জুলাই আন্দোলনে নিহতদের নিয়ে ষড়যন্ত্র এবং গণহত্যায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিচারসহ পাঁচ দাবিতে পুলিশ সদর দপ্তর ঘেরাওয়ের উদ্দেশ্যে ইনকিলাব মঞ্চের মিছিল আটকে দিয়েছে পুলিশ। পরে দাবির একটি স্মারকলিপি তুলে দিয়ে শনিবার সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত আলটিমেটাম বেঁধে দিয়ে কর্মসূচি শেষ করেন তারা।

শুক্রবার দুপর সাড়ে তিনটায় শাহবাগ থানার সামনে থেকে মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ও দোয়েল চত্বর হয়ে হাইকোর্ট মোড়ে যেতেই মিছিলটি আটকে দেয় পুলিশ। সেখানে ব্যারিকেড দিয়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ লাঠি হাতে অবস্থান নেন। পরে সেখানে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন আন্দোলনকারীরা।

এ সময় ডিএমপির রমনা জোনের ডিসি মাসুদ আলম বলেন, ‘আপনারা এমন কিছু করবেন না যাতে আমাদের কাজ করতে সমস্যা হয়। এতে রাষ্ট্র দুর্বল হয়ে পড়বে। এখানে যারা পুলিশ সদস্য আছেন সবাই ঢাকায় নতুন, জুলাইয়ে আমাদেরও ব্যাপক ভূমিকা ছিল। আপনাদের দাবিদাওয়া আমার কাছে দেন। আমি কালকে আইজিপির কাছে পৌঁছে দেব।’   

এ সময় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি পাঁচদফা দাবি তুলে ধরে জানান, তারা (পুলিশ) কথা দিয়েছেন আমাদের পাঁচ দফা আইজিপির কাছে পৌঁছে দেবেন। আমরা নিশ্চিত হতে চাই আগামীকাল সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে পাঁচ দফা দাবির ব্যাপারে আপডেট জানানো হবে। এমনটি না হলে কর্মসূচি ঘোষণা না দিয়ে আমরা পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের বারান্দায় অবস্থান নেব। পরে ইনকিলাব মঞ্চের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্যসচিব ফাতিমা তাসনিম ঝুমা রমনা জোনের ডিসির হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন।  

ইনকিলাব মঞ্চের পাঁচ দফা দাবি হচ্ছে- জুলাই গণহত্যায় সরাসরি জড়িত সব পুলিশকে অতি দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে; জুলাই আন্দোলনে নিহত এবং এ আন্দোলনের কর্মীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা, মিথ্যা প্রতিবেদন ও হয়রানিতে যেসব পুলিশ কর্মকর্তা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; ছাত্রলীগের নেতাকর্মী যারা পুলিশ বাহিনীতে আছে তাদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাতে হবে; জুলাই গণহত্যার দায়ে তিরস্কৃত ও বদলি হওয়া পুলিশদের তালিকা জনমক্ষে প্রকাশ করতে হবে এবং দেশের সার্বভৌমত্বের স্বার্থে জুলাই গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের পার্বত্য চট্টগ্রামে বদলি করা বন্ধ করতে হবে। এ সময় ইনকিলাব মঞ্চের বিভিন্ন শাখার নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ল ই গণহত য গণহত য সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

রাজধানীতে পরপর তিন দিনে তিন জনসমাবেশ

আগামীকাল বৃহস্পতিবার ১ মে থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনের সরকারি ছুটি। এই তিন দিনে রাজধানী ঢাকায় তিনটি দল ও সংগঠন পৃথক জনসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এসব কর্মসূচি ঘিরে ছুটির তিন দিনে রাজধানীতে ব্যাপক জনসমাগমের সম্ভাবনা রয়েছে।

১ মে বৃহস্পতিবার ঢাকার নয়াপল্টনে শ্রমিক সমাবেশ করবে বিএনপি। পরদিন ২ মে শুক্রবার আওয়ামী লীগের বিচারসহ বিভিন্ন দাবিতে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকে সমাবেশ করবে। ৩ মে শনিবার নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলসহ বিভিন্ন দাবিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করবে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।

ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে আগামীকাল বেলা দুইটায় ঢাকার নয়াপল্টনে শ্রমিক সমাবেশ করবে বিএনপি। এতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রধান অতিথি থাকবেন। তিনি লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হবেন। এ ছাড়া বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা সমাবেশে বক্তব্য দেবেন। এই সমাবেশ আয়োজনে যুক্ত রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের প্রধান উপদেষ্টা নজরুল ইসলাম খান ও শ্রমিক দলের প্রধান সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। ঢাকা মহানগরের বাইরে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইলসহ আশপাশের জেলা থেকে বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা সমাবেশে অংশ নেবেন।

নজরুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি, সমাবেশটি অনেক বড় করার। আশা করি, আপনারা সেদিন উপস্থিত থাকলে দেখতে পাবেন।’

পরদিন শুক্রবার বেলা তিনটায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকে সমাবেশ করবে গণ–অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল এনসিপি। দলটির ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে এই সমাবেশ হবে।

এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, এই কর্মসূচি থেকে গণহত্যার দায়ে ফ্যাসিস্ট দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার, এর রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করা এবং নিবন্ধন বাতিল করার দাবি জোরালোভাবে জানানো হবে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-খুনের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি ২০১৩ সালের শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ড, জুলাই-আগস্ট গণহত্যা ও ২০২১ সালে নরেন্দ্র মোদির আগমনবিরোধী আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের মতো বড় হত্যাকাণ্ডগুলোর বিচারও দাবি করা হবে।

২১ এপ্রিল থেকে দলগতভাবে আওয়ামী লীগের বিচার, দলটির নিবন্ধন বাতিল ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানায় বিক্ষোভ, সমাবেশ ও মশালমিছিলের মতো কর্মসূচি করছে এনসিপি। শুক্রবারের সমাবেশে ১০ থেকে ১৫ হাজার মানুষের জমায়েত হতে পারে বলে জানান এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব জয়নাল আবেদীন শিশির।

এনসিপির সমাবেশের পরদিন শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশের দিকে অনেকের দৃষ্টি। এক মাস ধরে সংগঠনটি সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

সংগঠনটি আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে, ‘নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের কোরআন-সুন্নাহবিরোধী প্রতিবেদনসহ কমিশন বাতিল, সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল, ফ্যাসিবাদের আমলে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও শাপলা চত্বরে সংঘটিত গণহত্যাসহ সব হত্যার বিচার এবং ফিলিস্তিন ও ভারতে মুসলিম গণহত্যা ও নিপীড়ন বন্ধের’ দাবিতে এই মহাসমাবেশ ডাকা হয়েছে। এ উপলক্ষে গতকাল সকালে খিলগাঁও জামিয়া ইসলামিয়া মাখজানুল উলুম মাদ্রাসায় মহাসমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির সভা হয়।

হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় সংগঠনের কেন্দ্রীয়, মহানগর ও আঞ্চলিক কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পরে বেলা ১১টায় মহাসমাবেশের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে নেতারা সংবাদ সম্মেলন করেন।

হেফাজতে ইসলামের দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, এই মহাসমাবেশে তাঁদের মুখ্য দাবি হবে মূলত চারটি। এর মধ্যে প্রধান দাবি হচ্ছে, অনতিবিলম্বে হেফাজত নেতাদের নামে থাকা সব মামলা প্রত্যাহার। কারণ, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার এই মামলাগুলোকে পুঁজি করে হেফাজতকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছে। ভবিষ্যতে যে সরকার আসবে, তারাও একই কাজ করতে পারে। তাই মামলা প্রত্যাহার হচ্ছে তাঁদের মুখ্য দাবি। সংগঠনটির হিসাবমতে, সারা দেশে হেফাজত নেতাদের নামে প্রায় ৩০০টি মামলা রয়েছে।

এ ছাড়া ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হত্যাকাণ্ড, ২০২১ সালের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফর ঘিরে হত্যাকাণ্ড, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার। এরপর যথাক্রমে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল, সংবিধানের প্রস্তাবনায় আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল করা, ফিলিস্তিন ও ভারতে মুসলিম গণহত্যা ও নিপীড়ন বন্ধের দাবিগুলো থাকবে।

উল্লেখ্য, এক যুগ আগে ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে যৌথ বাহিনীর রক্তক্ষয়ী অভিযানের ঘটনা ঘটে।

আগামী ৫ মে সোমবার সরকারি কর্মদিবস। সপ্তাহের মাঝখানে রাজধানীতে সমাবেশ করলে বড় ধরনের জনদুর্ভোগে সৃষ্টি হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সে জন্য হেফাজতে ইসলাম ছুটির দিনে মহাসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া হেফাজত ৫ মে বিশেষ দিবস হিসেবে পালন করে না। এ ধরনের দিবস পালন ইসলামের নীতিবিরোধী। তাই সবকিছু বিবেচনা করে ৩ মে মহাসমাবেশ করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সংগঠনের নেতাদের নামে থাকা অতীতের মামলা-মোকদ্দমাগুলো প্রত্যাহারে সরকারের ওপর চাপ তৈরি, একই সঙ্গে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক প্রভাব দৃষ্টিগ্রাহ্য করারও একটি লক্ষ্য রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৫১ ফিলিস্তিনি নিহত
  • রাজধানীতে পরপর তিন দিনে তিন জনসমাবেশ
  • বিশ্বনেতাদের সতর্ক দৃষ্টির সামনেই ঘটছে গণহত্যা
  • ইসলামবিরোধী প্রস্তাবনা রুখে দেওয়া হবে: মামুনুল হক
  • জেলা কৃষকদলের নেতাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন 
  • শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে মামলা মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ মির্জা ফখরুলের
  • ‘বিশ্বের নজরদারির মধ্যেই ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল’
  • রাখাইনে করিডর দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ হেফাজতের
  • ইয়েমেনে মার্কিন হামলাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ আখ্যা দিয়ে নিন্দা ইরানের
  • নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি