যুদ্ধবিরতির পর ইউক্রেনে নির্বাচন চায় যুক্তরাষ্ট্র
Published: 2nd, February 2025 GMT
মস্কো ও কিয়েভ দ্রুত একটি শান্তিচুক্তি করতে পারলে বছরান্তে ইউক্রেনে সাধারণ নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক শীর্ষ প্রতিনিধির বরাতে এ খবর জানা গেছে।
রাশিয়া ও ইউক্রেন-বিষয়ক বিশেষ মার্কিন প্রতিনিধি কিথ কেলগ বলেছেন, যুদ্ধের কারণে দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন স্থগিত হয়ে পড়েছিল। সেটা দ্রুতই আয়োজন করা দরকার। অধিকাংশ গণতান্ত্রিক দেশে যুদ্ধের সময়েও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এটা প্রয়োজন বলেই আমি মনে করি। আমার বিশ্বাস, এটা গণতন্ত্রের জন্যও ভালো। আর গণতন্ত্রের সবচেয়ে সুন্দর দিক হচ্ছে, জনগণের হাতে একের অধিক ব্যক্তি থাকেন ভোট দেওয়ার জন্য।
ট্রাম্প এবং কেলগ উভয়েই বলেছেন, যুদ্ধ থামাতে প্রথম কয়েক মাসের মধ্যেই একটি চুক্তি সম্পাদন করার পরিকল্পনা করছে নতুন প্রশাসন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং একজন সাবেক কর্মকর্তা বলেন, যুদ্ধবিরতির প্রাথমিক ধাপ হিসেবে নির্বাচন আয়োজনের জন্য ইউক্রেনকে চাপ দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করছেন ট্রাম্পের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।
এদিকে ইউক্রেনজুড়ে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। শনিবারের এসব হামলায় অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছে। এ ছাড়া অনেক আবাসিক ভবন ও অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র মধ্যাঞ্চলীয় শহর পোলতাভার একটি আবাসিক ভবনে আঘাত হানে, এতে ১১ জন নিহত ও ১৬ জন আহত হয়। হতাহতের মধ্যে চার শিশু রয়েছে। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ভবন থেকে ২২ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সুমি অঞ্চলের একটি গ্রামে টহল দেওয়ার সময় ড্রোন হামলায় তিন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। আর উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় খারকিভে ড্রোন হামলায় একজন নিহত ও চারজন আহত হয়েছে। খবর রয়টার্স ও দ্য গার্ডিয়ানের
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ করছে চীন
মাকিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে চুক্তি বাতিলকারী দেশগুলোর জন্য একটি স্পষ্ট বার্তা নিয়ে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বিশ্বজুড়ে কূটনৈতিক প্রচারণা চালাচ্ছেন। আর তার সেই বার্তাটি হচ্ছে- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি দাঙ্গাবাজ দেশ, যাকে বিশ্বাস করা যায় না।
শুল্ক স্থগিতাদেশের সময় চীন ছাড়া সবদেশকে বাণিজ্য চুক্তিতে স্বাক্ষর করার জন্য ট্রাম্প যে ৯০ দিনের সময়সীমা দিয়েছেন, সেই সময়ের মধ্যে চীনা কর্মকর্তারা বিদেশী সরকারগুলোকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ঠেলে দেওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন। মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট জানিয়েছেন, একবার এই চুক্তিগুলো কার্যকর হয়ে গেলে, তিনি চান মার্কিন মিত্ররা ‘একটি দল হিসেবে চীনের সাথে যোগাযোগ করুক’, যাতে মার্কিন পক্ষ আলোচনায় আরো বেশি সুবিধা পায়।
দক্ষিণ কোরিয়া থেকে শুরু করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যন্ত মার্কিন মিত্ররা নিরাপত্তার জন্য ওয়াশিংটনের উপর নির্ভর করে এবং অর্থনৈতিকভাবে ট্রাম্পকে সন্তুষ্ট করার জন্য তাদের উৎসাহ রয়েছে। অবশ্য চীন আরো সমান তালে শুল্ক যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ট্রাম্পের শেষ বাণিজ্য যুদ্ধের পর থেকে বেইজিং মার্কিন রপ্তানি থেকে তার অর্থনীতিকে মুক্ত করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। দেশটিতে নিবেদিতপ্রাণ এবং সক্রিয় সৈন্য সংখ্যার বিচারে বিশ্বের বৃহত্তম সামরিক বাহিনী রয়েছে।
শি ট্রাম্পের সাথে ফোনে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন এবং তার সরকার ‘পাল্টাপাল্টি’ শুল্ক বাতিলের দাবি জানাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র জোর দিয়ে বলছে যে, অন্য পক্ষ, অর্থাৎ চীনকে উত্তেজনা কমানোর প্রথম পদক্ষেপ নিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে, চীন নিজেকে নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থার একজন চ্যাম্পিয়ন হিসেবে উপস্থাপন করছে এবং অন্যান্য দেশকে ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে বেইজিংয়ের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছে।
সাংহাইয়ের ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর আমেরিকান স্টাডিজের পরিচালক উ জিনবো বলেন, “এটি কেবল চীন-মার্কিন সম্পর্কে নয়। এটি আসলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে।”
গত বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনীতিবিদদের সাথে দেখা করার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেওয়া উ জানান, অন্যান্য সরকারেরও বুঝতে হবে বেইজিংয়ের প্রচেষ্টা তাদের উপকার করেছে।
তিনি বলেন, “যদি চীন আমেরিকার বিরুদ্ধে না দাঁড়াত, তাহলে আমেরিকা কীভাবে তাদের ৯০ দিনের বিরতি দিত। চীনের উপর শুল্ক আরোপের ফলে ট্রাম্প অন্যান্য দেশের উপর শুল্ক আরোপ বন্ধ করার জন্য আবরণ পেয়েছেন। তাদের এটা উপলব্ধি করা উচিত।”
চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ই সোমবার ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত ব্রিকস ব্লকের দেশগুলোকে ট্রাম্পের দাবি প্রতিহত করার জন্য বেইজিংয়ের সাথে যোগ দিতে আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, “আপনি যদি নীরব থাকেন, আপস করেন এবং পিছু হটতে চান, তাহলে এটি কেবল বুলিকে আরো আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে সাহায্য করবে।”
তার এই বক্তব্যের কয়েক ঘন্টা পরে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইংরেজি সাবটাইটেলসহ একটি ভিডিওতে ওয়াশিংটনকে ‘সাম্রাজ্যবাদী’ শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করে। সেখানে দাবি করা হয়েছে, গত শতাব্দীতে জাপানি রপ্তানি সীমিত করার মার্কিন পদক্ষেপ তোশিবার মতো কোম্পানিগুলোকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
ওয়াং ই বলেছেন, “একজন ধর্ষকের কাছে মাথা নত করা ঠিক তৃষ্ণা নিবারণের জন্য বিষ পান করার মতো, এটি কেবল সংকটকে আরো গভীর করে তোলে। চীন পিছু হটবে না যাতে দুর্বলদের কণ্ঠস্বর শোনা যায়।”
ঢাকা/শাহেদ