ডাকসু-জাকসুতে শিবির জিতেছে, বাকিরা কি জিততে চেয়েছে
Published: 19th, September 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ( ডাকসু) বহুল প্রত্যাশিত নির্বাচনে ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্যানেল ভূমিধস জয় পেয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদেও (জাকসু) তারা অপ্রত্যাশিতভাবে শীর্ষ পদে জয়ী হয়েছে। বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ এই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রশিবির জিতেছে এটি যেমন সত্য, তার চেয়েও বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে—বাকিরা কি জিততে চেয়েছে?
চব্বিশের ৫ আগস্টের পর থেকে যখন থেকেই ডাকসুর কথা উঠেছে, তখন থেকেই ডাকসুতে শিবিরের প্রার্থী কারা হবে, তার একটা ধারণা পাওয়া যাচ্ছিল। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সাদিক কায়েমকে ‘অভ্যুত্থানের নেপথ্যের নায়ক’ হিসেবে দেশে-বিদেশে নানাভাবে এবং নানা সংবাদমাধ্যমের প্রচারণায় প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করা হয়। এভাবে শিবিরের ভিপি ও জিএস প্রার্থী হিসেবে সাদিক কয়েম ও এম এম ফরহাদের অবস্থানকে দৃশ্যমান করা হয়। শিবির দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তাদের প্রার্থীদের গ্রুমিং (পরিচর্যা) করেছে, নির্বাচনের সময়ে দলগতভাবে এবং প্রতিষ্ঠিত পিআর ব্যবহার করে প্রচারণা চালিয়েছে; নারী ও অমুসলিম শিক্ষার্থীদের প্যানেলে এনে একটি লিবারেল ভিউ (উদার দৃষ্টিভঙ্গি) তৈরির চেষ্টা করেছে।
আরও পড়ুনডাকসু নির্বাচন, ফলাফল ও তরুণ মনের চাওয়া১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫তবে আমি ডাকসুতে ছাত্রদলের সেই অর্থে পরাজয় দেখছি না। এটি স্পষ্ট, তাদের দীর্ঘ প্রস্তুতির ঘাটতি ছিল। মোট ভোট হিসাব করলে দেখা যায়, তারা প্রায় ২০ শতাংশ ভোট পেয়েছে। দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসের বাইরে থাকা এই ছাত্রসংগঠনের এই পরিমাণ ভোটকে আমি দেখি—বিধ্বস্ত এক জনপদে একটি মুকুল হয়ে ফুটে ওঠার মতো।
শিবিরের সাদিক কায়েম যখন ছাত্রলীগের সঙ্গে মিশে ‘নৌকা, নৌকা’ স্লোগান দিচ্ছিলেন, ফরহাদ যখন পরিচয় লুকিয়ে বিতার্কিক হচ্ছিলেন বা ছাত্রলীগ নেতার হাতে ফুল তুলে দিচ্ছিলেন, তখন ছাত্রদলের এই কর্মীরাই যতবার ক্যাম্পাসে কর্মসূচি দিয়েছেন, ততবার ছাত্রলীগের আক্রমণের শিকার হয়েছেন। নির্বাচনের সময়ে ছাত্রদল–সমর্থিত এই প্রার্থীদের বিনয় ছিল প্রশংসনীয়, যা ছাত্রদলের নতুন ভাবমূর্তি তৈরি করেছে। শিবির যেভাবে এক বছর আগেই প্রার্থী ঠিক করে পরিকল্পিতভাবে এগিয়েছে, ছাত্রদলের পক্ষে তা সম্ভব হয়নি। বরং নির্বাচনের ২০-২২ দিন আগে প্রার্থীরা জানতে পেরেছেন, কারা প্রার্থী হচ্ছেন। ডাকসুর মতো গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন ২০-২২ দিনের প্রস্তুতির বিষয় নয়।
