অবৈধভাবে কিডনি বিক্রি, মিয়ানমারের দুই নাগরিক জানালেন তাঁদের অভিজ্ঞতা
Published: 28th, February 2025 GMT
‘আমি শুধু একটি বাড়ির মালিক হতে ও ঋণ শোধ করতে চেয়েছিলাম। আর সে কারণেই আমার কিডনি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিই।’ বিবিসিকে কথাগুলো বলছিলেন জেয়া (ছদ্মনাম)। তিনি মিয়ানমারের একটি খামারে কাজ করেন।
মিয়ানমারে ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের জেরে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর লড়াই শুরু হয়। এর পর থেকে দেশটিতে পণ্যের দাম বাড়তে থাকে। এতে নিজের ছোট্ট পরিবারের খরচ চালাতেও হিমশিম অবস্থায় পড়েন জেয়া। পরিবারের সদস্যদের জন্য আবশ্যকীয় খাবারটুকুও ঠিকমতো জোগাড় করতে পারছিলেন না। তখন গ্রামে তাঁরা তাঁর শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন। ইয়াঙ্গুন শহর থেকে গ্রামটিতে যেতে কয়েক ঘণ্টা লাগে।
অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারে বেকারত্ব বেড়েছে। সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে দেশটির অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সরে গেছেন। ইউএনডিপির তথ্য অনুসারে, ২০১৭ সালে মিয়ানমারে জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছিলেন। ২০২৩ সালের মধ্যে তা বেড়ে অর্ধেকে পৌঁছেছে।জেয়া (ছদ্মনাম) স্থানীয় এমন কয়েকজনকে চিনতেন, যাঁরা তাঁদের একটি করে কিডনি বিক্রি করেছিলেন। তাঁদের দেখে জেয়ার কাছে সুস্থই মনে হতো। আর সে কারণে তিনিও আগ্রহী হয়ে ওঠেন নিজের কিডনি বিক্রি করতে। পরে এ ব্যাপারে নেওয়া শুরু করেন খোঁজখবর।
বিবিসিকে জেয়া বলেন, তিনিসহ ওই গ্রামের আটজন ভারতে গিয়ে একটি করে কিডনি বিক্রি করেছেন।
অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অবৈধ বাণিজ্য এশিয়াজুড়েই সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কীভাবে এ প্রক্রিয়া চলে, তা মিয়ানমারের নাগরিক জেয়া ও মিয়ো উয়িন নামের দুই ব্যক্তির গল্পে তুলে ধরেছে বিবিসি।
যেভাবে চুক্তিমিয়ানমার ও ভারত দুই দেশেই মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বেচাকেনা করা অবৈধ। তবে জেয়া বলেছেন, কিডনি বিক্রির জন্য ‘দালালের’ খোঁজ পেতে তাঁর বেশি বেগ পেতে হয়নি। কথিত দালাল প্রথমে জেয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করেন। কয়েক সপ্তাহ পর দালাল জানান, একজন সম্ভাব্য কিডনিগ্রহীতার খোঁজ পাওয়া গেছেন। তিনিও মিয়ানমারের নারী। অস্ত্রোপচারের জন্য দাতা ও গ্রহীতা দুজনকেই ভারতে যেতে হবে বলে জেয়াকে জানানো হয়।
ভারতে কিডনি দাতা-গ্রহীতা যদি ঘনিষ্ঠ আত্মীয় না হন, তবে তাঁদের অবশ্যই ঘোষণা দিতে হয়, পরোপকারের অংশ হিসেবে এ দান করা হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে কী ধরনের সম্পর্ক, তা-ও জানাতে হয়।
