রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা জরুরি
Published: 19th, September 2025 GMT
গত জুন ও জুলাই মাসের তুলনায় আগস্টে ভুয়া তথ্য ও গুজবের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে, যার সিংহভাগই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে। গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে। এই প্রবণতা কেবল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সমস্যা নয়, বরং দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো এবং সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্যও উদ্বেগজনক।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর বিষয়টি রাজনৈতিক হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। সবাই এর সুবিধা গ্রহণ করতে গিয়ে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সেটি ব্যবহার করছেন এবং দিন শেষে নিজেরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। এর চরম শিকার হচ্ছেন নারীরাও। মূলধারার সংবাদমাধ্যমও আক্রান্ত হচ্ছে। গুজব ও ভুয়া তথ্য যেভাবে মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে, এর রোধ করাটা জরুরি।
সিজিএসের তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট মাসে শনাক্ত হওয়া ৩৪০টি ভুয়া তথ্যের মধ্যে ২৬৮টিই ছিল রাজনীতিসংশ্লিষ্ট। এর মধ্যে ৯৬টি ভুয়া তথ্য সরাসরি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ছড়ানো হয়েছে। রাজনৈতিক দল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও এই গুজবের লক্ষ্যবস্তু হয়েছে। এটি স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করতে চাইছে।
ভুয়া তথ্যের এই বিস্তার প্রমাণ করে যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো, যেমন ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক এবং এক্স এখন কেবল বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর বা মানুষকে বিভ্রান্ত করার একটি ‘উর্বর ক্ষেত্র’। সিজিএসের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৯৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ ভুয়া তথ্য এসব প্ল্যাটফর্ম থেকে ছড়িয়েছে। এর ফলে দ্রুতগতিতে মিথ্যা খবর জনগণের মাঝে পৌঁছে যাচ্ছে, সত্য ও মিথ্যার তফাত বুঝতে বিভ্রান্তি তৈরি করছে, যা জনমতকে বিকৃত করছে এবং সমাজে অস্থিরতা তৈরি করছে।
এই সমস্যার সমাধানে শুধু ফ্যাক্টচেকিং বা তথ্য যাচাই-বাছাই যথেষ্ট নয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া ও উদ্দেশ্যমূলক প্ল্যাটফর্মগুলোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি জনগণের মধ্যে ডিজিটাল সাক্ষরতা বাড়ানো এবং ভুয়া তথ্য শনাক্ত করার ক্ষমতা গড়ে তোলার জন্য শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা উচিত। সিজিএসের পরামর্শ অনুযায়ী, এই বিষয়টি জাতীয় পাঠ্যক্রমের সঙ্গে সংযুক্ত করা যেতে পারে।
তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো রাজনৈতিক দলগুলোর নিজেদের সদিচ্ছা। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ভুয়া তথ্য ছড়ানোর সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। সুস্থ রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা এবং গঠনমূলক আলোচনার পরিবেশ তৈরি না হলে, কেবল আইন দিয়ে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। নিজেদের কর্মী-সমর্থকদের এ বিষয়ে সচেতন করে তোলাসহ সতর্কবার্তাও দিতে হবে। যদি রাজনৈতিক নেতৃত্ব নিজেই গুজবের জন্ম দেয় বা তাকে উৎসাহিত করে, তাহলে গণতন্ত্রের ওপর এর চেয়ে বড় হুমকি আর কিছু হতে পারে না।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ফরিদপুরে সীমানা নিয়ে ডিসির চিঠি, এলাকাবাসীর ৫ দাবি
ফরিদপুর-৪ আসনের ভাঙ্গার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়ন ফরিদপুর-২ আসনের নগরকান্দায় যুক্ত করার প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ ও আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) কামরুল হাসান মোল্লা বিষয়টিকে জনগণের আন্দোলন হিসেবে আখ্যায়িত করে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে আবেদন জানিয়েছেন।