তবে নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের (বাগছাস) নেতাদের। বাগছাসের ভিপি প্রার্থী আবদুল কাদের পেয়েছেন প্রদত্ত ভোটারের মাত্র ৩ দশমিক ৭ শতাংশ এবং তার অবস্থান ছিল পঞ্চম। অথচ দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী—উমামা ফাতেমা ও শামীম হোসেন—১৩ শতাংশের অধিক ভোট পেয়েছেন। অন্যদিকে বাগছাসের জিএস প্রার্থী আবু বাকের মজুমদার পেয়েছেন ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ ভোট; তিনিও পঞ্চম হন। স্বতন্ত্র প্রার্থী আরাফাত চৌধুরী বাকেরের তুলনায় দ্বিগুণ ভোট পেয়েছেন।
উমামা ফাতেমা গণ–অভ্যুত্থান থেকে উঠে আসা নেতৃত্ব; তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র ছিলেন। সেখান থেকে পরে তিনি পদত্যাগ করেন। ফলে পরবর্তী সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বা বাগছাসে তাঁকে দেখা যায়নি; এমনকি ডাকসুর মতো নির্বাচনে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যান্য শক্তি মিলে একটি জোট গঠন করার কথাও ভাবা হয়নি।
চব্বিশের জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সব ছাত্রসংগঠন ও মতের শিক্ষার্থীদের আনা হয়েছিল, কিন্তু ডাকসু নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাগছাস সেটি করতে পারেনি। তারা ‘ইনক্লুসিভ বাংলাদেশ’ বলার পরও প্যানেল গঠনে ইনক্লুসিভ হতে পারেনি। এজিএস পদে বাগছাসের প্রার্থী আশরেফা খাতুন ৯০০ ভোট পেলেও বিদ্রোহী প্রার্থী বাগছাসেরই আরেক নেতা তাহমীদ আল মুদ্দাসসীর চৌধুরী পেয়েছেন তিন হাজার আট ভোট। নিঃসন্দেহে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে সমন্বয়কদের নিয়ে নানা সমালোচনা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। তার প্রতিফলন দেখা গেছে ব্যালটে।
বাগছাসের নেতৃত্বের মধ্যে আবু বাকের ছিলেন ক্যাম্পাসের জনপ্রিয় মুখ। গণ–অভ্যুত্থানে তাঁর অবদানও অনস্বীকার্য। টিভি চ্যানেলে টক শোর ফলে তিনি আরও পরিচিতি লাভ করেন। বেশ কয়েকটি টক শোতে তাঁর বক্তব্য শুনেছি—প্রায় একই ধরনের বক্তব্য। সেখানে অন্য ছাত্রসংগঠনের সমালোচনাই প্রাধান্য পেয়েছে। আবু বাকেরের টক শো বক্তব্য শুনে মনে হয়েছিল, তাঁরা কোথায় ভাঙতে হবে জানেন, কিন্তু কীভাবে গড়ে তুলবেন, তা জানেন না। একটি দলের নৈতিক বা রাজনৈতিক মতবাদ পরিষ্কার না হলে মানুষ কেন তাঁকে ভোট দেবেন?
