ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলায় তিনজনকে গুলি করে হত্যার পর আবারও সামনে এসেছে চরমপন্থি সংগঠনের তৎপরতা। শুক্রবার রাতে উপজেলার ত্রিবেণী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের শ্মশান ঘাটে তাদের গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পরে রাতেই স্থানীয় সাংবাদিকদের হোয়াটসআপ গ্রুপে বার্তা পাঠিয়ে কুষ্টিয়া এলাকার চরমপন্থি সংগঠন জাসদ গণবাহিনীর নেতা কালু দায় স্বীকার করেন। একই সঙ্গে তিনি নিহত হানিফের অন্য অনুসারীরা সংশোধন না হলে তাদের পরিণতিও একই হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন।

২০১৫ সালে একই শ্মশান ঘাটে গণবাহিনীর পাঁচ কর্মীকে গুলি করে ও গলা কেটে হত্যা করে প্রতিপক্ষ। ধারণা করা হচ্ছে, এরই প্রতিশোধ নিতে শুক্রবার রাতে ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুর আহাদনগর গ্রামের রাহাজ উদ্দিনের ছেলে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি জনযুদ্ধের (লাল পতাকা) সামরিক কমান্ডার হানিফ আলী (৫৬), তার শ্যালক একই উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের উন্মাদ আলীর ছেলে লিটন হোসেন (৩৮) ও কুষ্টিয়া ইবি থানার পিয়ারপুর গ্রামের আরজান হোসেনের ছেলে রাইসুল ইসলাম রাজুকে (২৮) হত্যা করা হয়।

রাজুর লাশ ধানক্ষেতে পানির মধ্যে পড়ে ছিল। হানিফ ও লিটনের লাশের পাশ থেকে পুলিশ দুটি পালসার মোটরসাইকেল ও দুটি হেলমেট জব্দ করে। তিনজনেরই মাথা ও বুকে গুলির চিহ্ন রয়েছে। ঘটনাস্থলে শটগানের সাত ও পিস্তলের ছয় রাউন্ড গুলি পাওয়া যায়। শুধু শটগানের চার রাউন্ড গুলি বিস্ফোরিত ছিল।

হানিফ নব্বই দশকে ঝিনাইদহ সদর ও হরিণাকুণ্ডু থানা, চুয়াডাঙ্গা সদর, আলমডাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকার ত্রাস ছিলেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১৪টি হত্যাসহ অসংখ্য মামলা রয়েছে। হরিণাকুণ্ডুর কুলবাড়িয়ার আব্দুর রহমান হত্যা মামলায় আদালত হানিফের মৃত্যুদণ্ড দেন। পরে রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমায় মুক্তি পান। পতিত আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। কেউই তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস করেনি।

২০১৪ সালে জেল থেকে বের হন হানিফ। ২০১৭ সালে হরিণাকুণ্ডুর নারানকান্দি বাঁওড়ের মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি জিয়াউল হককে গুলি করে হত্যা করেন তিনি। এর পর থেকে বাঁওড় দখলে রেখে মাছ চাষ করে আসছিলেন। হানিফ নিজে হরিণাকুণ্ডু উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ছিলেন। তার এক ভাই উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি; আরেক ভাই উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে বাঁওড় দখলে আরও কয়েকটি চরমপন্থি সংগঠন তৎপর হয়ে ওঠে। এ নিয়ে হানিফের সঙ্গে তাদের বিরোধ চরমে পৌঁছে। এরই জেরে জাসদ গণবাহিনী তাদের হত্যা করে থাকতে পারে।

নিহতদের স্বজন বলছেন, হত্যাকাণ্ডের আগে তিনজনকেই মোবাইলে কল করে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। তবে কারা কল দিয়েছিল, তা জানাতে পারেননি। পুলিশও এ হত্যাকাণ্ডের কোনো সূত্র পাচ্ছে না।

শনিবার শৈলকুপা থানায় আসা নিহতের স্বজন জানান, হানিফের সঙ্গে সম্প্রতি হরিণাকুণ্ডু উপজেলার রামদিয়া বাঁওড়ের দখল নিয়ে পার্শ্ববর্তী চুয়াডাঙ্গার তিয়োড়বিলের স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীর বিরোধ তৈরি হয়। প্রায়ই তারা বাঁওড়ের মাছ ধরে নিয়ে যেতেন বলে অভিযাগ রয়েছে।