ডব্লিউএইচওর হিসাবে, ২০১০ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের হার ৫০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। বছরে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার প্রতিস্থাপনের ঘটনা ঘটে। তবে প্রতিস্থাপনের জন্য বিশ্বব্যাপী অঙ্গপ্রত্যঙ্গের চাহিদার মাত্র ১০ শতাংশ পূরণ করা সম্ভব হয়।অন্যদিকে মিয়ানমারে অঙ্গ দান করার ক্ষেত্রে কোনো পরিবারকে তার সদস্যদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য নথিভুক্ত করাতে হয়। জেয়া জানান, ওই দালাল একটি জাল নথি তৈরি করেছিলেন। তাতে জেয়ার নাম কিডনিগ্রহীতার পরিবারের সদস্যদের তালিকায় উল্লেখ করা হয়।
জেয়া বলেন, দালাল বিষয়টিকে এমনভাবে উপস্থাপন করেছিলেন, যেন তিনি (জেয়া) শ্বশুরবাড়ির কোনো আত্মীয়কে কিডনি দান করছেন। কিডনিগ্রহীতা তাঁর রক্তের কেউ না হলেও দূরসম্পর্কের আত্মীয়।
এরপর জেয়াকে ইয়াঙ্গুনে সংশ্লিষ্ট কিডনিগ্রহীতার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে এক ব্যক্তি চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে আরও কিছু কাগজপত্রের কাজ শেষ করেন। ওই ব্যক্তি জেয়াকে সতর্ক করে দেন যে তিনি যদি সিদ্ধান্ত পাল্টান, তবে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
পরবর্তী সময়ে বিবিসি চিকিৎসক পরিচয়দানকারী ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। তিনি বলেছেন, কোনো রোগী এ প্রক্রিয়ার উপযোগী কি না, তা যাচাই করাই তাঁর কাজ। দাতা ও গ্রহীতার মধ্যকার সম্পর্ক যাচাই করা তাঁর কাজ নয়।
জেয়া বলেন, কিডনি দান করলে তাঁকে ৭৫ লাখ কিয়াত (মিয়ানমারের মুদ্রা) দেওয়া হবে বলা হয়েছিল। অস্ত্রোপচারের জন্য তিনি উত্তর ভারতে গিয়েছিলেন। বড় একটি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার হয়।
ভারতে বিদেশি নাগরিকদের শরীরে কিডনি প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল বা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত একটি অনুমোদন কমিটির কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। জেয়া বলেন, একজন দোভাষীর সহায়তায় চারজন তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন।
‘তাঁরা আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, আমি স্বেচ্ছায় তাঁকে কিডনি দান করছি, নাকি জোরজবরদস্তি করে নেওয়া হচ্ছে’, বলেন জেয়া। তিনি তাঁদের বোঝাতে সক্ষম হন, গ্রহীতা তাঁর আত্মীয়। পরে তাঁকে কিডনি দানের অনুমতি দেওয়া হয়।
অস্ত্রোপচারের জন্য অচেতন করার আগে চিকিৎসকদের কর্মকাণ্ডগুলো জেয়ার মনে আছে। তিনি বলেন, অস্ত্রোপচারের পর চলাফেরা করতে ব্যথা হচ্ছিল। এ ছাড়া বড় জটিলতা হয়নি। অস্ত্রোপচার শেষে এক সপ্তাহ হাসপাতালে থাকতে হয় তাঁকে।
আত্মীয় সেজে কিডনি দান করেছেন মিয়ো উয়িনওজেয়ার মতোই গ্রহীতার আত্মীয় সেজে কিডনি দান করেছেন মিয়ো উয়িন (ছদ্মনাম)। তিনি বলেন, ‘দালাল আমাকে এক টুকরা কাগজ দিয়েছিলেন। সেখানে যা লেখা ছিল, সেগুলো আমাকে মুখস্থ করতে হয়েছে।’
উয়িন বলেন, তাঁকে বলতে বলা হয়েছিল যে তাঁর এক আত্মীয়ের সঙ্গে গ্রহীতার বৈবাহিক সম্পর্ক আছে। তা ছাড়া একজনকে তাঁর মা সাজানো হয়েছিল। তথ্য যাচাইকারী ব্যক্তি তাঁর মা ভেবে ওই অন্য নারীকেই ফোন করেছিলেন। জানতে চেয়েছিলেন, তাঁর সন্তান যে কিডনি দিচ্ছেন, তা তিনি জানেন কি না।
