ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নিচে বিমে আটকে পড়া বিড়ালটি উদ্ধার করা হয়েছে। আজ রোববার ভোরে এটিকে উদ্ধার করা হয়। বিড়ালটিকে উদ্ধার করতে একটি ফাঁদ পাতা হয়েছিল।

বিড়ালটি আটকে পড়ার খবরটি গতকাল শনিবার সন্ধ্যা থেকে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি জানতে পেরে গতকাল রাতে আরিজ উল মুলকের নেতৃত্বে উদ্ধারকাজে যোগ দেন চারজন স্বেচ্ছাসেবী। সন্ধ্যা থেকে ডিএনসিসির দুটি লেডারের সাহায্যে চেষ্টা চালিয়ে উদ্ধার করতে না পারায় রাত ১০টায় আরিজ উল মুলক বিড়ালটি ধরতে একটি বিশেষ ধরনের খাঁচা (ফাঁদ) নিয়ে আসেন। বিড়ালটিকে নিরাপদে উদ্ধার করতে বিমের ওপরে খাঁচাটিতে খাবার দিয়ে রেখে যান। পরে আজ ভোর সাড়ে পাঁচটায় স্বেচ্ছাসেবীরা এসে খাঁচার মধ্যে বিড়ালটি পান এবং নিরাপদে উদ্ধার করেন।

ডিএনসিসির কর্মীরা স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরা জানান, বিড়ালটিকে উদ্ধারের পর বারিধারায় একটি ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে এবং মোহাম্মদপুরের একজন স্বেচ্ছাসেবক বিড়ালটি লালন–পালনের জন্য নিয়ে গেছেন। বিড়ালটি এখন পুরোপুরি সুস্থ আছে বলে জানিয়েছেন আরিজ উল মুলক।

উল্লেখ্য, শনিবার বিকেলের দিকে রাজধানীর মহাখালী ফ্লাইওভারের ঠিক ওপরের অংশে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নিচে বিমে আটকে থাকা বিড়ালটিকে দেখতে পেয়ে নগরবাসীর কেউ একজন বিষয়টি ঢাকা উত্তর সিটির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজকে জানান। পরে তিনি বিড়ালটিকে উদ্ধারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। বিড়ালটিকে উদ্ধারে মহাখালী উড়ালসড়কের ওপরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নিচে একটি বিমের বর্ধিত অংশে একটি লেডার যন্ত্র ওঠানো হয়। ওই লেডারে করে সিটি করপোরেশনের দুই কর্মী ওপরে গিয়ে বিড়ালটিকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন। কিন্তু বিড়ালটিকে ভয় পেয়ে দূরে সরে যেতে দেখা যায়। পরে আরেকটি লেডার দিয়েও চেষ্টা চালানো হয়। বিড়ালটি আতঙ্কিত হয়ে বিমের প্রান্তে অবস্থান নিলে রাত ১০টায় লেডার নামিয়ে আনা হয়। পরে একটি ফাঁদ (খাঁচা) দিয়ে তাতে খাবার দেওয়া হয়।

আরিজ উল মুলক জানান, তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় বিপদে পড়া প্রাণীদের নিজের চেষ্টায় উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করেন। প্রাণীদের প্রতি ভালোবাসা থেকেই তিনি এটি করেন।

ডিএনসিসি প্রশাসক বিকেলে গুলশান নগর ভবনে তাঁর কার্যালয়ে আরিজ উল মুলক এবং তাঁর সহযোগী আকাশ আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তিনি বিড়ালটি উদ্ধারের জন্য তাঁদের প্রশংসা করেন এবং ধন্যবাদ জানান।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা

সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।

উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’

তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’

ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।

ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’

পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।

গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।

তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।

জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।

দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ব্যালটে মামদানি, অদৃশ্য ‘প্রার্থী’ ট্রাম্প
  • দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
  • ‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
  • যদি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে: এফ আর খান
  • বিবাহবিচ্ছেদ ও খোরপোষ নিয়ে ক্ষুদ্ধ মাহি
  • ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স