সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব জনবিরোধী, উপসচিব পদে কোনো কোটা মানা হবে না
Published: 8th, February 2025 GMT
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বিভিন্ন প্রস্তাবকে জনবিরোধী উল্লেখ করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ। বিসিএস প্রশাসন ছাড়া ২৫টি ক্যাডার নিয়ে গঠিত এই পরিষদের নেতারা বলছেন, উপসচিব পদে পদোন্নতিতে কোনো কোটা মেনে নেওয়া হবে না।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের নেতারা এ কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক শওকত হোসেন। এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন আরেক সমন্বয়ক মুহাম্মদ মফিজুর রহমান।
গত বুধবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী প্রতিবেদন জমা দেন। সংস্কার কমিশনের বিভিন্ন প্রস্তাবের বিরোধিতা করে আজ সংবাদ সম্মেলন করে আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০ ভাগ ও বাকি ২৫ ক্যাডারের জন্য ৫০ ভাগ কোটা দিয়ে হাস্যকর ও অযৌক্তিক প্রস্তাব করেছে। এমন কোটা মানা হবে না ঘোষণা দিয়ে কমিশনের এই প্রস্তাব সংশোধন করে শতভাগ পদোন্নতি সব ক্যাডারের জন্য উন্মুক্ত করার দাবি জানায় পরিষদ। সংস্কার কমিশনের বিভিন্ন প্রস্তাবকে জনবিরোধী বলে উল্লেখ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
সংবাদ সম্মেলনে শওকত হোসেন বলেন, ‘‘বিসিএস ২৫টি ক্যাডার কর্মকর্তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মতপ্রকাশ করায় ঢালাওভাবে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ১৪ জন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। কয়েকজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কার্যক্রম চলছে। কারণ দর্শানোর নোটিশ ছাড়া সামান্য অজুহাতে এ ধরনের প্রজ্ঞাপন জারি করা অত্যন্ত অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা মৌলিক অধিকার ও চাকরিবিধি পরিপন্থী।’’
শওকত হোসেন অভিযোগ করেন, প্রশাসন ক্যাডারের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ থাকলেও সে বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
বিভিন্ন দপ্তর থেকে ইতোমধ্যে যাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা প্রত্যাহার করে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার অনুরোধ জানান শওকত হোসেন। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ‘অন্যায় বরখাস্ত আদেশ’ প্রত্যাহার না করলে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সব ক্যাডার কর্মকর্তারা কর্মবিরতিসহ ধারাবাহিক কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডার–বহির্ভূত করার প্রস্তাব করতে চেয়েছিল; কিন্তু আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের প্রতিবাদের মুখে সরাসরি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডার–বহির্ভূত করার প্রস্তাব না রাখলেও সুকৌশলে শব্দগুলো ব্যবহার করা হয়েছে। নিয়োগপ্রক্রিয়ায় ভিন্নতা রাখা হয়েছে। যেন ধীরে ধীরে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডার থেকে বের করা যায়। শওকত হোসেন বলেন, ‘‘আমরা এ ধরনের চতুরতার তীব্র নিন্দা জানাই।’’
এক প্রশ্নের জবাবে মফিজুর রহমান বলেন, ‘‘জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কিছু প্রস্তাব সংবিধান ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। প্রতিবেদনের কিছু প্রস্তাব পরস্পরের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ। কমিশনের পুরো প্রস্তাব পেলে খুঁটিনাটি যাচাই করে লিখিত প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে।’’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গণপূর্ত ক্যাডারের কর্মকর্তা জামিলুর রহমান, স্বাস্থ্য ক্যাডারের মোহাম্মদ নেয়ামত হোসেন, প্রাণিসম্পদ ক্যাডারের মুহাম্মদ আহসান হাবীব, কৃষি ক্যাডারের কর্মকর্তা মো.