উয়িন জানান, কিডনি দেওয়ার জন্য জেয়ার সমপরিমাণ অর্থই তাঁকে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। ওই অর্থের ১০ শতাংশ দালালকে দিতে হয়েছে। জেয়া ও উয়িন দুজনই বলেছেন, তাঁদের এক-তৃতীয়াংশ অর্থ অগ্রিম দেওয়া হয়েছিল।
উয়িন বলেন, ‘আমি মনঃস্থির করেছিলাম, এটা আমাকে করতেই হবে। কারণ, আগেই আমি তাঁদের কাছ থেকে অর্থ নিয়েছি।’
কিডনি বিক্রি করার সিদ্ধান্তের কারণ সম্পর্কেও জানিয়েছেন এই ব্যক্তি। বলেছেন, ঋণ পরিশোধ ও স্ত্রীর চিকিৎসার খরচ মেটাতে না পেরে তিনি এমনটা করেছেন।
অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারে বেকারত্ব বেড়েছে। সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে দেশটির অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সেখান থেকে সরে গেছেন। জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপির তথ্য অনুসারে, ২০১৭ সালে মিয়ানমারে জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছিলেন। তবে ২০২৩ সালের মধ্যে তা বেড়ে অর্ধেকে পৌঁছেছে।
উইন বলেন, কিডনি বিক্রি যে অবৈধ, তা দালাল তাঁকে বলেননি। জানলে তিনি তা করতেন না। এ জন্য জেলে যেতে হয় কি না, সেই ভয়ে আছেন তিনি।
সাক্ষাৎকার ও অন্যান্য তথ্য প্রদানকারীর নাম গোপন রাখা এবং তাঁদের নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থে এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেনি বিবিসি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মিয়ানমারের আরেকজন বিবিসিকে বলেন, তিনি ভারতে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রায় ১০ জনকে কিডনি বেচাকেনায় সাহায্য করেছেন। তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলীয় মান্দালয়ের একটি সংস্থা এ বেচাকেনার ব্যবস্থা করেছে।
ভারতে গ্রেপ্তারবিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) হিসাবে, ২০১০ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের হার ৫০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। বছরে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার প্রতিস্থাপনের ঘটনা ঘটে। তবে প্রতিস্থাপনের জন্য বিশ্বব্যাপী অঙ্গপ্রত্যঙ্গের চাহিদার মাত্র ১০ শতাংশ পূরণ করা সম্ভব হয়।
মানব অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ব্যবসা প্রায় সব দেশেই অবৈধ। ডব্লিউএইচওর এক হিসাব অনুযায়ী, প্রতিস্থাপনকৃত অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ৫ থেকে ১০ শতাংশই আসে কালোবাজারে। তবে প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি হতে পারে।
দারিদ্র্যের কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নেপাল, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, আফগানিস্তান, ভারত, বাংলাদেশসহ এশিয়ায় অবৈধভাবে কিডনি বিক্রি বেড়েছে।
চিকিৎসার জন্য বিদেশি পর্যটকদের কাছে ভারত একটি পছন্দের জায়গা। বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদন ও পুলিশের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দেশটিতে কিডনি বিক্রির হার বেড়েছে। আর এ খবরে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ।
