ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে আসে ৫৬% রেমিট্যান্স
Published: 16th, January 2025 GMT
ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগোষ্ঠীকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আনা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের সহজতম মাধ্যম হচ্ছে এজেন্ট ব্যাংকিং। ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের রয়েছে সফলতার ইতিহাস। বাংলাদেশ ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু করার জন্য ২০১৩ সালে প্রথম এজেন্ট ব্যাংকিং নীতিমালা জারি করে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালে বাংলাদেশে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু হয়।
ইসলামী ব্যাংক শুরুতে পরীক্ষামূলকভাবে পাঁচটি আউটলেট খোলার অনুমতি পায়। রেগুলেটরি কমপ্লায়েন্স পালন করে ইসলামী ব্যাংক ২০১৭ সালে ঢাকা জেলার সাভারের বিরুলিয়ায় পরীক্ষামূলকভাবে ব্যাংকের প্রথম এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে। কার্যক্রম শুরুর সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ব্যাপক সাড়া পেয়ে ব্যাংকটি আউটলেট বাড়াতে থাকে। আট বছরের মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট আউটলেটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৮৩টি, যা বর্তমানে দেশের মোট এজেন্ট আউটলেটের ১৩ শতাংশ। বর্তমানে ৩১০টি শাখার আওতায় এ বিপুল সংখ্যক আউটলেট পরিচালিত হচ্ছে।
দেশের সর্বদক্ষিণ জনপদ সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন চরাঞ্চল যেমন– উড়িচর, মনপুরা, দ্বীপ যেমন– হাতিয়া, সন্দ্বীপ ও সুন্দরবন, পাহাড়ি অঞ্চলের বাঘাইছড়ি উপজেলাসহ বিভিন্ন দুর্গম অঞ্চলে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংক সেবা পৌঁছে দিচ্ছে। বর্তমানে দেশের ৪৭২টি উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৫০ লাখ গ্রাহক ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে যুক্ত। এ হিসাবগুলোতে মোট জমার পরিমাণ ১৬ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা। ২০২৪ সালে ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট আউটলেট ২ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করে।
এজেন্ট আউটলেটে গ্রাহক হিসাব খোলা, টাকা জমা-উত্তোলন, রেমিট্যান্সের অর্থ প্রদান, বিদ্যুৎ বিল জমা, অ্যাকাউন্ট ব্যাল্যান্স জানা ও সংক্ষিপ্ত বিবরণী প্রদান, ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা, চেক বই, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড, ক্লিয়ারিং চেক ও ঋণের আবেদন গ্রহণ, বিতরণ ও কিস্তি সংগ্রহ সুবিধাসহ সব ধরনের সুবিধা পাচ্ছেন। অর্থাৎ আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুমোদিত প্রায় সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা এজেন্ট আউটলেটে দেওয়া হয়।
ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট আউটলেটের মাধ্যমে ক্ষুদ্র বিনিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। ব্যাংকটি ইতোমধ্যে ১৩৮টি এজেন্ট আউলেটে বিনিয়োগ কার্যক্রম শুরু করেছে। ২০২৪ সালে এজেন্ট আউটলেটের মাধ্যমে ৩৬৫ কোটি টাকা নতুন বিনিয়োগ বিতরণ করা হয়। বিনিয়োগ আদায়ের হার প্রায় ৯৯ শতাংশ। বর্তমানে এ মাধ্যমে বিতরণ করা বিনিয়োগের বর্তমান স্থিতি প্রায় ৪০০ কোটি টাকা।
ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট আউটলেটের মাধ্যমে এসএমই বিনিয়োগ সম্প্রসারণসহ নানা জনকল্যাণমূলক বিনিয়োগ পরিকল্পনা নিয়েছে। কৃষি ও অকৃষি খাতে সব ধরনের বৈধ ও ইসলামী শরিয়াহ অনুমোদিত ব্যবসায় মোট ৩২০ প্রকারের পণ্যে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এসএমই বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া বিনিয়োগ কার্যক্রমের পাশাপাশি শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্য, ত্রাণ ও পুনর্বাসন এবং পরিবেশ সংরক্ষণ খাতে বিভিন্ন কল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করার পরিকল্পনা নিয়েছে।
এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে রেমিট্যান্স আহরণেও ইসলামী ব্যাংক শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। ২০২৪ সালে এ সেবার মাধ্যমে ১৭ হাজার কোটি টাকা রেমিট্যান্স সংগ্রহ ও বিতরণ করা হয়েছে, যা দেশে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আহরিত রেমিট্যান্সের ৫৬ শতাংশ। ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট আউটলেট রেমিট্যান্স সংগ্রহ ও বিতরণের মাধ্যমে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছে।
বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে দেড় লাখ গ্রাহক ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট আউটলেটের মাধ্যমে সেবা নিচ্ছেন। পিওএসের মাধ্যমে নগদ টাকা উত্তোলন, আই-ব্যাংকিং রেজিস্ট্রেশন, সেলফিনের মাধ্যমে ক্যাশ-ইন ক্যাশ-আউট, আরটিজিএস ও এটিএমের মাধ্যমে লেনদেন ইত্যাদি বহুমুখী সেবা দেওয়া হচ্ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘরের পাশে ব্যাংকের সব সুবিধা নিয়ে ব্যয় সাশ্রয়ী ব্যাংকিং সেবাও ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ।
