আমাকে পুরস্কার দেওয়া হলে, তা ডাস্টবিনে ফেলে দেব: বিশাল
Published: 20th, October 2025 GMT
ভারতের তামিল সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতা-প্রযোজক বিশাল কৃষ্ণা রেড্ডি। শিশুশিল্পী হিসেবে রুপালি জগতে পা রাখেন। পরবর্তীতে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। ২০০৪ সালে ‘চেলামাই’ সিনেমায় নায়ক হিসেবে পর্দায় হাজির হন। এরপর ‘সান্ডাকোঝি’, ‘তিমিরু’, ‘বেদি’-এর মতো অনেক ব্যবসাসফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন
দুই দশকের বেশি সময়ের অভিনয় ক্যারিয়ারে এখনো ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাননি বিশাল। কয়েক দিন আগে ‘ইয়োর্স ফ্র্যাঙ্কলি বিশাল’ শিরোনামের পডকাস্টে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এই অভিনেতা। এ আলাপচারিতায় পুরস্কারের সংস্কৃতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তার ভাষ্য—“আমাকে পুরস্কার দেওয়া হলে তা ডাস্টবিনে ফেলে দেব।”
আরো পড়ুন:
‘কানতারা টু’ সিনেমার আয় ১ হাজার কোটি টাকার দোরগোড়ায়
সমালোচনা ভুলে ৩৮ বছরের ছোট নায়িকার সঙ্গে চিরঞ্জীবীর রোমান্স
‘চাক্রা’ তারকা বিশাল বলেন, “আমি পুরস্কারে বিশ্বাস করি না। পুরস্কার একেবারেই পাগলাটে ব্যাপার। সাত কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র চারজন মানুষ কীভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন—কে সেরা অভিনেতা, কে সেরা সহ-অভিনেতা বা কোনটি সেরা সিনেমা হবে? এরা কি সবার বস?”
ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাননি, এজন্য আফসোস নেই ‘মার্ক অ্যান্টনি’ তারকার। এ তথ্য স্মরণ করে বিশাল বলেন, “আমি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার নিয়েও একই কথা বলছি। আমি পুরস্কার পাইনি বলে এসব কথা বলছি না। তবে জরিপ করে মানুষের মতামত নেওয়া উচিত। এটা গুরুত্বপূর্ণ। এই পুরস্কার আসলে আটজন মানুষ বসে ঠিক করে কে সেরা অভিনেতা—এটা হাস্যকর। আমি পুরস্কারে বিশ্বাস করি না; এটা বাজে ব্যাপার।”
আয়োজকদের প্রতি অনুরোধ করে বিশাল বলেন, “আমি আয়োজকদের বলেছি, যদি আমাকে পুরস্কার দেওয়া হয়, আমি সেটা ডাস্টবিনে ফেলে দেব। যদি সেটা স্বর্ণ দিয়েও তৈরি হয়, আমি বিক্রি করে টাকাটা দান করে দেব। আমি তাদের অনুরোধ করি, আমাকে যেন পুরস্কার না দেওয়া হয়। বরং যে সত্যিকার অর্থে প্রাপ্য, তাকে দেওয়া হোক।”
ব্যক্তিগত কারণে পুরস্কার গ্রহণ করেন না বিশাল। তবে এটাও স্বীকার করেন যে, অনেকেই এই স্বীকৃতি গুরুত্ব সহকারে নেন, তাই আয়োজকদের প্রতি আহ্বান, যারা পুরস্কারকে মূল্য দেন, তাদেরই যেন সম্মান জানানো হয়।
উল্লেখ্য, তামিল সিনেমায় অবদানের জন্য ২০০৬ সালে বিশালকে কালাইমামানি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। জানা যায়, এ পুরস্কার তিনি গ্রহণ করেছেন। যদিও সেই মুহূর্তের কোনো ছবি খোঁজে পাওয়া যায়নি।
বিশাল এখন ‘মাগুডাম’ সিনেমার কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। অ্যাকশন-গ্যাংস্টার ঘরানার সিনেমাটিতে একাধিক চরিত্রে দেখা যাবে তাকে। এতে প্রধান নারী চরিত্রে অভিনয় করবেন দুশারা বিজয়ান। এটি পরিচালনা করছেন রবি আরাসু। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সালে এটি মুক্তির পরিকল্পনা করেছেন নির্মাতারা।
তথ্যসূত্র: পিঙ্কভিলা
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
পুতিনের ‘উড়ন্ত ক্রেমলিন’ যেন এক রাজপ্রাসাদ, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাসহ আর কী আছে ভেতরে
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নয়াদিল্লিতে অবতরণ করছেন। ভারত-রাশিয়া ২৩তম বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে তিনি ভারতে গেছেন। আনুষ্ঠানিক আলোচনার আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ রাতে রুশ প্রেসিডেন্টের জন্য ব্যক্তিগত নৈশভোজের আয়োজন করছেন।
দুই দেশের সরকারপ্রধানের আলোচনায় প্রতিরক্ষা ও সামরিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এর মধ্যে ভারতকে রাশিয়ার তৈরি এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এবং সম্ভাব্য এসইউ-৫৭ যুদ্ধবিমান সরবরাহ এবং রাশিয়ার তেলের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মধ্যে জ্বালানি সুরক্ষার মতো বিষয়গুলো গুরুত্ব পেতে পারে।
বিশ্বের অন্যতম সুরক্ষিত নেতা হিসেবে পুতিন রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার দুটি প্রতীক ছাড়া খুব কমই ভ্রমণ করেন। একটি হচ্ছে তাঁর বর্মসজ্জিত লিমুজিন ‘অরাস সেনাট’ এবং অন্যটি হচ্ছে তাঁর জন্য বিশেষভাবে তৈরি প্রেসিডেন্টের উড়োজাহাজ ইলিউশিন আইএল–৯৬–৩০০ পিইউ। এটি আবার ‘ফ্লাইং ক্রেমলিন’ বা ‘উড়ন্ত ক্রেমলিন’ নামে পরিচিত। এই উড়োজাহাজে চড়ে তিনি ভারত সফরে গিয়েছেন।
‘উড়ন্ত ক্রেমলিন’ সম্পর্কে যা জানা যায়ভ্লাদিমির পুতিনের উড়োজাহাজটি হলো ইলিউশিন আইএল-৯৬-৩০০-এর একটি বিশেষ পরিবর্তিত সংস্করণ। এটি হলো ১৯৮০-এর দশকে ইলিউশিন ডিজাইন ব্যুরোর তৈরি দূরপাল্লার, চার ইঞ্জিনবিশিষ্ট রুশ এয়ারলাইনার। এটি প্রথম ১৯৮৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর আকাশে উড়েছিল এবং ১৯৯০-এর দশকের প্রথম দিকে পরিষেবা শুরু করে।
আইএল-৯৬-৩০০পিইউ দূরপাল্লার আইএল-৯৬ প্ল্যাটফর্মে তৈরি, যার দৈর্ঘ্য ৫৫ দশমিক ৩৫ মিটার এবং ডানা বা উইংস্প্যান ৬০ দশমিক ১২ মিটার। এটি চারটি অ্যাভিয়াদভিগাটেল পিএস-৯০এ টার্বোফ্যান ইঞ্জিনের মাধ্যমে চালিত। জ্বালানি না ভরে এই উড়োজাহাজ প্রায় ১১ হাজার কিলোমিটার টানা উড়তে পারে, যা এটিকে দীর্ঘ আন্তর্জাতিক রুট উড্ডয়নের সক্ষমতা দেয়।
এই উড়োজাহাজ ভোরোনেজ এয়ারক্রাফ্ট প্রোডাকশন অ্যাসোসিয়েশনের (ভিএএসও) তৈরি। এটি রাশিয়ার বিশেষ ফ্লাইট স্কোয়াড্রনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, যারা রুশ প্রেসিডেন্টের সব ভ্রমণের ব্যবস্থা করে থাকে।
প্রেসিডেনশিয়াল ভ্যারিয়েন্টটিকে আইএল-৯৬-৩০০পিইউ হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। রুশ ভাষায় ‘পিইউ’-এর পূর্ণ অর্থ হলো পুনক্ট উপরাভলেনিয়া, যার অর্থ দাঁড়ায় ‘কমান্ড পয়েন্ট’ বা ‘কমান্ড পোস্ট’।
