যশোরে প্রকাশ্যে কুপিয়ে সাড়ে ৮ লাখ টাকা ছিনতাই
Published: 19th, February 2025 GMT
যশোরের শার্শা উপজেলায় প্রকাশ্যে দিবালোকে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে সাড়ে ৮ লাখ টাকা ছিনতাই করা হয়েছে। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে শার্শার নাভারণ-সাতক্ষীরা মহাসড়কের উলাশী মাঠপাড়া এলাকায় ছিনতাই সংঘটিত হয়। এ ঘটনায় দুইজন ছিনতাইকারীকে ধরে জনতা পুলিশে দিয়েছে। অপর দুই ছিনতারকারী টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে।
আটক দুই ছিনতাইকারী হলেন, ঝিকরগাছা উপজেলার কলাগাছী গ্রামের জয়নাল হোসেনের ছেলে হৃদয় হোসেন (২৫) ও রবিউল ইসলামের ছেলে ফয়সাল হোসেন (২০)। টাকা নিয়ে পলাতক ছিনতাইকারী একই উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের তরিকুল ইসলাম (২৬) ও কলাগাছী গ্রামের রাব্বেল হোসেন (২৩)।
আহত ব্যবসায়ী রুহুল আমিন (৪৫) শার্শার বাগআঁচড়া বাজারের মৃত আফছার আলী মন্ডলের ছেলে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে শার্শা উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে যশোর ২৫০ শয্যা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
আরো পড়ুন:
ছিনতাইকারীকে ধাওয়া দিয়ে ধরলেন সার্জেন্ট মামুন
টাকা ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে যুবদল নেতা আটক
শার্শা থানা পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ব্যবসায়ী রুহুল আমিন বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নাভারণ, শার্শা ও উলাশী এলাকায় অন্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তার পাওনা টাকা আদায় করে মোটরসাইকেল যোগে বাগআঁচড়া যাচ্ছিলেন। এ সময় পূর্ব থেকে ওঁৎ পেতে থাকা চার জন দূর্বৃত্ত রামদা ও ধারালো চাকু নিয়ে শার্শার নাভারন-সাতক্ষীরা মহাসড়কের উলাশী মাঠপাড়া এলাকায় মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে পিছন থেকে রামদা দিয়ে কোপাতে থাকে। এ সময় রুহুল আমিন রাস্তার পাশে পড়ে গেলে তার কাছে ব্যাগে থাকা সাড়ে ৮ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়। টাকার ব্যাগ নিয়ে ছিনতাইকারী তরিকুল ও রাব্বেল মোটরসাইকেল করে পালিয়ে যায়। অন্য দুই ছিনতাইকারী ফয়সাল ও হৃদয় উলাশী মাঠের দিকে দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করলে মাঠে থাকা কৃষক আব্দুল কুদ্দুস তাদের ধরে জনতার হাতে তুলে দেয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্থানীয় উলাশী ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বদিউজ্জামান বদি বলেন, ব্যবসায়ীর সাড়ে ৮ লাখ টাকা ছিনতাই হয়েছে। দুই ছিনতাইকারীকে ধরে পুলিশে দেওয়া হয়েয়ে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম রবিউল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে শার্শা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সহযোগিতায় দুই ছিনতাইকারীকে আটক করেছে। অন্য দুই ছিনতাইকারীকে আটক ও ছিনতাইকৃত টাকা উদ্ধারেরর জন্য পুলিশের অভিযান চলছে।
ঢাকা/রিটন/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবস য় ইসল ম উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
কাজের আনন্দই জীবনের সার্থকতা