গত জুলাইয়ে ভারতের পুলিশ বলেছিল, তারা কিডনি বেচাকেনা চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। যার মধ্যে একজন ভারতীয় চিকিৎসক ও তাঁর সহকারীও আছেন।
দিল্লির ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হাসপাতালের চিকিৎসক বিজয়া রাজাকুমারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, (চক্রের সদস্য হিসেবে) তিনি কয়েক কিলোমিটার দূরে ইয়াথার্থ নামের একটি হাসপাতালে ভিজিটিং কনসালট্যান্ট হিসেবে অস্ত্রোপচার করেছিলেন।
বিজয়ার আইনজীবী বিবিসিকে বলেছেন, অভিযোগগুলো ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন’। এগুলোর পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই। তিনি শুধু অনুমোদন কমিটির কাছ থেকে অনুমতি পাওয়ার পর অস্ত্রোপচার করেছেন ও সব সময় আইনের সঙ্গে সংগতি রেখে কাজ করেছেন। জামিন আদেশ অনুসারে, তাঁর বিরুদ্ধে জাল নথি তৈরির অভিযোগ নেই।
ইয়াথার্থ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিবিসিকে বলেছে, ভিজিটিং কনসালট্যান্টদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাসহ তাঁদের সব মামলা যেন আইনি ও নৈতিক মানদণ্ড মোতাবেক পরিচালিত হয়, তা তারা নিশ্চিত করবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানিয়েছে তারা।
চিকিৎসক রাজাকুমারী গ্রেপ্তার হওয়ার পর স্থানীয় অ্যাপোলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, তিনি একজন ফ্রিল্যান্স কনসালট্যান্ট ছিলেন, যিনি ফি-ফর-সার্ভিস (কাজ অনুযায়ী পারিশ্রমিক) ভিত্তিতে নিযুক্ত ছিলেন। অভিযোগ ওঠার পর তাঁর সঙ্গে চিকিৎসাবিষয়ক যোগাযোগ ছিন্ন করা হয়েছে।
তবে চিকিৎসক রাজাকুমারীর বিরুদ্ধে আদালতে কোনো অভিযোগ আনা হয়নি।
অনুশোচনা নেইগত এপ্রিলে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রাজ্যগুলোকে চিঠি লিখে বিদেশিদের অঙ্গ প্রতিস্থাপনের হার বেড়ে যাওয়া সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় অঙ্গ ও টিস্যু প্রতিস্থাপন সংস্থা এবং মিয়ানমারের সামরিক সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল বিবিসি। তবে সাড়া পাওয়া যায়নি।
জেয়ার অস্ত্রোপচারের কয়েক মাস পর বিবিসি তাঁর বক্তব্য শুনেছিল। সে সময় তিনি বলেন, ‘আমি আমার ঋণ পরিশোধ করতে পেরেছি এবং একটি জমি কিনেছি।’ তবে তিনি বাড়ি তৈরি করতে পারেননি।’ জেয়া বলেছিলেন, তিনি পিঠের ব্যথায় ভুগছেন। তবে তাঁর অনুশোচনা নেই।
জেয়া বলেন, ‘আমাকে শিগগির কাজ শুরু করতে হবে। যদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আবার দেখা দেয়, তবে আমাকে তা মোকাবিলা করতে হবে। এ নিয়ে আমার কোনো অনুশোচনা নেই।’
অস্ত্রোপচারের ছয় মাস পর মিয়ো উয়িন বিবিসিকে বলেছেন, তিনি তাঁর ঋণের একটা বড় অংশ শোধ করতে পেরেছেন। তবে পুরোটা পারেননি। অস্ত্রোপচারের পর পেটের কিছু সমস্যায় ভুগছেন বলেও জানালেন। বললেন, ‘আমার চাকরি নেই, একটা পয়সাও হাতে নেই।’
কিডনি বিক্রি করা নিয়ে তাঁর মধ্যেও নেই অনুশোচনা। তবে অন্যদের এটা না করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘এটা ভালো নয়।’
