শেরপুরে চালকলের মাঠে ক্রিকেট খেলতে নিষেধ করায় কয়েকজন তরুণের বিরুদ্ধে ব্যাট দিয়ে পিটিয়ে এক যুবককে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।

নিহত ব্যক্তির নাম হাবিবুর রহমান তালুকদার ওরফে লেমন (৩২)। হাবিবুর শেরপুর পৌরসভার দিঘারপাড় এলাকার ধান–চাল ব্যবসায়ী গোলাম মোস্তফা তালুকদারের ছেলে। তিনি বাবার ব্যবসা দেখাশোনা করতেন।

গতকাল শনিবার রাতে রাজধানী ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাবিবুর রহমান মারা যান। এর আগে গত শুক্রবার বিকেলে কয়েকজন তরুণ দিঘারপাড় এলাকার চালকলে হাবিবুরকে ব্যাট দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন।
হাবিবুর রহমানের স্বজন কামরুল ইসলাম আজ রোববার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে হাবিবুর রহমানের লাশের ময়নাতদন্ত হবে। এরপর লাশ বাড়িতে আনা হবে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার বিকেলে শেরপুর পৌরসভার দিঘারপাড় এলাকায় হাবিবুরের বাবার মালিকানাধীন চালকলের মাঠে কয়েকজন তরুণ ক্রিকেট খেলতে যান। এ সময় হাবিবুর তাঁদের ক্রিকেট খেলতে নিষেধ করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয় কয়েকজন তরুণ তাঁকে ক্রিকেটের ব্যাট দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন। স্বজনেরা তাঁকে উদ্ধার করে শেরপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে প্রথমে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে ঢাকার মহাখালী মেট্রোপলিটন মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যান। মেট্রোপলিটন মেডিকেল হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে হাবিবুর রহমান মারা যান।

শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুবায়দুল আলম আজ সকালে বলেন, স্বজনদের মাধ্যমে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাবিবুরের মৃত্যুর বিষয়টি তিনি জেনেছেন। হাবিবুরকে মারধরের ঘটনায় ইতিমধ্যে সদর থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা হয়েছে। এখন সেটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হবে। ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত ও এর সঙ্গে জড়িত তরুণদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে পুলিশ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হ ব ব র রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরিতে না ফেরালে রাজপথ ছাড়বেন না ইআরপিপি স্বাস্থ্যকর্মীরা

পাঁচ মাস ধরে বেতন নেই। পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন কেউ, কেউ আবার চাকরির বয়সসীমা পার করে এখন আর নতুন কোথাও আবেদন করার সুযোগ পাচ্ছেন না। এর মধ্যেই প্রকল্প শেষের অজুহাতে চাকরিচ্যুত হয়েছেন তারা—যারা ২০২০ সালের করোনা মহামারির সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশের ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। এই অবস্থায় নিজেদের চাকরি স্থায়ীকরণ এবং অবিলম্বে বকেয়া বেতনের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ারডনেস (ইআরপিপি) প্রকল্পের আউটসোর্সিং স্বাস্থ্যকর্মীরা। 

আজ সোমবার বেলা ১১টা থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন।

আন্দোলনকারীরা বলছেন, তাদের প্রধান দাবি হলো স্থায়ীকরণের মাধ্যমে চাকরি বহাল রাখতে হবে এবং রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্তির লিখিত নিশ্চয়তা দিতে হবে। সেইসঙ্গে গত চার মাসের বকেয়া ভাতা অবিলম্বে পরিশোধ করতে হবে। তা না হলে অবস্থান কর্মসূচি চলবে, প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

বিক্ষোভরত কর্মীদের একজন বলেন, সরকারের ডাকেই তো আমরা এসেছিলাম। ভয়ঙ্কর সময় ছিল সেটা। তখন যদি পেছনে না ফিরে মানুষকে সেবা দিতে পারি, আজ যখন একটু স্থিতি এসেছে—তখন কেন আমরা উপেক্ষিত হবো? ৫ মাস ধরে একটা টাকাও পাইনি, পরিবার চালানো দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নিপসমে কর্মরত ইআরপিপির মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আবু সুফিয়ান বলেন, প্রায় পাঁচ বছর এই প্রকল্পে কাজ করেছি। এখন বয়স ৩৫ ছাড়িয়েছে। সরকারি চাকরির আবেদনের শেষ সীমা পেরিয়ে গেছি। এখন আমাদের বাদ দিয়ে নতুন অদক্ষ জনবল নেয়ার চেষ্টা চলছে। এটা শুধু অবিচার না, আমাদের মর্যাদায় আঘাত।

ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি সেন্টারের ডাটা অপারেটর আব্দুর রহমান বলেন, ঘরে ছোট বাচ্চা, স্কুলের বেতন দিতে পারিনি। স্ত্রী-সংসার নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছি। করোনার সময় এই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডাকেই আমি কাজে গিয়েছিলাম, এখন সেই অধিদপ্তরের সিঁড়িতেই বসে থাকতে হচ্ছে দাবি আদায়ের জন্য।

ইআরপিপি প্রকল্পের আওতায় কর্মরত এসব স্বাস্থ্যকর্মীদের অভিযোগ, করোনার সময় গড়ে তোলা আরটি-পিসিআর ল্যাব, ডেডিকেটেড আইসিইউ বা আইসোলেশন ইউনিটে তারাই প্রথম দিন থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন। অথচ আজ তাদের বাদ দিয়ে সেই পদে নতুন লোক নিয়োগের পাঁয়তারা চলছে। 

তারা বলছেন, আমরা চাকরি ভিক্ষা চাই না। আমরা যেটুকু প্রাপ্য, সেটুকু চাই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্প চলবে, তবে আমাদের চাকরি কেড়ে নেয়া হলো কেন? আমাদের রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত না করে অন্যদের সুযোগ দেওয়া মানে অবিচারকে পুরস্কৃত করা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