শৈলকুপায় গুলিতে নিহত ৩: চরমপন্থি সংগঠনের বিরোধ নাকি বাঁওড় দখল, মিলছে না সূত্র
Published: 22nd, February 2025 GMT
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলায় তিনজনকে গুলি করে হত্যার পর আবারও সামনে এসেছে চরমপন্থি সংগঠনের তৎপরতা। শুক্রবার রাতে উপজেলার ত্রিবেণী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের শ্মশান ঘাটে তাদের গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পরে রাতেই স্থানীয় সাংবাদিকদের হোয়াটসআপ গ্রুপে বার্তা পাঠিয়ে কুষ্টিয়া এলাকার চরমপন্থি সংগঠন জাসদ গণবাহিনীর নেতা কালু দায় স্বীকার করেন। একই সঙ্গে তিনি নিহত হানিফের অন্য অনুসারীরা সংশোধন না হলে তাদের পরিণতিও একই হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন।
২০১৫ সালে একই শ্মশান ঘাটে গণবাহিনীর পাঁচ কর্মীকে গুলি করে ও গলা কেটে হত্যা করে প্রতিপক্ষ। ধারণা করা হচ্ছে, এরই প্রতিশোধ নিতে শুক্রবার রাতে ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুর আহাদনগর গ্রামের রাহাজ উদ্দিনের ছেলে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি জনযুদ্ধের (লাল পতাকা) সামরিক কমান্ডার হানিফ আলী (৫৬), তার শ্যালক একই উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের উন্মাদ আলীর ছেলে লিটন হোসেন (৩৮) ও কুষ্টিয়া ইবি থানার পিয়ারপুর গ্রামের আরজান হোসেনের ছেলে রাইসুল ইসলাম রাজুকে (২৮) হত্যা করা হয়।
রাজুর লাশ ধানক্ষেতে পানির মধ্যে পড়ে ছিল। হানিফ ও লিটনের লাশের পাশ থেকে পুলিশ দুটি পালসার মোটরসাইকেল ও দুটি হেলমেট জব্দ করে। তিনজনেরই মাথা ও বুকে গুলির চিহ্ন রয়েছে। ঘটনাস্থলে শটগানের সাত ও পিস্তলের ছয় রাউন্ড গুলি পাওয়া যায়। শুধু শটগানের চার রাউন্ড গুলি বিস্ফোরিত ছিল।
হানিফ নব্বই দশকে ঝিনাইদহ সদর ও হরিণাকুণ্ডু থানা, চুয়াডাঙ্গা সদর, আলমডাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকার ত্রাস ছিলেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১৪টি হত্যাসহ অসংখ্য মামলা রয়েছে। হরিণাকুণ্ডুর কুলবাড়িয়ার আব্দুর রহমান হত্যা মামলায় আদালত হানিফের মৃত্যুদণ্ড দেন। পরে রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমায় মুক্তি পান। পতিত আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। কেউই তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস করেনি।
২০১৪ সালে জেল থেকে বের হন হানিফ। ২০১৭ সালে হরিণাকুণ্ডুর নারানকান্দি বাঁওড়ের মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি জিয়াউল হককে গুলি করে হত্যা করেন তিনি। এর পর থেকে বাঁওড় দখলে রেখে মাছ চাষ করে আসছিলেন। হানিফ নিজে হরিণাকুণ্ডু উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ছিলেন। তার এক ভাই উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি; আরেক ভাই উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে বাঁওড় দখলে আরও কয়েকটি চরমপন্থি সংগঠন তৎপর হয়ে ওঠে। এ নিয়ে হানিফের সঙ্গে তাদের বিরোধ চরমে পৌঁছে। এরই জেরে জাসদ গণবাহিনী তাদের হত্যা করে থাকতে পারে।
নিহতদের স্বজন বলছেন, হত্যাকাণ্ডের আগে তিনজনকেই মোবাইলে কল করে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। তবে কারা কল দিয়েছিল, তা জানাতে পারেননি। পুলিশও এ হত্যাকাণ্ডের কোনো সূত্র পাচ্ছে না।
শনিবার শৈলকুপা থানায় আসা নিহতের স্বজন জানান, হানিফের সঙ্গে সম্প্রতি হরিণাকুণ্ডু উপজেলার রামদিয়া বাঁওড়ের দখল নিয়ে পার্শ্ববর্তী চুয়াডাঙ্গার তিয়োড়বিলের স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীর বিরোধ তৈরি হয়। প্রায়ই তারা বাঁওড়ের মাছ ধরে নিয়ে যেতেন বলে অভিযাগ রয়েছে।
হানিফের ছোট ভাই সাজেদুল ইসলাম ইশা বলেন, ‘শুক্রবার বিকেলে ভাইয়ের মোবাইলে একটি কল আসে। এর পর কিছু না বলে তিনি বাড়ি থেকে বের হন। পরে রাতে আমরা তার মৃত্যুর খবর পাই। বাঁওড়ের মাছ ধরা নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে ভাইয়ের বিরোধ চলছিল। এরই জেরে হত্যাকাণ্ড হতে পারে।’
