সাত দিনের জন্য মহাশূন্যে গিয়ে সাত মাসের জন্য আটকে গেলেন যে নভোচারী
Published: 22nd, January 2025 GMT
মাত্র এক সপ্তাহের এক অভিযানে পরিকল্পনা নিয়ে মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের নভোচারী সুনীতা 'সুনি' উইলিয়ামস। বিভিন্ন যান্ত্রিক ত্রুটির ফেরে সেই এক সপ্তাহের সফর এসে ঠেকেছে সাত মাসে- এবং এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না কবে বাড়ি ফিরতে পারবেন ৫৯ বছর বয়সী সুনীতা।
সুনীতা বেশ পোড় খাওয়া একজন নভোচারী। এ পর্যন্ত তিনবার মহাকাশযাত্রা করেছেন তিনি, এবং এসব যাত্রায় বেশকিছু রেকর্ডও ভেঙ্গেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নেভাল একাডেমি থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পাইলট সুনীতা বিভিন্ন মিশনে অংশ নিয়েছেন। ১৯৯৮ সালে তিনি নভোচারীর প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। মহাকাশে তার প্রথম অভিযান ছিল ২০০৬ সালে। সে সময়ে স্পেশ শাটল ডিসকভারিতে মোট ১৯৫ দিন কাটিয়েছেন তিনি, আর চারবার স্পেসওয়াকে গিয়ে মহাকাশযানের বাইরে মোট ২৯ ঘন্টা কাটান। একজন নারী নভোচারী হিসেবে এ দুটি কাজ করে রেকর্ড গড়েন তিনি।
২০১২ সালে আবারও মহাকাশযাত্রা করেন সুনীতা। এবার তিনি সয়ুজ টিএমএ-০৫এম এর ক্রু হিসেবে গেলেন। এ যাত্রায় তিনবার স্পেসওয়াক করেন তিনি, যাতে মোট সময় লাগে ২১ ঘন্টা। এবার তিনি প্রায় ১২৭ দিন মহাকাশে কাটান।
সুনীতার পরবর্তী মহাকাশযাত্রা ছিল গতবছর জুনের ৫ তারিখ। বোয়িং কোম্পানির স্টারলাইনার মহাকাশযানে করে তিনি এবং সহকর্মী নভোচারী ব্যারি উইলমোর যাত্রা করেন ইন্টারন্যাশলান স্পেস স্টেশন অভিমুখে। পরিকল্পনা ছিল, এক সপ্তাহ স্পেস স্টেশনে অবস্থান করার পর আবারও স্টারলাইনারে করেই ফেরত আসবেন এই দুই নভোচারী।
তবে এত দ্রুত পৃথিবীতে ফিরে আসা হয়তো সুনীতার ভাগ্যে ছিল না। স্পেস স্টেশনে যাত্রার পথেই স্টারলাইনারের পাঁচটি থ্রাস্টার অকেজো হয়ে যায়, এর প্রোপালসন সিস্টেম থেকে হিলিয়াম লিক করতে থাকে। এতে নাসা সিদ্ধান্ত নেয়, সহসাই এই মহাকাশযানটি ব্যবহার করা যাবে না। আগে নিশ্চিত করতে হবে তাতে পৃথিবীতে ফেরা নিরাপদ কিনা। এ সময়ের মধ্যে স্পেস স্টেশনের অন্যান্য কর্মীদের সাথে যোগ দেন সুনীতা এবং ব্যারি।
সাত দিন থেকে সাত মাস
জুন মাস গড়িয়ে এলো জুলাই, এরপর আগস্ট। এ মাসে সবদিক ভেবেচিন্তে নাসা থেকে জানানো হয়, স্টারলাইনে করে ফেরত আসা নিরাপদ হবে না। বরং স্টারলাইনার কোনো মানুষ ছাড়াই ফিরে আসবে পৃথিবীতে। বরং স্পেস স্টেশনে স্পেসএক্স কোম্পানির একটি ড্রাগন মহাকাশযান পাঠানো হবে দুইজন নভোচারীসহ। তাদের সাথে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ফিরে আসবেন সুনীতা এবং ব্যারি।
এই সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পৃথিবীতে ফিরে আসে স্টারলাইনার। বিবিসির বরাতে জানা গেছে, সুনীতা এবং ব্যারি হয়তো এবছরের মার্চ, এমনকি এপ্রিল নাগাদ দেশে ফিরতে পারেন।
কেমন কাটছে আটকে পড়া নভোচারীর দিন?
ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে কাজের অভাব নেই। কর্মীদের মাঝে ভাগ করে দেওয়া হয় এসব কাজ। সুনীতা এবং ব্যারি সেসব কাজই করে চলেছেন গত কয়েক মাস। জানুয়ারির ১৬ তারিখ সেসব কাজের বাইরেও একটি কাজ করেছেন সুনীতা, আর তা হলো স্পেসওয়াক।
সুনীতার জন্য স্পেসওয়াক নতুন কিছু নয়। এবারেও নভোচারী নিক হেগের সাথে ছয় ঘন্টার এক স্পেসওয়াকে বের হয়েছিলেন তিনি। এই সময়ের মধ্যে তার দুজন স্পেস স্টেশনের বাইরের দিকের বেশ কিছু মেরামত এবং দেখভালের কাজ সম্পন্ন করেন। জানুয়ারির ২৩ তারিখে আরেকটি স্পেসওয়াকে যাওয়ার কথা তার। এবার তার সঙ্গী হবেন ব্যারি। তারা এবারেও কিছু মেরামতের কাজ করবেন এবং স্পেস স্টেশনের বাইরের দেয়াল থেকে নমুনা সংগ্রহ করবেন। শূন্যে ভাসমান এই মহাকাশযানের দেয়ালে অণুজীব বেঁচে থাকতে পারে কিনা, তা জানার উদ্দেশ্যে এসব নমুনা নেবেন তারা।
স্পেসওয়াকের বিড়ম্বনা
মহাকাশে ভরশূন্য অবস্থায় শরীর এলিয়ে দেওয়ার নাম কিন্তু স্পেসওয়াক নয়। কাজটি বেশ কঠিন। প্রথমত, নভোচারীকে পরতে হয় বেজায় ভারী এক স্পেসস্যুট। তার শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ ঠিকঠাক আছে কিনা তা খুব গুরুত্বের সাথে পরিমাপ করা হবে। একবার মহাকাশযানের বাইরে পা দিয়ে ফেললে একে অপরের সাথে কথা বলার মাধ্যম শুধুই রেডিও।
এ সময়ের মাঝে অনেক রকমের উটকো ঝামেলা দেখা দিতে পারে। নভোচারীরা স্পেসওয়াকের সময়ে প্রবলভাবে ঘামতে থাকেন। পানি পান করার তেমন কোনো উপায় থাকে না, ফলে তাদের পানিশূন্যতায় ভোগার ঝুঁকি থাকে। এছাড়া মহাশূন্যে মাথা ঘোরা ও বমিভাবের সমস্যাটা তো বেশ ঘনঘনই দেখা যায়।
আরেকটি ঝুঁকি হলো মহাকাশে ছুটতে থাকা ছোট ছোট বস্তুকণা। খুব দ্রুত ছুটে এসে আঘাত করলে এসব বস্তুকণার কারনে স্পেসস্যুট ফুটো হয়ে যাওয়ার একটা ঝুঁকি থাকে।
স্পেসওয়াকের সময়ে দুর্ঘটনা ঘটার এসব দুশ্চিন্তা অমূলক নয়। ১৯৬৫ সালে প্রথমবার স্পেসওয়াক করেন রুশ নভোচারী আলেক্সেই লেওনভ। মহাশূন্যে যাওয়ার পর তার স্পেসস্যুট এতটাই ফুলেফেঁপে ওঠে যে স্পেসওয়াক শেষ করার পর মহাকাশযানের ভেতরে তিনি ঢুকতেই পারছিলেন না। পরে তার স্পেসস্যুটে ফুটো করে বাতাসের চাপ কমানো হয়, এরপর তাকে মহাকাশযানে প্রবেশ করানো হয়।
এদিকে ২০১৩ সালে স্পেসওয়াক চলাকালীন পানিতে ডুবে মরতে বসেছিলেন নাসার নভোচারী লুকা পারমিতানো। একটি ফিল্টারের ত্রুটির কারনে তার হেলমেটে পানি ঢুকতে শুরু করে। তিনি ব্যাপারটা টের পেয়ে দ্রুত মহাকাশযানে ফেরত আসেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স প সওয় ক
এছাড়াও পড়ুন:
প্রেমের টানে চীনা যুবকের বাংলাদেশে এসে বিয়ে
মাদারীপুরে মেয়ে সুমাইয়া আক্তারের প্রেমের টানে চীনের নাগরিক শি তিয়ান জিং বাংলাদেশে এসেছেন। বিয়ে করে বর্তমানে মাদারীপুরে শশুরবাড়িতে আছেন। ভিনদেশি যুবককে দেখার জন্য ওই বাড়িতে মানুষ ভিড় করছেন।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুরের সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের উত্তর মহিষেরচর এলাকার বাসিন্দা সাইদুল হোসেনের মেয়ে সুমাইয়া আক্তার (১৯)। সুমাইয়া মাদারীপুর শহরের সরকারি সুফিয়া মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। তারা তিন বোন। সুমাইয়া বড়। মেঝ সাদিয়া আক্তার (১২) মাদ্রাসায় পড়ে। ছোট বোন আরিফা (৬)।
