নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেছেন, আসন্ন রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্য মজুদ বা ভেজাল করলে কাউকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

উন্নত বিশ্বে উৎসবের সময় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমিয়ে দেওয়া হয়, যাতে সবাই আনন্দের সঙ্গে উৎসব পালন করতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশে ঠিক উল্টোটি হয়।

বছরের অন্য সময় তো ব্যবসায়ীরা মুনাফা করেন, রমজানে কেন সবাই একসঙ্গে উৎসব পালন করতে পারবে না? আমরা আশা করি এবার কোনো পণ্যে ভেজাল থাকবে না বা দাম বাড়বে না।

আমরা কারো মর্যাদায় আঘাত করতে চাই না, তবে যদি কেউ খাদ্যে ভেজাল মিশ্রণ বা পণ্য মজুদ করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আসন্ন পবিত্র রমজান উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ জেলার নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য স্থিতিশীল ও সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘জেলা টাস্কফোর্স কমিটি’র সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, রমজান মাসে কেউ যদি কৃত্রিম সংকট তৈরি করে, তাহলে তার কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। ব্যবসায়ীদের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে, তারা যেন এ ধরনের অনৈতিক কাজ থেকে বিরত থাকেন। কেউ যদি এমন কাজের তথ্য পান, তাহলে প্রশাসনকে জানান। একজনের কারণে পুরো ব্যবসায়ী সমাজের দুর্নাম হোক, এটা আমরা চাই না।

হোটেল ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “রমজানে রাস্তা দখল করে দোকান বসানো চলবে না। এতে যানজট সৃষ্টি হয় এবং মানুষের চলাচলে সমস্যা হয়। অসুস্থ মানুষদের দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছাতে সমস্যা হয়। রমজানে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে আমরা কাজ করছি এবং সবার সহযোগিতা কামনা করছি।”

খাদ্যে ভেজাল রোধে নৈতিকতা গঠনের ওপর জোর দিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, “আমি যে খাবার নিজে খাই না, তা অন্যের কাছে বিক্রি করি কীভাবে? নৈতিকতা জাগ্রত করতে হবে। উন্নত দেশে এসব দেখা যায় না, কারণ তাদের সমাজে এসব নিয়ন্ত্রণে নৈতিকতা তৈরি হয়েছে। আমাদের সমাজকেও সেই পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে।”

সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো.

আলমগীর হুসাইন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. সাকিব-আল-রাব্বি, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সচিব (উপসচিব) কুতুবুল আলম, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হৃদয় চন্দ্র বনিক, মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব আবু ইউসুফ খান টিপু, জামায়াতে ইসলামীর সাবেক মহানগর আমীর মইনুদ্দিন আহমেদ, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোর্শেদ সারোয়ার সোহেল, কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির জয়েন্ট সেক্রেটারী বিল্লাল হোসেন রবিন প্রমুখ।

এছাড়াও সভায় নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের প্রধান কর্তা ব্যক্তি  এবং ব্যবসায়ি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
 

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ন র য়ণগঞ জ ব যবস য় রমজ ন

এছাড়াও পড়ুন:

