বেক্সিমকোর ১৫ কারখানা চালু করতে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ আসছে
Published: 18th, September 2025 GMT
বেক্সিমকো গ্রুপের বন্ধ কারখানা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব কারখানা চালু করতে আপাতত ২৪৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে জাপানের রিভাইভাল নামের একটি প্রতিষ্ঠান। আর এ প্রক্রিয়ায় রিভাইভালের সঙ্গে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ইকোমিলি নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান। বেক্সিমকোর বন্ধ কারখানা চালুতে এই দুই প্রতিষ্ঠানের যৌথ বিনিয়োগের সিদ্ধান্তে সায় দিয়েছে সরকার। এখন অপেক্ষা ত্রিপক্ষীয় চুক্তির। পক্ষগুলো হলো রিভাইভাল, জনতা ব্যাংক ও বেক্সিমকো। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বেক্সিমকো গ্রুপের পোশাক পণ্যের বড় বিদেশি ক্রেতা জারা, মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার, টার্গেট, আমেরিকান ইগল, পুল অ্যান্ড বিয়ার ও বেস্ট সেলার ইত্যাদি। বিদেশি ক্রেতাদের কাছে চাহিদা থাকায় ১৫টি কারখানা নিয়ে গঠিত বেক্সিমকো টেক্সটাইলস ডিভিশন নতুন করে চালুর চেষ্টা চলছে। গত বছরের আগস্টে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বন্ধ হয়ে যাওয়া এসব কারখানা চালু করতে রিভাইভাল প্রজেক্ট লিমিটেড ও যুক্তরাষ্ট্রের ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান ইকোমিলি যৌথভাবে দুই কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করতে চায়। এ জন্য তারা লিখিত একটি প্রস্তাবও দিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে পাস করা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ছাত্রছাত্রীদের একটি নেটওয়ার্ক রয়েছে, যার নাম বুয়েট ইনভেস্টমেন্ট নেটওয়ার্ক। এ নেটওয়ার্কের সহায়তায় পরবর্তী সময়ে বেক্সিমকোর কারখানা চালুর জন্য ঋণের ব্যবস্থা করা হবে আরও ১০ কোটি ডলার—এমন আশ্বাসও সরকারকে দেওয়া হয়েছে।
বেক্সিমকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওসমান কায়সার চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা জনতা ব্যাংকের কাছে খেলাপি। জনতা ব্যাংক কতটুকু, কীভাবে ঋণ পুনঃ তফসিল করবে, রিভাইভাল তা বুঝতে চায়। সে কারণেই রিভাইভালসহ ব্যাংকটির সঙ্গে আমরা বৈঠক করেছি। এখন ত্রিপক্ষীয় চুক্তির পালা।’
সূত্রগুলো জানায়, প্রথম দফায় রিভাইভালের পক্ষ থেকে বেক্সিমকো টেক্সটাইল পরিচালনার জন্য সরকারের কাছে আগ্রহপত্র (ইওআই) জমা দেওয়া হয় গত জুনে। বেক্সিমকো যেহেতু জনতা ব্যাংকের কাছে বড় অঙ্কের ঋণখেলাপি, জাপানি কোম্পানিটি তাই জনতা ব্যাংকের নীতিগত সম্মতি চেয়েছে। রিভাইভালের এ আগ্রহের বিপরীতে বেক্সিমকো গ্রুপ লেটার অব কমফোর্ট বা নিশ্চয়তাপত্রও দাখিল করেছে মন্ত্রণালয়ে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বলছে, শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধে বেক্সিমকোকে ৫৮৫ কোটি টাকা সুদমুক্ত ঋণ দিয়েছে সরকার। সে টাকা ফেরত পাওয়া অনিশ্চিত। এদিকে ছয় মাস ধরে বন্ধ থাকার কারণে কারখানাটির যন্ত্রপাতি অকেজো হওয়ার পথে।
দুই সপ্তাহ আগে অবসরোত্তর ছুটিতে যাওয়া শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান এ নিয়ে গত ২১ আগস্ট সচিবালয়ে একটি বহুপক্ষীয় বৈঠক করেন। যোগাযোগ করলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দেশের অর্থনীতির চলমান ধারা অব্যাহত রাখতে উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কারখানাগুলো চালু হচ্ছে। বেক্সিমকোর মূল্যবান যন্ত্রপাতি আছে, যেগুলো নষ্ট হচ্ছে এখন। কারখানা চালু হলে অনেকের কর্মসংস্থান হবে—সরকার এ বিষয়টিকেই গুরুত্ব দিচ্ছে।