পুতিনের ‘উড়ন্ত ক্রেমলিন’–এর বিশেষত্বআইএল-৯৬-৩০০পিইউ জাতীয় জরুরি অবস্থার সময় সম্পূর্ণ একটি মোবাইল কমান্ড সেন্টার হিসেবে কাজ করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
এই উড়োজাহাজে এনক্রিপ্টেড যোগাযোগব্যবস্থা রয়েছে, যা সারা বিশ্বের সামরিক, গোয়েন্দা ও সরকারি নেটওয়ার্কগুলোর সঙ্গে সুরক্ষিত যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম।
উড়োজাহাজটি নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ বজায় রাখতে সুরক্ষিত স্যাটেলাইট লিংক এবং সুরক্ষিত রেডিও ও ডেটা চ্যানেল ব্যবহার করে থাকে। এর ককপিটে ছয়টি মাল্টিফাংশন এলসিডি ডিসপ্লে রয়েছে।
উন্নত হ্যান্ডলিং ও নিরাপদ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য জেটটিতে ‘ফ্লাই-বাই-ওয়্যার’ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়েছে। উড়োজাহাজটিতে ইলেকট্রনিক কাউন্টারমেজার এবং রাডার-জ্যামিং প্রযুক্তিসহ উন্নত প্রতিরক্ষাব্যবস্থা রয়েছে।
যেকোনো ধরনের হুমকি মোকাবিলার জন্য ইনফ্রারেড ডিকয় লঞ্চার (ক্ষেপণাস্ত্রকে বিভ্রান্ত করার কৌশল) এবং ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধব্যবস্থার মাধ্যমে এই উড়োজাহাজ সুরক্ষিত।
প্রতিবেদন অনুসারে, উড়োজাহাজটিকে ইলেকট্রনিকস ইলেকট্রোম্যাগনেটিক পালসের (ইএমপি) আক্রমণ থেকে সুরক্ষিত।
জানা যায়, আইএল-৯৬-৩০০পিইউ জরুরি কমান্ড ফাংশনকে সহায়তা করতে পারে। এখান থেকে প্রেসিডেন্ট আকাশ থেকে সামরিক আদেশ জারি করার সুবিধা পান।
ধারণা করা হয়, এই উড়োজাহাজে একটি পারমাণবিক কমান্ড ইন্টারফেস অন্তর্ভুক্ত করা রয়েছে। শুধু চরম পরিস্থিতিতে ব্যবহারের জন্য এটি তৈরি করা হয়েছে।
পুতিনের উড়োজাহাজে সুযোগ-সুবিধাআইএল-৯৬-৩০০পিইউ ভেতরে চলমান ক্রেমলিন বাসভবন হিসেবে কাজ করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদন ও সরকারি তথ্য অনুসারে, এটিকে সরকারি উড়োজাহাজের চেয়ে আকাশে একটি বিলাসবহুল প্রাসাদ হিসেবে বর্ণনা করা হয়।
বিমানটির ভেতরের সুযোগ-সুবিধার মধ্যে রয়েছে শয়নকক্ষসহ প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত স্যুট, বোর্ডরুমে বসার ব্যবস্থাসহ বড় কনফারেন্স রুম, প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত অফিস ও কাজের জায়গা, কর্মকর্তা বা গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জন্য গেস্ট লাউঞ্জ, বিলাসবহুল বাথরুম, যাতে গোসলেরও ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানা যায়।
এ ছাড়া রান্নাঘর ও খাবারের জন্য নির্দিষ্ট এলাকা, চিকিৎসাসুবিধা বা চিকিৎসা কক্ষ, দীর্ঘ ফ্লাইটে ব্যায়ামের জন্য ফিটনেস বা জিম স্পেস ইত্যাদি।
উড়োজাহাজের অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জাও বেশ চোখে পড়ার মতো। যেমন এতে রয়েছে সোনার প্লেট বসানো ফিটিংস, দামি কাঠের কাজ, নিওক্ল্যাসিক্যাল আসবাব, ট্যাপেস্ট্রি ও শিল্পকর্ম, প্রিমিয়াম চামড়া ও গৃহসজ্জার সামগ্রী।
অন্যান্য অনেক বিশ্বনেতা বোয়িং বা এয়ারবাসের পরিবর্তিত জেট ব্যবহার করলেও পুতিনের উড়োজাহাজটি পুরোপুরি রাশিয়ায় তৈরি।