বকুলতলায় বৃষ্টির সুর

নীল-সাদা পোশাকে সজ্জিত হয়ে নানা বয়সী মানুষ এসে জড়ো হতে থাকেন। যেন শহরের হৃদয়ে নেমে আসে গ্রামবাংলার ঘ্রাণ। মেঘলা আকাশের নিচে কণ্ঠে সুর, পায়ে তাল, কল্পনায় বর্ষার রূপই দেখা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় গতকাল রোববার এভাবে উদযাপন হলো ‘বর্ষা উৎসব ১৪৩২’।
বর্ষা উৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজনে আষাঢ়ের প্রথম দিনে রাগ, রস ও রং মিলে তৈরি হলো এক বর্ষামুখর ক্যানভাস। এবারের আয়োজনে সহযোগিতায় ছিল সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন নবীন সংগীতশিল্পী সোহানী মজুমদার। সেতারের কোমল তারে বেজে ওঠে রাগ ‘আহীর ভৈরব’। রাগভিত্তিক এ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে মিলে যায় প্রাচ্যের সংগীত ঐতিহ্য ও বর্ষার আধ্যাত্মিকতা। সেই মুহূর্তে বকুলতলায় যেন ভেসে বেড়ায় বৃষ্টির সুর আর আকাশের নরম আলো।
‘বর্ষাকথন’ পর্বে বর্ষার ভাবনা, পরিবেশ ও সময়ের প্রেক্ষাপটে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি শিল্পী কাজী মিজানুর রহমান।
ঘোষণা পাঠ করেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট এবং সভাপতিত্ব করেন লেখক ও গবেষক অধ্যাপক ড. নিগার চৌধুরী। সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন সংস্কৃতিকর্মী নুসরাত ইয়াসমিন রুম্পা।
ঘোষণাপত্র পাঠে জানানো হয়, ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশে আজ ঋতুচক্রে দেখা দিচ্ছে অসামঞ্জস্য। গ্রীষ্ম হয়ে উঠছে খরতর, বর্ষা রুষ্ট, বসন্ত ক্ষীয়মাণ। এই পরিবর্তনের মূলে রয়েছে মানুষের সীমাহীন ভোগবাদী আচরণ, প্রকৃতির ওপর অনবরত অনাচার। ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত, সমুদ্রজল স্ফীত, ওজোনস্তর ক্ষতিগ্রস্ত– প্রকৃতি আজ সংকটে।
এ প্রসঙ্গে মানজার চৌধুরী সুইট সমকালকে বলেন, এ উৎসব শহুরে জীবনে আমরা প্রায় ১৮ বছর ধরে পালন করে আসছি। উৎসবের শিকড় নিহিত রবীন্দ্রনাথের ‘বর্ষামঙ্গল’-এ। আমরা তারই উত্তরসূরি হয়ে আষাঢ়ের প্রথম দিনটিকে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিই। এতে শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য নয়, বরং তার সংকটও তুলে ধরা হয়। আমরা চাই, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক 
গড়ুক, তার বিপন্নতাকে বুঝুক এবং তা রক্ষায় সক্রিয় হোক।
তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম, এ ধরনের উৎসবই সেই স্বপ্নের বাস্তব রূপ। শিকড়ের দিকে ফিরে যাওয়ার মধ্যে নিহিত আমাদের সংস্কৃতি ও চেতনার পুনর্জাগরণ।
বর্ষা মানে নতুন জন্মের বারতা। সেই বারতা ছড়িয়ে দিতে উৎসবে প্রতীকীভাবে শিশু-কিশোরের হাতে তুলে দেওয়া হয় বনজ, ফলদ ও ঔষধি গাছের চারা। এই চারাগুলো শুধু বৃক্ষ নয়, বরং হয়ে উঠেছে সবুজ ভবিষ্যতের আশ্বাস।
উৎসবে একক সংগীত পরিবেশন করেন ইয়াসমিন মুশতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী ও নবনীতা জাইদ চৌধুরী অনন্যা।
রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন অণিমা রায়, শামা রহমান, মকবুল হোসেন ও ফেরদৌসী কাকলি। লোকসংগীত পরিবেশন করেন বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, শ্রাবণী গুহ রায় ও এস এম মেজবাহ। আধুনিক গান গাইতে মঞ্চে ওঠেন রত্না সরকার।
দলীয় সংগীতে অংশ নেয় সীমান্ত খেলাঘর আসর (শিশু-কিশোর), সুর বিহার, বহ্নিশিখা, সুর নন্দন এবং সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। আবৃত্তি পরিবেশন করেন নায়লা তারাননুম চৌধুরী কাকলি ও আসান উল্লাহ তমাল। শিল্পবৃত্ত শিশু-কিশোর দল পরিবেশন করে আবৃত্তি ও নৃত্য কোলাজ।
নৃত্য পরিবেশনায় অংশ নেয় ধৃতি নর্তনালয়, নৃত্যাক্ষ, স্পন্দন, বেমুকা ললিতকলা কেন্দ্র, সিনথিয়া একাডেমি অব আর্টস ও নৃত্যম।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিএনপি কি জামায়াতকে চাপে রাখার কৌশলে
  • বকুলতলায় বৃষ্টির সুর
  • সোনারগাঁ উপজেলা জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের কমিটি গঠন
  • ৮নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী পালন
  • আড়াইহাজারে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কমিটি গঠন
  • মুক্তিপণ না পেয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশিকে হত্যা
  • ইসলামী আন্দোলনের বাবুরাইল ইউনিট কমিটি গঠন
  • পরিবার নিয়ে চীন ভ্রমণে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সদস্যরা
  • নারায়ণগঞ্জে ফ্যাসিবাদদের পুনর্বাসনের চেষ্টা চালানো হচ্ছে : আবদুল্লাহ
  • আড়াইহাজারে শীর্ষ মাদক কারবারি সন্ত্রাসী সোহেল সহযোগীসহ গ্রেপ্তার