স্থান গুরুত্ব বিবেচনায় ব্যাংকটির অনেক এজেন্ট আউটলেটের সঙ্গে এটিএম বুথের ব্যবস্থা থাকায় গ্রাহকদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেড়ে গেছে। এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব নিয়মকানুন মেনে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রাহক সেবা দিয়ে যাচ্ছে। যেমন বাংলা কিউ আর কোডের মাধ্যমে সেবা নিশ্চিত করা, গ্রাহকদের শতভাগ ডিজিটাল কানেক্টিভিটি, ফাস্ট মুভিং কনজুমার গুডস কোম্পানি ও অন্যান্য কোম্পানির এপিআইকেন্দ্রিক অনলাইন লেনদেনের উদ্যোগসহ বিভিন্ন প্রকল্প এজেন্ট ব্যাংকিং গ্রাহকদের মাঝে জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ। তা ছাড়া টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশনের মাধ্যমে লেনদেন নিশ্চিতকরণ, জাতীয় পরিচয়পত্র, ওটিপি ও বায়োমেট্রিক ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে গ্রাহকের আমানত ও লেনদেন শতভাগ নিরাপদ করায় গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসল ম ব য ক ব ল দ শ ল ম ট ড গ র হকদ র ব তরণ ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
দলগুলো একমত হলে বর্ষপূর্তিতেই ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ
ছাত্র গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪-এর উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হবে। বিশেষ করে নির্বাচিত সরকারের সংস্কার করা সংবিধানের প্রস্তাবনায় এই স্বীকৃতির উল্লেখ থাকবে। এ ছাড়া সংবিধানের তফসিলেও ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ সংযুক্ত থাকবে। এ ঘোষণাপত্র ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে কার্যকর বলে ধরে নেওয়া হবে।
বহুল আলোচিত জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়ায় এ কথাগুলো বলা হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে অন্যতম আলোচিত বিষয় এই ঘোষণাপত্র। অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি সামনে রেখে সম্প্রতি জুলাই ঘোষণাপত্রের চূড়ান্ত খসড়া বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বিভিন্ন দলকে পাঠিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। দলগুলোর সবুজ সংকেত পেলে অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতেই ঘোষণা করা হতে পারে জুলাই ঘোষণাপত্র।
ঘোষণাপত্রের খসড়ায় ২৬টি দফা রয়েছে। প্রথম ২১ দফায় মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশের মানুষের অতীতের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম থেকে শুরু করে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকট মোকাবিলায় গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত জনগণের সার্বভৌমত্বের প্রত্যয় ও প্রয়োগ রাজনৈতিক এবং আইনি উভয় দিক থেকে যুক্তিসংগত, বৈধ ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।’
আরও পড়ুনমৌলিক সংস্কারের সব বিষয়ে মতৈক্য হয়নি ৫ ঘণ্টা আগেপরের পাঁচটি দফায় রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা, আওয়ামী লীগ শাসনামলে গুম-খুন, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও সব ধরনের নির্যাতন-নিপীড়ন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুণ্ঠনের অপরাধের দ্রুত উপযুক্ত বিচার, আইনের শাসন ও মানবাধিকার, দুর্নীতি, শোষণমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে।
খসড়া ঘোষণাপত্রে শেখ মুজিবুর রহমান সরকারের প্রতিষ্ঠিত বাকশাল বা একদলীয় শাসনব্যবস্থার সমালোচনা করা হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর দেশে সিপাহি জনতার ঐক্যবদ্ধ বিপ্লব সংঘটিত হয় বলে ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়। নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের কথা যেমন এতে উল্লেখ রয়েছে, পাশাপাশি এক-এগারোর ‘ষড়যন্ত্রমূলক বন্দোবস্তের’ কড়া সমালোচনাও ঘোষণাপত্রে আছে।
জনগণের লড়াইকে সমর্থন দেয় সামরিক বাহিনীঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসন, পিলখানা ট্র্যাজেডি, শাপলা চত্বরে গণহত্যার মতো আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম-খুন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, একদলীয় স্বার্থে সংবিধান সংশোধন ও পরিবর্তন বাংলাদেশের সব রাষ্ট্রীয় এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি চরম গণবিরোধী, একনায়কতান্ত্রিক ও মানবাধিকার হরণকারী শক্তি বাংলাদেশকে একটি ফ্যাসিবাদী, মাফিয়া ও ব্যর্থ রাষ্ট্রের রূপ দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে।
অবৈধভাবে ক্ষমতা অব্যাহত রাখতে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার তিনটি প্রহসনের নির্বাচনে (২০১৪, ’১৮ ও ’২৪) দেশের মানুষকে ভোটাধিকার ও প্রতিনিধিত্ব থেকে বঞ্চিত করে বলেও জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়ায় উল্লেখ রয়েছে। বলা হয়, তথাকথিত উন্নয়নের নামে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকারের নেতৃত্বে সীমাহীন দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, অর্থ পাচার ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের মধ্য দিয়ে বিগত পতিত দুর্নীতিবাজ আওয়ামী সরকার বাংলাদেশ ও এর অমিত অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে বিপর্যস্ত করে তোলে এবং এর পরিবেশ-জলবায়ু ও প্রাণবৈচিত্র্য বিপন্ন করে।
খসড়া ঘোষণাপত্রে আরও বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ৯ দফা দাবি ঘোষণা করে, যা পরে ১ দফায় রূপান্তরিত হয়। আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা জনগণের গণতান্ত্রিক লড়াইকে সমর্থন দেন। তীব্র আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে গণভবনমুখী জনতার উত্তাল যাত্রার মুখে অবৈধ, অনির্বাচিত, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট (২০২৪) পদত্যাগ করেন এবং তিনি মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।