আরও পড়ুনবাংলাদেশ-ভারত অবৈধ কিডনি প্রতিস্থাপন চক্র: দিল্লিতে অ্যাপোলোর চিকিৎসক গ্রেপ্তার০৯ জুলাই ২০২৪.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর ছ ল ন র র জন য র সদস য চ ক ৎসক পর ব র কর ছ ন র কর ছ হয় ছ ল বল ছ ন দ ন কর ন কর ছ র একট
এছাড়াও পড়ুন:
এক মৃত্যুপথযাত্রী পিতার থেকে ২০টি শিক্ষা
জীবনের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্তগুলো প্রায়ই আমাদের গভীরতম শিক্ষা দেয়। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আমরা অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব ভয়, ক্ষুধা, সম্পদ, জীবন এবং ফসলের ক্ষতি দিয়ে। যারা ধৈর্য ধরে, তাদের সুসংবাদ দাও—যারা বিপদে পড়ে বলে, ‘আমরা আল্লাহর জন্য এবং তাঁর কাছেই ফিরে যাব।’ তাদের ওপর আল্লাহর রহমত ও নির্দেশনা বর্ষিত হয়।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৫-১৫৭)
আমার পিতার মৃত্যুপথের যাত্রা আমাকে ধৈর্য, ভালোবাসা এবং আধ্যাত্মিকতার এমন কিছু শিক্ষা দিয়েছে, যা আমি আমার পরিবার এবং আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই। এই শিক্ষাগুলো যে কাউকে তাদের মৃত্যুপথযাত্রী প্রিয়জনের যত্ন নিতে সাহায্য করবে।
১. এটাই জান্নাতের পথ
এক বছর আগে, আমার পিতা দারুস সালামের একটি মসজিদের সিঁড়িতে পড়ে যান। এ দুর্ঘটনা তাঁকে হুইলচেয়ারে সীমাবদ্ধ করে এবং তাঁর চিকিৎসার জন্য আমরা দুবাইয়ে চলে আসি। একজন বন্ধু আমাকে বলেছিলেন, ‘তুমি যা করছ, এটাই জান্নাত। তোমার পিতার কাছে থাকো।’
এই কথা আমার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দেয়। যত্ন নেওয়ার কষ্টকে আমি আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ হিসেবে দেখতে শুরু করি। এটি আমাকে কঠিন মুহূর্তে ধৈর্য ধরতে শিখিয়েছে।
আরও পড়ুনবাবা-ছেলের আশ্চর্য বিদায়ের ঘটনা০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫একজন বন্ধু আমাকে বলেছিলেন, ‘তুমি যা করছ, এটাই জান্নাত। তোমার পিতার কাছে থাকো।’২. আধ্যাত্মিক প্রস্তুতি
বাবা যেদিন পড়ে যান, সেদিন থেকে আমি অনুভব করি, তাঁর সময় ঘনিয়ে আসছে। আমি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যলয়ের মুসলিম চ্যাপলেইন শায়খ খলিল আব্দুর-রশিদের সঙ্গে কথা বলি।
তিনি বলেন: ‘আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করো, কারণ তুমি তোমার পিতার শেষ দিনগুলোতে তাঁর সঙ্গে থাকতে পারছ। কান্না করতে পারো, কিন্তু হতাশ হয়ো না। তাঁর সঙ্গে যা বলতে চাও, বলে নাও। তাঁর জীবনের পরামর্শ শোনো এবং সেগুলো তোমার সন্তানদের কাছে পৌঁছে দাও। তাঁর সম্পত্তি, দাফন এবং সাদাকার ইচ্ছা জেনে রাখো। শেষ মুহূর্তে তাঁর হাত ধরে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলো। এই সময় ফেরেশতারা উপস্থিত থাকেন।’
এই পরামর্শ আমাকে আধ্যাত্মিকভাবে প্রস্তুত করেছে এবং আমার দায়িত্ব স্পষ্ট করেছে।
৩. দিনগুলো দীর্ঘ, বছরগুলো ছোট
মৃত্যুপথযাত্রী একজন পিতার যত্ন নেওয়া শিশুপালনের মতো। দিনগুলো ক্লান্তিকর—খাওয়ানো, পরিষ্কার করা, বহন করা। আমার মা এই দায়িত্বের বেশির ভাগ পালন করেছেন, আল্লাহ তাঁকে ভালো রাখুন। কখনো মনে হতো, এই কষ্ট কি শেষ হবে? আবার পরক্ষণেই ভয় হতো, শেষটা কি খুব কাছে?