চীনের সাংহাই শহরের সি জিং নিং এর ছেলে শি তিয়ান জিং (২৬)। তারা দুই ভাই। বড় শি তিয়ান জিং। তার চীনের সাংহাই শহরে রেস্টুরেন্টের ব্যবসা আছে।
আরো পড়ুন:
‘একজন ছেলে মানুষ আমাদের পরিবারের বৌ হয়েছিল’
এক বিয়ের বরযাত্রী খেয়ে ফেলল অন্য বিয়ের খাবার
শি তিয়ান জিংকে টিকটকে দেখেন সুমাইয়া। এরপর ইউচ্যাটের মাধ্যমে কথা আদান-প্রদান হয়। উভয়ই গুগলের মাধ্যমে লেখা অনুবাদ করে মনের ভাব আদান- প্রদান করেন। এক পর্যায় তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক হয়। মাত্র চার মাসের প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে গত ২৪ জুলাই চীন থেকে বাংলাদেশ আসেন শি তিয়ান জিং। এরপর এক দিন ঢাকার একটি হোটেলে থাকেন। ২৬ জুলাই মাদারীপুর সদর উপজেলার মহিষেচরের সুমাইয়ার বাড়িতে আসেন।
সুমাইয়া, সুমাইয়ার বাবা সাইদুল ইসলাম ও তার দুইজন আত্মীয় মিলে ঢাকা থেকে শি তিয়ান জিংকে মাদারীপুরে নিয়ে আসেন। বাংলা ভাষায় কথা বলতে না পারায় মোবাইলে অনুবাদ করে কথা আদান-প্রদান করেন শি তিয়ান জিং। এরপর ২৭ জুলাই তারা বিয়ে করেন। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে সুমাইয়ার বাড়িতে মানুষ ভিড় করতে থাকে।
সুমাইয়া আক্তার বলেন, ‘‘টিকটক দেখে আমি ওর ভক্ত হই। এরপর ইউচ্যাটের মাধ্যমে কথা হয়। পরে দুজনেই প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি। মাত্র চার মাসের প্রেমের সূত্র ধরে চীন থেকে বাংলাদেশ আমার কাছে চলে আসবে, তা কখনো ভাবিনি। ও প্লেনে উঠার সময় বলেছে, আমি বাংলাদেশে আসছি। আমি বিশ্বাস করিনি। যখন ইন্ডিয়া এসে আমাকে জানায়, তখন বিশ্বাস করেছি।’’
সুমাইয়া আক্তার আরো বলেন, ‘‘ও ওর মা-বাবাকে আমার কথা বলেছে। তারাও মুসলিম। ওর মা বলেছেন, আমাকে বিয়ে করে চীনে নিয়ে যেতে। তাই শি তিয়ান জিং বাংলাদেশে এসে আমাকে বিয়ে করেছেন।’’
সুমাইয়া বলেন, ‘‘এরই মধ্যে পাসপোর্ট করতে দিয়েছি। শি তিয়ান জিং এক মাস বাংলাদেশে থাকবে। এর মধ্যে আমার কাগজপত্র রেডি করা হবে। তারপর ও আমাকে চীনে নিয়ে যাবে। আমিও চীনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’’
শি তিয়ান জিং বলেন, ‘‘বাংলাদেশ আমার ভালো লেগেছে। তবে অনেক গরম। আর অনেক মানুষ আমাকে দেখতে আসে। তাই আমার ভয় লাগে। আমি ভালোবেসে চীন থেকে এখানে এসেছি। সুমাইয়াকে বিয়ে করেছি। এখন ওর কাগজপত্র রেডি করে চীনে নিয়ে যাবো। আমার পরিবার সব জানে। তারাই সুমাইয়াকে চীনে নিয়ে যেতে বলেছেন।’’
সুমাইয়ার বাবা সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘‘শি তিয়ান জিং আমাদের এখানে আছে। ও খুব ভালো ছেলে। খুবই অমায়িক। কোনো অহংকার নেই। এক মাস থাকবে এবং আমার মেয়েকে নিয়ে যাবে। আমরা খুব খুশি।’’
পাঁচখোলা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রুবেল হাওলাদার জানান, প্রথমে আদালতের মাধ্যমে তাদের বিয়ে হয়। পরে সামাজিকভাবে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে বিয়ে হয়। চীনে ওই ছেলের ব্যবসা আছে। কিছু দিনের মধ্যে সুমাইয়াকে চীনে নিয়ে যাবে।
ঢাকা/বকুল