মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশের বিষয় নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইসকে ডেকে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে।

২০২১ সালের পর মিয়ানমার থেকে আর কোনও রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেনি, এমন দাবি করে ইউএনএইচসিআর-এর প্রকাশিত প্রতিবেদনকে মিথ্যা তথ্য বলে আখ্যায়িত করেছে বাংলাদেশ।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালের পর মিয়ানমার থেকে আর কোনও রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেনি এবং বাংলাদেশে রোহিঙ্গারা ‘পরিকল্পিতভাবে’ অবস্থান করছে বলে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া, থাইল্যান্ডের সীমান্তে কিছু রোহিঙ্গা খণ্ডকালীনভাবে অবস্থান করছে বলেও দাবি করা হয়েছে। 

সোমবার (১৩ জানুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনায় অংশ নেন মিয়ানমার ও জাতিসংঘ অনুবিভাগের মহাপরিচালক ফেরদৌসী শাহরিয়ার এবং তৌফিক হাসান।

বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গোয়েন লুইসকে জানায়, এই ধরনের তথ্য সঠিক নয় এবং এর কোনো ভিত্তি নেই। আবাসিক প্রতিনিধি নিজেও এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন, প্রতিবেদনটি মিয়ানমারের ইউএনএইচসিআর দ্বারা প্রকাশিত, বাংলাদেশের ইউএনএইচসিআর দ্বারা নয়।

এদিকে, সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর মিয়ানমার থেকে ৬০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশের ইউএনএইচসিআর সরকারকে ওই রোহিঙ্গাদের তালিকা দিয়েছে এবং তাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন করানোর জন্য চাপ দিচ্ছে। তবে ইউএনএইচসিআর-এ সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনে ২০২১ সালের পর রোহিঙ্গা প্রবেশের বিষয়ে কোনো উল্লেখ নেই।

এ ঘটনায় বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কাজ করতে আগ্রহী বলে জানিয়েছে।

ঢাকা/হাসান//

.

উৎস: Risingbd

এছাড়াও পড়ুন:

অকার্যকর সিসি ক্যামেরা, পানি নেই ছয় মাস

কুড়িগ্রাম জেলা শহরের ধরলা সেতু-সংলগ্ন পুলিশ চেকপোস্টে ৬ মাস ধরে নেই পানির ব্যবস্থা। অকার্যকর হয়ে আছে নিরাপত্তায় ব্যবহার করা ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা। দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের শৌচাগারও ব্যবহারের অনুপযোগী। শহরের গুরুত্বপূর্ণ এই চেকপোস্ট এভাবে পড়ে থাকলেও টনক নড়েনি জেলা পুলিশ কর্তৃপক্ষের। 

সরেজমিন দেখা যায়, চেকপোস্টের সামনে ভেঙে পড়ে আছে ব্যারিকেড দেওয়ার যন্ত্র। আশপাশে লাগানো সচেতনতামূলক বিলবোর্ডগুলোও উধাও। ভ্যাপসা গরমে চেকপোস্টের ভেতরে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা রীতিমতো ঘামছেন। তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে পানি নেই। বিদ্যুৎ লাইনে সমস্যা। পাম্প চালু করলেও পানি ওঠে না। খাবার পানিসহ প্রয়োজনীয় কাজের জন্য বাইরের চায়ের দোকান থেকে জগে করে পানি এনে রাখতে হয়। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে কয়েকবার ৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মূল থানায় যেতে হয়। এতে গুরুত্বপূর্ণ অপরাধমূলক কাজ প্রতিরোধে অভিযান বা তল্লাশিতে বিঘ্ন ঘটে। 

পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মাদক কেনাবেচা, যৌন হয়রানি ও ছিনতাই রোধ, দুর্ঘটনায় আহত যাত্রীদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা, সীমান্ত থেকে অবৈধ চোরাচালান বন্ধসহ নিরাপত্তার স্বার্থে ধরলা সেতু এলাকায় পুলিশ চেকপোস্ট বসানো হয়। ওই সময় আশপাশের নিরাপত্তার জন্য ৪টি ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা বসানো হয়। অপরাধ দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে চেকপোস্টগুলো। 

২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর চেকপোস্ট থেকে চেয়ার-টেবিল, আসবাব লুটপাট ও ভাঙচুর করা হয়। এর পর থেকে সেভাবেই পড়ে আছে জননিরাপত্তার স্বার্থে নির্মিত এই পুলিশ চেকপোস্ট। ২০২১ সালে পাশের একটি দোকান থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়া হলেও বিল পরিশোধে গড়িমসি করায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। দ্বিতীয় দফায় আরেকটি দোকান থেকে সংযোগ নেওয়া হয়। সেই বিল পরিশোধেও উদ্যোগ নেই। নানা সমস্যায় জর্জরিত চেকপোস্টে ৫ জন পুলিশ সদস্য প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা ডিউটি করছেন।

চেকপোস্টের পাশের চায়ের দোকানদার মো. কাওসার বলেন, চেকপোস্টটা চালু থেকেই আলাদা বিদ্যুতের মিটার লাগানো হয়নি। আমার কাছ থেকে সংযোগ নেওয়া হয়। এতে অনেক বিল বকেয়া পড়ে। পরে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। 

ব্যবসায়ী মো. বিদ্যুৎ বলেন, ‘৫ মাস হলো চেকপোস্টে দোকান থাকি লাইন দিছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিলের টাকা দেয়নি। টাকা চাইলে বলে, স্যারের সাথে দেখা করো। আমরা ভয়ে টাকা চাইতে যাইতে পারি না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘রাতের বেলা ডিউটি করতে কষ্ট হয়। আলোর অভাবে ঠিকমতো তল্লাশি করা যায় না। সিসি ক্যামেরা নষ্ট। স্যারদের অনেকবার বলা হয়েছে। কোনো লাভ হয়নি।’

পুলিশ চেকপোস্টে নিয়োজিত ইনচার্জ মো. নওশাদ আলী বলেন, বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে সিসি ক্যামেরা চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। ছয় মাস ধরে পানি নেই। কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, বাজেট এলে সব মেরামত করা হবে।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, ধরলা সেতুর চেকপোস্ট কিশোর অপরাধ দমনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অথচ এখানে পানির সমস্যা, সিসি ক্যামেরা নেই। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুলিশ সদস্যদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিষয়টি এসপি স্যারকে জানানো হবে। 

জেলা পুলিশের মিডিয়া অফিসার বজলার রহমান বলেন, বিষয়গুলো আপনার মাধ্যমে অবগত হলাম। দ্রুত সমস্যাগুলো সমাধান করা হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অকার্যকর সিসি ক্যামেরা, পানি নেই ছয় মাস