নিহত রাজুর মামা লিটন হোসেন জানান, রাজু শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে বাড়ি থেকে বের হন। এর পর রাতে তারা সংবাদ পান তাকে হত্যা করা হয়েছে। রাজু এলাকায় কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল না বলে দাবি করেন তিনি।
রামচন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা মাসুদ রানা জানান, শুক্রবার রাত ৮টার দিকে তারা পরপর চারটি গুলির শব্দ শুনতে পান। এলাকাবাসী চেষ্টা করেও কিছু উদ্ধার করতে পারেননি। পরে রাত ১০টার দিকে পুলিশ এলে শ্মশান ঘাটে গুলিবিদ্ধ তিনটি লাশ পায়।
শৈলকুপা থানার ওসি মাসুম খান জানান, শুক্রবার রাতেই লাশগুলো উদ্ধার করে শৈলকুপা থানায় আনা হয়। স্বজন তাদের নাম-পরিচয় নিশ্চিত করেন। ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার সন্ধ্যায় লাশগুলো স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঝ ন ইদহ চরমপন থ স গঠন উপজ ল স বজন
এছাড়াও পড়ুন:
জামায়াতের পর এবার সমাবেশে অংশ নিতে বিশেষ ট্রেন ভাড়া ছাত্রদলের
জামায়াতে ইসলামীর পর এবার বিশেষ ট্রেন ভাড়া করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ৩ আগস্ট ছাত্র সমাবেশে অংশ নিতে প্রায় ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে চট্টগ্রাম ছাত্রদল ২০ বগির এই বিশেষ ট্রেন ভাড়া করেছে।
জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৩ আগস্ট ছাত্র সমাবেশ করবে ছাত্রদল।
এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে চট্টগ্রাম নগর ছাত্রদলের পক্ষ থেকে ২০ বগির একটি বিশেষ ট্রেনের জন্য আবেদন করা হয়। ছাত্রদলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার বিশেষ ট্রেন বরাদ্দ রেলওয়ে। আগামী রোববার সকাল সোয়া ৭টায় চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে এই ট্রেন ছেড়ে যাবে। আর ঢাকায় পৌঁছাবে বেলা সোয়া ১টায়। এই ট্রেন সন্ধ্যা সাতটায় আবার ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে আসবে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ২০ বগির ট্রেনটিতে ১ হাজার ১২৬টি আসন রয়েছে। বিশেষ ট্রেন পরিচালনার জন্য রেলওয়ের চট্টগ্রাম, ঢাকা বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
রেলওয়ের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা তৌষিয়া আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রদলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রেল ভবনের অনুমোদন সাপেক্ষে বিশেষ ট্রেন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই কারণে নিয়মিত ট্রেন চলাচলে কোনো সমস্যা হবে না।
চট্টগ্রাম নগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক (দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত) সাব্বির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, এই ট্রেনে চট্টগ্রাম নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলার প্রায় দেড় হাজার নেতা-কর্মী যাবেন। সবাই একসঙ্গে যেতে চাওয়ায় ট্রেন ভাড়া করেছেন। বাসে হলে তা সম্ভব ছিল না।
এর আগে গত ১৯ জুলাই রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সমাবেশ করেছিল জামায়াতে ইসলামী। সমাবেশে নেতা-কর্মীদের যাতায়াতের জন্য ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম থেকে চার জোড়া বিশেষ ট্রেন ভাড়া করে দলটি। এই চার ট্রেন ভাড়া করতে দলটিকে গুনতে হয়েছে প্রায় ৩২ লাখ টাকা।
জামায়াতের ট্রেন ভাড়া করা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে এ বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয় জানায়, বিশেষ ট্রেন পরিচালনায় স্বাভাবিক নিয়মের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।