ঝুট ব্যবসাকে কেন্দ্র করে বিএনপির ২ পক্ষের সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ ১
Published: 9th, February 2025 GMT
ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় ঝুট ব্যাবসার দখল ও ঝুট ভর্তি ট্রাক ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টাকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পালটা ধাওয়াসহ সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।
রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টার দিকে উপজেলার জামগড়া চৌরাস্তা সংলগ্ন জামগড়া-বাগবাড়ি আঞ্চলিক সড়কে এ ঘটনা ঘটে।
এতে কাপ্তান মিয়া (১৬) নামে এক কিশোর গুলিবিদ্ধ হন। তিনি হবিগঞ্জ জেলার মো.
আশুলিয়ার নারী ও শিশু হাসপাতালের সহকারী ব্যবস্থাপক এইচ এম আসাফ উদ্দৌলা রিজভী বলেন, “আমাদের হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় কাপ্তান নামে এক কিশোরকে আনা হয়েছে। তার পিঠে গুলি লেগেছে, বর্তমানে সে চিকিৎসাধীন রয়েছে।”
স্থানীয়রা জানায়, আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার প্রীতি গ্রুপের প্রতিষ্ঠান প্রীতি কম্পোজিট টেক্সটাইল লিমিটেডের ঝুট দীর্ঘ দিন ধরেই নিয়ে আসছিলেন আশুলিয়া থানা তাঁতীদলের সহসভাপতি বকুল ভুইয়া। তবে সম্প্রতি যুবদলের সাবেক নেতা শরীফ চৌধুরী কারখানাটির ঝুটের ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। শরীফ চৌধুরী ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য দেওয়ান মো. সালাহউদ্দিন বাবুর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বকুল ভুইয়ার লোকজন কারখানা থেকে ঝুট নিয়ে যাওয়ার সময় শরীফ চৌধুরীর লোকজন ঝুটের ট্রাক লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ার পাশাপাশি ট্রাকটি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পালটা ধাওয়া, সংঘর্ষ ও বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারখানার এক কর্মকর্তা জানান, বকুল ভুইয়ার সঙ্গে কারখানার চুক্তি থাকলেও এই ঝুটের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতো তার ছেলে স্থানীয় যুবলীগ নেতা রনি ভুইয়া। সংঘর্ষ চলাকালে রনি ভুইয়ার লোকজনই উপস্থিত ছিল।
আশুলিয়া থানা তাঁতীদলের সহসভাপতি বকুল ভুইয়া বলেন, “কারখানার সঙ্গে আমার যাবতীয় চুক্তি রয়েছে। আজ সকালে শুনি শরীফ চৌধুরীর লোকজন কারখানার সামনে ঝামেলা করছে। পরে পুলিশকে জানালে তাদের সহযোগীতায় আমার লোকজন কারখানা থেকে ঝুট নিয়ে বেরিয়ে যায়। পথে ঝুটের ট্রাক শরীফ চৌধুরীর বাড়ির সামনে পৌঁছালে বাড়ির ছাদ থেকেই তারা গুলি করা শুরু করে। এক পর্যায়ে ট্রাকে আগুন দেয়। তাদের ছোড়া গুলিতে মঞ্জু নামে এক লেবারসহ আমাদের দুইজন লোক গুলিবিদ্ধ হয়েছে।”
এ সময় রনি ভুইয়ার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “রনি তো গত তিন মাস যাবত এলাকাতেই নেই।”
প্রীতি কম্পোজিট টেক্সটাইল লিমিটেডের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার রাকিবুল বলেন, “আমাদের কারখানা প্রাঙ্গণে কোন ঝামেলা হয়নি। শুনেছি, কারখানার বাইরে ঝামেলা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমাদের সঙ্গে বকুল ভুইয়া নামে একজনের ঝুটের চুক্তি রয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী তিনিই ঝুট নেন।”
ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিনুর কবীর বলেন, “যতদূর জানতে পেরেছি আজ রনি ভুইয়ারা ঝুট নিয়ে যাওয়ার সময় শরীফ চৌধুরীর লোকজনের সাথে, তাদের মধ্যে ধাওয়া পালটা ধাওয়া ও গুলির ঘটনা ঘটেছে। একজন গুলিবিদ্ধও আছে। পুলিশ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। বিশেষ করে কারা কারা এর সাথে জড়িত তাদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।”
ঢাকা/সাব্বির/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ল কজন আম দ র স ঘর ষ ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন নিহত হয়েছেন। এতে একজন শিক্ষকসহ হোটেলের দুই কর্মচারী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহত তিনজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
