অনেক প্রশ্ন নিয়ে চালু হচ্ছে ফেরি
Published: 15th, February 2025 GMT
অবশেষে অনেক প্রশ্ন নিয়ে চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ নৌরুটে চালু হচ্ছে ফেরি। আগামী মাসে পুরোনো ফেরি দিয়ে চালু হবে এই সার্ভিস। সেপ্টেম্বের আসবে সি-ট্রাক। কিন্তু কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে আশ্বস্ত হতে পারছেন না সন্দ্বীপের ৪ লাখ মানুষ। কারণ গত তিন বছর ধরে বারবার সাইট নির্ধারণ ও পরিবর্তন, ফেরি সার্ভিস চালুর জন্য সংযোগ সড়ক নির্মাণে দুর্নীতি এবং কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তহীনতার মধ্যে আগামী মাসে ফেরি চালুর যে কথা বলা হচ্ছে তার সুফল কতটা পাওয়া যাবে, তা নিয়ে শঙ্কিত সন্দ্বীপবাসী।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ ফেরি সার্ভিস চালুর জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই ও প্রাক্কলন নির্ধারণ করতে বিআইডব্লিওটিএর পক্ষ থেকে গঠিত বিশেষ কমিটি তিনটি রুটের ঘাট পরিদর্শন শেষে ফেরি চলাচলের জন্য গাছুয়া (সন্দ্বীপ)-বাঁকখালী (সীতাকুণ্ড) রুট চূড়ান্ত করে। কমিটি আশ্বাস দেয়, ওই বছরের শেষে কাজ শুরু করতে পারলে ২০২৩ সালের শুকনো মৌসুমে গাছুয়া- বাঁকখালী নৌরুটে ফেরি চালু করা যাবে। যাত্রীদের যাতায়াতের জন্য ২০২৩ সালে গাছুয়ার আমির মোহাম্মদ নৌঘাটে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২ কিলোমিটার সড়কও নির্মাণ করে। অথচ চালু হয়নি ফেরি।
এরপর ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে কুমিরা-গুপ্তছড়া নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নেয় বিআইডব্লিউটিএ। এ লক্ষ্যে গুপ্তছড়া সেতুর পশ্চিম পাশে নতুন খালের মুখে ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হলেও পরে তা বন্ধ হয়ে যায়।
গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আবারও ফেরি সার্ভিস চালুর তোড়জোড় শুরু হয়। বিআইডব্লিউটিএর উদ্যোগে গঠিত কমিটিও ২৯ আগস্ট সাইট নির্ধারণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য পরিদর্শন শেষে ফেরি চলাচলের নির্দিষ্ট কোনো রুটের কথা জানাতে পারেনি।
গত ১৯ জানুয়ারি বাঁশবাড়িয়া অংশে ফেরিঘাটের উন্নয়ন কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন শেষে অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান জানান, মার্চেই ফেরি চলাচল শুরু হবে। সীতাকুণ্ড-সন্দ্বীপ নৌপথে ফেরি ও সি-ট্রাক চলাচলের ঘোষণায় দুর্দশার অবসান হতে চলছে জলবন্দি সন্দ্বীপবাসীর।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি কুমিরা ও গুপ্তছড়ার ঘাটসমূহের শুল্কায়ন, নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা এককভাবে সরাসরি বিআইডব্লিউটিএর অধীনে রাখার উদ্বোধনী সভায় ফেরি সার্ভিস চালুর বিষয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘মার্চের ১০ তারিখের মধ্যে ফিজিক্যাল ওয়ার্ক-পল্টন ও রাস্তার কাজ হয়ে যাবে। আমাদের কাছে ৬টি ফেরি আছে, সেখান থেকে ১টা এখানে চলবে। মার্চের পর এখানে এই ফেরিগুলো চলবে না। সার্টিফাই করা ৬টি নতুন সি-ট্রাক বানানো হচ্ছে। আগস্ট-সেপ্টেম্বরে সেগুলো পেয়ে গেলে একটা এই রুটের জন্য দেওয়া হবে।’