ঢাকা/আসাদ/এনএইচ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শওকত হ স ন
এছাড়াও পড়ুন:
২ বছর ধরে সভাপতি-সেক্রেটারি দিয়েই চলছে গাজীপুর মহানগর বিএনপি
২০২৩ সালের ১১ জুন ১৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের শর্তে গঠন করা হয়েছিল গাজীপুর মহানগর বিএনপির কমিটি। তবে দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো কমিটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হয়নি। ঝুট ব্যবসাসহ মহানগরের সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ এই দুই নেতার হাতে। এসব নিয়ে রাজপথের ত্যাগী নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
জানা গেছে, দুই বছর আগে গাজীপুর মহানগরের তেলীপাড়া এলাকায় অবস্থিত সাগর সৈকত কনভেনশন সেন্টারে বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে নতুন কমিটির সভাপতি ও সম্পাদকের নাম ঘোষণা করে। ওই কমিটির সভাপতি নির্বাচিত করা হয় কাশিমপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা শওকত হোসেন সরকার এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয় বিএনপির প্রয়াত নেতা গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র ও সাবেক মন্ত্রী অধ্যাপক এম এ মান্নানের ছেলে এম মঞ্জুরুল করীম রনি।
ওই দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেখানে গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি পদে তিনজন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে পাঁচজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।
পরবর্তীতে দুজন বাদে সবাই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করলে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় শওকত হোসেন সরকার সভাপতি এবং এম মঞ্জুরুল করীম রনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়।
নেতাকর্মীরা জানান, ১৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটির দেওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কমিটি হয়নি। যদিও নেতাদের পক্ষ থেকে বলা হয় কেন্দ্রে পূর্ণাঙ্গ কমিটির লিস্ট পাঠানো হয়েছে। তবে কেন বা কী কারণে এখনো কমিটি হয়নি সেটিও তাদের অজানা। দেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি জেলা গাজীপুরে এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় সাংগঠনিক গতিশীলতা হারিয়েছে।
সেইসঙ্গে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যেও সম্পর্ক ভালো নেই। তারা বিভিন্ন সময়ে জুট ব্যবসা ও অধিপত্য বিস্তার নিয়ে ঝামেলায় জড়িয়েছে। দিয়েছেন একে অন্যের বিপক্ষে বক্তব্য। যেহেতু সামনে নির্বাচন এজন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হওয়া দরকার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সব সময় আলাদা আলাদা প্রোগ্রাম করেন। মহানগর নেতা কর্মীর মধ্যেও এটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কে কার রাজনীতি করে সেতু এখন দিবালোকের মত স্পষ্ট। কেন্দ্রীয় প্রোগ্রামগুলোতে দুই নেতা আলাদা আলাদা লোক বল নিয়ে প্রোগ্রামে যোগদান করে। এখন পর্যন্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এক ব্যানারে রাজধানীর কোনো প্রোগ্রামে দেখা যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিএনপির নেতা বলেন, “তারা নিজেদের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিশেষ করে ব্যবসা নিয়েই ব্যস্ত। এখন পর্যন্ত কমিটি দেওয়ার বিষয়ে তাদের তেমন কোনো আগ্রহ দেখা যায় না। এতে মহানগর বিএনপির কার্যক্রম একপ্রকার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককেন্দ্রীক হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে দলের বদনামসহ ভোটের মাঠে প্রভাব পড়বে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম মঞ্জুরুল করীম রনি বলেন, “আমরা অনেক আগেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রে পাঠিয়েছিলাম কিন্তু রাজনৈতিক কারণ ও তখনকার নির্বাচনের পরিবেশের কারণে হয়তো কমিটি দেয়নি। দলের কেন্দ্র থেকে যখন চাইবে তখনই পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে। এই সিদ্ধান্তটি কেন্দ্রের।”
এ বিষয়ে মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেন সরকার বলেন, “আমাদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই, কিছু লোক দলীয় ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছে। মহানগর বিএনপির স্বতঃস্ফূর্তভাবেই একত্রে বিভিন্ন সভা সমাবেশ মিছিলে অংশগ্রহণ করছে। বিভিন্ন কারণেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি, আমরা আগেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রে পাঠিয়ে দিয়েছি।”
ঢাকা/এস