শীতের শেষে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করেছে। একই সঙ্গে বাড়ছে বিদ্যুতের চাহিদা। মার্চে এটি আরও বাড়তে পারে। যদিও চাহিদার সঙ্গে মিলিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্র থাকলেও তা পুরোপুরি কাজে লাগছে না। ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অল্প সময়ের লোডশেডিং শুরু হয়েছে। তবে রোজার মাসে ভোগাতে পারে নিয়মিত লোডশেডিং।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র বলছে, গ্রীষ্ম সামনে রেখে মার্চে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার এবং এপ্রিলে ১৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা ধরা হয়েছে। গত বছর একই সময়ে ১২ থেকে ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে। এবার এটি ১৩ থেকে ১৫ হাজার মেগাওয়াট হতে পারে। ঘাটতি পূরণে গত তিন বছরের মতো এবারের গ্রীষ্মে লোডশেডিং করতে হতে পারে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ৫ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুৎ ভবনে গ্রীষ্মের প্রস্তুতি নিয়ে অনুষ্ঠিত সভা শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ১ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং হতে পারে। বিদ্যুৎ–ঘাটতি মেটাতে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) ব্যবহারে সতর্ক করেছেন তিনি। এসি ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে বলেও ১৭ ফেব্রুয়ারি জানিয়েছেন উপদেষ্টা।

গত বছর ১১ মার্চ রোজার মাস শুরু হয়। মার্চের মাঝামাঝি থেকে কিছু কিছু করে লোডশেডিং শুরু হয়। মাসের শেষ দিকে এটি বেড়ে সর্বোচ্চ এক হাজার মেগাওয়াটের মতো হয় কোনো কোনো দিন। এরপর এপ্রিলে বাড়তে থাকে লোডশেডিং।

তবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তারা বলছেন, লোডশেডিং আরও বাড়তে পারে। গ্যাস ও কয়লা থেকে ১৩ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যদিও গ্যাস ও কয়লার সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। আদানির বাইরে আমদানি থেকে আসবে এক হাজার মেগাওয়াট। বাকি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে তেলচালিত কেন্দ্র থেকে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের বকেয়া বিল পরিশোধ ও জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারলে দু–তিন হাজার মেগাওয়াট ঘাটতি হতে পারে। এতে প্রতিদিন দু–তিন ঘণ্টা লোডশেডিং হতে পারে গরমের সময়।

পিডিবি ও পাওয়ার গ্রিড পিএলসি লিমিটেডের তথ্য বলছে, চাহিদামতো উৎপাদন করতে না পারায় গত নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত লোডশেডিং অব্যাহত ছিল। এরপর শীতের কারণে চাহিদা কমতে থাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি হয়নি। গত তিন মাস বিদ্যুতের চাহিদা দিনে ১০ হাজার মেগাওয়াটের নিচে ছিল। ইতিমধ্যে এটি ১১ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে। আগামী মাসে এটি বাড়তে শুরু করবে। গতকাল বুধবারও ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১০০ মেগাওয়াটের মতো লোডশেডিং করা হয়েছে।

গত বছর ১১ মার্চ রোজার মাস শুরু হয়। মার্চের মাঝামাঝি থেকে কিছু কিছু করে লোডশেডিং শুরু হয়। মাসের শেষ দিকে এটি বেড়ে সর্বোচ্চ এক হাজার মেগাওয়াটের মতো হয় কোনো কোনো দিন। এরপর এপ্রিলে বাড়তে থাকে লোডশেডিং।

বর্তমানে একটি ইউনিট থেকে উৎপাদিত হচ্ছে ১০০ মেগাওয়াটের কম। এর বাইরে আদানিসহ সাতটি বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালিত হয় আমদানি করা কয়লা থেকে।কাজে লাগছে না উৎপাদন সক্ষমতা

বর্তমানে ১৪৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র মিলে উৎপাদন সক্ষমতা আছে প্রায় ২৭ হাজার মেগাওয়াট। দিনে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে ১৬ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াট, গত বছরের ৩০ এপ্রিল। এরপর আর কখনোই ১৬ হাজার মেগাওয়াটে যায়নি উৎপাদন; বরং নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ, বকেয়া বিলের চাপ ও জ্বালানি সরবরাহের অভাবে সক্ষমতার অর্ধেক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদন করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। পিডিবির কাছে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বিল পাওনা ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি। কেন্দ্র চালাতে জ্বালানি আমদানি নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো।

পিডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, গ্যাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা সাড়ে ১১ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। দিনে এখন গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে ৯০ কোটি ঘনফুট। বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে সাড়ে চার হাজার মেগাওয়াট। আগামী মাস থেকে ১২০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের কথা। এটি হলে সাড়ে ছয় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। তবে গ্যাস সরবরাহ নিয়ে শঙ্কা আছে। ডলারের সংকটে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) বিল নিয়মিত পরিশোধ করতে পারছে না পেট্রোবাংলা।

পিডিবির চেয়ারম্যান মো.

রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাস ও কয়লা থেকে সাড়ে ছয় হাজার মেগাওয়াট বেশি করে উৎপাদন হবে। প্রয়োজন বুঝে তেলচালিত কেন্দ্রও চালানো হবে। বকেয়া বিল ধীরে ধীরে পরিশোধ করা হচ্ছে। এখনো যেসব সমস্যা সামনে আসছে, সেগুলো সমাধান করা হচ্ছে। গ্রীষ্মে যাতে বিদ্যুৎ–ঘাটতি না হয়, এর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। লোডশেডিং না করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।

ভরসার কয়লা বিদ্যুৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা

রোজার মাসে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সর্বোচ্চ উৎপাদনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে আছে নানা অনিশ্চয়তা। কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা এখন প্রায় আট হাজার মেগাওয়াট। অথচ উৎপাদিত হচ্ছে তিন হাজার মেগাওয়াটের কম। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কারিগরি ত্রুটি, বকেয়া বিদ্যুৎ বিল, ডলারের সংকট ও কয়লা আমদানির জটিলতায় সরবরাহ ধরে রাখতে পারছে না বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো।

দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রে তিনটি ইউনিট মিলে সক্ষমতা ৫২৫ মেগাওয়াট। এটি নিজস্ব খনির কয়লা দিয়ে চলে। কয়লার অভাবে দুটি ইউনিট অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকে। বর্তমানে একটি ইউনিট থেকে উৎপাদিত হচ্ছে ১০০ মেগাওয়াটের কম। এর বাইরে আদানিসহ সাতটি বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালিত হয় আমদানি করা কয়লা থেকে।

১০ ফেব্রুয়ারির বৈঠকে আদানির কাছ থেকে পুরো বিদ্যুৎ সরবরাহ চেয়েছে পিডিবি। ৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট থেকে দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করার কথা তাদের। বর্তমানে একটি ইউনিট থেকে ৭৫০ মেগাওয়াটের একটু বেশি সরবরাহ করা হচ্ছে। ১১ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় ইউনিট চালু করার পর কারিগরি ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে যায়। এটি মেরামতের পর কবে চালু হবে, তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। অতীতেও একাধিকবার এমন ত্রুটির কারণে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ব্যাহত হয়। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির বকেয়া বিল পরিশোধে চাপ আছে আদানির। এ ছাড়া কয়লার দাম নিয়ে দুই পক্ষের বিরোধ নিষ্পত্তি হয়নি।

কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে সবচেয়ে বেশিবার বন্ধ হয়েছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার এ কেন্দ্রের একটি ইউনিট বন্ধ আছে কয়লার অভাবে। তাদের বকেয়া বিল জমেছে চার হাজার কোটি টাকার বেশি। কয়লার নিয়মিত সরবরাহ ধরে রাখতে পারছে না তারা। কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রে দুটি ইউনিট মিলে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট উৎপাদনের কথা। একটি ইউনিট বর্তমানে বন্ধ। প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার বিল পাওনা তাদের। তবে মার্চে দুটি ইউনিট চালু রাখা হবে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। কয়লার ঘাটতি নেই।

চট্টগ্রামের বাঁশখালী বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট বন্ধ আছে। আজ বা আগামীকালের মধ্যে এটি উৎপাদনে আসার কথা। পটুয়াখালীর পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছে। ১ মার্চ থেকে এটি চালু হতে পারে। দুটি কেন্দ্রেই পর্যাপ্ত কয়লার মজুত আছে। পটুয়াখালীতে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরেকটি কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করতে যাচ্ছে। মার্চে এ কেন্দ্রের একটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যেতে পারে।

তেল আমদানি না করার সিদ্ধান্ত গতকাল পিডিবিকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। পিডিবি তেলের ব্যবস্থা করলে তাঁরা গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবেন।বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের সংগঠন বিইপিপিএ সভাপতি কে এম রেজাউল হাসনাত জ্বালানির ওপর নির্ভর করবে লোডশেডিং