কাজের অগ্রগতির বিষয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের প্রধান প্রকল্প সমন্বয়ক কর্নেল এমরান ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, ‘ফেরি চলাচলের নিমিত্তে রাস্তার কাজটি ১০ মার্চের মধ্যেই শেষ হবে। রাস্তার সঙ্গে ফেরি চলাচলের আরও কিছু বিষয় আছে। রাস্তা থেকে র্যাম্প তৈরি, জোয়ার এবং ভাটার জন্য আলাদা পয়েন্টে দুটি ঘাট তৈরি, এগুলোর জন্য রাস্তা তৈরি, ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে জায়গাটি তৈরি করার জন্য বিআইডব্লিউটিএর সহায়তা প্রয়োজন।’
চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ নৌরুটে যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ ও জেলা পরিষদের ইজারাদার কর্তৃক চরম ভাড়া নৌরাজ্যে অতিষ্ঠ সন্দ্বীপবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ফেরি সার্ভিস চালু। বিআইডব্লিউটিসির তৎকালীন পরিচালক ও যুগ্ম সচিব রাশেদুল ইসলাম সন্দ্বীপের বিভিন্ন স্পট পরিদর্শন করে অচিরেই ফেরি সার্ভিস চালুর কাজ শুরু করার আশ্বাস দিয়েছিলেন।
ফেরি সার্ভিস চালুর রুট চূড়ান্ত হওয়ার পর যাত্রীদের যাতায়াতের জন্য গাছুয়ার আমির মোহাম্মদ নৌঘাটে ২ কিলোমিটার মাটির সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে। কাজ শেষ হয় জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে। সড়ক নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে নির্মাণের এক মাসের মাথায় জোয়ারের ঢেউয়ের আঘাতে গাইডওয়াল ভেঙে পড়ে। এতে মুখ থুবড়ে পড়ে গাছুয়া-বাঁকখালী রুটে ফেরি সার্ভিস চালুর উদ্যোগ। বর্তমানে সড়কটির দুই পাশের মাটি সরে গিয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর বিআইডব্লিউটিএর উদ্যোগে কুমিরা-সন্দ্বীপ নৌপথের উভয় প্রান্তে ফেরি চলাচলের সম্ভাব্যতা যাচাইপূর্বক ঘাট স্থাপনের সাইট সিলেকশন ও সন্দ্বীপ প্রান্তে উপকূলীয় বন্দর ঘোষণার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠিত হয়। ২৮ অক্টোবর বিআইডব্লিওটিএর চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সীতাকুণ্ডের কুমিরা ঘাট, সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ও আমির মোহাম্মদ ফেরিঘাট পরিদর্শন শেষে নদীর স্রোত আর জেগে ওঠা চরের কারণে ফেরি চলাচলের রুট ঠিক করে অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু করতে বিলম্ব হচ্ছে বলে জানান।
প্রথমে গাছুয়া- বাঁকখালী, এরপর কুমিরা- গুপ্তছড়া এখন আবার নতুন রুটের খোঁজে কমিটি গঠন করা হয়েছে। বারবার সাইট পরিবর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএর উপ পরিচালক (বন্দর ও পরিবহন) মো.
