রবীন্দ্রনাথ-নজরুল কেউই ইউপি চেয়ারম্যান হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না!
Published: 2nd, March 2025 GMT
সম্প্রতি স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন তাদের সুপারিশমালা পেশ করেছে। এতে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করে তুলতে বেশ কিছু চমৎকার প্রস্তাবনা উঠে এসেছে। সমাজ, রাষ্ট্র ও রাজনীতি সচেতন মানুষ মাত্রই স্বীকার করবেন সুশাসনের জন্য শক্তিশালী স্থানীয় সরকারব্যবস্থার বিকল্প নেই। তবে সংস্কার কমিশনের দুটি প্রস্তাব নিয়ে আমার বড় আকারে আপত্তি আছে। তার একটি শিক্ষাগত যোগ্যতা সংক্রান্ত; অপরটি পরোক্ষ ভোট প্রসঙ্গে।
স্থানীয় সরকার সংক্রান্ত সংস্কার কমিশন সিটি করপোরেশন, পৌরসভার মেয়র, উপজেলা পরিষদ এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদের নির্বাচন অপ্রত্যক্ষ ভোটে করার সুপারিশ করেছে। তারা প্রস্তাবনায় বলেছে, এসব ক্ষেত্রে মেম্বার বা কাউন্সিলর জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হবেন। এরপর তাঁরা নিজেদের মধ্য থেকে একজনকে ভোট দিয়ে মেয়র বা চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবেন।
এই নির্বাচনপদ্ধতির সবচেয়ে বড় অসুবিধা হচ্ছে, এতে চেয়ারম্যান বা মেয়র নির্বাচনে নির্বাচক সংখ্যা কম হওয়ায় টাকার বিপুল ব্যবহারের সম্ভাবনা। এতে ভোট কেনাবেচার অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হবে। একজন শ্রমিক, মজুর, কৃষক, মালি, মুচি, দলিত সবাইকেই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। পৃথিবীতে নির্বাচনমাত্রই অর্থের ব্যাপার জড়িত থাকে। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে তা আরও ব্যাপক।
জামানত ফি ও অন্যান্য ব্যয়ের কারণে গরিব মানুষ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ারই সুযোগ পান না। নতুন করে প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতিতে সেখানে কোনো সিস্টেমিক বৈষম্য তৈরি করার মানে হয় না। এই পদ্ধতি অভিজাততন্ত্রকেই আরও শক্তিশালী করবে। ব্যবসায়ী ও ধনিক শ্রেণির হাতে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে ফেলবে।
তা ছাড়া নির্বাচকমণ্ডলী নির্দিষ্ট হওয়ায় যে সরকার ক্ষমতায়, সে সরকারের মনোনীত প্রার্থীই নির্বাচিত হয়ে আসবে। ইতিমধ্যে পরোক্ষ ভোটের মাধ্যমে জেলা পরিষদ নির্বাচনের অভিজ্ঞতা তাই বলে। স্কুলগুলোতে ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে সভাপতি নির্বাচনে যেমন স্থানীয় সংসদ সদস্যের একচেটিয়া প্রভাব পরিলক্ষিত হয়, সেই একই রকম প্রভাব দেখা যাবে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং পৌরসভার মেয়র নির্বাচনে।
সরকার ও সরকারি দলের আকাঙ্ক্ষাই চূড়ান্ত হয়ে যাবে। সরকারদলীয় প্রার্থীর নির্বাচিত হয়ে আসাটা অনিবার্য হয়ে পড়বে। নির্বাচিত ব্যক্তিরা তাঁদের নির্বাচকমণ্ডলীর প্রতিই বেশি মনোযোগী হন। এতে চেয়ারম্যান, মেয়ররা তাঁদের নির্বাচক মেম্বার, কমিশনারদের মনঃতুষ্টির দিকেই মনোযোগী হবেন বেশি। তাঁরা নিজেরাও যেহেতু মেম্বার বা কমিশনারদের মধ্য থেকেই নির্বাচিত হবেন, তাতে নিজের নির্বাচনী এলাকার প্রতিও পক্ষপাতমূলক হয়ে ওঠার সমূহ আশঙ্কা আছে।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়া শিক্ষিতদের হাতে সব তুলে দেওয়ার বন্দোবস্ত আমরা চাই না। প্রতিটি ক্ষেত্রে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচন হওয়া উচিত। দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধী, স্বীকৃত ঋণখেলাপি, অপ্রকৃতিস্থ ছাড়া নাগরিক মাত্রই নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ থাকতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, বর্ণ, ধর্ম, গোত্র, লিঙ্গ বিচারে কোনো বৈষম্য থাকা চলবে না। জনগণের ভোটের অধিকার হবে অবাধ, তাঁরাই নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবেন। পরোক্ষ নির্বাচনের নামে ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া চলবে না।২.
