লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম সীমান্তের শূন্যরেখায় সেই কাঁটাতারের বেড়ায় এবার বাঁশ বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) প্রহরায় দেশটির কৃষকেরা বাঁশ বাঁধছে- এক মিনিট ৫১ সেকেন্ডের এমন একটি ভিডিও উভয় দেশের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে দেখা গেছে, বিজিবি প্রতিবেশী দেশের এ কাজের বিরোধীতা করলেও তারা (ভারতীয়রা) তাদের কাজ করছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, গত মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে দহগ্রাম ইউনিয়নের হাঁড়িপাড়া ও সরকারপাড়া সীমান্তে বিএসএফের জিরোর লাইনে লাগানো কাঁটাতারের বেড়ায় বাঁশের বাতা (বাকল) দিয়ে শক্ত করার চেষ্টা করে। এ সময় বিজিবি বাধা প্রদান করে। কিন্তু বিএসএফ কোনো কথা না শুনে তাদের লোকজন দিয়ে জোরপূর্বক বেড়া দেয়। তবে বিএসএফ সদস্যদের দাবি, কৃষকরাই এ কাজ করছেন।

ভাইরাল ওই ভিডিওতে দেখা যায়, বিজিবি-বিএসএফের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সীমান্তে উভয় দেশ আপাতত কোনো ধরণের নির্মাণ কাজ হবে না- বিজিবির একজন সদস্য বিএসএফকে এ কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তা উপেক্ষা করে তর্কে জড়ান বিএসএফ সদস্যরা। এ সময় একজন বিএসএফ সদস্যকে উচ্চস্বরে হিন্দিতে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা কাজ করবো, তোমার যা করার তুমি করো।’ তবে পরে বিএসএফ সদস্যরা বলেন, ‘আমরা কাজ করতেছি না, ভারতীয় পাবলিক ওই বাঁশের বেড়া দিচ্ছে। এরপর বিজিবি সদস্য বলেন, ‘তাহলে আপনারা সীমান্তের শুন্য রেখায় তাদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?’ উত্তরে বিএসএফ সদস্যরা বলেন, ‘আমরা সীমান্ত পাহারা দিচ্ছি।’

এর আগে গত ১০ জানুয়ারি দহগ্রাম সীমান্তে শূন্যরেখা বরাবর প্রায় দেড় কিলোমিটার অংশজুড়ে চার ফুট উচ্চতার ওই বেড়া নির্মাণ করেছিল ভারতীয়রা। এতে বিজিবি বাধা দিলে উভয় বাহিনীর মাঝে চরম উত্তেজনা দেখা হয়। বিষয়টি নিয়ে উভয় বাহিনীর ডিআইজি পর্যায়ের বৈঠক হয়। বৈঠক থেকে আপাতত কাজ না করার সিদ্ধান্তের পর সীমান্ত থেকে উভয় বাহিনী স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যায়। এ ঘটনার এক সপ্তাহ না যেতে সেই কাঁটাতারের বেড়ায় অসংখ্য মদের খালি কাঁচের বোতল ঝুলিয়ে দেয় বিএসএফ ও ভারতীয়রা। 

এরপর গত মঙ্গলবার সর্বশেষ সেই বেড়ায় জোর করে বাঁশের বাতা লাগানোর ঘটনা ঘটালো ভারতীয় সীমান্তরক্ষীর সহায়তায় কৃষকেরা। 

এ বিষয়ে দহগ্রাম আঙ্গরপোতা সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রেজানুর রহমান রেজা বলেন, ভারতীয়রা একটার পর একটা ঘটনা ঘটাচ্ছে। তারা কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার পর মদের বোতল ঝোলায়। এর কয়েক দিন পর আবার সেই কাঁটাতারের বেড়ায় বাঁশের বাতা বেঁধেছে। এগুলো  শয়তানি ছাড়া কিছুই না। দহগ্রাম সীমান্তে ভারতীয় পাবলিককে দিয়ে জোর খাটিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছে বিএসএফ। এটা সীমান্ত উত্তপ্ত করার কৌশল।’

রংপুর ৫১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পাটগ্রাম পানবাড়ি বিজিবি ক্যাম্পের সুবেদার মো.

