পাবনার স্কুলের প্রধান শিক্ষক ভারতের নাগরিক, অভিযোগ শ্যালকের
Published: 16th, September 2025 GMT
পাবনা সদর উপজেলার বালিয়াহালট আমজাদ হোসেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত সুখ রঞ্জন চক্রবর্তী। তিনি ভারতের নাগরিক বলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছেন তার শ্যালক সুমন কুমার রায়। সুখরঞ্জনের বিরুদ্ধে জালিয়াতি করে শ্বশুরের নামে লিজ নেওয়া সরকারি সম্পত্তি দখলের অপচেষ্টারও অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগপত্রের সঙ্গে সরবরাহ করা ভারতের জাতীয় পরিচয়পত্র ও আধার কার্ড অনুযায়ী, সুখ রঞ্জন চক্রবর্তী ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার দক্ষিণ ব্যারাকপুর শহরের দমদমের সূর্যসেন পল্লির বাসিন্দা। তার বাবার নাম নির্মল চক্রবর্তী।
তবে, পাবনা শহরের ২ নাম্বার ওয়ার্ডের বাসিন্দাও তিনি। সুখ রঞ্জন চক্রবর্তীর ভারতীয় পরিচয়পত্রের তালিকাভুক্তির নাম্বার ০০০০/০০৮০২/৭৬৩৯৭ এবং আধার কার্ডের নাম্বার ৪০৫০২২৩৪৩৩৫১।
ভারতীয় জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার জন্মতারিখ: ০১/০৯/১৯৬৯। বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্রেও তার জন্মতারিখ একই। সে হিসেবে তার বয়স ৫৬ বছর।
তবে, ভারতীয় নাগরিকত্বে অভিযোগ অস্বীকার করে সুখ রঞ্জন চক্রবর্তী দাবি করেছেন, তার জন্ম পাবনায়। দাদার বাড়ি পাবনা শহরে। পৈত্রিক ভিটা পাবনার সুজানগরে। জন্ম ও লেখাপড়া পাবনাতেই। ১৯৮৬ সালে সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন। ১৯৯২ সালে ঢাকার জগন্নাথ কলেজ থেকে স্নাতক এবং ১৯৯৩ সালে একই কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। ২০০০ সাল থেকে পাবনায় স্থায়ীভাবে বাস করছেন। ওই বছরই সুজানগর উপজেলার ভবানীপুর ২ নাম্বার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাকরি শুরু করেন তিনি।
অভিযোগ করা হচ্ছে, সুখ রঞ্জন চক্রবর্তী বাংলাদেশের চাকরিবিধি উপেক্ষা করেই প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাকরি করছেন। তিনি ভারতের নাগরিক। সেখানে জমি কিনে বাড়িও করেছেন। তার স্ত্রী ও বড় ছেলে ভারতেই থাকেন। ছোট ছেলে বাকপ্রতিবন্ধী হিসেবে ভাতা পাওয়ায় তাকে নিয়ে পাবনাতেই থাকেন সুখ রঞ্জন। মাঝে-মধ্যে ১৫ দিন থেকে ১ মাসের ছুটি নিয়ে তারা ভারতে যান।
সুখ রঞ্জন তার শ্বশুর দীপক কুমার রায়ের নামে সরকারি লিজ নেওয়া সম্পত্তি জালিয়াতি করে নিজের নামে নেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ শ্যালক সুমন কুমার রায়ের।
এ বিষয়ে সুমন কুমার রায় বলেছেন, “আমার বাবা পাবনা শহরের মুরগি পট্টিতে সরকারি জমি লিজ নিয়ে বাস করতেন। বাবা মারা যাওয়ার পর আমার মায়ের নামে লিজ দেওয়া হয়। মা মারা যাওয়ার পর কাউকে না জানিয়ে শুধু আমার বোনকে একমাত্র উত্তরসূরি বানিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছেন সুখ রঞ্জন। এমনকি পৌরসভাতেও আমার একমাত্র বোনকে উত্তরসূরি বানিয়ে আবেদন দিয়েছেন। আমার বাড়িতে বাস করে এখন আমাকেই বাড়িছাড়া করতে চান।”
পাবনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুল কবীর বলেছেন, “লিখিত অভিযোগ ও কাগজপত্র পেয়েছি। আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকালে এ বিষয়ে তদন্ত হবে। অভিযুক্ত সুখ রঞ্জনকে তদন্তকালে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দিয়ে গত ১০ সেপ্টেম্বর চিঠি দেওয়া হয়েছে। তদন্ত শেষে প্রমাণসাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অভিযুক্ত শিক্ষক সুখ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেছেন, “এসব অভিযোগের ভিত্তি নেই। এসব কাগজপত্র বানানো যায়। মূলত, শ্যালক সুমন সম্পত্তি দখল করতে আমার পেছনে লেগেছে। এর আগে শ্বশুরের একটি দোকান বিক্রি করে খেয়েছে। এখন বাড়ি দখলের পাঁয়তারা করছে। কিন্তু, বাড়ি তো সরকারি। আমি কীভাবে দেবো? আমার বিরুদ্ধে তদন্ত হলে আমি প্রমাণ দেবো যে, আমি ভারতীয় নাগরিক নই।”
ঢাকা/শাহীন/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর ছ ন শ য লক আম র ব তদন ত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
শেরপুর নির্বাচন অফিসে রোহিঙ্গা আটক
শেরপুর ভুয়া নাম-পরিচয় ব্যবহার করে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) করতে গিয়ে এক রোহিঙ্গা আটক হয়েছেন। সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আটকের পর তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছেন জেলা নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তারা।
আটক ব্যক্তির নাম মো. আমিন। তিনি কক্সবাজারের উখিয়ার টাংহালি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা। তার বাবার নাম জাহিদ হোসেন।
আরো পড়ুন:
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্থায়ী প্রত্যাবাসনে ‘বাস্তব পদক্ষেপ’ চায় ওআইসি
৪০ দেশের প্রতিনিধিদের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, আলম মিয়া নাম ব্যবহার করে উখিয়ার টাংহালি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক ব্যক্তি এনআইডি করতে শেরপুর জেলা নির্বাচন অফিসে আবেদন করেন। সেখানে তিনি বাবার নাম আলী হোসেন উল্লেখ করেন এবং শেরপুর পৌরসভার কসবা মোল্লাপাড়া ও শিবুত্তর এলাকার বাসিন্দা হিসেবে দাবি করেন। কথাবার্তা ও নথিপত্র যাচাইয়ের সময় সন্দেহ হলে কর্মকর্তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ সময় ওই ব্যক্তি নিজেকে রোহিঙ্গা বলে স্বীকার করেন।
শেরপুরের অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “তার কাগজপত্র দেখে আমাদের সন্দেহ হয়। তার ভাষাগত বিষয়টি আমাদের নজরে আসে। জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি নিজেকে রোহিঙ্গা বলে স্বীকার করেন।”
আটক মো. আমিন বলেন, “আমি কক্সবাজারের উখিয়ার টাংহালি ক্যাম্পে থাকি। এ দেশের নাগরিক হওয়ার আশায় ভোটার আইডি কার্ড করতে শেরপুরে এসেছিলাম। কাজের জন্য পরিচয়পত্র পেলে সুবিধা হবে ভেবেই আলম নামে আবেদন করেছি।”
শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, “রোহিঙ্গা ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার সঙ্গে স্থানীয় কেউ জড়িত কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আইনগত ব্যবস্থা চলমান।”
ঢাকা/তারিকুল/মাসুদ