এখন একটু উল্টো পথে হাঁটছি: সালাহউদ্দিন লাভলু
Published: 3rd, February 2025 GMT
সালাহউদ্দিন লাভলু। অভিনেতা, নির্মাতা ও নাট্যকার। অভিনয়ের বাইরে প্রায় ২৭ বছর ধরে নাটক নির্মাণ করে আসছেন। চ্যানেল আইয়ে সম্প্রতি শুরু হয়েছে তাঁর নতুন ধারাবাহিক ‘আপন মানুষ’। তিনি শুরু করেছেন আরও একটি ধারাবাহিকের কাজ। নাম ‘ফুলগাঁও’। এ দুই ধারাবাহিক এবং অন্যান্য প্রসঙ্গে তিনি কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে।
‘আপন মানুষ’ সমাচার
সালাহউদ্দিন লাভলুর নতুন ধারাবাহিক ‘আপন মানুষ’। এটি রচনা করেছেন কাজী শহিদুল ইসলাম। নাটকটি নিয়ে দর্শক সাড়াও পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। তাঁর ভাষ্য, ‘দর্শক গ্রামীণ পটভূমির গল্পের নাটক বেশি পছন্দ করেন। এ কারণে বেশ সাড়া মিলছে। ইদানীং এ ধরনের গল্পকেই প্রাধান্য দিচ্ছি। গ্রামীণ জীবনকে আমি যেভাবে দেখি, সেভাবেই নাটকে তুলে ধরেছি। গ্রামের তরুণ প্রজন্ম নিয়ে এ নাটকের গল্প। ধারাবাহিকটি নিছক একটি প্রেমের নাটক নয়। প্রেম-ভালোবাসার পাশাপাশি দুঃখ, মায়া আর মুনাফার দ্বন্দ্বে ক্ষতবিক্ষত একটি জনপদের কথা এবং তাদের পাওয়া, না-পাওয়ার বিষয়গুলো এতে উঠে এসেছে।’
নাটকে নতুন মুখ
একসময় সালাহউদ্দিন লাভলুর নাটকে থাকত তারকা শিল্পীদের সমাহার। সময়ের পরিক্রমায় পাল্টেছে তা। এই অভিনেতা ও নির্মাতার নাটকের বেশির ভাগ শিল্পীই এখন নতুন। নতুনদের প্রাধান্য দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পরিচালনার ক্যারিয়ারে অনেক তারকা শিল্পী নিয়ে কাজ করেছি। এখন একটু উল্টে পথে হাঁটছি। এতে তারকা শিল্পীদের অবজ্ঞা করছি, বিষয়টি তা নয়। তারকা শিল্পীদের নিয়ে কাজ করা এই সময়ে একটু মুশকিল হয়ে পড়েছে। তাদের শিডিউল পাওয়া অনেক কঠিন। তা ছাড়া অভিনয়শিল্পী নতুন হলে চরিত্রগুলো দর্শকের বিশ্বাসযোগ্যতা পায়। চরিত্রটির মাঝে তারা চেনাজানা মানুষের ছায়া খুঁজে পান। এ কারণে ধারাবাহিকের কাজে নতুন শিল্পীদের প্রাধান্য দিই। নতুনরাও বেশ ভালো করছেন। নতুনদের অনেক নাটকটিই দর্শক প্রশংসিত হয়েছে।’
‘ফুলগাঁও’র দৃশ্যপট
গত ২৪ জানুয়ারি ছিল সালাহউদ্দিন লাভলুর জন্মদিন। জীবনের এই বিশেষ দিনে নাটকের শুটিং নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন। ওই দিন তিনি শুটিং করছিলেন তাঁর নতুন ধারাবাহিক ‘ফুলগাঁও’র। গ্রামীণ সমাজের জটিলতাবিহীন হাসিখুশি একটি গ্রামের মানুষের গল্প উঠে এসেছে এ নাটকে। গ্রামের সবাই ফুলচাষি। কেউ ফুলের চিকিৎসক, কেউ ফুলচাষিদের সমিতি নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটান। নাটকটিতে থাকছেন রঙের মানুষ, ভবের হাটেরই কলাকুশলীরা।
পুরোনো জুটির নতুন রসায়ন
মাসুম রেজা ও সালাহউদ্দিন লাভলু মানেই ভিন্ন কিছু। এই নাট্যকার-নির্মাতা জুটি আগে উপহার দিয়েছেন অনেক দর্শকপ্রিয় ধারাবাহিক। ২০১৪ সালে সর্বশেষ একসঙ্গে ‘ভিলেজ ইঞ্জিনিয়ার’ ধারাবাহিকে কাজ হয়েছে। পরে একক নাটক করলেও ব্যস্ততার কারণে আর একসঙ্গে ধারাবাহিক করা হয়নি। প্রায় এক যুগ পর ‘ফুলগাঁও’ নাটক দিয়ে আবার ফিরছেন এই জুটি।
লাভলু বলেন, ‘মঞ্চনাটক করতে গিয়ে মাসুম রেজার সঙ্গে আমার পরিচয় ও বন্ধুত্ব। সেই বোঝাপড়া নিয়েই আবার নতুন গল্প নিয়ে এক হয়েছি। দর্শকদের কাছে এখনকার নাটক গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে। ঘুরেফিরে আমাদের সেই নাটকগুলো নিয়েই কথা বলছেন দর্শক। সেই জায়গা থেকেই আবার একসঙ্গে কাজ শুরু করেছি। তবে এখন ধারাবাহিক নাটক নির্মাণ করা চ্যালেঞ্জিং। নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও চেষ্টা করছি ভালো কিছু করতে।’
সংকট নিয়ে ভাবনা
মিডিয়ার নানা সংকট ভাবায় সালাউদ্দিন লাভলুকে। টেলিভিশন মিডিয়ার জন্য বর্তমান সময়টা বেশ চ্যালেঞ্জিং উল্লেখ করে এ নির্মাতা ও অভিনেতা বলেন, ‘টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর জন্য সময়টা বেশ প্রতিকূল। বিজ্ঞাপন চলে গেছে দেশের বাইরের চ্যানেলে। উন্মুক্ত আকাশের কারণে সারা পৃথিবীতে ওয়েব সিরিজের জোয়ার বইছে। সেখানে নির্মাতাদের অনেক স্বাধীনতা রয়েছে। যা ভাবছেন, তাই করতে পারছেন। এটা এক ইতিবাচক দিক। কিন্তু অসুবিধার হচ্ছে, এখানে কোনো সেন্সরশিপ নেই। অনেক ওয়েব সিরিজ ড্রয়িংরুমে বসে দেখা মুশকিল। দর্শক চান পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধসম্পন্ন নাটক দেখতে। সেই জায়গাটা নষ্ট হয়েছে অনলাইন মিডিয়ার কারণে।’
অভিনয়ের উঠোনে
অভিনয়ে আর আগের মতো পাওয়া যায় না লাভলুকে। মাঝেমধ্যে ভালো গল্প ও চরিত্র পেলে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান তিনি। রায়হান রাফির ‘তুফান’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন। একই নির্মাতার ওয়েব ছবি ‘ব্ল্যাক মানি’তে অভিনয়ে দেখিয়েছেন মুন্সিয়ানা। কাজী আসাদের ‘আধুনিক বাংলা হোটেল’-এ সর্বশেষ অভিনয় করেছেন। এ রকম ভালো প্রজেক্ট পেলে আগামীতে কাজের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন এই নির্মাতা ও অভিনেতা।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশের কিস্তির প্রস্তাব উঠছে আইএমএফ পর্ষদে
আগামী ২৩ জুন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্বাহী পর্ষদের সভায় বাংলাদেশের সঙ্গে চলমান ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ ও পঞ্চম দুই কিস্তির অর্থ ছাড়ের প্রস্তাব উঠছে। সভায় অনুমোদন হলে একসঙ্গে দুই কিস্তির ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার পাবে বাংলাদেশ। আইএমএফ শুক্রবার কার্যসূচিতে নির্বাহী পর্ষদের সভার এ তারিখ নির্ধারণের তথ্য প্রকাশ করেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আইএমএফ পর্ষদের বৈঠকে চলমান ঋণ কর্মসূচির পর্যালোচনা প্রতিবেদন উপস্থাপনের কথা রয়েছে। এ প্রতিবেদন পর্ষদ অনুমোদন করলে বাংলাদেশ একসঙ্গে পাবে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ। ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য সাড়ে তিন বছর মেয়াদি ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে।
বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, ঝুঁকিতে থাকা ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়া এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশসম্মত প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা দিতে আইএমএফ ঋণ কর্মসূচি অনুমোদন করে। চলতি হিসাবের ঘাটতি বেড়ে যাওয়া, টাকার দরপতন ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার কারণে ওই সময় আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।
আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির মধ্যে বর্ধিত ঋণসহায়তা (ইসিএফ) ও বর্ধিত তহবিল সহায়তা (ইএফএফ) বাবদ ঋণ রয়েছে ৩৩০ কোটি ডলার। আর রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ) বাবদ রয়েছে ১৪০ কোটি ডলার। আরএসএফ আইএমএফের একটি নতুন তহবিল, যেখান থেকে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশকেই প্রথম ঋণ দেওয়া হচ্ছে।
২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের কাছ থেকে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ও ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। তিন কিস্তিতে আইএমএফের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি আছে ২৩৯ কোটি ডলার।
আইএমএফের ঋণের চতুর্থ কিস্তির অর্থ গত বছরের ডিসেম্বরে পাওয়ার কথা থাকলেও শর্ত পরিপালন নিয়ে বিশেষত টাকা–ডলার বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। গত ফেব্রুয়ারিতে অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি একসঙ্গে ছাড়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত এপ্রিলে আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল শর্ত পালনের অগ্রগতি পর্যালোচনায় ঢাকায় আসে। তবে সমঝোতা না হওয়ায় চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড় আটকে যায়। এরপর ওয়াশিংটনে গত ২১ থেকে ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে এ বিষয়ে আরও আলোচনা হয়।
সবশেষে গত মাসে এ নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে কয়েকটি ভার্চুয়াল বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১২ মে দুই পক্ষ চূড়ান্ত সমঝোতা হয় এবং বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করে বাংলাদেশ। ১৪ মে আইএমএফ ওয়াশিংটন থেকে এক বিবৃতিতে জানায়, দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে এবং পর্ষদ সভার অনুমোদন সাপেক্ষে ঋণের অর্থ ছাড় করা হবে জুনে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ৭৬ কোটি ডলার বাড়তি ঋণ চেয়েছে। বাড়তি ঋণ যোগ হলে মোট দাঁড়াবে ৫৪০ কোটি ডলার। বিবৃতিতে বিনিময় হার, রাজস্ব আদায়, ব্যাংক খাতসহ সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়।