জামিল বলেন, ‘এ ঘটনা ৩ থেকে ৪ দিন আগের ঘটনা। বিজিবির পক্ষ থেকে বাঁধা দেওয়ার পর কাজ বন্ধ করেছে বিএসএফ।’

এ বিষয়ে ৫১ বিজিবির কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল সেলিম আল দিনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এসএফ সদস ক জ কর সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

কড়া নজরদারি সুন্দরবন সীমান্তে

দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন জলসীমানা প্রায় দেড়শো কিলোমিটার। ভারতীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এ সীমানা দিয়ে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাড়তি তৎপরতা নেওয়া হচ্ছে। খবর আনন্দবাজারের।

খবরে বলা হয়েছে, নদী ও বনভূমি এলাকায় সীমান্ত বরাবর বিএসএফ মোতায়েন আছে। ভাসমান বর্ডার আউটপোস্ট, বঙ্গোপসাগর অংশে কোস্ট গার্ডের নজরদারি চলছে। ড্রোন, সেন্সর ও ক্যামেরা, কিছু জায়গায় নাইট ভিশন ক্যামেরা ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি, পুলিশের তরফেও উপকূল এলাকায় দিনরাত নজরদারি চলছে।

উপকূল থানাগুলোর পক্ষ থেকে নদীপথে নিয়মিত টহল দেওয়া হচ্ছে। রাতেও উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে নজর রাখা হচ্ছে। নদীপথে কোনো জলযান দেখলেই তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। মৎস্যজীবীদের পরিচয়পত্রও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নদী বা সমুদ্রে এখন মাছ ধরার উপরে নিষেধাজ্ঞা চলছে। মৎস্যজীবীদের জলযান চলাচল করার কথা নয়। তাই জলযান দেখলেই তল্লাশি চলছে। বাংলাদেশি জাহাজগুলোতেও পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে।

সুন্দরবন পুলিশ জেলার সুপার কোটেশ্বর রাও নালাভাট বলেন, আগেও উপকূলবর্তী এলাকায় পুলিশের নজরদারি চলত। এখন বাড়তি জোর দেওয়া হচ্ছে। দু’বেলা নদী ও স্থলপথে পুলিশের টহল বৃদ্ধি পেয়েছে। নাকা চেকিং হচ্ছে। চলছে তল্লাশিও।

উত্তর ২৪ পরগনাতেও উপকূল এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তা বেড়েছে জল ও স্থলসীমান্তে। জল, ভূমি ও আকাশে অত্যাধুনিক ইজ়রাইল রাডারের মাধ্যমে নজরদারি চালাচ্ছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী।

ইতোমধ্যে ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতর জানিয়েছে, বাংলাদেশের আকাশ ব্যবহার করে ভারতকে আক্রমণ করতে পারে সশস্ত্র সংগঠনগুলো। ফলে সুরক্ষা বাড়াতে বিএসএফের তৎপরতা শুরু হয়েছে। বসিরহাট মহকুমার স্বরূপনগর থেকে হিঙ্গলগঞ্জের হেমনগর কোস্টাল থানা পর্যন্ত ৯৪ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। তার মধ্যে ৫০ কিলোমিটার জলসীমান্ত। স্থলসীমান্ত ৪৪ কিলোমিটার। সীমান্ত সুরক্ষায় অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কড়া নজরদারি সুন্দরবন সীমান্তে
  • ভুলে সীমানায় পা, বিএসএফ সদস্যকে আটক করল পাকিস্তান
  • স্বাস্থ্য ব্যয়ের চাপ দারিদ্র্য নিরসনে অন্যতম বাধা