সড়ক-মহাসড়কে ঘটছে ডাকাতি। ডাকাত ধরতে তালিকা তৈরি করেছে হাইওয়ে পুলিশ। তালিকাভুক্ত ১ হাজার ৪৪৬ জনের ওপর নজর রাখছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন জেলা ও থানাকে অভিযুক্তদের নাম-পরিচয় জানিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ।

হাইওয়ে পুলিশ বলছে, তালিকাভুক্ত অধিকাংশ ব্যক্তি এর আগে ডাকাতিতে সম্পৃক্ত ছিল। জামিনে বেরিয়ে তাদের মধ্যে অনেকে আবার পুরোনো পেশায় জড়াচ্ছে। মহাসড়কে ঘটা ডাকাতির বেশ কিছু কারণ চিহ্নিত করেছে পুলিশ। রমজানে মহাসড়কের নিরাপত্তায় নেওয়া হয়েছে একগুচ্ছ পরিকল্পনা। এটি বাস্তবায়ন করা গেলে ফল পাওয়া যাবে বলে দাবি করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এ ব্যাপারে হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি দেলোয়ার হোসেন মিঞা সমকালকে বলেন, মহাসড়কে বেশ কিছু ডাকাতি ঘটেছে। এরই মধ্যে অনেক ডাকাত ও সন্ত্রাসী জামিন পেয়েছে। আমরা ১ হাজার ৪৪৬ ডাকাতের তালিকা করেছি। এরা বিভিন্ন সময় মহাসড়কে ডাকাতি করেছে। জেলা পুলিশসহ বিভিন্ন ইউনিটকে এ তালিকা সরবরাহ করা হয়েছে। যাতে তাদের বিরুদ্ধে সমন্বিত অভিযান চালানো যায়।

হাইওয়ে পুলিশের প্রধান আরও বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের জনবল কম। তাই কিছু জায়গায় জেলা পুলিশ মহাসড়কের নিরাপত্তায় থাকবে। এ ছাড়া কয়েকটি ঘটনায় দেখা গেছে, সকাল ৬টার দিকে পুলিশের দায়িত্ব বদলের সময় ডাকাতরা হানা দেয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লায় পরপর দুই ঘটনায় এটা দেখা গেছে। তাই দায়িত্ব বদলের সময় সকাল ৭টা করা হয়েছে। আগে ৬টা ছিল।

পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেক প্রবাসী দেশে ফিরে বাড়ি পৌঁছার সময় মহাসড়কে ডাকাত দলের কবলে পড়ছেন। পুলিশের ধারণা বিমানবন্দরে নামার পর প্রবাসীদের বহনকারী গাড়ির নম্বর কোনো চক্র ডাকাতদের কাছে পৌঁছে দেয়। এরপর তাদের লক্ষ্য করে সব লুট করা হয়। এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে বিমানবন্দরে পৃথক একটি ডেস্ক করতে চায় হাইওয়ে পুলিশ। এ ছাড়া প্রবাসীরা যাতে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছতে পারেন, তা নিশ্চিত করে পৃথক একটি হটলাইন নম্বর থাকবে। এটি আজ রোববার থেকে সক্রিয় করতে চায় পুলিশ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০০৫ সাল থেকে মহাসড়কে ডাকাতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের একটি ডেটাবেজ তৈরি করেছে পুলিশ। তারা কে কোথায় রয়েছে, তার তথ্য নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া হাইওয়ে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা একেক দিন একেক মহাসড়ক এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছেন।

জানা গেছে, মহাসড়কের নিরাপত্তায় সারাদেশে হাইওয়ে পুলিশ রয়েছে ২ হাজার ৮০০। এটি প্রয়োজনের তুলনায় কম। সম্প্রতি ডাকাতি প্রতিরোধে মহাসড়কের কিছু এলাকায় যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের ভিডিও এবং ছবি তুলে রাখছে পুলিশ। দায়িত্বে অবহেলা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

পুলিশ সদরদপ্তরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত জানুয়ারিতে সারাদেশে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে ৭১টি। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ডাকাতির সংখ্যা ছিল ২৯। এ হিসাবে ডাকাতি বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। তবে অনেকে বলছেন, পুলিশের পরিসংখ্যান দিয়ে ডাকাতি বা অপরাধের সঠিক সংখ্যা জানা কঠিন। কারণ অনেক ঘটনায় ভুক্তভোগী মামলা করতে যান না। আবার অনেক ঘটনায় পুলিশ মামলা নেয় না।

তবে হাইওয়ে পুলিশের প্রধান দেলোয়ার হোসেন মিঞা সমকালকে বলেন, ‘ডাকাতি ঘটলেই মামলা নিচ্ছি। অনেক ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।’