গতকাল শনিবার রাতে উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নের বড়িকান্দি গণি শাহ মাজার বাজারের একটি হোটেলে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে উভয় পক্ষের লোকজন এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন।
নিহত ব্যক্তির নাম শিপন মিয়া (৩০)। তিনি বড়িকান্দি ইউনিয়নের নুরজাহানপুর গ্রামের মোন্নাফ মিয়া ওরফে মনেক মিয়ার ছেলে। নবীনগর থানা সূত্রে জানা গেছে, ওই দুজনের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে অন্তত ২০টি মামলা আছে।
গুলিবিদ্ধ আহত ব্যক্তিরা হলেন বড়িকান্দি ইউনিয়নের থোল্লাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা এমরান হোসেন (৩৮) এবং হোটেলের দুই কর্মচারী—উপজেলার আলমনগর গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে ইয়াসিন মিয়া (২০) ও চরলাপাং গ্রামের রশিদ মিয়ার ছেলে নুর আলম (১৮)। এমরান উপজেলার শ্যামগ্রামের মোহিনী কিশোর স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক। তাঁর ভাই ঢাকায় কর্মরত পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) বিল্লাল হোসেন।
বড়িকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মনেক ডাকাত এলাকাটা শেষ করে ফেলেছেন। তাঁর কারণেই এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেড়েছে। মনেক ডাকাতদের কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে। গুলিতে মনেক ডাকাতের ছেলে নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় লোকজন, প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এলাকায় মোন্নাফ মিয়া ও তাঁর ছেলে শিপনের দীর্ঘদিন ধরে একক প্রভাব ছিল। তাঁদের সঙ্গে একই এলাকার থোল্লাকান্দি গ্রামের মিস্টার মিয়ার ছেলে আরাফাত মিয়ার বিরোধ চলছিল। শনিবার রাত আনুমানিক নয়টার দিকে বড়িকান্দি গণি শাহ মাজার বাজারের একটি হোটেলে শিপন মিয়া আড্ডা দিচ্ছিলেন। এ সময় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধের জেরে আরাফাতের নেতৃত্বে সশস্ত্র একটি দল হোটেলে ঢুকে গুলি চালায়। এতে শিপনসহ হোটেলের দুই কর্মচারী ইয়াসিন ও নুর আলম গুলিবিদ্ধ হন। গুলির শব্দে বাজারজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হামলার পর আরাফাত ও তাঁর সহযোগীরা দ্রুত পালিয়ে যান।
শিপনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর নুরজাহানপুরে পৌঁছালে মোন্নাফ মিয়ার নেতৃত্বে একদল লোক গণি শাহ মাজারের অদূরে তালতলায় এমরান হোসেনের কার্যালয়ে হামলা চালান। সেখানে এমরান গুলিবিদ্ধ হন। এরপর তাঁরা থোল্লাকান্দি গ্রামে হামলা চালিয়ে একাধিক বাড়িঘর ভাঙচুর করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। রাতে ঘটনাস্থলে অভিযান চালালেও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। কারণ, উভয় পক্ষের লোকজন বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। সংঘর্ষ এড়াতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গুলিবিদ্ধ কাউকেই শনিবার রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়নি। তাঁদের হয়তো অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, শিপনের ওপর হামলাকারী আরাফাত থোল্লাকান্দি গ্রামের এমরান হোসেনের আত্মীয়। এ কারণেই এমরানের কার্যালয়ে গিয়ে হামলা এবং তাঁকে গুলি করা হয়েছে।
নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিনুর ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নিহত শিপন ডাকাত দলের সদস্য ছিলেন। শিপন ও তাঁর বাবার বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে অন্তত ২০টি মামলা আছে। ওই ঘটনায় একজন শিক্ষকসহ তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ঘটনার পর থেকে সবাই পলাতক। তাই কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।