বাঁশবাড়িয়া- গুপ্তছড়া নৌপথে ফেরি সার্ভিস চালু করতে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ আছে এমন প্রশ্নের জবাবে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা বলেন, ‘ফেরি আদৌ চলাচল করতে পারবে কি না, এটা বড় চ্যালেঞ্জ। বর্ষা মৌসুমে এখানে সমুদ্র উত্তাল থাকে। জোয়ার ভাটার তারতম্য ৩ থেকে ৪ মিটার এমন জায়গায় দেশে কোথাও ফেরি নেই। সন্দ্বীপে প্রথমবারের মত হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য পরীক্ষামূলক বিষয়।’
নিয়মিত ড্রেজিংয়ের বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর উপ পরিচালক (বন্দর ও পরিবহন) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘বাঁশবাড়িয়া ও গুপ্তছড়ায় দুটি খাল নিয়মিত ড্রেজিং করার জন্য সারাবছর ড্রেজার লাগবে। আশা করি ড্রেজারের সংকট হবে না।’
সন্দ্বীপ নদী সিকস্তি পুনর্বাসন সমিতির কেন্দ্রিয় সদস্য সচিব ও গনসংহতি আন্দোলন জাতীয় পরিষদের সদস্য মনিরুল হুদা বাবন বলেন, ‘সন্দ্বীপ- চট্টগ্রাম ফেরী চালু হলো যাত্রীদের দুর্ভোগ কমার পাশাপাশি মালামাল পরিবহনের ভাড়াও অনেক কমে যাবে। যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ২০২৩ স ল ল র জন য গ প তছড় আগস ট স র স ইট
এছাড়াও পড়ুন:
৭৮০ কোটি টাকা মুনাফা করেছে পূবালী ব্যাংক
বেসরকারি খাতের পূবালী ব্যাংক ২ হাজার কোটি টাকার রেকর্ড পরিচালন মুনাফা করলেও বছর শেষে ব্যাংকটির নিট মুনাফা হাজার কোটি টাকা ছাড়ায়নি। গত বছর শেষে পূবালী ব্যাংকের নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৭৮০ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে ব্যাংকটি নিট মুনাফা করেছিল ৬৯৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির মুনাফা ৮২ কোটি টাকা বা প্রায় ১২ শতাংশ বেড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় গত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়।
আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদনের পাশাপাশি গত বছরের জন্য লভ্যাংশও অনুমোদন করা হয় গতকালের এই সভায়। গত বছরের জন্য ব্যাংকটি ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। যার মধ্যে সাড়ে ১২ শতাংশ নগদ ও সাড়ে ১২ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ। ২০২৩ সালেও ব্যাংকটি একই হারে শেয়ারধারীদের লভ্যাংশ দিয়েছিল।
ব্যাংকসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালে পূবালী ব্যাংক ঋণের সুদ থেকে ১ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা আয় করেছে। বিনিয়োগ, কমিশন, মুদ্রা বিনিময় ও ব্রোকারেজ থেকে আয় করেছে ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। তাতে সব মিলিয়ে আয় হয় ৪ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা। বিদায়ী বছরে বেতন-ভাতাসহ নানা খাতে খরচ হয় ১ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা। ফলে পরিচালন মুনাফা হয় ২ হাজার ৩০১ কোটি টাকা। ব্যাংকটি বিদায়ী বছরে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করে ৯৬১ কোটি টাকা। এরপর কর পরিশোধের পর নিট বা প্রকৃত মুনাফা হয় ৭৮০ কোটি টাকা।
জানতে চাইলে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভবিষ্যতের কথা বিবেচনায় আমরা চাহিদার বেশি নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করেছি। বাংলাদেশ ব্যাংক এই পরামর্শ দিয়েছে। খেলাপির তুলনায় বেশি সঞ্চিতি রাখার মাধ্যমে ব্যাংকটির ভিত্তি মজবুত করা হয়েছে।
ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালে পূবালী ব্যাংকের আমানত বেড়ে হয়েছে ৭৪ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। এ সময়ে ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ৬২ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা। আর খেলাপি ঋণের হার কমে নেমে এসেছে ২ দশমিক ৬৭ শতাংশে। ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন এখন ১ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা। আর কর্মীর সংখ্যা ১০ হাজার ৬৭৮। সারা দেশে ৫০৮টি শাখা ও ২২৭টি উপশাখা রয়েছে ব্যাংকটির। বর্তমানে বেসরকারি খাতে সবচেয়ে বেশি নেটওয়ার্ক পূবালী ব্যাংকের।