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আতঙ্ক
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চৌদ্দগ্রাম অংশে দুই মাসে চারটি ডাকাতি হয়েছে। গতকাল শনিবার ভোরে মালয়েশিয়া প্রবাসী বেলাল হোসেনের প্রাইভেটকারে ডাকাতি ঘটে। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ভোরে ফাল্গুনকরা মাজার এলাকায় কুয়েত প্রবাসী নাইমুল ইসলামের মাইক্রোবাস ডাকাত চক্রের কবলে পড়ে। এর আগে ১৫ জানুয়ারি মহাসড়কের মিশ্বানী এলাকায় ৩০০ বস্তা চালভর্তি ট্রাক পুলিশ পরিচয়ে লুট হয়। ৮ ফেব্রুয়ারি মহাসড়কের পাশে অবস্থিত মিয়া বাজার মসজিদ মার্কেটে প্রীতি জুয়েলার্সে ডাকাতি ঘটে। এ সময় ডাকাত দল গুলি বর্ষণ ও হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। লুট হয় ৩৫ ভরি স্বর্ণ। ডাকাতদের গুলিতে আহত হন ব্যবসায়ী মোশারফ। মহাসড়কে ডাকাতি প্রতিরোধে ব্যর্থতার অভিযোগে মিয়াবাজার হাইওয়ে থানার ওসি জসিম উদ্দিনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর আগে ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় তোলপাড় হয়েছে।

জানা গেছে, বিমানবন্দর থেকে বাড়ি ফেরত প্রবাসী, ব্যবসায়ী, পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ডভ্যান  ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছে। যানজটে আটকে থাকা মোটরসাইকেলের যাত্রীরাও একই পরিস্থিতির শিকার। অনেক ঘটনা ক্লু-লেস হওয়ায় ‘ঝামেলা এড়াতে’ মহাসড়কে ডাকাতির শিকার ব্যক্তিরা মামলা করতে চান না। আবার অনেক সময় ডাকাতির ঘটনায় ছিনতাইয়ের মামলা কিংবা শুধু জিডি করে দায় সারে পুলিশ। সড়কে নিরাপত্তার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন চালকরা।

সাঁথিয়ায় মধ্যরাতে ডাকাতি
সাঁথিয়া (পাবনা) প্রতিনিধি জানান, পাবনার সাঁথিয়ায় মধ্যরাতে সড়কের ওপর গাছ ফেলে ট্রাক, মাইক্রোবাস, সিএনজি চালিত অটোরিকশায় ডাকাতি হয়েছে। গত শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে সাঁথিয়া-বেড়া আঞ্চলিক সড়কের ছেঁচানিয়া কালভার্টে এ ঘটনা ঘটে। সাঁথিয়া থানার ওসি সাইদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাসুয়া, রামদা, ছুরি, চাকুসহ বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে পর্যায়ক্রমে গাড়িগুলোতে ডাকাতি চালায় ৪০-৫০ জন। গেট খুলতে দেরি করায় কিছু গাড়ি ভাঙচুর করে। এ সময় পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীদের মারধর করে মুঠোফোন, টাকা ও অন্যান্য মূল্যবানসামগ্রী লুট করে নিয়ে যায়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এ তাণ্ডব চলে।

ডাকাতির কবলে পড়া অটোরিকশা যাত্রী সাংবাদিক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘বেড়া থেকে সাঁথিয়ার বাসায় আসছিলাম। পথে ছেঁচানিয়া কালভার্টে পৌঁছলে কয়েকজন মুখোশধারী আমার ঘাড়ে হাসুয়া রেখে ফোন এবং টাকা কেড়ে নেয়। এ সময় আমার অটোরিকশার পেছনে বিদেশফেরত যাত্রীর মাইক্রোবাস এসে দাঁডায়।’
ডাকাতির কবলে পড়া বিদেশফেরত যাত্রী পাবনার টেবুনিয়ার শাহিন আলম, হৃদয় হোসেন, শরিফুল ইসলাম, আওতাপাড়ার সুমন, দাপনিয়ার বিদ্যুৎ হোসেন জানান, বিদেশ থেকে দেশে ফিরে মাইক্রোবাসে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে ডাকাতরা তাদের জিম্মি করে মোবাইল ফোন, টাকা ও স্বর্ণালংকারসহ সবকিছু কেড়ে নিয়েছে।

আব্দুস সালাম নামে এক ইসলামী বক্তা ফেসবুকে দেওয়া এক ভিডিও বক্তব্যে বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে এই সড়কে ডাকাতি ঘটেছে। হুট করে আমাদের গাড়িতে আক্রমণ করে ডাকাতরা। বারবার গাড়িতে আঘাতের পর আমরা চালককে গেট খুলে দিতে বলি। ডাকাতরা গাড়িতে ঢুকে চালকের গলা ও পেটে চাকু ধরে। অন্যদেরও জিম্মি করে সব লুটে নিয়ে যায়। আমরা বলেছি, ভাই যা আছে সব নেন। কিন্তু কাউকে আঘাত করবেন না। আমাদের গাড়িতে কাউকে আঘাত করেনি। অনুরোধ করায় আমার দুটি মোবাইল ফোন দিয়ে গেছে।’

সাঁথিয়া থানার ওসি সাইদুর রহমান বলেন, ‘খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ পাঠানো হয়। কয়েকটি গাড়িতে ডাকাতি হয়েছে। অভিযোগ পেয়েছি ও তদন্ত করা হচ্ছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হ ইওয় র কবল র ঘটন ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা

রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।

এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত

ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত

উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”

সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”

এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।

বিবৃতিতে  বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে। 

ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।

ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।

ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