ইসরায়েলের ভূখন্ডে ঢুকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর নজিরবিহীন হামলা করে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকমী সংগঠন হামাস। সেদিনের ওই হামালায় এক হাজার ২০০ জন নিহত হন। হামাস ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে আসে। সেদিন থেকে গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ)। দীর্ঘ ১৫ মাসের অবিরাম যুদ্ধ গাজার ৪৭ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়।

এরপর গত ১৯ জানুয়ারি থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়। চুক্তি অনুযায়ী, ছয় সপ্তাহের প্রথম ধাপে হামাস ৩৩ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে। বিনিময়ে ইসরায়েলও তাদের জেলে আটক কয়েকশ ফিলিস্তিনি বন্দিকে ছেড়ে দেবে।

রেড ক্রসের তথ্যমতে, হামাসের ১৯ জন জিম্মির বিনিময়ে ১ হাজার ১৩৫ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল।

বিবিসির এক প্রতিবেদন বলছে, হামাস এ পর্যন্ত ১৯ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে। এখনও হস্তান্তর করা হয়নি ১৪ জনকে। ইসরায়েলের দাবি, ১৪ জনের মধ্যে আটজন মারা গেছেন। অর্থাৎ, প্রথম দফায় ছয়জন ইসরায়েলিকে ফিরিয়ে দেবে হামাস।

হামাস এক পৃথক চুক্তির আওতায় প্রথম দফায় পাঁচ থাই নাগরিককে মুক্তি দিয়েছে। 

যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় এই সময়ের মধ্যে ইসরায়েলি বাহিনীকে গাজার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা ছাড়তে হবে, আর বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা পাবে বাড়ি ফেরার অনুমতি। এই সময়ে প্রতিদিন শত শত ত্রাণবাহী লরিকে গাজায় ঢোকারও সুযোগ দেবে তেল আবিব।

চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা শুরু হবে প্রথম ধাপের ১৬তম দিনে। এই ধাপেই মুক্তি পাবে পুরুষ ইসরায়েলি সেনারা। তৃতীয় ও শেষ ধাপে হবে গাজার পুনর্গঠন, যা শেষ হতে লাগবে কয়েক বছর।

হামাসের কাছে এখন পর্যন্ত ৭০ জন জিম্মি রয়েছেন, যাদের ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। 

যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে, ইসরায়েল প্রায় ১ হাজার ৯০০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মক্তি দেবে। রেডক্রসের তথ্যমতে, এর আগে ৭৬৬ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেয় ইসরায়েল।

আজ শনিবার তিন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেয় হামাস। বিনিময়ে ৩৬৯ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেয় ইসরায়েল।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ইসর য় ল বন দ ক প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী

২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।

সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।

পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু

১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।

বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।

এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।

আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।

জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী