ছবি ছাড়া আইডি কার্ডসহ ৩ দাবি ইবির পর্দানশীন নারীদের
Published: 19th, January 2025 GMT
পর্দানশীন নারীদের ধর্মীয় ও গোপনীয়তার অধিকার অক্ষুন্ন রেখে নাগরিকত্ব প্রদানসহ তিন দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) নারী শিক্ষার্থীরা।
রবিবার (১৯ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে শতাধিক পর্দানশীন ছাত্রী এ কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় দাবি আদায়ে জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে এক সপ্তাহের আলটিমেটাম দেন তারা।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, পর্দানশীন নারীদের নাগরিকত্ব না দেওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধ। পর্দানশীন নারীদের ১৬ বছর ধরে নাগরিকত্ব না দেওয়ার প্রতিবাদে এবং এর সঙ্গে জড়িত স্বৈরাচারদের শাস্তির দাবিতে আমরা আজ এখানে সমবেত হয়েছি। গত ১৬ বছর ধরে ইসির কতিপয় স্বৈরাচারী কর্মকর্তা শুধু মুখচ্ছবির অজুহাতে পর্দানশীন নারীদের নাগরিকত্ব আটকে রেখেছে, যা এক প্রকার মানবতাবিরোধী অপরাধ। যারা পর্দানশীন নারীদের এ মানবাধিকার হরণ করেছে, আমরা তাদের বিচার চাই।”
তারা আরো বলেন, নাগরিকত্ব ছাড়া পর্দানশীন নারীরা মৌলিক ও নাগরিক অধিকার হারিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। এছাড়া ওয়ারিশসূত্রে প্রাপ্ত জমি বিক্রি করতে পারছেন না। অথচ সম্পত্তি বিক্রি করতে পারলে তিনি চিকিৎসার খরচ বহন করতে পারতেন। এতে অনেক পর্দানশীন নারী অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন। অনেক বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা পর্দানশীন নারী এনআইডির অভাবে ত্রাণ নিতে পারছেন না, বাসাভাড়া নিতে পারছেন না এবং তাদের বাচ্চাদের স্কুলে ভর্তি করাতে পারছেন না। পর্দার সঙ্গে কোন চাকরি করে জীবন নির্বাহ করতে পারছেন না।
পর্দানশীন শিক্ষার্থীরা বলেন, গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মূল লক্ষ্য ছিল বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা। গত ১৬ বছর শুধু পরিপূর্ণ পর্দা করার কারণে নারীদের সঙ্গে যে বৈষম্য হয়েছে, আমরা তার সমাপ্তি চাই। অবিলম্বে পর্দানশীন নারীদের ধর্মীয় ও গোপনীয়তার অধিকার অক্ষুন্ন রেখে এনআইডি প্রদান করা হোক।
পর্দানশীন শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, এনআইডির মুখচ্ছবি পরিবর্তনযোগ্য। এ থেকে প্রমাণিত হয়, মুখচ্ছবি পরিচয় যাচাইয়ের নির্ভরযোগ্য মাধ্যম নয়। এ সমস্যা সমাধানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অপরাধী শনাক্তে ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রযুক্তির আশ্রয় নিচ্ছেন। যেমন- র্যাব ওআইভিএস প্রযুক্তি, সিআইডি এএফআইএস প্রযু্ক্তি ব্যবহার করছেন।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, পর্দানশীন মহিলাদের এনআইডি প্রদানে আইনেও কোন বাধা নেই। বিশেষ করে, পরিচয় নিবন্ধন আইন ২০১০ এবং ২০২৩-এ পরিচয় সনাক্তে চেহারার ছবির কথা উল্লেখ নেই। এমনকি বায়োমেট্রিক যাচাইয়ে ফেসিয়াল রিকগনিশনকেও বাধ্যতামূলক করা হয়নি। কিন্তু তারপরও স্বৈরাচারী মনোভাব থেকেই পর্দানশীন নারীদের নাগরিকত্ব বঞ্চিত করে রেখেছিল সাবেক ইসি কর্মকর্তারা।
এ সময় তারা প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর তিনটি দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো- পর্দানশীন নারীদের ধর্মীয় ও গোপনীয়তার অধিকার অক্ষুন্ন রেখেই এনআইডি প্রদান করতে হবে; বিগত ১৬ বছর যাবত পর্দানশীন নারীদের মানবাধিকার হরণ করা ইসি কর্মকর্তাদের বিচার করতে হবে; পর্দানশীন নারীদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়ায় মহিলা অফিস সহকারী বাধ্যতামূলক করতে হবে।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে এক সপ্তাহের আলটিমেটাম দেন। আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে তাদের দাবিগুলো না মানলে দেশজুড়ে আন্দোলন শুরু করা হবে।
ঢাকা/তানিম/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
শেরপুর নির্বাচন অফিসে রোহিঙ্গা আটক
শেরপুর ভুয়া নাম-পরিচয় ব্যবহার করে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) করতে গিয়ে এক রোহিঙ্গা আটক হয়েছেন। সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আটকের পর তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছেন জেলা নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তারা।
আটক ব্যক্তির নাম মো. আমিন। তিনি কক্সবাজারের উখিয়ার টাংহালি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা। তার বাবার নাম জাহিদ হোসেন।
আরো পড়ুন:
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্থায়ী প্রত্যাবাসনে ‘বাস্তব পদক্ষেপ’ চায় ওআইসি
৪০ দেশের প্রতিনিধিদের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, আলম মিয়া নাম ব্যবহার করে উখিয়ার টাংহালি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক ব্যক্তি এনআইডি করতে শেরপুর জেলা নির্বাচন অফিসে আবেদন করেন। সেখানে তিনি বাবার নাম আলী হোসেন উল্লেখ করেন এবং শেরপুর পৌরসভার কসবা মোল্লাপাড়া ও শিবুত্তর এলাকার বাসিন্দা হিসেবে দাবি করেন। কথাবার্তা ও নথিপত্র যাচাইয়ের সময় সন্দেহ হলে কর্মকর্তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ সময় ওই ব্যক্তি নিজেকে রোহিঙ্গা বলে স্বীকার করেন।
শেরপুরের অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “তার কাগজপত্র দেখে আমাদের সন্দেহ হয়। তার ভাষাগত বিষয়টি আমাদের নজরে আসে। জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি নিজেকে রোহিঙ্গা বলে স্বীকার করেন।”
আটক মো. আমিন বলেন, “আমি কক্সবাজারের উখিয়ার টাংহালি ক্যাম্পে থাকি। এ দেশের নাগরিক হওয়ার আশায় ভোটার আইডি কার্ড করতে শেরপুরে এসেছিলাম। কাজের জন্য পরিচয়পত্র পেলে সুবিধা হবে ভেবেই আলম নামে আবেদন করেছি।”
শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, “রোহিঙ্গা ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার সঙ্গে স্থানীয় কেউ জড়িত কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আইনগত ব্যবস্থা চলমান।”
ঢাকা/তারিকুল/মাসুদ