার ২৬ জন, শতাংশের হিসাবে যা ৬৮ দশমিক ২৫।
আলবেরুনী হলে মোট ২১০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ভোট দিয়েছেন ১২৫ জন, ভোট পড়েছে ৫৯ দশমিক ৫২ শতাংশ।
আ ফ ম কামাল উদ্দিন হলের মোট ৩৩৩ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ২১৬ জন, ভোট পড়েছে ৬৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
র মশাররফ হোসেন হলের মোট ভোটার ৪৬৪ জন, ভোটা দিয়েছেন ৩১০ জন। এই হলে ৬৬ দশমিক ৮১ শতাংশ ভোট পড়েছে।
নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে মোট ভোটার ২৮০, ভোট পড়েছে ১৩৮টি। ভোটদানের হার ৪৯ দশমিক ২৯। এই হলে সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে।
শহীদ সালাম-বরকত হলে ২৯৯ জনের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ২২৪ জন। এখানে ভোট পড়েছে ৭৪ দশমিক ৯২ শতাংশ।
মওলানা ভাসানী হলে ৫১৪ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৮৪ জন ভোট দিয়েছেন, অংশগ্রহণের হার ৭৪ দশমিক ৭১ শতাংশ।
জাহানারা ইমাম হলে ৩৬৭ জনের মধ্যে ২৪৭ জন ভোট দিয়েছেন, ভোট পড়েছে ৬৭ দশমিক ৩০ শতাংশ।
প্রীতিলতা হলে ৩৯৯ ভোটারের মধ্যে ২৫০ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন, ভোট পড়েছে ৬২ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
বেগম খালেদা জিয়া হলে ৪০৯ জনের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ২৪৯, অংশগ্রহণ করেছেন ৬০ দশমিক ৮৮ শতাংশ।
১০ নং (ছাত্র) হলে ৫২২ ভোটারের মধ্যে ৩৮১ জন ভোট দিয়েছেন। ভোটে অংশ নিয়েছেন ৭২ দশমিক ৯৯ শতাংশ।
শহীদ রফিক-জব্বার হলে ৬৫১ জনের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৪৭০ জন, অর্থাৎ ৭২ দশমিক ২০ শতাংশ।
বেগম সুফিয়া কামাল হলের ৪৫৬ ভোটারের মধ্যে মাত্র ২৪৬ জন ভোট দিয়েছেন, অর্থাৎ ৫৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
১৩ নম্বর ছাত্রী হলে ৫১৯ জনের মধ্যে ২৯২ জন ভোট দিয়েছেন, অর্থাৎ ৫৬ দশমিক ২৬ শতাংশ।
১৫ নম্বর ছাত্রী হলে ৫৭১ ভোটারের মধ্যে ৩৫০ জন ভোট দিয়েছেন, অর্থাৎ গৃহীত ভোট ৬১ দশমিক ৩০ শতাংশ।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে ৩৫০ ভোটারের মধ্যে ভোট পড়েছে ২৬১টি, অংশগ্রহণ ৭৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
রোকেয়া হলে ৯৫৫ জনের মধ্যে ৬৮০ জন ভোট দিয়েছেন, অংশগ্রহণ ৭১ দশমিক ২০ শতাংশ।
ফজিলতুন্নেসা হলে ৮০৩ ভোটারের মধ্যে ৪৮৯ জন ভোট দিয়েছেন, অর্থাৎ গৃহীত ভোট ৬০ দশমিক ৯০ শতাংশ।
বীরপ্রতীক তারামন বিবি হলের ৯৮৪ জনের মধ্যে ৫৯৫ জন ভোট দিয়েছেন, অংশগ্রহণ ৬০ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
২১ নম্বর ছাত্র হলে ৭৩৫ ভোটারের মধ্যে ৫৬০ জন ভোট দিয়েছেন, অংশগ্রহণ ৭৬ দশমিক ১৯ শতাংশ।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলে সর্বাধিক অংশগ্রহণ দেখা গেছে। ৯৯১ জনের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৮০৭ জন, ভোট পড়েছে ৮১ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হলে ৯৪৭ জনের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৭৫২ জন, অংশগ্রহণ ৭৯ দশমিক ৪১ শতাংশ।
কাজী নজরুল ইসলাম হলের পর সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হলে (৭৯ দশমিক ৪১ শতাংশ) এবং ২১ নম্বর ছাত্র হলে ৭৬ দশমিক ১৯ শতাংশ। আর সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে ৪৯ দশমিক ২৯ শতাংশ।
দীর্ঘ ৩৩ বছর পর দশমবারের মতো জাকসু নির্বাচন হলো। এবার নির্বাচনে জাকসুর ২৫টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ১৭৭ প্রার্থী। নির্বাচনে বামপন্থি, শিবির, ছাত্রদল ও স্বতন্ত্র শিক্ষার্থীদের সমর্থিত আটটি প্যানেল দিয়েছিল।
বৃহস্পতিবার মধ্যাহ্নের পর থেকে ভোট জালিয়াতি, কারচুপি ও ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অভিযোগ আসতে থাকে। এসব অভিযোগ তুলে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলসহ পাঁচটি প্যানেল নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে পুননির্বাচনের দাবি করেছে। তবে জাকসুর নির্বাচন কমিশন এই দাবি পক্ষে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি।
এদিকে ভোট গণনার সময় অসুস্থ হয়ে একজন শিক্ষিকার মৃত্যু ঘিরে শোকাবহ পরিবেশ তৈরি হয়। কোনো কোনো শিক্ষক অভিযোগ করেছেন, জাকসু নির্বাচন কমিশনের অবহেলায় এই মৃত্যু হয়েছে।
ঢাকা/রাসেল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জন ভ ট দ য় ছ ন ভ ট গণন কর ছ ন অর থ ৎ দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।