এই ডাকসু নির্বাচন একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে, তিনি হলেন মেঘমল্লার বসু। যেখানে বামদের ভোট ৫০০ও হয় না বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নানা প্রচারণা চালানো হয়, সেখানে তিনি প্রায় ৫ হাজার ভোট পেয়েছেন। মেঘমল্লার শিক্ষার্থীদের আস্থা নিয়েই প্রায় ২০ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।
সাদিক কায়েম সব হলে ভালো ভোট পেলেও জগন্নাথ হলে তিনি কেবল ১০টি ভোট পেয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই শিবিরকে নিয়ে সংখ্যালঘুদের অবস্থানটি এখানে পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়। এই হলে ছাত্রদল–সমর্থিত আবিদ ১ হাজার ২৭৬ ভোট পেয়েছেন। এটি নির্দেশ করে না যে ছাত্রদল দিনে দিনে সংখ্যালঘুদের আস্থা অর্জন করেছে। ভিপি পদে যদি ছাত্রলীগ বা কোনো জনপ্রিয় বাম নেতা নির্বাচন করতেন, আবিদ জগন্নাথ হলে এই ভোট পেতেন কি না, সেটি সন্দেহের অবকাশ রাখে।
সার্বিকভাবে ডাকসু নির্বাচনকে শিবিরের ভূমিধস জয়ের চেয়ে বিরোধীদের অনৈক্যের পরাজয় বলে দেখা শ্রেয়। ভিপি পদে সাদিক কায়েম ১৪ হাজার ৪২ ভোট পেলেও আবিদুল ইসলাম, শামীম হোসেন ও উমামা ফাতেমার ভোট যোগ করলে সাদিক জিততে পারতেন না। অন্যদিকে জিএস পদে শিবিরের এস এম ফরহাদ ১০ হাজার ৭৯৪ ভোট পেয়েছেন। ছাত্রদলের তানভীর বারী হামিম ও বাম সংগঠনদের প্রার্থী মেঘমল্লারের ভোট যোগ করলে ফরহাদের জয় আটকানো যেত হয়তো। অর্থাৎ ভোটের সমীকরণ এমন, বাগছাসের সঙ্গে জোট না করেও শিবিরকে হারানো যেত।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা হিসেবে পাঁচ বছর সাংবাদিকতা করার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, হাসিনা সরকারের আমলে ছাত্রদলের বেশ কয়েকটি পরিচিত মুখ বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে নিয়মিত মিছিল-মিটিং করে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতেন। তাঁরা মিডিয়ায় প্রচার পেতে আমাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। তাঁদের অনেকে ক্যাম্পাসে ভার্চ্যুয়ালি জনপ্রিয়ও হয়ে উঠেছিলেন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি আলাদা; কিন্তু জাহাঙ্গীরনগরেও মনে হয়েছে, ছাত্রদল নিজেই হয়তো জিততে চায়নি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা হিসেবে পাঁচ বছর সাংবাদিকতা করার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, হাসিনা সরকারের আমলে ছাত্রদলের বেশ কয়েকটি পরিচিত মুখ বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে নিয়মিত মিছিল-মিটিং করে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতেন। তাঁরা মিডিয়ায় প্রচার পেতে আমাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। তাঁদের অনেকে ক্যাম্পাসে ভার্চ্যুয়ালি জনপ্রিয়ও হয়ে উঠেছিলেন।
কিন্তু ৫ আগস্ট–পরবর্তী সময়ে ছাত্রদলের কমিটি হওয়ার পর দেখা গেল, সেই পরিচিত মুখগুলো প্রায় কোণঠাসা। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি হওয়ার পর এ সময়জুড়ে ছাত্রদল আলোচনায় ছিল: এক গ্রুপ অন্য গ্রুপকে ‘মাইনাস’ করা, কোণঠাসা করা, গোপন চ্যাট ফাঁস করা, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া—এসব নিয়ে। এ ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতি নিয়ে নতুন বাংলাদেশে জনপ্রিয় ছাত্রসংগঠন হিসেবে টিকে থাকা অসম্ভব।
ছাত্রদলের অনেকের ক্যাম্পাসে জনপ্রিয়তা থাকলেও অদৃশ্য কারণে তাঁদের জাকসু নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে দেখা যায়নি। ছাত্রদলের এক তরুণ নেতা জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে সক্রিয় থাকার কারণে সর্বমহলে জনপ্রিয় হয়েছিলেন। খসড়া ভোটার তালিকায় তাঁর নাম থাকলেও চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় তাঁর নাম ছিল না।
আরও পড়ুনশিবিরের এই সাফল্য জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতকে সুবিধা দেবে কি১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫এ ছাড়া নির্বাচনের আগমুহূর্তে হঠাৎ বামপন্থী তরুণ নেতা অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়। এতে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। ক্যাম্পাসে অমর্ত্য রায়ের ফ্যাসিবাদবিরোধী দীর্ঘ লড়াইয়ের ইতিহাস আছে। আরেক তরুণ ছাত্রদল কর্মী, যিনি ছাত্রলীগকে বিতাড়িত করে ক্যাম্পাসে পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছিলেন, তাঁকে তাঁর বাবার রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে ভিপি প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। বাবার রাজনৈতিক আদর্শের ভিত্তিতে সন্তানের পদ নির্ধারণ করলে বিএনপির অনেকে আজকে কি বড় নেতা হতে পারতেন?