রিভাইভাল কী চায়রিভাইভাল বলেছে, কারখানাগুলো চালু হবে ত্রিপক্ষীয় ইজারা চুক্তির মাধ্যমে। আর কারখানা চালু করতে হলে খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল করতে হবে। কারখানার চালুর পর যে আয় হবে, তার একাংশ সেবা মাশুল (সার্ভিস চার্জ) হিসেবে নেবে রিভাইভাল। বাকি আয় চলে যাবে পুনঃ তফসিল করা ঋণ পরিশোধে। কারখানা চালু করতে বিদেশি ব্যাংক থেকে দুই কোটি মার্কিন ডলারের ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্রের (এলসি) ব্যবস্থা করবে রিভাইভাল। স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বিশ্বখ্যাত নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেবে রিভাইভাল। বিদেশি ক্রেতাদের আস্থা ফিরিয়ে আনা, দক্ষ কর্মী নিয়োগ ও টেকসই উৎপাদনও নিশ্চিত করবে তারা।
রিভাইভাল প্রজেক্ট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফয়সাল হুদা বর্তমানে জাপানে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আশা করছি দুই সপ্তাহের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়ে যাবে। আমরা চাই না এটা হল-মার্ক হোক। বেক্সিমকোর কারখানাগুলো চালু করে আমরা ২৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে চাই। আর বিশ্ববিখ্যাত যেসব ব্র্যান্ড বেক্সিমকো থেকে পণ্য নিত, তাদের ধরে রাখতে চাই।’
সরকারের মনোভাবসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধে সরকার ৫৮৫ কোটি টাকা বেক্সিমকোকে দিয়েছে। এর মধ্যে ৫৭৫ কোটি টাকা অর্থ বিভাগের। এ টাকা বেক্সিমকো গ্রুপ বা রিভাইভাল কীভাবে পরিশোধ করবে, তা জানতে চেয়েছে অর্থ বিভাগ। এ ছাড়া ঋণ পুনঃ তফসিলের জন্য অর্থ বিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অনাপত্তিপত্র লাগবে। উভয় বিভাগই কারখানা চালুর স্বার্থে অনাপত্তিপত্র দিচ্ছে।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) পক্ষ থেকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়, বিদেশি কোম্পানি বিনিয়োগ করতে এলে ব্যাংকগুলো থেকে স্বল্পমেয়াদি ঋণ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাই জনতা ব্যাংক ঋণ না দিলেও অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ রাখা যেতে পারে।
রিভাইভাল ও বেক্সিমকোর সঙ্গে গত ১৯ আগস্ট একটি বৈঠক করে জনতা ব্যাংক। সেখানে ঋণ পুনঃ তফসিল ও এলসি খোলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তিপত্র চাওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
বেক্সিমকোর সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে জানতে চাইলে বাংলাদেশ নিট পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সাবেক সভাপতি মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র প রথম আল ক ব যবস থ ঋণ প ন পর শ ধ সরক র তফস ল
এছাড়াও পড়ুন:
গেইল-পেরেরাদের পারিশ্রমিক, হোটেল বিল না দিয়েই লিগের আয়োজকেরা পালিয়েছেন
টুর্নামেন্টের নাম ইন্ডিয়ান হেভেনস প্রিমিয়ার লিগ বা আইএইচপিএল। ভূস্বর্গ খ্যাত কাশ্মীরে আয়োজিত টুর্নামেন্টটি ক্রিস গেইল, থিসারা পেরেরাদের জীবনে নিয়ে এসেছে মহা বিড়ম্বনা। বিশ্ব ক্রিকেটের নামি এই খেলোয়াড়দের হোটেলে রেখে শহর থেকে পালিয়ে গেছেন লিগের আয়োজকেরা। খেলোয়াড়, ম্যাচ কর্মকর্তাদের পারিশ্রমিক দেওয়া হয়নি, পরিশোধ করা হয়নি হোটেলের বিলও।
