চাকরিজীবী মানুষের দিনের বেশিরভাগ সময় কাটে অফিসের ডেস্কে। এতে শরীরের নড়াচড়া তেমন হয় না। এমনিতেও, অনেকেই এই বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেন না। তবে দীর্ঘ সময় ডেস্কে বসে থাকার জন্য হতে পারে নানা ধরনের সমস্যা।এবিষয়ে রাইজিংবিডির সাথে কথা বলেছেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত ডা. মাসুদা পারভীন মিনু।

তিনি বলেন, ‘‘আধুনিক জীবনে অধিকাংশ চাকরিজীবী দিনের অধিক সময় অফিসে বসে কাটায়। দীর্ঘ সময় বসে থাকার অভ্যাস দীর্ঘমেয়াদে নানা শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। পদ-বিন্যাস এবং বসার উপযুক্ত পদ্ধতি শারীরিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অফিসে বসে কাজ করার সময় সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখতে হবে। ডেস্কের চেয়ারটি এমনভাবে স্থাপন করা উচিত যাতে পিঠ সোজা থাকে এবং পা মাটিতে সোজা অবস্থায় থাকে। এর ফলে মেরুদণ্ডের ওপর চাপ কমে। সঠিকভাবে বসলে পিঠ ও গলা ব্যথা প্রতিরোধ করা সম্ভব। স্ক্রিনের উচ্চতাও এমন হওয়া উচিত যাতে চোখ সোজাভাবে স্ক্রিনে তাকাতে পারে, এতে চোখের ওপর অতিরিক্ত চাপ না পড়ে।’’

ডা.

মাসুদা পারভীন মিনু জানান,  কাজের ফাঁকে নিয়মিত বিরতি নেওয়া খুবই প্রয়োজনীয়। দীর্ঘসময় একটানা বসে কাজ করলে রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে পেশির খিঁচুনি, ব্যথা ও ক্লান্তি হতে পারে। প্রতি ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর পর কিছুটা সময় হাঁটাচলা বা স্ট্রেচিং করা উচিত। এই বিরতিগুলি শরীরের সঠিক সঞ্চালন বজায় রাখতে সহায়ক এবং কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। এমনকি, চোখের জন্যও কিছু বিরতি নিতে হবে—কম্পিউটারের স্ক্রিনের দিকে দীর্ঘসময় তাকিয়ে থাকলে চোখের উপর চাপ সৃষ্টি করে। "২০-২০-২০" নিয়ম অনুসরণ করলে উপকার পাওয়া যেতে পারে: প্রতি ২০ মিনিটে ২০ সেকেন্ডের জন্য ২০ ফুট দূরের কিছু দেখে চোখ ভালো রাখতে পারেন। 

‘‘স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অফিসে বসে কাজের সময় অনেকেই ঝুঁকিতে পড়েন অনিয়ন্ত্রিত খাবারের দিকে, যেমন স্ন্যাকস, কোল্ড ড্রিঙ্কস, বা অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ। তবে, স্বাস্থ্যকর খাবারের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। প্রোটিন, ফাইবার, এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করলে মনোযোগী থাকা সহজ হয় এবং ক্লান্তি দূর হয়। ফলমূল, বাদাম, এবং শাকসবজি নিয়মিত খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত। সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত পানি পানও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ডিহাইড্রেশন শরীরে অবসাদ এবং মাথাব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।’’— যোগ করেন ডা. মাসুদা পারভীন মিনু।


এই চিকিৎসকের আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ—
অফিসের কাজের চাপ এবং নানা দুশ্চিন্তা মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যা শারীরিক স্বাস্থ্যেও প্রভাব ফেলে। কাজের মাঝে মাঝেমাঝে বিরতি নিন এবং গভীর শ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে মস্তিষ্ককে কিছু সময় বিশ্রাম দিন। কিছু অফিসে মেডিটেশন বা মানসিক প্রশান্তির জন্য ছোট গাইডলাইন দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া, সহকর্মীদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলাও মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।


