মাছচাষিদের ‘পাওনা’ সাত কোটি টাকা, পুলিশ সদস্য লাপাত্তা
Published: 28th, January 2025 GMT
আলম, ফারুক, শরিফুল, শাহাদৎ, মেহেদী, আলামিন ও রইস সবাই মাছ চাষি। তাদের কাছ থেকে ‘বাকিতে’ মাছ কিনে দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করতেন পুলিশ সদস্য হুমায়ুন কবির হিমু। প্রথমে নগদ মূল্যে চাষিদের কাছ থেকে মাছ কিনতেন তিনি। এভাবে চাষিদের বিশ্বাস অর্জন করেন পুলিশ সদস্য। এই সুযোগে বাকিতে মাছ নিয়ে লাপাত্তা তিনি। কর্মস্থলেও রয়েছেন অনুপস্থিত।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এলাকার অন্তত ৫০ চাষির কাছ থেকে প্রায় ৭ কোটি টাকার মাছ বাকিতে নিয়ে আত্মগোপন করেছেন পুলিশ সদস্য হুমায়ন। অভিযুক্ত হুমায়ুন কবির নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চাপিলার পুরুলিয়া গ্রামের হায়দার আলীর ছেলে।
ভুক্তভোগী আলম, ফারুক, শরিফুল, শাহাদৎ, মেহেদী, আলামিন, রইসসহ অন্তত ১০ জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অভিযুক্ত হুমায়ন কবির পুলিশ সদস্য হিসাবে পুলিশ সদর দপ্তরে কর্মরত। পাশাপাশি চার বছর ধরে এলাকায় তিনি ও তা প্রতিনিধির মাধ্যমে মাছের ব্যবসা করেন। কিন্তু গত বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বরে চাষিদের অধিক লাভের প্রলোভন দিয়ে চড়া দামে বাকিতে মাছ কিনে রয়েছেন লাপাত্তা। শুধু গুরুদাসপুর নয় পার্শ্ববর্তী বড়াইগ্রাম, সিংড়া ও চাটমোহর উপজেলার অন্তত শতাধিক চাষিরা বাকিতে মাছ বিক্রি করে হয়েছেন প্রতারিত।
চাষিরা টাকা উদ্ধার ও প্রতারক হুমায়ুনের গ্রেপ্তারের দাবীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন। আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে পুরুলিয়া বাজারে ঘণ্টাব্যাপী ওই মানববন্ধনে ভুক্তভোগী মাছ চাষিসহ অন্তত ৫ শতাধিক মানুষ অংশ নেন।
পুরুলিয়ার রইস উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, তিনি গত মাসের শুরুতে হুমায়ুনের কাছে বাকিতে ৩৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করেন। ১৫ দিন পর টাকা দেওয়ার কথা বলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে পলাতক রয়েছেন হুমায়ুন। তিনি টাকা ফেরতসহ তার শাস্তির দাবী জানান।
একই এলাকার আলম বলেন, পুলিশ সদস্য হুমায়নের কাছে ১৬ লাখ ১১ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করেছেন। টাকার জন্য চাপসৃষ্টি করলে তাকে ইসলামী ব্যাংকের একটি চেক দেওয়া হয়। আমার মতো অন্তত ১০ চাষিকে ব্যাংক চেক দেওয়া হয়। টাকা তুলতে গিয়ে তারা দেখেন, প্রতারক হুমায়ন আগেই ওই নম্বরের চেক বই হারিয়ে গেছে মর্মে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। ভুক্তভোগী চেক নিয়েও প্রতারিত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
টাকা ফিরে পেতে উজ্জ্বল হোসেন বাদী হয়ে ১৫ জানুয়ারি গুরুদাসপুর থানায় প্রতারক হুমায়ুন ও তার ৮ সহযোগীর নাম উল্লেখ করে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অপরদিকে মকলেছুর রহমান নামে অপর মাছ চাষি সিংড়া থানায় এবং পুলিশ সদর দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য হুমায়ন কবিরের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে অভিযোগের বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বাসায় গিয়েও পরিবারের কোনো সদস্যকে পাওয়া যায়নি।
গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম সারওয়ার হোসেন জানান, হুমায়ুন কবিরের নামে মাছ চাষিদের একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাকে আটকের চেষ্টাও চলছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প ল শ সদস য প ল শ সদস য হ ম য় কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
শিবচরে তরুণকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
মাদারীপুরের শিবচরে জামিনে থাকা আসামি রাকিব মাদবরকে (২৫) প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে ২২ জনকে এজাহারভুক্ত ও অজ্ঞাত আরও ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বাদী হয়ে শিবচর থানায় মামলাটি করেন।
এর আগে গত রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের প্রধান সড়কে একটি ব্যাংকের সামনে রাকিব মাদবরকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রাকিব শিবচর উপজেলার চরশ্যামাইল এলাকার নাসির মাদবরের ছেলে। তিনি সরকারি বরহামগঞ্জ কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
দুই দিন পার হয়ে গেলেও এই ঘটনায় কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এর প্রতিবাদে আজ দুপুরে শিবচর পৌর বাজারের সদর রোডে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন। এ সময় বক্তারা বলেন, প্রকাশ্যে শত শত মানুষের সামনে হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। একটা সভ্য স্বাধীন দেশে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড হতে পারে না। হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার না করা হলে ভবিষ্যতে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেবেন তাঁরা।
মামলার বাদী নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বলেন, ‘রাকিবরে এতগুলো মানুষের সামনে কুপাইয়া মাইরা ফালাইলো। কেউ বাঁচাতে এগিয়ে আসলো না। যারা খুন করছে, তারা রাকিবের পূর্বশত্রু। আবুল কালাম সরদারের নির্দেশে তার লোকজন এই খুন করেছে। পুলিশ এ ঘটনায় কোনো আসামি এখন অবধি গ্রেপ্তার করে নাই। আসামিগো গ্রেপ্তার চাই, ফাঁসি চাই।’
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিবচর উপজেলার শিরুয়াইল ইউনিয়নের চরশ্যামাইল গ্রামের আবুল কালাম সরদারের লোকজনের সঙ্গে নিহত রাকিব মাদবরের লোকজনের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত ৬ মে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের হামলায় আবুল কালাম সরদারের ছেলে ইবনে সামাদ নিহত হন। ইবনে সামাদ হত্যা মামলার আসামি রাকিব সম্প্রতি জামিন নিয়ে জেল থেকে বের হয়ে এলাকায় আসেন। রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের একটি সড়কে দাঁড়িয়ে ছিলেন রাকিব। এ সময় ৪ থেকে ৫ জনের একটি দল ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাকিবের মৃত্যু হয়।
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনায় ২২ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির স্বজন ও স্থানীয় লোকজন মানববন্ধন করে এ ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
আরও পড়ুনশিবচরে হত্যা মামলায় জামিনে থাকা আসামিকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