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সুপারিশে শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে চেয়ারম্যান ও মেয়রের ক্ষেত্রে স্নাতক এবং নির্বাহী সদস্যদের ক্ষেত্রে মাধ্যমিক পাস অগ্রাধিকার পাবে বলে বলা হয়েছে। কেবল প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই কারোর দক্ষতা, যোগ্যতার একমাত্র মাপকাঠি হতে পারে না। সুশিক্ষিত ব্যক্তিমাত্রই স্বশিক্ষিত। যত দিন পর্যন্ত সর্বস্তরে শিক্ষাকে বিনা মূল্যে নিশ্চিত করা না যাচ্ছে, তত দিন পর্যন্ত জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে শিক্ষাগত যোগ্যতা স্থির করে দেওয়া বৈষম্যমূলক প্রস্তাবনা।
বহু শিক্ষার্থী এখনো অর্থের অভাবে ঝরে যায়। মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনাই যেখানে কঠিন, সেখানে স্নাতক পর্যন্ত টাকা দিয়ে পড়ার সামর্থ্য কি সবার আছে? দেশের সব উচ্চমাধ্যমিক পাস ছাত্রের জন্য কি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে, কলেজে পর্যাপ্ত সিট আছে? যদি না থাকে, সে ক্ষেত্রে নাগরিককে গণপ্রতিনিধিত্ব থেকে বিরত রাখার অধিকার রাষ্ট্রের নেই।
এ দেশে বহু নারীর বিয়ের পর উচ্চশিক্ষা চালিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকে না। তাঁর জনপ্রতিনিধি হওয়ার অধিকার কেন দেওয়া হবে না? সব স্নাতক পাস ব্যক্তিই কি সমান যোগ্যতাসম্পন্ন হন! পৃথিবীতে বহু রাষ্ট্রনায়কই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় উচ্চশিক্ষিত না হয়েও রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন সফলভাবেই।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন, জেমস মনরো, এন্ড্রু জ্যাকসন, উইলিয়াম হ্যানরি হ্যারিসন, জ্যাকারি টেইলর, মিলার্ড ফিলমোর, এন্ড্রু জনসন, গ্রুভার ক্লিভল্যান্ড, উইলিয়াম ম্যাকেনলি, হ্যারি এস ট্রুম্যান—এঁদের কেউই কলেজ শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন না। কেবল মাধ্যমিক পাস করা স্যার জন মেজর, উইনস্টন চার্চিলসহ কমপক্ষে আটজন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের বারান্দাতেও পা রাখেননি। প্রতিবেশী দেশ ভারতের জনপ্রিয় নেত্রী জয়ললিতাও ছিলেন কেবল মাধ্যমিক পাস। তামিলনাড়ুর আরেক মুখ্যমন্ত্রী করুণা নিধিও ছিলেন দশম শ্রেণি পাস।
জীবনে স্কুলে না যাওয়া জ্যাকব জুমা দক্ষিণ আফ্রিকার দীর্ঘকাল ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং পরে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। উচ্চমাধ্যমিক পাস করা ওমর আল বশির সুদানের সেনাবাহিনীতে ব্রিগেডিয়ার এবং সেখান থেকে দীর্ঘকাল ছিলেন সুদানের প্রেসিডেন্ট। আফ্রিকান আমেরিকানদের অবিসংবাদিত নেতা হয়ে ওঠা ফ্রেডরিক ডাগলাসেরও ছিল না কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। পৃথিবীর নানা দেশে এ রকম অসংখ্য উদাহরণ আছে। যাঁরা কোনো রূপ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই সফল রাষ্ট্রপ্রধান হয়েছেন। কারও কারও শাসনকালের ক্ষেত্রে সমালোচনা থাকতে পারে, কিন্তু সেই সমালোচনা কারণ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ঘাটতি নয়, বরং স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব।
আমাদের সংস্কার কমিশন যে প্রস্তাবনা রেখেছে, আমাদের বাঙালি সত্তার প্রবাদপুরুষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কিংবা জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম কেউই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না। নজরুলের নির্বাচনের প্রতি ঝোঁক ছিল। তিনি নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি বেঁচে থাকলে আমাদের সংস্কার কমিশন তাঁকেও উপযুক্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকায় অযোগ্য ঘোষণা করত! সফল ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল থেকে আমাদের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ মতে তাঁরা কেউই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অথবা পৌরসভার মেয়র হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না।
৩.