ব্যায়ামের গুরুত্ব—
শারীরিক ব্যায়াম অত্যন্ত জরুরি। অফিসে দীর্ঘ সময় বসে কাজ করার কারণে শারীরিক অদক্ষতা বৃদ্ধি পায়, যা নানা রকমের রোগের আশঙ্কা সৃষ্টি করতে পারে, যেমন হৃৎপিণ্ডের রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ওজন বৃদ্ধি ইত্যাদি। তাই, অফিসের বাইরে কিছু সময় ব্যায়াম বা হালকা হাঁটাচলা করা উচিত। সপ্তাহে অন্তত তিন দিন ৩০ মিনিটের জন্য শরীরচর্চা করা উচিত, যেমন হাঁটা, দৌড়ানো বা যোগব্যায়াম। এতে শরীর সুস্থ থাকে এবং মানসিক চাপও কমে।

ব্লু লাইট থেকে সুরক্ষা পাওয়ার উপায়—
কম্পিউটারের স্ক্রিন এবং অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইস থেকে নির্গত ব্লু লাইট দীর্ঘসময়ে চোখের ক্ষতি করতে পারে এবং ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই, স্ক্রিনের দিকে তাকানোর সময় মাঝে মাঝে বিরতি নিন এবং প্রয়োজনে ব্লু লাইট ফিল্টার ব্যবহার করুন। অফিসে বসে কাজ করার সময় এসব স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলি অনুসরণ করা আমাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত জরুরি। স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা বজায় রাখতে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা কর্মীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদে সফলতা এবং সুস্থতা নিশ্চিত করবে।

ঢাকা/লিপি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ব স থ যকর ক জ কর র জন য সময় ব র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

সীতাকুণ্ডে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ মনোনয়নবঞ্চিত বিএনপি নেতার সমর্থকদের

চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ায় তাঁর বিক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থকেরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। সোমবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারী শহীদ মিনার এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করেন তাঁরা।

এ সময় বিক্ষোভকারীরা টায়ার জ্বালিয়ে স্লোগান দেন। এ ছাড়া মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করার খবর পাওয়া গেছে। রাত সাড়ে আটটার দিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করে মিছিল করছিলেন বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা।

এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ২৩৭ আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের নাম ঘোষণা করা হয়। বাদ পড়েন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী।

এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ২৩৭ আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে আসলাম চৌধুরীর কর্মী-সমর্থকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে দেন। এ সময় তাঁরা ‘দুর্দিনের আসলাম ভাই, আমরা তোমায় ভুলি নাই’ ‘আসলাম ভাইয়ের ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ এমন স্লোগান দেওয়া হয়।

বিক্ষুব্ধ বিএনপি নেতা-কর্মীরা বলছেন, আসলাম চৌধুরী দলের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ করেছেন। তিনি দলের জন্য কাজ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের রোষানলে পড়ে কারাবন্দী হন। দীর্ঘ সময় তিনি জেল-জুলুম অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করেছেন। অথচ এখন সুসময়ে দল তাঁকে বঞ্চিত করছে। তাঁরা দলের এ সিদ্ধান্ত মানেন না। তাই প্রতিবাদে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছেন তাঁরা।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি মো. মোরসালীন প্রথম আলোকে বলেন, আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রার্থী ঘোষণার পর বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। তাঁরা যে যাঁর জায়গা থেকে মহাসড়কে উঠে প্রতিবাদ শুরু করেন। তাঁরা অন্তত সীতাকুণ্ডের ৩০টি স্থানে মহাসড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।

ঘোষিত প্রার্থী কাজী মুহাম্মদ সালাউদ্দিন উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব কাজী মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের ছোট ভাই। একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম তাঁকে যোগ্য মনে করেছেন বিধায় তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে। তিনি দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন করতে চান। এর আগে ২০১৪ সালে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছিলেন।

ফৌজদারহাট পুলিশ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, ফৌজদারহাট-বন্দর সংযোগ সড়কের মাথা, ফৌজদারহাট, জলিল গেইট, ভাটিয়ারী, মাদামবিবিরহাট, কদমরসুল এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করেছেন বিএনপির নেতা–কর্মীরা। এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ রয়েছে। ফলে উভয় দিকে যান চলাচল বন্ধ। পুলিশ বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের সরাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