এই দ্বন্দ্ব আমাকে বর্তমানে থাকতে এবং প্রতিটি মুহূর্তের জন্য শুকরিয়া আদায় করতে শিখিয়েছে।
৪. ঢেউয়ের সঙ্গে ভেসে চলা
পিতার মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো। চিকিৎসা, অর্থ বা মানসিক চ্যালেঞ্জ—ঢেউ থামানো যায় না, কিন্তু তাদের সঙ্গে ভেসে চলা যায়। আমি এটাকে ‘সার্ফ-মোড’ বলি। এই মানসিকতা আমাকে চ্যালেঞ্জের সঙ্গে লড়াই না করে তাদের গ্রহণ করতে শিখিয়েছে।
৫. কষ্টের মধ্যে স্বস্তি
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই কষ্টের সঙ্গে স্বস্তি আছে’ (সুরা শারহ: ৫)। পিতার অসুস্থতার মধ্যেও আমরা আল্লাহর রহমত দেখেছি—সঠিক চিকিৎসা দল, সময়মতো সঠিক মানুষের আগমন এবং ছোট ছোট অলৌকিক ঘটনা। এই ‘খায়ের’ আমাদের ধৈর্য ধরতে সাহায্য করেছে।
আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করো, কারণ তুমি তোমার পিতার শেষ দিনগুলোতে তাঁর সঙ্গে থাকতে পারছ। কান্না করতে পারো, কিন্তু হতাশ হয়ো না। তাঁর জীবনের পরামর্শ শোনো এবং সেগুলো তোমার সন্তানদের কাছে পৌঁছে দাও।শায়খ খলিল আব্দুর-রশিদ, মুসলিম চ্যাপলেইন, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যলয়৬. পিতার সেবা একটি ‘জিহাদ’
নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমার পিতা–মাতার সেবাই তোমার জিহাদ’ (বুখারি, হাদিস: ৫৯৭২)। পিতার যত্ন নেওয়া সহজ ছিল না। তাঁর বিরক্তি, দুশ্চিন্তা এবং ক্রমাগত চাহিদা আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিয়েছে। কখনো হতাশা বা রাগ অনুভব করেছি, কিন্তু কোরআনের আয়াত—‘তাদের সঙ্গে “উফ” বলো না’ (সুরা ইসরা: ২৩)—আমাকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। এই জিহাদ আমার নফসের বিরুদ্ধে লড়াই ছিল।
আরও পড়ুনএক বৃদ্ধ নবী যেভাবে বাবা হলেন০৪ জুন ২০২৫৭. পালিয়ে যাওয়া
ডাক্তারের জন্য, চেকআপের জন্য বা পিতার খাওয়া-ঘুমের জন্য যে সময়টা অপেক্ষা করতে হতো, সেই ফাঁকে প্রায়ই ফোনে ইউটিউব দেখতে পালাতে চাইতাম। কিন্তু এটি আমার নফসের দুর্বলতা ছিল। পরে বুঝতে পেরে আমি ইউটিউব মুছে ফেলি এবং কোরআন পড়া বা জিকির করার অভ্যাস গড়ি। এটি আমাকে পিতার মৃত্যুর মুখোমুখি হতে এবং বর্তমানে থাকতে শিখিয়েছে।
৮. সহনশীলতার খেলা
পিতার যত্ন নেওয়া একটি ম্যারাথন, স্প্রিন্ট নয়। সাইক্লিং ও দৌড় থেকে শিখেছি, সহনশীলতার জন্য বিশ্রাম, খাওয়া এবং ব্যায়াম প্রয়োজন। যখন আমি দৌড়াতে যেতাম বা ঘুমাতাম, তখন অপরাধবোধ অনুভব করতাম। কিন্তু নিজের যত্ন না নিলে দীর্ঘ মেয়াদে যত্ন দেওয়া সম্ভব নয়। এটি আমাকে ভারসাম্যের গুরুত্ব শিখিয়েছে।
৯. অস্বস্তিকর আলাপ