হানিফের ছোট ভাই সাজেদুল ইসলাম ইশা বলেন, ‘শুক্রবার বিকেলে ভাইয়ের মোবাইলে একটি কল আসে। এর পর কিছু না বলে তিনি বাড়ি থেকে বের হন। পরে রাতে আমরা তার মৃত্যুর খবর পাই। বাঁওড়ের মাছ ধরা নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে ভাইয়ের বিরোধ চলছিল। এরই জেরে হত্যাকাণ্ড হতে পারে।’

নিহত রাজুর মামা লিটন হোসেন জানান, রাজু শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে বাড়ি থেকে বের হন। এর পর রাতে তারা সংবাদ পান তাকে হত্যা করা হয়েছে। রাজু এলাকায় কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল না বলে দাবি করেন তিনি।

রামচন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা মাসুদ রানা জানান, শুক্রবার রাত ৮টার দিকে তারা পরপর চারটি গুলির শব্দ শুনতে পান। এলাকাবাসী চেষ্টা করেও কিছু উদ্ধার করতে পারেননি। পরে রাত ১০টার দিকে পুলিশ এলে শ্মশান ঘাটে গুলিবিদ্ধ তিনটি লাশ পায়।

শৈলকুপা থানার ওসি মাসুম খান জানান, শুক্রবার রাতেই লাশগুলো উদ্ধার করে শৈলকুপা থানায় আনা হয়। স্বজন তাদের নাম-পরিচয় নিশ্চিত করেন। ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার সন্ধ্যায় লাশগুলো স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঝ ন ইদহ চরমপন থ স গঠন উপজ ল স বজন

এছাড়াও পড়ুন:

নাইজেরিয়ায় কেন হামলা চালানোর হুমকি দিলেন ট্রাম্প

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়া যদি সেখানে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের লোকজনকে হত্যা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়, তবে দেশটির বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণের হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

এ প্রসঙ্গে গতকাল শনিবার ট্রাম্প বলেন, তিনি তাঁর প্রতিরক্ষা বিভাগকে দ্রুত সামরিক পদক্ষেপের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল ও প্রধান তেল উত্তোলনকারী দেশ নাইজেরিয়া। ট্রাম্প তাঁর মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে নাইজেরিয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের সহায়তাও অবিলম্বে বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলেন।

ট্রাম্প লেখেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র সামরিক বাহিনী পাঠায়, তবে তারা পূর্ণ সামরিক শক্তি নিয়ে অভিযান চালাবে এবং যারা এ নৃশংস ঘটনা ঘটাচ্ছে, সেই “ইসলামপন্থী” সশস্ত্র দলকে সম্পূর্ণরূপে মুছে ফেলবে।

তবে নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের সঙ্গে কোন ধরনের নৃশংস আচরণ করা হচ্ছে, সে বিষয়ে ট্রাম্প নির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ বা বিবরণ দেননি। নাইজেরিয়াকে তিনি ‘নিন্দিত রাষ্ট্র’ বলে বর্ণনা করেন এবং দেশটির সরকারকে হুঁশিয়ার করে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলেন।

নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা সহিংস চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে এবং আশা করছে, এ লড়াইয়ে ওয়াশিংটন তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে থাকবে।

ট্রাম্প লেখেন, ‘যদি আমরা আক্রমণ করি, তা হবে দ্রুত ও ভয়ানক; ঠিক যেমন অস্ত্রধারীরা আমাদের প্রিয় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর আক্রমণ করছে।’

ট্রাম্পের সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণের হুমকির বিষয়ে আবুজা থেকে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। সামরিক পদক্ষেপের সম্ভাব্য সময়সূচি নিয়ে হোয়াইট হাউসও কিছু জানায়নি।

যদি আমরা আক্রমণ করি, তা হবে দ্রুত, ভয়ানক; ঠিক যেমন অস্ত্রধারীরা আমাদের প্রিয় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ করছে।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্ট

ট্রাম্পের এ হুঁশিয়ারি দেওয়া বিষয়ে মন্তব্য করার জন্য বার্তা সংস্থা রয়টার্স থেকে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তারা এ বিষয়ে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে কথা বলতে বলেছে।

তবে রয়টার্সের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা না বললেও মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে লেখেন, ‘মার্কিন ওয়ার ডিপার্টমেন্ট (পেন্টাগন) সামরিক পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে। হয় নাইজেরিয়া সরকার খ্রিষ্টানদের রক্ষা করবে, না হয় আমরা ওই সব অস্ত্রধারীকে হত্যা করব, যারা ভয়াবহ নির্যাতন চলাচ্ছে।’