জাহাঙ্গীরনগরে বামপন্থী সংগঠন ও সাংস্কৃতিক জোট নেতৃত্ব এক হয়ে বেশ কয়েকটি বৃহৎ আন্দোলন সফল করেছে এবং জাকসুর পক্ষে দীর্ঘদিন ধরে জনসমর্থন আদায় করেছে, অথচ নির্বাচনে তারা অন্তত চারটি প্যানেলে বিভক্ত হয়ে যায়। ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ একটি প্যানেল দেয়। ছাত্র ইউনিয়নের অপরাংশ ও ছাত্রফ্রন্টের একাংশ মিলে অন্য একটি প্যানেল গঠন করে। ছাত্রফ্রন্টের আরেক অংশ পৃথক একটি প্যানেল করে।
অন্যদিকে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট অন্য একটি প্যানেলকে সমর্থন দেয়। অথচ বিপরীতে শিবির ছাড়াও অন্যান্য ইসলামি ছাত্রসংগঠনের কর্মী বা মতাদর্শের লোকদের একজোট হয়ে শিবিরের পক্ষে প্রচারণা করতে দেখা গেছে। শিবিরের প্রার্থীরা সেভাবে ক্যাম্পাসে পরিচিত মুখ না হলেও গণ-অভ্যুত্থানের পর ক্যাম্পাসে পরিকল্পিত রাজনীতির কারণে জিতে এসেছেন।
জাকসুতে ভিপি পদে যিনি জিতেছেন—আবদুর রশিদ জিতু, তিনি একসময় ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষে অবস্থান নিয়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ৫ আগস্টের পর তিনি মাঠ ছেড়ে দেননি। নিজের রাজনীতি তৈরি করেছেন, রাজনৈতিক মিত্রতা তৈরি করেছেন, মিডিয়ায় পরিচিত হয়েছেন। কিন্তু ৫ আগস্টের পর ছাত্রদলের নেতারা মনে করেছেন, তাঁদের কাজ শেষ, নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। অ্যাকটিভিজম ও ইলেকটোরাল পলিটিকসের পার্থক্য তাঁরা বুঝতে পারেননি। রাজনৈতিক মিত্রতা তৈরির চেয়ে তাঁরা একে অপরের বিরুদ্ধে লেগেছেন। ফলে তৃতীয় পক্ষ মাঠে এসে গোল করেছেন।
জাহাঙ্গীরনগর ছাত্রদলের রাজনীতিতে শুধু অন্তর্দ্বন্দ্ব নেই, বরং শিক্ষক রাজনীতির সরাসরি হস্তক্ষেপও লক্ষ করা যায়। বেশ কয়েকজন বিএনপিপন্থী শিক্ষক মিলে ছাত্রদলের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছেন, যাতে হীতে বিপরীত হয়েছে।
ফলে ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে শিবিরের এই উত্থানের জন্য শিবিরকে কৃতিত্ব না দিয়ে বরং বাকি রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে দায়ী করা উচিত। আপনি মাঠে রাজনীতি করবেন না, নিজেরা নানা দলে-উপদলে বিভক্ত হবেন, বিপদের বন্ধুদের ভুলে গিয়ে সবকিছুতে নিজের ‘মাই ম্যান’কে নেতা বানাবেন, আর আপনার ব্যর্থতার জন্য হাহাকার করবেন—এটি কোনো বাস্তবসম্মত সমাধান নয়। ৫ আগস্টের পর ছাত্ররাজনীতির প্যাটার্ন বদলেছে। অপর দলকে ‘ওয়াশিং’ করে নিজ দলের কর্মীদের উজ্জীবিত রাখা যায়; কিন্তু জনসমর্থন পেতে হলে শিক্ষার্থীবান্ধব কর্মসূচিতে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখতে হবে, লম্বা রেসের ঘোড়া হতে হবে।
মেঘমল্লার বা হামিমরা সেই রাজনীতির প্যাটার্ন বা ধরন বুঝতে পারছে। এর সুফল তাঁরাও পেয়েছেন। রাজনীতির প্যাটার্ন যদি উপলব্ধি না করেন, আপনি ছিটকে পড়বেন।
শাহাদাৎ স্বাধীন গবেষক ও কলামিস্ট
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ৫ আগস ট র পর পর চ ত ম খ ম ঘমল ল র ছ ত রদল র র জন ত ক র র জন ত র জন ত র জনপ র য় অবস থ ন কর ছ ন র অন ক জ এস প ফরহ দ সমর থ স গঠন
এছাড়াও পড়ুন:
জাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের শপথে ভাঙল ৩ দশকের অচলায়তন
দীর্ঘ ৩৩ বছরের অচলায়তনের অবসান ঘটিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদের (জাকসু) আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব নিয়েছে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা।
