জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে যে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে, সে বিষয়ে আদালত থেকে রায় না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমার খবর নিয়েছি, আজ পর্যন্ত সীমানা নিয়ে ১৪টি রিট আবেদন দায়ের করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকার সীমানা নিয়ে এ আবেদনগুলো করা হয়েছে। যেহেতু বিষয়টি এখন আদালতের এখতিয়ারাধীন, তাই আমার মনে হয় এটি সাবজুডিস (বিচারাধীন)। আমরা আদালতের প্রতি আস্থাশীল, তাই সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করাই হবে সঠিক পদক্ষেপ।’

সীমানা বিরোধ নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আখতার আহমেদ আরও বলেন, ‘যেকোনো ধরনের ভাঙচুর বা সহিংসতা অনাকাঙ্ক্ষিত। যেহেতু বিষয়টি এখন আদালতে বিচারাধীন, তাই আমরা আদালতের সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আদালত যে রায় দেবেন, তা আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক হবে। সুতরাং সবারই উচিত আইনি প্রক্রিয়ার প্রতি আস্থা রেখে অপেক্ষা করা।’

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণের চূড়ান্ত তালিকা ইতিমধ্যে প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ স্বাক্ষরিত গেজেটের মাধ্যমে ৩০০ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। চূড়ান্ত তালিকায় দেশের ৩৭টি আসনের সীমানায় পরিবর্তন আনা হয়েছে, যা প্রভাব ফেলেছে মোট ৪৬টি আসনে। উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে বাগেরহাটে আসনসংখ্যা চার থেকে কমিয়ে তিনটি করা হয়েছে এবং গাজীপুরে আসনসংখ্যা পাঁচ থেকে বাড়িয়ে ছয়টি করা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এই পরিবর্তনগুলো স্থানীয় জনগণের মতামত গ্রহণ এবং বিভিন্ন অভিযোগ পর্যালোচনা করে করা হয়েছে। তবে যেহেতু বিষয়টি নিয়ে আদালতে রিট চলমান, তাই কমিশন আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসনসংখ্যা কমানো ও নতুন ১৮ বিভাগ চালুর সুপারিশ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সার্বিকভাবে আসনসংখ্যা কমানো, আরও ১৮টি বিভাগের অন্তর্ভুক্তি, ৪টি ইনস্টিটিউট চালু এবং ১২টি বিভাগে পিএইচডি ডিগ্রি চালুর সুপারিশ করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনা অনুযায়ী, কোয়ালিটি এডুকেশন নিশ্চিত করতে আসনসংখ্যা কমানো হচ্ছে বলে বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে।

গতকাল সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৯তম একাডেমিক কাউন্সিল সভায় এসব বিষয়ে সুপারিশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানোগ্রামে আরও ১৮টি বিভাগের অন্তর্ভুক্তি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বলে জানিয়েছেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ইউজিসির নির্দেশনা অনুযায়ী, কোয়ালিটি এডুকেশন নিশ্চিত করতে ল্যাব বেজড বিভাগগুলোতে আসনসংখ্যা ৪০টি এবং ল্যাববিহীন বিভাগগুলোতে ৫০টি আসন রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। যার কারণে সার্বিকভাবে কিছু আসন কমে আসবে। এ ছাড়া নতুন আরও ১৮টি বিভাগের অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগ, জৈব রসায়ন ও আণবিক জীববিজ্ঞান বিভাগ এবং জৈবপ্রযুক্তি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ।

সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, জনসংখ্যাবিজ্ঞান বিভাগ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ। কলা ও মানবিক অনুষদভুক্ত গুলো হলো- ইসলামিক স্টাডিজ ও সংস্কৃতি বিভাগ, ইতিহাস বিভাগ এবং দর্শন বিভাগ।

আরও পড়ুনদুই দশকে ‘লালমাটির সবুজ ক্যাম্পাস’, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বর্ণাঢ্য আয়োজন ২৮ মে ২০২৫

