খেলাধুলায় নিষিদ্ধ হলেন ‘ট্রান্স নারীরা’, নির্বাহী আদেশে সই করলেন ট্রাম্প
Published: 6th, February 2025 GMT
মেয়ে ও নারীদের খেলাধুলায় ট্রান্স নারীদের (রূপান্তরিত নারী) অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করে একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বুধবার এ আদেশে সই করেন তিনি।
নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ট্রান্সজেন্ডার (রূপান্তরিত নারী–পুরুষ) খেলোয়ারদের মেয়ে ও নারী শাখায় বিভিন্ন খেলায় অংশগ্রহণ এবং নারীদের লকার রুম ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়, সেসব প্রতিষ্ঠানে অর্থায়ন করা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকার বিরত থাকবে। খবর- আল জাজিরা
শিক্ষা খাতে ১৯৭২ সালে প্রণীত লৈঙ্গিক বৈষম্য দূরীকরণ আইনের (টাইটেল নাইন) কথা উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, আমরা করদাতাদের কাছ থেকে ডলার গ্রহণকারী প্রতিটি বিদ্যালয়কে নোটিশ দিচ্ছি, যদি আপনারা নারীদের খেলার দলে পুরুষদের (ট্রান্স নারী) নিয়ন্ত্রণ করতে দিতে চান এবং আপনাদের লকার রুমে প্রবেশ করতে দিতে চান, তাহলে আপনাদের বিরুদ্ধে টাইটেল নাইন লঙ্ঘনের তদন্ত হবে। কেন্দ্রীয় তহবিল পাওয়া ঝুঁকিতে পড়বে।
ট্রাম্প আরও বলেন, মেয়েদের খেলায় ট্রান্স নারীদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা তিনি আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির সাথে কথা বলবেন যাতে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে ২০২৮ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের আগেই লিঙ্গভিত্তিক অংশগ্রহণকে স্পষ্টভাবে সমর্থন করা যায়। অলিম্পিক কমিটি খেলাধুলায় ট্রান্স নারী–পুরুষের অংশগ্রহণের বিষয়টি আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর ওপর ছেড়ে দিয়েছে।
‘আমরা চাই, তারা অলিম্পিকের সঙ্গে সম্পর্কিত ও পুরোপুরি হাস্যকর এই বিষয়ের (মেয়েদের খেলায় ট্রান্স নারীদের অংশগ্রহণ) সঙ্গে সম্পর্কিত সবকিছু বদলে ফেলবে,’ যোগ করেন ট্রাম্প।
ট্রান্স নারীদের খেলায় অংশগ্রহণের বিষয়টি সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যুক্তরাষ্ট্রের সাংস্কৃতিক যুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে; যদিও মেয়েদের খেলায় অংশ নেওয়া ট্রান্স নারীদের সংখ্যা বেশ কম।
ন্যাশনাল কলেজিয়েট অ্যাথলেটিকস অ্যাসোসিয়েশনের (এনসিএএ) প্রেসিডেন্ট চার্লি বেকার গত ডিসেম্বরে সিনেট প্যানেলের সামনে এক শুনানিতে অংশ নিয়েছিলেন। তখন চার্লি বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ৫ লাখ ২০ হাজার খেলোয়াড়ের মধ্যে তিনি ১০ জনেরও কম ট্রান্স নারী খেলোয়ারের কথা জানেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অল ম প ক
এছাড়াও পড়ুন:
সংবাদ কে লিখেছে—মানুষ না এআই, এতে বিশ্বাসযোগ্যতা বদলায়
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি কিংবা করপোরেট বিবৃতি—পাঠকের কাছে এসব কতটা বিশ্বাসযোগ্য, তা নির্ভর করে লেখকের পরিচয়ের ওপর। যদি বলা হয়, লেখাটি একজন মানুষ লিখেছেন, তাহলে সেটি পাঠকের কাছে অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়। আর যদি বলা হয়, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) লিখেছে, তাহলে পাঠকের আস্থা কমে যায়।
বিষয়টি উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের কানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায়। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক গবেষণা সাময়িকী ‘করপোরেট কমিউনিকেশনস: অ্যান ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল’-এ গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষকেরা মত দিয়েছেন, সংকট পরিস্থিতিতে এআই ব্যবহার করা হলেও মানুষের দায়দায়িত্ব, সম্পাদনা ও জবাবদিহির জায়গাতে পাশ কাটানো যাবে না।গবেষণাটি পরিচালনা করেন কানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ক্যামেরন পিয়ার্সি, পিএইচডি গবেষক আইমান আলহাম্মাদ ও সহকারী অধ্যাপক ক্রিস্টোফার এথারিজ। গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা—লেখাটি মানুষ লিখেছে নাকি এআই, জানলে কি পাঠকের দৃষ্টিভঙ্গি বদলায়?