মৃত্যুপথযাত্রী ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর সম্পত্তি, ঋণ বা দাফনের ইচ্ছা নিয়ে কথা বলা কঠিন। আমরা পিতার সম্পত্তি নিয়ে কথা বলেছি, কিন্তু তাঁর অছিয়ত (উইল) নিয়ে পুরোপুরি আলোচনা করতে পারিনি। এটি আমাকে শিখিয়েছে, আমাদের সবাইকে মৃত্যুর আগে অছিয়ত স্পষ্ট করে রাখতে হবে। একবার এই আলাপ হয়ে গেলেই হয়ে গেল। অন্য সময় নাহয় স্মৃতি বা পরামর্শ শেয়ার করার জন্য তোলা থাক।
১০. অনিশ্চিত সময়ে পরিকল্পনা
পিতার অবস্থা কখনো উন্নত, কখনো সংকটাপন্ন ছিল। এই অনিশ্চয়তায় জীবন পরিকল্পনা করা কঠিন। আমি ‘বাগানের মালির মানসিকতা’ গ্রহণ করি—গাছের যত্ন নিয়ে ফুল-ফসল আল্লাহর হাতে ভাবেন তাঁরা। তেমনি আমি ইস্তিখারা পড়ে প্রতিটি সিদ্ধান্ত আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিই। এটি আমাকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা ত্যাগ করে ভাগ্যের ওপর ভরসা করতে শিখিয়েছে।
পিতার খাওয়া-ঘুমের জন্য যে সময়টা অপেক্ষা করতে হতো, সেই ফাঁকে প্রায়ই ফোনে ইউটিউব দেখতে পালাতে চাইতাম। পরে বুঝতে পেরে আমি ইউটিউব মুছে ফেলি এবং কোরআন পড়া বা জিকির করার অভ্যাস গড়ি।১১. নিয়ত অনুযায়ী আল্লাহর ব্যবস্থা
গত রমজানে আমি দোয়া করেছিলাম, ‘হে আল্লাহ, আমাকে আমার পিতা–মাতার সেবা করার সুযোগ দাও।’ তখন আমি আমেরিকায় স্থায়ী ছিলাম, কিন্তু আল্লাহ অপ্রত্যাশিতভাবে দুবাইয়ে থাকার ব্যবস্থা করে দেন—১০ বছরের ভিসা, কাজ এবং স্থানীয় সুবিধা। এই বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ সুবিধা আমাকে আল্লাহর করুণার ওপর ভরসা করতে শিখিয়েছে।
১২. নিয়তের পবিত্রতা
কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমার রব তোমার অন্তরের কথা জানেন। যদি তুমি সৎ হও, তিনি তওবাকারীদের ক্ষমা করেন।’ (সুরা ইসরা: ২৫)
যখন লোকে আমার প্রশংসা করত, আমি নিজেকে প্রশ্ন করতাম, আমি কি আল্লাহর জন্য এটি করছি, নাকি মানুষের প্রশংসার জন্য? হতাশার মুহূর্তে আমি নিয়ত শুদ্ধ করার চেষ্টা করতাম। এটি আমাকে আন্তরিকতার গুরুত্ব শিখিয়েছে।
১৩. জিকিরের মাধ্যমে কষ্ট সহ্য করা
পিতা সারা বছর তাঁর ব্যথার মধ্যেও ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, দরুদ শরিফ এবং তিলাওয়াত অব্যাহত রেখেছিলেন। তাঁর জিকির আমাকে একটি গল্পের কথা মনে করিয়ে দেয়, যেখানে একজন শায়খ বলেছিলেন, ‘রোগী যদি একটি তাসবিহও বলতে পারেন, তবে তাঁর জীবন রক্ষার চেষ্টা করো।’ পিতার প্রতিটি জিকির তাঁর মর্যাদা বাড়িয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ।
আরও পড়ুনপিতা-মাতাই সন্তানের শ্রেষ্ঠ বন্ধু১১ আগস্ট ২০১৬১৪. আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসেন
একবার একজন নিরাপত্তারক্ষী পিতাকে বলেন, ‘আল্লাহ আপনাকে অনেক ভালোবাসেন, তাই তিনি আপনাকে পরীক্ষা করছেন।’ এই কথা আমাকে ইমাম মালিকের হাদিসের কথা মনে করিয়ে দেয়: ‘একজন মুসলিমের ওপর যেকোনো ক্লান্তি, অসুস্থতা, দুশ্চিন্তা, দুঃখ, কষ্ট বা ব্যথা আসে, এমনকি যে কাঁটা তার শরীরে বিঁধে, তা ছাড়া আর কিছুই নয় যে আল্লাহ তা দিয়ে তার পাপ ক্ষমা করে দেন।’ (মুয়াত্তা মালিক, হাদিস: ১৮২৮)