এদিকে, ভাঙ্গা উপজেলা থেকে কেটে নেওয়া হামিরদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খোকন মোল্লা এলাকাবাসীর পক্ষে চেয়ারম্যানের পাঁচটি দাবির কথা তুলে ধরে মীমাংসার আহ্বান জানিয়েছেন।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. কামরুল হাসান মোল্লা ভাঙ্গার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ২১৪ ফরিদপুর-৪ আসনে অন্তর্ভুক্তকরণের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব বরাবর একটি চিঠি দিয়েছেন।
জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষরিত ওই চিঠি সূত্রে জানাগেছে, গত ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত গেজেটের সূত্র উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, ফরিদপুর-২ এবং ফরিদপুর-৪ এর সংসদীয় সীমানা পুনঃনির্ধারণ করা হয়। উক্ত তালিকায় ফরিদপুর-৪ এর অন্তর্গত ভাঙ্গার দুটি ইউনিয়ন, আলগী ও হামিরদী জাতীয় সংসদীয় আসন ফরিদপুর-২ এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
তালিকা প্রকাশিত হওয়ার ফলে গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নসহ ভাঙ্গা উপজেলার সাধারণ জনগণ উক্ত আসন বিন্যাস বাতিলের দাবিতে মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধসহ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করতে থাকে। ফলশ্রুতিতে ক্রমান্বয়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, সর্বশেষ ১৫ সেপ্টেম্বর বিক্ষোভকারীরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) কার্যালয়, উপজেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়, ভাঙ্গা থানা, হাইওয়ে পুলিশের কার্যালয় ও সরকারি গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এছাড়াও বিক্ষোভকারীরা সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে রাখে। তৎপ্রেক্ষিতে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সাথে যোগাযোগ ব্যাহত হওয়ার কারণে সাধারণ জনগণকে তীব্র ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। বিক্ষোভকারীরা তাদের দাবির সমর্থনে কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে।
চিঠিতে আরো বলা হয়, ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন) সংসদীয় আসনের ভাঙ্গা হতে আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর-২ আসনের সাথে যুক্ত করে সংসদীয় আসন পুনঃনির্ধারণের বিষয়টি দুইটি সংসদীয় আসনের জনগণ মেনে নিতে পারেনি। উক্ত দুইটি আসনের সর্বস্তরের জনগণ এ আন্দোলনের সাথে যুক্ত রয়েছে মর্মে জানা যায়। এ প্রেক্ষিতে সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা না হলে সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বড় ধরনের অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।
চিঠিতে আরো বলা হয়, বর্ণিত অবস্থায়, জাতীয় সংসদীয় আসন ২১২ ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা ও সালথা) এর অন্তর্গত ভাঙ্গা উপজেলার দুটি ইউনিয়ন আলগী ও হামিরদীকে জাতীয় সংসদীয় আসন ২১৪ ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন) এর মধ্যে পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয় সংসদের নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণের বিষয়টি পুনর্বিবেচনাপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সবিনয় অনুরোধ করা হলো।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক বার্তায় হামিরদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খোকন মোল্লা পাঁচটি দাবির কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি পাঁচটি দাবিকে ভাঙ্গাবাসীর প্রাণের দাবি হিসেবে উল্লেখ করে মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এ দাবিগুলো মেনে নেওয়া হলে তারা ঘরে ফিরে যাবেন।
দাবিগুলো হলো- আলগী এবং হামিরদী ইউনিয়নকে পুনরায় ভাঙ্গা উপজেলার সাথে সংযুক্ত করতে হবে; চেয়ারম্যানসহ সকলকে মুক্তি দিতে হবে; নিরীহ নিরপরাধ জনগণের ওপর মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে; নতুন কোনো মামলা দেওয়া যাবে না; রাতের বেলায় প্রশাসন দিয়ে সাধারণ জনগণকে হয়রানি বন্ধ করতে হবে।
ঢাকা/তামিম/এস