এখন পর্যন্ত উচ্চশিক্ষার সুযোগ ধনিক শ্রেণির হাতে অনেকটাই সীমাবদ্ধ। সাধারণ গরিব মানুষের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়াটা এমনিই কঠিন। সেখানে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগকেই নাই করে দিলে তা দেশে চূড়ান্তভাবে একটা অভিজাততন্ত্রের সৃষ্টি করবে। এই জুলাই আন্দোলনেও শত শত শ্রমিক, দোকানদার, মজুর, রিকশাচালক প্রাণ দিয়েছেন, আহত হয়েছেন, অংশ নিয়েছেন। তাঁদের প্রতিনিধিত্ব পরিবর্তিত রাষ্ট্রে থাকতে হবে। এই আন্দোলন কেবল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের একার ছিল না।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়া শিক্ষিতদের হাতে সব তুলে দেওয়ার বন্দোবস্ত আমরা চাই না। প্রতিটি ক্ষেত্রে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচন হওয়া উচিত। দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধী, স্বীকৃত ঋণখেলাপি, অপ্রকৃতিস্থ ছাড়া নাগরিক মাত্রই নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ থাকতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, বর্ণ, ধর্ম, গোত্র, লিঙ্গ বিচারে কোনো বৈষম্য থাকা চলবে না। জনগণের ভোটের অধিকার হবে অবাধ, তাঁরাই নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবেন। পরোক্ষ নির্বাচনের নামে ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া চলবে না।
আরজু আহমাদ লেখক ও অ্যাকটিভিস্ট। কেন্দ্রীয় সদস্য, জাতীয় নাগরিক কমিটি
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স থ ন য় সরক র জনগণ র আম দ র চ ত কর পর ক ষ করব ন হওয় র ন হওয়
এছাড়াও পড়ুন:
৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাই প্রায় চূড়ান্ত: তারেক রহমান
জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে সম্ভাব্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, “দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী কিংবা বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে।”
আরো পড়ুন:
বরগুনায় জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মামুন
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির
রবিবার (২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে প্রবাসে বিএনপির সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তারেক রহমান। লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন তিনি।
প্রতিটি নির্বাচনী আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন জানিয়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “দেশের প্রতিটি সংসদীয় আসনে বিএনপির একাধিক যোগ্য এবং জনপ্রিয় প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও প্রতিটি মানুষকে নিশ্চয়ই মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব নয়। ভিন্ন রাজনৈতিক দলের যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে রাজপথের সঙ্গী ছিলেন, এমন প্রার্থীকেও বিএনপি সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
এই বাস্তবতার কারণে হয়তো কিছু সংসদীয় সংসদীয় আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, “বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থকদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে আপনারা এই বাস্তবতাকে মেনে নেবেন।”
জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে জনমনে সৃষ্ট সংশয়, সন্দেহ গণতন্ত্রে উত্তরণের পথকে সংকটপূর্ণ করে তুলতে পারে মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, “দেশে প্রতিনিয়ত একের পর এক নিত্য নতুন শর্ত জুড়ে দিয়ে গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে সংকটাপূর্ণ করে তোলা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী নাগরিকেরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই বিএনপিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।”
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মানুষের উদ্বেগের কথা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, “পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারের শাসন আমলে জনগণের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনোই আগ্রহ ছিল না। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় জনমনে কোনো কোনো ক্ষেত্রে জিজ্ঞাসা বাড়ছে, যথাসময়ে কি নির্বাচন হবে?... এমন তো হবার কথা ছিল না।”
বিএনপির বিজয় ঠেকাতে অপপ্রচার ও অপকৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে বলে উল্লেখ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “উদ্বেগ এবং আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশেও বর্তমানে বিএনপির বিজয় ঠেকাতে সংঘবদ্ধ অপপ্রচার এবং অপকৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।”
শুধু বিএনপির বিজয় ঠেকাতে গিয়ে পতিত পরাজত পলাতক স্বৈরাচার দেশে ‘ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বিগত ১৫ বছরে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয়েছে।”
প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে বিএনপি দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে মন্তব্য করে তারেক রহমান জানান, তবে বিএনপির প্রতি দেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণের আস্থা, ভালোবাসা থাকায় সে সংকট কাটিয়েছে তার দল।
তারেক রহমান বলেন, “দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি শুরু থেকেই ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার স্বার্থে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে একদিকে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার পথ বেছে নিয়েছে। অপরদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও যতটুকু সম্ভব, যতটুকু যথাসাধ্য সম্ভব আমাদের অবস্থান থেকে আমরা সহযোগিতা করে আসছি।”
দেশে নারীদের নিরাপত্তার বিষয়ে সামাজিক উদাসীনতা প্রকট হয়ে উঠছে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ সংক্রান্ত গণমাধ্যমের প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, “নারী ও শিশুদের জন্য নিরাপত্তাহীন সমাজ নিশ্চয়ই সভ্য সমাজ হিসেবে গণ্য হতে পারে না।”
সেজন্য তিনি জাতীয়তাবাদী মহিলা দলসহ বাংলাদেশের সচেতন নারী সমাজকে তাদের দাবি সরকারের কাছে তুলে ধরার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে অনলাইনে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণ এবং তার ফি পরিশোধের প্রক্রিয়া নিয়ে একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। তাতে বলা হয়, এখন থেকে বিশ্বের যেকোনো দেশ থেকে অনলাইনে বিএনপির দলীয় ওয়েবসাইটে গিয়ে সদস্যপদ গ্রহণ করা যাবে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, এ জে ড এম জাহিদ হাসান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ আলমগীর হোসেন প্রমুখ।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