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই দৈনন্দিন জীবনের অনেক ক্ষেত্রে তার জায়গা করে নিচ্ছে। মানুষ এটি ব্যবহার করার বিভিন্ন উপায় খুঁজছে। এর ফল ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুইই হতে পারে। প্রায়ই এর ব্যবহারের কথা জানানো হয় না। কানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগবিষয়ক একটি স্নাতক ক্লাসে দেখা হয়, মানুষ ও এআইয়ের লেখার মধ্যে পার্থক্য বোঝা যায় কি না, আর তখনই এ গবেষণার ভাবনাটি আসে।
একজন সহগবেষক ক্যামেরন পিয়ার্সি বলেন, ‘মানুষ ও এআইয়ের লেখা আলাদা করতে না পারলেও লেখকের পরিচয় জানলে পাঠকের প্রতিক্রিয়া ভিন্ন হয় কি না, এটাই ছিল আমাদের মূল প্রশ্ন।’
দি বলা হয়, লেখাটি একজন মানুষ লিখেছেন, তাহলে সেটি পাঠকের কাছে অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়। আর যদি বলা হয়, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) লিখেছে, তাহলে পাঠকের আস্থা কমে যায়।গবেষণা পদ্ধতিগবেষণাটি ছিল বহুপদ্ধতিভিত্তিক বিশ্লেষণ। এতে অংশগ্রহণকারীদের একটি কাল্পনিক করপোরেট সংকট পরিস্থিতি জানানো হয়। ‘চাঙ্কি চকলেট কোম্পানি’-এর কিছু পণ্যের গ্রাহক অসুস্থ হয়ে পড়েন। কর্মীদের ইচ্ছাকৃত অপকর্মের কারণে এটা হয়েছিল।
অংশগ্রহণকারীদের তিন ধরনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পড়তে দেওয়া হয়: তথ্যভিত্তিক, সহানুভূতিশীল ও ক্ষমা প্রার্থনামূলক। প্রতিটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেই বলে দেওয়া হয়, সেটি একজন মানুষ কিংবা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা লিখেছে।
মানুষ ও এআইয়ের লেখা আলাদা করতে না পারলেও লেখকের পরিচয় জানলে পাঠকের প্রতিক্রিয়া ভিন্ন হয় কি না, এটাই ছিল আমাদের মূল প্রশ্ন।সহগবেষক ক্যামেরন পিয়ার্সিমানুষের লেখা হলে বিশ্বাস বেশিগবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, যাঁরা মনে করেছেন, সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি একজন মানুষ লিখেছেন, তাঁরা সেটিকে অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য ও কার্যকর বলে মনে করেছেন। কিন্তু যদি বলা হয়, একই বার্তাটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরি করেছে, তখন পাঠকের দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটা নিরপেক্ষ বা সন্দেহপ্রবণ হয়ে যায়।
তবে বার্তার ধরন—তথ্যভিত্তিক, ক্ষমা প্রার্থনামূলক বা সহানুভূতিশীল—এই তিনটির ক্ষেত্রে পাঠকের প্রতিক্রিয়ায় তেমন পার্থক্য দেখতে পাননি গবেষকেরা।
আপনি যদি লেখার কাজে এআই ব্যবহার করেন, তাহলে অবশ্যই স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে, ভুলের দায় নিতে হবে এবং পাঠকের প্রতিক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।গবেষক ক্রিস্টোফার এথারিজদায় মানুষেরইগবেষকেরা বলেছেন, সংকটকালীন সময়ে বা অন্য সময়ে করপোরেট বার্তায় যদি লেখকের পরিচয় গোপন রাখা হয়, তাহলে পাঠক মনে মনে প্রশ্ন তোলেন—কে দায়ী?
অন্যদিকে গবেষক ক্রিস্টোফার এথারিজ বলেন, ‘আপনি যদি লেখার কাজে এআই ব্যবহার করেন, তাহলে অবশ্যই স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে, ভুলের দায় নিতে হবে এবং পাঠকের প্রতিক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’
গবেষকেরা মত দিয়েছেন, সংকট পরিস্থিতিতে এআই ব্যবহার করা হলেও মানুষের দায়দায়িত্ব, সম্পাদনা ও জবাবদিহির জায়গাতে পাশ কাটানো যাবে না।