ঘটনাটি ঘটেছে ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে। গত ২৫ অক্টোবর আট দল নিয়ে শুরু হওয়া আইএইচপিএল শেষ হওয়ার কথা ছিল ৮ নভেম্বর। কিন্তু শনিবার সকালে খেলোয়াড়দের জানানো হয়, কারিগরি কারণে দিনের খেলা বাতিল করা হয়েছে। এরপর রোববার সকালে হোটেলে থাকা খেলোয়াড় ও কর্মকর্তারা জানতে পারেন, আয়োজকেরা আগের রাতে শ্রীনগর ছেড়ে চলে গেছেন।
হোটেল কর্তৃপক্ষ জানায়, আয়োজকদের কাছ থেকে তারা কোনো বিল পায়নি। সেই সময় প্রায় ৪০ জনের মতো খেলোয়াড় ও কর্মকর্তা হোটেলেই আটকা পড়েছিলেন।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) কর্মকর্তা মেলিসা জুনিপার আইএইচপিএলে আম্পায়ারিং করতে গিয়েছিলেন। শ্রীনগরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আয়োজকেরা হোটেল থেকে পালিয়ে গেছেন। তারা হোটেল, খেলোয়াড় বা আম্পায়ার কারও বিল পরিশোধ করেননি। আমরা হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতায় এসেছি যেন সবাই বেরিয়ে যেতে পারে।’
শ্রীনগরের যে হোটেলে খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের রাখা হয়েছিল, সেখানকার এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘আয়োজকেরা ১০ দিন আগে খেলোয়াড়দের জন্য ১৫০টি কক্ষ চেয়েছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, ক্রিস গেইলের মতো তারকার কারণে কাশ্মীরের পর্যটন উপকৃত হবে। কিন্তু রোববার সকালে দেখি তাঁরা উধাও হয়ে গেছেন। আমাদের বিলও দেননি। গেইলসহ কয়েকজন খেলোয়াড় শনিবারই হোটেল ছেড়ে চলে গেছেন।’
গেইল ছাড়াও টুর্নামেন্টে খেলতে গিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার থিসারা পেরেরা, নিউজিল্যান্ডের জেসি রাইডার, দক্ষিণ আফ্রিকার রিচার্ড লেভি এবং ওমানের আয়ান খান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টুর্নামেন্টের প্রচারণায় যে সব পোস্টার ব্যবহার করা হয়েছে, তার একটিতে বাংলাদেশের সাকিব আল হাসানের ছবিও বড় আকারে দেখা গেছে।
ভারতের সাবেক ক্রিকেটার পারভেজ রসুল এই টুর্নামেন্টে খেলেছিলেন। তিনি জানান, কয়েকজন বিদেশি খেলোয়াড় হোটেলে আটকা পড়েছিলেন। পরে ব্রিটিশ হাইকমিশনের সহায়তায় তাঁরা বেরিয়ে যান, ‘এক ইংলিশ আম্পায়ার হাইকমিশনে যোগাযোগ করেছিলেন’।
স্থানীয় এক ক্রিকেটার জানান, আয়োজকেরা সম্ভবত ধারণাই করতে পারেননি এমন একটি টুর্নামেন্ট চালাতে কত বড় বাজেট প্রয়োজন। শেষ মুহূর্তে স্পনসররা সরে যাওয়ায় অর্থ সংকট তৈরি হয়েছিল, ‘প্রথম দিন নির্ধারিত পোশাকও ছিল না, স্থানীয়ভাবে কিনে আনা হয়েছিল। কোনো খেলোয়াড়ের সঙ্গেও লিখিত চুক্তি করা হয়নি।’
টুর্নামেন্টটির আয়োজক ছিল যুবা সোসাইটি মোহালি নামের একটি সংস্থা। সহযোগিতায় ছিল জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর স্পোর্টস কাউন্সিল। কাউন্সিলের এক কর্মকর্তা জানান, আইএইচপিএল সভাপতি আশু দানি পুলিশের ছাড়পত্র ও মাঠ ব্যবহারের অনুমতি নিয়েছিলেন, ‘তারা আমাদের টাকা দিয়েছে। এখানে সরকারের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা নেই। কেন লিগ মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেল, আমরা জানি না।’
তবে ২২ অক্টোবরের একটি সরকারি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জম্মু ও কাশ্মীরের বিভাগীয় কমিশনার অংশুল গার্গের সভাপতিত্বে আইএইচপিএল নিয়ে এক প্রস্তুতি সভার কথা উল্লেখ ছিল, যেখানে অনুমান করা হয়েছিল বকশি স্টেডিয়ামে ২৫–৩০ হাজার দর্শক উপস্থিত থাকবেন। কিন্তু বাস্তবে দর্শক উপস্থিতি ছিল হতাশাজনক। টিকিটের দাম কমিয়েও সাড়া মেলেনি।
এ ব্যাপারে বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁর মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।