বৃহস্পতিবার (১৮সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শুরু হয়। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের শপথ বাক্য পাঠ করান উপাচার্য ও জাকসুর সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান।
আরো পড়ুন:
অব্যবহৃত ও অতিরিক্ত ব্যালট ফেরত নেওয়া হয়েছে: জাকসু নির্বাচন কমিশন
জাকসুর ২৫ পদের ২০টিতেই শিবিরের জয়
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব অধ্যাপক রাশিদুল আলম বলেন, “জাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল, তবে প্রচেষ্টা ছিল সুষ্ঠু জাকসু বাস্তবায়নের। যারা বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ করছেন মিডিয়ায়, তাদের চ্যালেঞ্জ করে বলতে চাই, আমাদের কাছে ভোটগ্রহণের সব ফুটেজ আছে। আমরা যে কাউকে তা দেখাতে প্রস্তুত।”
তিনি বলেন, “যেকোনো ব্যক্তির সম্মানের চেয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান বড়। আমি আশা করব, যদি কেউ ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানহানির চেষ্টা করে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অংশীজন মিলে আমরা তা প্রতিহত করব।”
এটাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহসের অন্যতম সুষ্ঠু ছাত্র সংসদ নির্বাচন দাবি করে উপ-উপাচার্য প্রশাসন অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, “আমরা গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘদিন সংগ্রাম করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র চর্চার ধারা তৈরি হয়েছে। আমি আশাবাদী তোমাদের (নির্বাচিত প্রতিনিধিরা) ওপর য়ে দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে, তা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবে।”
শপথ গ্রহণ পরবর্তী বক্তব্যে নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, “এই বিজয়ের দাবিদার আমাদের চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের শহীদেরা। যারা তাদের বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে স্বাধীনতা ফিরিয়ে এনেছে। জাকসু নির্বাচনের পেছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীর অবদান আছে। তারা বিভিন্ন ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে নিজেদের অধিকার ফিরিয়ে এনেছে। আমি এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি জাকসুর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিটি অংশীজন উপকৃত হবেন।”
এসময় জাকসুর নবনির্বাচিত সহ-সভাপতি আবদুর রশিদ জিতু বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আমি ধন্যবাদ দিতে চাই, তারা সব ধরনের চাপকে মোকাবেলা করে জাকসু নির্বাচন দিতে সক্ষম হয়েছেন। ৩৩ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো নির্বাচন বন্ধ ছিল না। কেবল ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ ছিল। তবে আমরা সবাইকে আমন্ত্রণ জানাই আসুন আমরা সবাই মিলে জাহাঙ্গীরনগরের স্বার্থে কাজ করি।”
জাবি উপাচার্য ও জাকসুর সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, “বাংলাদেশের গণতন্ত্র হারিয়ে গিয়েছিল। তার পুণরুদ্ধার শুরু হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে; জাকসু ও ডাকসু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অংশীজনকে ধন্যবাদ দিতে চাই, যারা এই নির্বাচন বাস্তবায়নে সহায়তা করেছে।”
ঢাকা/আহসান/মেহেদী