জ্বালানি তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদন সক্ষমতা আছে প্রায় ছয় হাজার মেগাওয়াট। ব্যয়বহুল এসব কেন্দ্র মূলত রাতের বেলায় সর্বোচ্চ চাহিদার সময় চালানো হয়। গত গ্রীষ্মে দিনে সাড়ে চার হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত উৎপাদন করা হয়েছে। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকেরা বলছেন, তাঁরা এত দিন নিজেরা তেল আমদানি করে কেন্দ্র চালাতেন। তেল খালাসের জন্য ৯ শতাংশ সার্ভিস চার্জ পেতেন তাঁরা। এটি সম্প্রতি কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এখন কেউ আর তেল আমদানি করবেন না। এতে উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে।

বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের সংগঠন বিইপিপিএ সভাপতি কে এম রেজাউল হাসনাত প্রথম আলোকে বলেন, তেল আমদানি না করার সিদ্ধান্ত গতকাল পিডিবিকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। পিডিবি তেলের ব্যবস্থা করলে তাঁরা গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবেন।

জ্বালানি নিশ্চিত না করেই একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র করেছে গত আওয়ামী লীগ সরকার। শুধু জ্বালানির অভাবে গড়ে ২৫ শতাংশের বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস বসে বসে কেন্দ্রভাড়া নেয়। এভাবে খরচ বাড়িয়ে দায় চাপানো হয়েছে ভোক্তার ওপর। দেড় দশকে বিদ্যুৎ খাতে ১৪ বার বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম। এরপরও গরম এলেই ভুগতে হয় লোডশেডিংয়ে। ২০২২ সাল থেকে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা ডলারের সংকট তৈরি হয়। ওই সময় থেকেই প্রতি বছর গ্রীষ্ম মৌসুমে ব্যাপক লোডশেডিং করা হয়।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ম তামিম প্রথম আলোকে বলেন, লোডশেডিং তো হবেই। এটা কতটা সহনীয় রাখা যায়, সেই চেষ্টা করতে হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা মূলত নির্ভর করছে আমদানি করা কয়লা ও এলএনজির ওপর। জ্বালানির এই দুই খাতে বরাদ্দের ওপর নির্ভর করছে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ। এ ছাড়া বিদ্যুতের চাহিদা নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিদ্যুৎ–সাশ্রয়ী বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে পারে সরকার।

শেষ সাবহেডে হাসনাতের কমেন্টে বলা আছে, পিডিবি তেল দিলে উৎপাদন করা হবে!এটা চেঞ্জ করে পিডিবি তেলের ব‍্যবস্থা করে দিলে লিখলেই হবে।

লোডশেডিং তো হবেই। এটা কতটা সহনীয় রাখা যায়, সেই চেষ্টা করতে হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা মূলত নির্ভর করছে আমদানি করা কয়লা ও এলএনজির ওপর।সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ম তামিম

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব দ য ৎ সরবর হ ক ন দ র র একট ব দ য ৎ উৎপ দ ইউন ট থ ক ত ল আমদ ন উপদ ষ ট ক ষমত র গত বছর র পর ক পর শ ধ ও কয়ল কয়ল র র ওপর বলছ ন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা

কারিগরি ক্ষতির (সিস্টেম লস) নামে গ্যাস অপচয় বাড়ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্যাস বিতরণ লাইনে অপচয় হয়েছে গড়ে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ গ্যাস। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরের (২০২৪-২৫) মার্চ পর্যন্ত অপচয় হয়েছে ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এতে আর্থিক ক্ষতি ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। এর বাইরে সঞ্চালন লাইনে অপচয় হয়েছে ২ শতাংশ।

‘দেশের জ্বালানিনিরাপত্তা: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়; গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এতে বলা হয়, ২ শতাংশ অপচয় গ্রহণযোগ্য, তাই ওইটুকু সমন্বয় করেই আর্থিক ক্ষতির হিসাব করা হয়েছে। গ্যাসের অপচয় রোধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে ছয়টি গ্যাস বিতরণ সংস্থা।

পেট্রোবাংলা বলছে, গ্যাস অপচয়ের জন্য দায়ী হচ্ছে পুরোনো, জরাজীর্ণ পাইপলাইন; গ্যাস সরবরাহ লাইনের গ্যাসস্টেশন রাইজারে লিকেজ (ছিদ্র); তৃতীয় পক্ষের উন্নয়নকাজে পাইপলাইন ছিদ্র হওয়া এবং আবাসিক খাতে প্রচুর অবৈধ সংযোগ। তবে এসব অপচয় রোধে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানায় পেট্রোবাংলা। এর মধ্যে রয়েছে গ্যাস সরবরাহব্যবস্থায় মিটারিং/ মনিটরিং ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা; লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কারিগরি ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখা; অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও উচ্ছেদ কার্যক্রম জোরদার করা এবং আবাসিক গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা।