ট্রাম্পের ওই পোস্টের এক দিন আগে তাঁর প্রশাসন নাইজেরিয়াকে আবারও ‘কান্ট্রিজ অব পার্টিকুলার কনসার্ন’ (বিশেষ উদ্বেগের দেশ)–এর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র এ তালিকায় এমন দেশগুলোকে রাখে, যেখানে ধর্ম পালনের স্বাধীনতা নেই বলে তারা মনে করে। তালিকায় অন্য দেশগুলোর মধ্যে আছে চীন, মিয়ানমার, উত্তর কোরিয়া, রাশিয়া ও পাকিস্তান।

আরও পড়ুননাইজেরিয়ায় সম্প্রদায়গত দ্বন্দ্ব নিরসনে গিয়ে ১৬ সেনা নিহত ১৭ মার্চ ২০২৪

সামরিক পদক্ষেপের হুমকি দিয়ে ট্রাম্পের ওই পোস্টের আগে গতকাল শনিবার ভোরে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু তাঁর দেশে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা–সংক্রান্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি ধর্ম পালনের স্বাধীনতার সুরক্ষায় তাঁর দেশের প্রচেষ্টার পক্ষেও কথা বলেন।

তিনুবু বলেন, ‘নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা আমাদের জাতীয় বাস্তবতার সঙ্গে মেলে না এবং এটি সরকারের সব নাইজেরীয়র ধর্ম পালনের স্বাধীনতা রক্ষা করার ধারাবাহিক ও আন্তরিক প্রচেষ্টাকেও বিবেচনায় আনে না।’

গত বছর নাইজার থেকে প্রায় এক হাজার সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ায় পশ্চিম আফ্রিকায় মার্কিন সামরিক উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।

নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও এ নিয়ে আলাদা বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। বিবৃতিতে জোর দিয়ে বলা হয়, তারা সহিংস চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে এবং আশা করছে, এ লড়াইয়ে ওয়াশিংটন তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে থাকবে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা জাতি, ধর্ম–বর্ণনির্বিশেষে সব নাগরিককে রক্ষা করব। যুক্তরাষ্ট্রের মতো নাইজেরিয়াতেও (নানা ধর্মের মানুষের) বৈচিত্র্য উদ্‌যাপন করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। কারণ, এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।’

গত বছর নাইজার থেকে প্রায় এক হাজার সেনা প্রত্যাহার করে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। ফলে পশ্চিম আফ্রিকায় মার্কিন সামরিক উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র মাঝেমধ্যে প্রশিক্ষণ ও মহড়ায় অংশ নিতে আফ্রিকায় ছোট ছোট সেনা দল পাঠায়। বর্তমানে আফ্রিকা মহাদেশে সবচেয়ে বড় মার্কিন ঘাঁটি পূর্ব আফ্রিকার দেশ জিবুতিতে। সেখানে পাঁচ হাজারের বেশি মার্কিন সেনা অবস্থান করছেন। ওই অঞ্চলে সামরিক অভিযান চালাতে এ সামরিক ঘাঁটি ব্যবহার করা হয়।

আরও পড়ুননাইজেরিয়ায় বন্দুকধারীদের হামলায় নিহত ৬০৭ মে ২০২৫নাইজেরিয়াকে ‘উদ্বেগের তালিকা’য় অন্তর্ভুক্ত করা

ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে নাইজেরিয়াকে ‘উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। পরে জো বাইডেন ক্ষমতায় এসে ২০২১ সালে নাইজেরিয়াকে মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগের এ তালিকা থেকে সরিয়ে নেন।

তবে মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের মতে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মুসলমানরাই বোকো হারামের নৃশংসতার শিকার হন।

নাইজেরিয়ায় প্রায় ২০০ জাতিগত গোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করেন। তাঁরা ইসলাম, খ্রিষ্টান ও স্থানীয় প্রথাগত ধর্ম পালন করেন। দেশটিতে সব ধর্মের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। তবে কখনো কখনো বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সহিংসতা বেড়ে যায়।

চরমপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী বোকো হারাম উত্তর-পূর্ব নাইজেরিয়াতে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। গত ১৫ বছরে এ বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বহু মানুষকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে।

তবে মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের মতে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মুসলমানরাই বোকো হারামের নৃশংসতার শিকার হন।

আরও পড়ুননাইজেরিয়ায় পশুপালক ও কৃষকদের সংঘর্ষে নিহত ৮৫১৮ মে ২০২৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নাইজেরিয়ায় কেন হামলা চালানোর হুমকি দিলেন ট্রাম্প