ব্যবসায় অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো পর্যটন ও আতিথেয়তা ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ব্যবসায়িক তথ্যবিজ্ঞান বিভাগ, আন্তর্জাতিক ব্যবসা বিভাগ এবং লজিস্টিক ও মার্চেন্ডাইজিং বিভাগ।

প্রকৌশল অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগ, রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগ, পুরকৌশল বিভাগ এবং যন্ত্রকৌশল বিভাগ। আইন অনুষদভুক্ত বিভাগটি হলো অপরাধবিদ্যা বিভাগ।

এদিকে সভায় চারটি ইনস্টিটিউট গঠনের সুপারিশ করা হয়। এগুলো হলো আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় উন্নত গবেষণা কেন্দ্র এবং একাডেমিক মান বৃদ্ধি কেন্দ্র। এগুলোর গঠনকাঠামোও সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট ও শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের জন্য পরিচালক হিসেবে একজন অধ্যাপক, নিয়মিত অধ্যাপক দুজন, তিনজন সহযোগী অধ্যাপক, সেকশন অফিসার বা ব্যবস্থাপক একজন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা একজন, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার টাইপিস্ট একজন, অফিস সহায়ক দুজন এবং একজন ক্লিনার।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় উন্নত গবেষণা কেন্দ্র এবং অ্যাকাডেমিক মান বৃদ্ধি কেন্দ্র- এদুটোর জন্য পরিচালক হিসেবে একজন অধ্যাপক, অতিথি অধ্যাপক থাকবেন একজন, অতিরিক্ত পরিচালক হিসেবে একজন অধ্যাপক অথবা সহযোগী অধ্যাপক, সেকশন অফিসার অথবা ব্যবস্থাপক হিসেবে একজন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা একজন, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার টাইপিস্ট একজন, অফিস সহায়ক দুইজন এবং ক্লিনার-১ জন।

এ ছাড়া ১২টি বিভাগে পিএইচডি ডিগ্রি চালুর প্রস্তাবনা রাখা হয়েছে। প্রতিটি বিভাগে ন্যূনতম ২৬ জন করে শিক্ষক রাখার ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হায়দার আলী বলেন, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এখনই এগুলো না দেখে বলা যাচ্ছে না। রেজ্যুলেশন পাশ হলে বিস্তারিত বলতে পারব। এ জন্য কিছুটা সময় লাগবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় আলোচনায় এগুলোর সুপারিশ করেছি; কোনোটিই এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয়। আর অর্গানোগ্রাম অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয় ডিপার্টমেন্টের জন্য ছাড়পত্র চায়, তারপর কমিশন (ইউজিসি) যদি অনুমোদন দেয়, তখন সেটা অর্গানাগ্রামে যুক্ত হয়। অর্গানোগ্রামে থাকলেই যে বিভাগ হয়ে যাবে, বিষয়টি এমনও না। ইউজিসি একটা অনুমোদন দিয়ে রাখে। এই অনুমোদনের আলোকে আবার যখন আবেদন দেওয়া হবে, তখন কমিশন বসে সিদ্ধান্ত নেবে। মূল কথা হলো এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েল এমন পরিকল্পনা থাকে। আমাদের এসব পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে অন্তত ২০৩২ সাল পর্যন্ত।’  

অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন আরও বলেন, ইউজিসি আমাদের নির্দেশনা দিয়েছে আসন সংখ্যা কমাতে, যাতে কোয়ালিটি এডুকেশনের নিশ্চিত হয়। এ জন্য তাঁরা ল্যাব বেজড বিভাগের জন্য ৪০টি আসন এবং ল্যাববিহীন বিভাগের জন্য ৫০ টি আসন বরাদ্দ দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে। আর ১২টি বিভাগে পিএইচডি ডিগ্রি চালুর প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসনসংখ্যা কমানো ও নতুন ১৮ বিভাগ চালুর সুপারিশ