জন্মদিনের অনুষ্ঠান নয়, তবে অনানুষ্ঠানিক আয়োজনটি ছিল সে উপলক্ষেই। আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষাবিদ ও সুবক্তা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জন্মদিন ছিল গত ২৫ জুলাই। তাঁর অগণিত অনুরাগীরা চেয়েছিলেন তাঁকে নিয়ে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মিলিত হতে। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের যে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গেছে, তারপর আর জন্মদিনের অনুষ্ঠান করতে কিছুতেই সম্মত হননি তিনি।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ষষ্ঠতলায় কেন্দ্রের প্রাক্তনী ও তাঁর কিছু ঘনিষ্ঠজন আলাপচারিতার এক ঘরোয়া আয়োজন করেছিলেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে। সেখানে তিনি বললেন, কাজের মধ্য দিয়ে জীবনে যে আনন্দ পেয়েছেন, সেটিই জীবনের সার্থকতা। এই আনন্দই তাঁকে অনুপ্রাণিত করে, শক্তি জোগায়।
এ আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন। তিনি তাঁর চিরপরিচিত সরস অথচ বুদ্ধিদীপ্ত গভীর তাৎপর্যময় কথায় উত্তর দিয়েছেন। কবিতা, সাহিত্য, শিল্প থেকে শিক্ষা, ইতিহাস, দর্শন, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংগঠন, প্রেম–ভালোবাসা—সবকিছু উঠে আসে প্রশ্নোত্তরভিত্তিক কথোপকথনে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থেকে শুরু করে বিশ্বসাহিত্যের বহু কালজয়ী লেখকের রচনা থেকে প্রচুর উদ্ধৃতি দিয়েছেন তিনি। এক অন্তরঙ্গ প্রাণবন্ত আবহ বিরাজমান ছিল সন্ধ্যা থেকে অনেকটা রাত অবধি এই আয়োজনে।
আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় শুরুতেই আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের একটি কবিতা আবৃত্তি করে জানতে চান, তিনি কবিতার চর্চা করেননি কেন? জবাবে তিনি বলেন, কবি শামসুর রাহমান একবার তাঁকে বলেছিলেন, তাঁর মধ্যে কবিত্বের ঘাটতি আছে। তাঁর নিজেরও সে রকম মনে হয়েছে। তারপর সাহিত্য পত্রিকা কণ্ঠস্বর প্রকাশ ও অনেক রকম কাজ করতে গিয়ে আর কবিতা লেখা হয়ে ওঠেনি।
অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রশ্ন করেন, এখন একটা কঠিন সময় যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে কীভাবে দেখেন, কী আশা করেন তাদের কাছে?
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘তরুণেরা কী হবে, তা তরুণদের ওপরে নির্ভর করে না। সেটা নির্ভর করে আমরা তাদের কী বানাতে চাই, তার ওপর। দেখতে হবে তরুণদের গড়ার মতো আমাদের ক্ষমতা কতটা আছে। অর্থাৎ শিক্ষক কেমন হবে, তার ওপরে নির্ভর করে তাঁর ছাত্র কেমন হবে। সক্রেটিস শিক্ষক ছিলেন বলে ছাত্র প্লেটো হয়েছেন। প্লেটোর শিক্ষা পেয়ে ছাত্র অ্যারিস্টটল হতে পেরেছেন। বড়দের যদি বড়ত্ব না থাকে, তবে ছোটরা বড় হতে পারে না। দুর্ভাগ্য যে আমরা বড়রা তাদের সামনে আদর্শ দাঁড় করাতে পারিনি। ফলে এখন বড়দেরই ছোটদের পেছনে দাঁড়াতে হচ্ছে।’
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম জানতে চান, তিনি এত বিচিত্র ধরনের এত বিপুল কাজ করেছেন। এই প্রাণশক্তি পান কেমন করে?
উত্তর দিতে গিয়ে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘শক্তি আসে আনন্দ থেকে। কাজ করতে পারাটাই আনন্দের। আর সব সময় আশাবাদী থাকি। আশা কখনো শেষ হয় না। আশা শেষ মানে আমি শেষ।’
আলাপচারিতায় আরও অংশ নেন দুদক চেয়ারম্যান এম এ মোমেন, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, চিকিৎসক আমজাদ হোসেন, অভিনয়শিল্পী খায়রুল আলম সবুজ, কথাশিল্পী আনিসুল হক, ছড়াকার আমিরুল ইসলাম, উপস্থাপক আবদুন নূর তুষার, অভিনয়শিল্পী আফসানা মিমি, মশিউর রহমান, আলী নকী প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রাক্তনী খাদিজা রহমান।