দেশের গ্যাস খাতের চিত্র তুলে ধরে সেমিনারে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন। তিনি বলেন, দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমতে কমতে ১৫ বছর আগের জায়গায় চলে গেছে। গ্যাস অনুসন্ধান জোরদারের কোনো বিকল্প নেই। গ্যাস চুরি ও অপচয় কমাতে হবে। সঞ্চালন ও বিতরণ মিলে কারিগরি ক্ষতি প্রায় ১০ শতাংশ, যা অনেক বেশি। সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতি কোনোভাবেই ২ শতাংশ হওয়ার কথা নয়। এটা ভালো করে দেখা উচিত।

শিল্পে নতুন সংযোগে গ‍্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান বলেন, সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতির বিষয়টি গভীরভাবে দেখা হচ্ছে। অবৈধ সংযোগ বন্ধে পেট্রোবাংলা তৎপর আছে, খোঁজ পেলেই বিচ্ছিন্ন করা হবে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিল্পে নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে গ‍্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, যেহেতু তারা বেশি দাম দেবে। তাই অগ্রাধিকার বিবেচনা করে তিনটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। প্রথম ধাপের তালিকায় থাকছে, যেসব কারখানায় এখনই সংযোগ দেওয়া যাবে। এগুলো পরিদর্শন প্রায় শেষের দিকে, আগামী সপ্তাহে শেষ হয়ে যাবে।

সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহ করতে নতুন টার্মিনাল নির্মাণে অগ্রাধিকার পাচ্ছে স্থলভাগের টার্মিনাল। মহেশখালীর মাতারবাড়ী এলাকায় এটি করা হবে। এটি হলে কম দামের সময় বাড়তি এলএনজি কিনে মজুত করা যাবে। তবে এগুলো রাতারাতি করা যায় না, পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে।

জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে

তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি (পিএসসি) নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) মো. শোয়েব। তিনি বলেন, স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য তৈরি পিএসসির খসড়া জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ৫০টি কূপ সংস্কার, উন্নয়ন ও খননের প্রকল্পে ইতিমধ্যে ১৮টির কাজ শেষ হয়েছে। জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে। ৪টি কূপের কাজ চলমান। এ ছাড়া পেট্রোবাংলার বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যক্রম তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. আবদুল মান্নান পাটওয়ারী।

সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে

পেট্রোবাংলার আর্থিক দিক তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (অর্থ) এ কে এম মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, গত অর্থবছরে পেট্রোবাংলার রাজস্ব আয় ৫৪ হাজার ১১৭ কোটি টাকা, এর মধ্যে অর্ধেক বকেয়া। গত মে পর্যন্ত গ্যাস বিল বকেয়া ২৭ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। এটি ধীরে ধীরে কমে আসছে। ১৩–১৫ হাজার কোটিতে বকেয়া নেমে এলে সন্তোষজনক। সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে ১৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। এরপর সার কারখানায় বকেয়া আছে ৯৬৪ কোটি টাকা। তবে বিদেশি কোনো কোম্পানির কাছে বিল বকেয়া নেই পেট্রোবাংলার। সব বিল শোধ করা হয়ে গেছে।

গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা

পেট্রোবাংলা বলছে, এলএনজি আমদানি শুরুর পর থেকে লোকসান শুরু হয় সংস্থাটির। প্রতিবছর সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নিচ্ছে পেট্রোবাংলা। ২০১৮-১৯ সালে এলএনজি আমদানি শুরু হয়, ওই বছর ভর্তুকি ছিল ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এরপর এলএনজি আমদানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভর্তুকিও বাড়তে থাকে। গত অর্থবছরে তারা ভর্তুকি নিয়েছে ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত পেট্রোবাংলা মোট ভর্তুকি নিয়েছে ৩৬ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। পেট্রোবাংলার হিসাবে গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিট গ্যাস সরবরাহে পেট্রোবাংলার খরচ হয়েছে ২৭ টাকা ৫৩ পয়সা। তারা বিক্রি করেছে ২২ টাকা ৯৩ পয়সায়। এর মানে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা ৬০ পয়সা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বেড়েছে মাছ, মুরগি ও ডিমের দাম
  • ইরানের ভুলে আজারবাইজান যেভাবে ইসরায়েলের দিকে ঝুঁকে পড়ল
  • গাজায় দুর্ভিক্ষের অংক
  • গ্যাস সংকট
  • ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতে যেসব খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে
  • ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ
  • কাফকো সার কারখানায় গ্যাস বিক্রির চুক্তি সই
  • গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা
  • পাবনায় আগাম পাটের বাজার চড়া, বেশি দাম পেয়ে কৃষক খুশি
  • নবায়নযোগ্য জ্বালানির যুগ কড়া নাড়ছে দরজায়