ছেলের ফেসবুক লাইভের জেরে বিএনপি নেতার বাড়িতে দুই দফায় হামলা
Published: 19th, February 2025 GMT
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় ছেলের ফেসবুকে লাইভ দেওয়াকে কেন্দ্র করে উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি মফিজুর রহমানের বাড়িতে দুই দফায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা ও রাত ৯টার দিকে উপজেলার চৌমুহনী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি নেতার কুরিপাড়ার বাড়িতে এ হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মফিজুর রহমান উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি। সম্প্রতি তাঁর বড় ছেলে দাউদ উর রহমানকে উপজেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিবের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। গত রোববার রাত ৮টার দিকে দাউদ উর রহমান ফেসবুক লাইভে এসে নাম না করে বিএনপির কয়েকজন স্থানীয় নেতার চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মের বিষয়ে অভিযোগ করেন। ওই লাইভের সূত্র ধরেই মফিজুরের বাড়িতে হামলা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
হামলার শিকার মফিজুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ছেলের ফেসবুক লাইভ শেষ হলে একই দিন রাত ১১টার দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামাক্ষা চন্দ্র দাস তাঁর মুঠোফোনে ফোন করে ছেলের ফেসবুক লাইভ মুছে দিতে বলেন। এরপর গত সোমবার রাত ১০টার দিকে একদল যুবক তাঁর বাড়ির আশপাশে মহড়া দেন। স্থানীয় লোকজন ধাওয়া দিলে তাঁরা তাঁর ছেলেকে হুমকি দিয়ে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় তাঁর ছেলে বেগমগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
মফিজুর রহমানের অভিযোগ, গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ২০ থেকে ২৫ জন যুবক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাঁর বাড়িতে হামলা চালান। ওই সময় তাঁরা তাঁর বসতঘরের দরজা-জানালা, তিনটি মোটরসাইকেল, আসবাবপত্র, টিনের বেড়া ভাঙচুর করেন। সন্ত্রাসীদের হামলায় তাঁর ছেলে দাউদ, স্ত্রী পারভীনসহ পরিবারের পাঁচজন আহত হয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামাক্ষা চন্দ্র দাস প্রথম আলোকে বলেন, তিনি বিএনপি নেতা মফিজুর রহমানকে ফোন করেননি কিংবা কোনো ধরনের হুমকিও দেননি। তাঁর (বিএনপি নেতা মফিজুর) ছেলে ছাত্রদলের সদস্যসচিব দাউদ ইসলামকে মাদক সেবন, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মের কারণে চার মাস আগে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ কারণে তাঁরা নিজেরাই নিজেদের ঘর ভাঙচুর করে মিথ্যা অপপ্রচারে নেমেছেন।
বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিটন দেওয়ান হামলার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, এটা মনে হয় তাদের দলীয় কোন্দল। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তিন থেকে চারটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে। এক ব্যক্তি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ছ ল র ফ সব ক ব গমগঞ জ ব এনপ র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের
ভোলা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাইফুল্লাহ আরিফকে (৩০) হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তাঁর বাবা বশির উদ্দিন (মাস্টার) এই অভিযোগ করেন।
এ সময় বশির উদ্দিন বলেন, পুলিশ দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ার কোনো সুযোগ নেই; সেখানে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক।
এর আগে গত শনিবার পুলিশ সুপার শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক তদন্তের তথ্য অনুযায়ী অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে সাইফুল্লাহ আরিফ মারা গেছেন।
সাইফুল্লাহ আরিফ ভোলা পৌরসভার কালীবাড়ি রোডে নবী মসজিদ গলি এলাকার বশির উদ্দিনের ছেলে। গত ৩১ আগস্ট ভোরে নিজ বাড়ির সামনে থেকে সাইফুল্লাহ আরিফের লাশ উদ্ধার করা হয়।
আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে দুর্ঘটনায় নয়, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এর কিছু প্রমাণ আছে। আরিফের শরীরে একাধিক কাটা ও ভাঙা জখম ছিল, এমনকি হাতের রগ কাটা ছিল। পুলিশের দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুর সুযোগ নেই, কারণ, ছাদে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশ সুপার আমার ছেলেকে নেশাগ্রস্ত আখ্যা দিলেও তাঁর কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া পুলিশ কীভাবে এমন কথা বলতে পারে। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বশির উদ্দিন আরও বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফ কোনো ধরনের মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সে ছাত্রলীগের সহসভাপতি হলেও কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করেনি। হত্যাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ সত্য গোপন করছে। সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে মামলাটি সিআইডি বা পিবিআইয়ের কাছে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বশির উদ্দিন বলেন, তাঁর ছেলের সঙ্গে অনেকের বিরোধ ছিল। তবে জমিজমার বিরোধ ও মাদক ব্যবসার বিরোধ নিয়ে তাঁর ছেলে খুন হয়নি। এগুলোর সঙ্গে সে জড়িত ছিল না।
শনিবার পুলিশ শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফের মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনে প্রাথমিক তদন্ত শেষে জানা যায়, তিনি অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন। ৩০ আগস্ট দিবাগত রাত অনুমান ১২টা ১৫ মিনিটে রাতের খাবার শেষে সাইফুল্লাহসহ পরিবারের সবাই নিজ নিজ ঘরে ঘুমাতে যান। ভোর ৫টা ১০ মিনিটে ফজরের নামাজের জন্য বের হওয়ার সময় তাঁর বাবা বশির উদ্দীন (৭০) বাড়ির সামনে গেটের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলের মরদেহ দেখতে পান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। সুরতহালে দেখা যায়, আরিফের মাথা ও হাতে গুরুতর আঘাত ছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, আরিফ দীর্ঘদিন ধরে নেশায় আসক্ত ছিলেন এবং হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রায়ই ছাদে যেতেন। ঘটনার দিন রাতেও তিনি ছাদে ওঠেন এবং অসতর্কতাবশত রেলিংবিহীন অংশ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়ে মারা যান।
পরিবারের অভিযোগ সম্পর্কে আজ দুপুরে পুলিশ সুপার শরীফুল হক মুঠোফোনে বলেন, ‘ওই ঘটনায় তদন্ত চলমান। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক তদন্তের কথা জানানো হয়েছে। তদন্তে তথ্য সংযোগ-বিয়োগের সুযোগ রয়েছে।’