এটি আমাকে কষ্টের পেছনের হিকমত বুঝতে সাহায্য করেছে।
মৃত্যু চারটি পর্যায়ে হয়—সামাজিক, মানসিক, জৈবিক ও শারীরিক। আমি পিতার প্রথম তিনটি পর্যায় দেখেছি। শেষ মুহূর্তে, তিনি তিনটি শ্বাস নেন এবং ইন্তেকাল করেন। আমরা তাঁর পাশে পবিত্র কোরআন পড়ছিলাম, জিকির করছিলাম১৫. দুশ্চিন্তা মোকাবিলা
চিকিৎসা ব্যয় এবং বাবার অবস্থা নিয়ে আমরা ক্রমাগত দুশ্চিন্তায় ছিলাম। একজন বন্ধু আমাকে ইমাম শাফিঈর কবিতা পাঠান: ‘যা ছিল, তাতে আল্লাহ তোমাকে যথেষ্ট দিয়েছেন; যা হবে, তাতেও তিনি যথেষ্ট দেবেন।’
এ কথা আমাকে দুশ্চিন্তা কমাতে এবং আল্লাহর ওপর ভরসা করতে শিখিয়েছে।’
১৬. মায়ের শক্তি
আমার মা ছিলেন আমাদের পরিবারের মেরুদণ্ড। তিনি বাবার পরিচ্ছন্নতা, খাওয়া এবং আরামের জন্য নিরলস পরিশ্রম করেছেন। তাঁর ধৈর্য ও ভালোবাসা আমাকে একজন স্ত্রী ও মায়ের অপরিসীম শক্তির কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। আমি দোয়া করি, আমরা তাঁর বৃদ্ধ বয়সে তাঁর মতোই যত্ন নিতে পারি।
১৭. চিকিৎসা বিষয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত
আতুল গাওয়ান্দের বই ‘বিয়িং মর্টাল’ আমাকে শিখিয়েছে, মৃত্যুপথযাত্রী ব্যক্তির জন্য অতিরিক্ত চিকিৎসা কষ্ট বাড়াতে পারে। আমরা একটি ‘প্রাকৃতিক মৃত্যুর অনুমতি’ ফর্ম স্বাক্ষর করি, যা পিতার জন্য শান্তিপূর্ণ মৃত্যু নিশ্চিত করেছে। এটি আমাকে মৃত্যুকে সম্মান করতে শিখিয়েছে।
১৮. মৃত্যুর মুহূর্ত
মৃত্যু চারটি পর্যায়ে হয়—সামাজিক, মানসিক, জৈবিক ও শারীরিক। আমি পিতার প্রথম তিনটি পর্যায় দেখেছি। শেষ মুহূর্তে, তিনি তিনটি শ্বাস নেন এবং ইন্তেকাল করেন। আমরা তাঁর পাশে পবিত্র কোরআন পড়ছিলাম, জিকির করছিলাম এবং বললাম, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।’ এই আধ্যাত্মিক মুহূর্ত আমাকে আল্লাহর মহিমার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে।
১৯. ব্যক্তিগত ও উম্মাহর কষ্ট
পিতার মৃত্যু আমাদের ব্যক্তিগত কষ্ট ছিল, কিন্তু গাজার ভাই-বোনদের দুঃখ আমাকে আরও বেশি ব্যথিত করেছে। তাদের অনেকে প্রিয়জনের যত্ন নেওয়ার বা দাফনের সুযোগ পায় না। এই অভিজ্ঞতা আমাকে উম্মাহর জন্য কাজ করার প্রেরণা দিয়েছে।
২০. কৃতজ্ঞতা ও দায়িত্ব
এই যাত্রা আমাকে আল্লাহর রহমত, আমার মা, ভাই, বোন, স্ত্রী, সন্তান এবং বন্ধুদের প্রতি কৃতজ্ঞ হতে শিখিয়েছে। মহানবী (সা.)-এর উম্মাহ হিসেবে আমরা মৃত্যুকে কীভাবে সম্মান করতে হয়, তা শিখেছি। আমি দোয়া করি, আল্লাহ আমার পিতাকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন এবং আমাদের সবাইকে সুন্দর পরিণতি দিন।
সূত্র: প্রোডাক্টিভ মুসলিম ডটকম। অনুবাদ: মনযূরুল হক
আরও পড়ুনমারা গেলে নয়, সব সময় বাবা-মায়ের জন্য দোয়া করা২০ মার্চ ২০২৪